শেষ আপডেট: 10th January 2025 14:29
দ্য ওয়াল ব্যুরো: তিনি ভূতের ভক্ত। ‘সাইকো’-নির্মাতা আলফ্রেড হিচকক তাঁর পছন্দের পরিচালক। স্বভাবে তিনি গ্রামের মানুষ, যিনি বিশ্বাস করেন, স্ত্রীর একমাত্র কাজ ঘর-সংসারের দেখভাল করা। ১৯৮৫ সালে প্রকাশিত একটি ইন্টারভিউ তামাম দুনিয়ার কাছে মেলে ধরে ধরেছিল এমন এক অকপট কিশোর কুমার-কে যিনি ‘চিঙ্গারি কোই ভাড়কে’-র মগ্ন-বিষণ্ণ গায়ক নন। তিনি এমন এক রক্তমাংসের মানুষ, যার ভালো মানুষ হওয়ার কোনও দায় নেই।
লোকচক্ষুর আড়ালে থাকা বি-টাউনের এক হেভিওয়েট গায়কের নেপথ্য চরিত্র সামনে এনে বিতর্ক উস্কে দিয়েছিলেন যিনি, তাঁর নাম প্রীতিশ নন্দী। বুধবার রাতে প্রথিতযশা সাংবাদিক, চলচ্চিত্র নির্দেশকের মৃত্যুর পর সেই সাক্ষাৎকারের ঘটনা অনেকের স্মৃতিতে ফিরে ফিরে আসছে।
আজ থেকে ৪০ বছর আগে (২৮ এপ্রিল, ১৯৮৫) ‘দ্য ইলাস্ট্রেটেড উইকলি অফ ইন্ডিয়া’-র হয়ে ইন্টারভিউটি নিয়েছিলেন প্রীতিশ। ম্যাগাজিনের কভারটিও ছিল নজরকাড়া। মড়ার খুলিতে পুরু ফ্রেমের চশমা আঁটা। সেটা হাতে ধরে হাসিমুখে চেয়ে আছেন কিশোর কুমার।
সাক্ষাৎকারে নিজের জীবনের অনেক নজরকাড়া গল্প শুনিয়েছিলেন কিশোর। যেমন, তাঁর সবচেয়ে কাছের বন্ধু চারজন। তাঁদের নাম রঘুনন্দন, বুদ্ধুরাম, জনার্দন ও জগন্নাথ। কী ভাবছেন? এঁরা সত্যিই বাস্তব কোনো চরিত্র? আজ্ঞে না! গায়ক এরপরই খোলসা করে জানান, এই চারজন-ই তাঁর বাগানের চারটি গাছ।
আরেকটি গল্প ছিল আয়কর-সংক্রান্ত। কয়েকজন ইনকাম ট্যাক্স অফিসার যখন কাগজ চাইতে তাঁর বাড়ি হানা দেন, তখন নাকি কিশোর কুমার তাঁদের হাতে মরা ইঁদুর ধরান। সেই সঙ্গে জানাতে ভোলেন না, ধুলোয় ধূসরিত আয়করের কাগজগুলি-ই ছিল কীটনাশক, যা খেয়ে ইঁদুরগুলো মারা গেছে!
নিজের চারবার বিয়ে নিয়েও সেদিন অকপট ছিলেন কিশোর। রুমা দেবী, যাকে প্রথমে ঘরে আনেন তিনি, তাঁর কেরিয়ার নিয়ে প্রবল উচ্চাশা কিশোরের মনে স্রেফ হতাশারই জন্ম দিয়েছিল। স্ত্রীদের উচিত সবার আগে ঘরগেরস্থানির কাজ শেখা—সাফ জানিয়েছিলেন তিনি। সেই সঙ্গে আরও বলেন—দ্বিতীয় স্ত্রী মধুবালার রূপ দেখে নয়, অভিনেত্রী যে দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত, সেকথা জেনে তাঁকে বিয়ে করেছিলেন। ন-বছর ধরে মধুবালার যত্ন নেন কিশোর। অসুস্থতায় ক্লিন্ন অভিনেত্রী তাঁর যাবতীয় অবসাদ ছুড়ে দিতেন কিশোরের দিকে। মাথা পেতে সেসব গ্রহণ করেছিলেন গায়ক; মধুবালাকে কোনওদিন ছেড়ে যাননি। তাঁকে নিজের চোখে মৃত্যুর কোলে ঢলে যেতে দেখেছেন।
এখান থেকে ইউ-টার্ন নিয়েই পরক্ষণে তিনি জুড়ে দেন—যোগিতা বালিকে বিয়ে করাটা ছিল তাঁর জীবনের প্রহসন। একমাত্র চতুর্থ স্ত্রী লীনা চন্দভরকর-ই তাঁকে কাঙ্ক্ষিত শান্তি দিতে পেরেছিলেন বলে সাফ জানান কিশোর।
গানের দুনিয়াতেই যিনি তুঙ্গ স্পর্শ করেছেন, তিনি হঠাৎ অভিনয়ের জগতে এলেন কেন? এ নিয়েও সেদিন স্পষ্ট জবাব দিয়েছিলেন সংগীত-তারকা। কিশোর জানান, ‘দাদামণি’ অশোককুমার ছিলেন তাঁর নায়ক। তাই মত না থাকলেও একপ্রকার জোর করেই তাঁকে রুপোলি পর্দার জগতে নামানো হয়েছিল… দাদামণির ভাই যে, সে কোনওদিন খারাপ অভিনয় করতেই পারে না—প্রযোজক, পরিচালকদের এই বিশ্বাস নায়ক কিশোর-কে এনে দিয়েছিল নবজন্ম, আলাদা পরিচিতি।