শেষ আপডেট: 11th April 2025 17:34
দ্য ওয়াল ব্যুরো: বাংলা সিনেমার ইতিহাসে যাঁর নাম সোনার হরফে লেখা রয়েছে, তিনি উত্তমকুমার। জনপ্রিয়তা এমন এক জায়গায় পৌঁছেছিল যে, রুপোলি পর্দায় নিজের উপস্থিতি নিয়েই চিন্তায় থাকতেন মহানায়ক! ভাবতেন, যদি দর্শক তাঁকে অতিরিক্ত দেখেই অভ্যস্ত হয়ে পড়ে? যদি তাঁর ‘ক্রেজ’ কমে যায়? এই ভয়েই তিনি অনেক সময় লোকচক্ষুর আড়ালে থাকতেন। সহ-অভিনেতারাও কেউ ভুল করলেই মাঝেমাঝে চড়া গলায় ধমক দিতেন—পাছে তাঁর সম্মোহনী জাদুতে কোথাও ভাঁটা পড়ে!
তাঁর পিতার দেওয়া নাম ছিল অরুণকুমার চট্টোপাধ্যায়। কিন্তু সিনেমা দুনিয়ায় তিনি হয়ে উঠলেন ‘উত্তম’। এবং এই নামের প্রতিটি অক্ষর যেন ছাপ ফেলে গেল বাংলার মানুষের হৃদয়ে। আজও বাংলার ইতিহাসে তাঁকে ‘মহানায়ক’ ছাড়া অন্য কোনও অভিধায় ডাকা যেন অসম্পূর্ণই লাগে।
তাঁকে কাস্ট করা মানেই ছবি হিট—এটাই ছিল সমীকরণ। সেই কারণে প্রযোজকরা যেকোনও শর্তে উত্তমকুমারকে নিতে চাইতেন। আর তিনি পারিশ্রমিক নিতেন কী পরিমাণ জানেন? ১৯৬০–৭০-এর দশকে তিনি প্রতিটি ছবির জন্য নিতেন প্রায় ৪ থেকে ৫ লক্ষ টাকা! এখনকার অর্থমূল্যে তা প্রায় কোটি টাকার সমান।
তবে অর্থ উপার্জনের মতোই দানেও তিনি ছিলেন রাজা। সহকর্মী কিংবা আত্মীয়, কেউ যদি কোনওদিন অর্থাভাবের কথা বলতেন, উত্তম তাঁদের ফিরিয়ে দিতেন না। নিজের পকেট থেকে বের করে দিতেন নগদ টাকা। এমনকি, একবার তো কলকাতায় বন্যার সময় নিজে রাস্তায় দাঁড়িয়ে ত্রাণ তহবিল তুলেছেন, এ গল্প আজও টলিপাড়ায় কান পাতলে শোনা যায়।
তবে এত জনপ্রিয়তা, সম্মান, সাফল্যের মধ্যেও উত্তমকুমার ছিলেন ভীষণ অনিশ্চিত। কোনও ছবির মুক্তির দিনে তাঁর মুখে হাসি দেখা যেত না। উদ্বেগে ডুবে থাকতেন। সেটে শুটিং চললেও, মন থাকত না কাজের মধ্যে। একটাই প্রশ্ন বারবার ঘুরপাক খেত মনের মধ্যে—ছবিটা চলবে তো? যতক্ষণ না খবর আসত—‘হাউসফুল’—ততক্ষণ যেন মনেই শান্তি ফিরত না উত্তমকুমারের। আর খবরটা পাওয়ার পর? তখনই তিনি ক্যামেরার সামনে দাঁড়াতেন আত্মবিশ্বাসে ঝলমল করে।