Advertisement
মমতা কুলকার্নি
Advertisement
শেষ আপডেট: 20 April 2025 13:17
দ্য ওয়াল ব্যুরো: নয়ের দশকের গোড়ায় সিনে পত্রিকায় তাঁর খোলামেলা ছবি রীতিমত ঝড় তুলত। এমনকি বাংলা ম্যাগাজিনের পূজাবার্ষিকীতেও তাঁর সাহসী ছবির চাহিদা হার মানাত টলিউডের নায়িকাদের। সেযুগের তরুণদের হৃদয়ে যেন এক রহস্যময়ী নারী ছিলেন তিনি, যে রহস্য আজও ভেদ হয়নি। সেই ঝড় তোলা অভিনেত্রীর নাম মমতা কুলকার্নি।
আজ, ২০ এপ্রিল তাঁর জন্মদিন। ৫৩ বসন্ত পূর্ণ করলেন এই রহস্যনারী। এককালে মমতা শিরোনামে থাকলেও তিনি হঠাৎ উধাও হয়ে গেছিলেন ইন্ডাস্ট্রি থেকে। কেন তাঁর এই হঠাৎ প্রস্থান। বিতর্ক থেকে গা ঢাকা দিতেই কি আত্মগোপন করেন অভিনেত্রী?
নানারকম কারণে বারবারই শিরোনামে এসেছে তাঁর নাম। নানা চাঞ্চল্যকর ঘটনাতেও জড়িয়েছেন তিনি। তাঁর বেশ কিছু হিট ডান্স নাম্বার থাকলেও, অভিনেত্রী সত্ত্বার থেকেও তিনি বেশি চর্চিত থেকেছেন বিতর্কিত অপরাধমূলক কাণ্ডে।
১৯৯২ সালে 'তিরঙ্গা' ছবি দিয়ে বলিউডে অভিষেক ঘটে মমতার। ১৯৯৩ সালে, তিনি 'আশিক আওয়ারা' ছবিতে অভিনয় করেন, যা মমতাকে 'লাক্স নিউ ফেস অফ দ্য ইয়ার' ফিল্মফেয়ার পুরস্কার এনে দেয়। এরপর 'ওয়াক্ত হামারা হ্যায়', 'ক্রান্তিবীর', 'করণ অর্জুন', 'সবসে বড়া খিলাড়ি' এবং 'বাজি'-র মতো একাধিক জনপ্রিয় ছবিতে অভিনয় করেন।
'করণ-অর্জুন' ছবিতে মমতার বাম্পার হিট গান ছিল ‘ছাদ পে শোয়া থা বহনৌ, ম্যায় তন্নে সমঝকার শো গাই... গুপচুপ গুপচুপ'। অলকা ইয়াগনিক আর ইলা অরুণের এই গান লোকের মুখে মুখে ফিরত। ১৯৯৬ সালে মুক্তি পায় রাজকুমার সন্তোষীর ছবি ‘ঘাতক’। সেখানেই ‘কোয়ি যায়ে লে কে আয়ে’ গানে নেচেছিলেন মমতা। তবে নয়ের দশকের মাঝামাঝি থেকেই মমতার বাজার ফুরিয়ে আসে। কমতে থাকে তাঁর চাহিদা।
প্রায় দু'দশক পরে, ২০১৬ সালের এপ্রিল মাসে আচমকা ফের সংবাদ শিরোনামে মমতা। কীভাবে? মহারাষ্ট্রের ঠাণে থেকে ড্রাগ পাচারকারী একটি চক্র ধরা পড়ে পুলিশের হাতে। দু’হাজার কোটি টাকা মূল্যের ২০ হাজার কিলোগ্রাম কাঁচামাল বাজেয়াপ্ত করা হয়। গ্রেফতার করা হয় আট জনকে। তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদের পরই ভিকি গোস্বামীর নাম উঠে আসে। জানা যায় এই চক্রের মূল পান্ডা ভিকি। মহারাষ্ট্র থেকে হাত ঘুরে আমেরিকা এবং কেনিয়ায় পাড়ি দিত ড্রাগ। এর আগে ড্রাগ পাচারের অভিযোগে ২০১৪ সালেও দুবাই থেকে ভিকিকে গ্রেফতার করেছিল কেনিয়া পুলিশ। পরে অবশ্য তিনি জামিনে ছাড়া পান।
এই ভিকিই ছিলেন মমতার স্বামী। পরবর্তী কালে সেই মামলার রায় দেয় বম্বে হাইকোর্ট। বেকসুর খালাস হন অভিনেত্রী। তবে বিতর্ক পিছু ছাড়েনি। শেষমেশ দেশ ছাড়েন মমতা। পরে দেশে ফিরে মমতা বলেন, 'ভিকির সঙ্গে আমার বৈবাহিক জীবন ছিল না। গত ১২ ধরে আমি যোগিনী, আমি ধর্মচর্চা করি। পেঁয়াজ-রসুন পর্যন্ত ছুঁয়ে দেখি না। এটা ঠিক, একটা লম্বা সময় ভিকির সঙ্গে ছিলাম। আমি ওকে সব সময় ভালবেসেছি। কিন্তু আমার আধ্যাত্মিকতার স্বার্থে এই সম্পর্কটা শেষ হয়ে যায়।'
এরপর সম্প্রতি আধ্যাত্মিক টানে মহাকুম্ভ মেলাতেও উদয় হন মমতা। পরনে গেরুয়া পোশাক কপালে তিলক। দুধ স্নান সেরে সন্ন্যাস গ্রহণ করেন যৌনতার রানি।
শুধু তাই নয়, খুব কম সময়ে কিন্নর আখড়ায় যোগদান করে সেখানেও জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন এই বলি নায়িকা। কিন্নরদের মহামণ্ডলেশ্বর পদ অভিষিক্ত হন মমতা। মহামণ্ডলেশ্বর হল হিজড়াদের গুরু পদ। হিজড়ারা মমতাকে দুধে স্নান করিয়ে তাঁদের গুরু মা রূপে মেনে নেন। যদিও মমতা কিন্তু রূপান্তরকামী নন। তবু কিন্নর আচার্য লক্ষ্মী নারায়ণ ত্রিপাঠীকে মহামণ্ডলেশ্বর পদ থেকে অপসারণ করে মমতাকে বসানো হয়। অনেকেই বলেন, কিন্নর আখড়ায় যোগদান নাকি মমতার গা ঢাকা দেবার নতুন কৌশল। কুম্ভ মেলা মিটতেই অবশ্য ফের খবরের বাইরে চলে গেছেন মমতা।
মমতা কুলকার্নির রহস্য জীবন এভাবেই বারবার উঠে এসছে চর্চায়। মমতা কুলকার্নি নিজের জীবন নিয়ে যেন রীতিমতো পরীক্ষানিরীক্ষা চালিয়েছেন। তবে সেসব রহস্য আর বিতর্ক পেরিয়ে মানুষ মমতা কেমন, তা রহস্যই থেকে গেছে আজও।
Advertisement
Advertisement