Date : 21st May, 2025 | Call 1800 452 567 | info@thewall.in
কান উৎসবে হাঁটতে ফ্রান্স পৌঁছলেন ঐশ্বর্যা, সঙ্গে এবারেও আরাধ্যা, মুহূর্তে ভাইরাল ভিডিওকলকাতায় 'মাদারহুড হসপিটালস'-এর ২৫তম হাসপাতাল, পূর্ব ভারতে মাতৃ ও শিশুসেবায় নতুন দিগন্তনতুন জীবন পেল কিশোর, বিরল নিউরো অস্ত্রোপচারে মৃগী সারল কলকাতার হাসপাতালেশাহরুখ তখনও 'কিং' হননি, পুরনো ছবি শেয়ার করে বন্ধু লিখলেন, '৩৫ বছর আগে সেই ট্রেন যাত্রায়...'ক্ষীরপাইয়ে দুই বাইকের মুখোমুখি সংঘর্ষে মৃত ৩, আশঙ্কাজনক আরও ১ইনস্টাগ্রামে একে অপরকে ‘আনফলো' যশ-নুসরতের, জল্পনার পারদ চড়ছে টলিপাড়ায়IPL 2025: ফের চলল বৈভবের ব্যাট, বেলাইন চেন্নাই এক্সপ্রেসরবীন্দ্র সরোবরে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা, ভরদুপুরে গাছ পড়ে মৃত্যু ফুল ব্যবসায়ীরশাহরুখ মধ্যবিত্তই রয়ে গেল, কোনও দামী ব্র্যান্ড ওকে খুশি করতে পারে না: অনুভব সিনহাআত্মবিশ্বাসী শুভাশিস গুরুত্ব দিচ্ছেন সুনীলের অভিজ্ঞতাকে
Lolita Chatterjee

৩ বার বিয়ে- লিভ ইন করেছেন অপর্ণা-শ্রাবন্তীদের অনেক আগেই! চর্চায় ছিলেন 'কলকাতার মেম' ললিতাও

'যখন নায়িকা হতে এলাম সে সময় ইংরেজি বলা, বোল্ড পোশাক পরা মানেই ছিল খলনায়িকার রোল। সেটাই হয়ে গেলাম।'

৩ বার বিয়ে- লিভ ইন করেছেন অপর্ণা-শ্রাবন্তীদের অনেক আগেই! চর্চায় ছিলেন 'কলকাতার মেম' ললিতাও

ললিতা চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: 9 May 2025 15:13

শুভদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়


রিভিলিং পোশাক, আগুনে রূপ, সাহসী দৃশ্যে অভিনয়, বিদ্যাগত যোগ্যতায় প্রথমা, চোস্ত ইংরেজি নিয়ে ছয়ের দশকের বাংলা ছবির মেমসাহেব হয়ে এলেন ললিতা। খোদ কলকাতায় বসে 
লিভ ইন থেকে সমকামিতা, সবেতেই সাহসিনী ললিতা চট্টোপাধ্যায়। আজ তাঁর প্রয়াণ দিবস। ২০১৮ তে রবীন্দ্র জয়ন্তীর প্রখর দুপুরেই চিরঘুমের দেশে পাড়ি দেন উত্তমকুমারের 'বিভাস' ছবির নায়িকা। 

৩৬-২৪-৩৬ ফিগারে ললিতা রাস্তা দিয়ে হেঁটে গেলে আশপাশের লোকজন থমকে যেতেন। নিজের ফিল্মোগ্রাফি সম্পর্কে বিশ্লেষণ  করে ললিতা বলেছেন 'আমার সময়ে সুচিত্রা, সাবিত্রী, সন্ধ্যা কিছু ক্ষেত্রে সুপ্রিয়াও যে ধরনের নিটোল ঘরোয়া বাঙালি বউ মেয়ের চরিত্র করতেন সেগুলো আমার লুকসের সঙ্গে যেত না। তাই হয়তো ছবিতে সহ-নায়িকা হয়ে গেলাম।' 

Lolita Chatterjee - IMDb

এই বিদেশী লুকের জন্যই ললিতা বিদেশিনীর রোলে টাইপ কাস্ট হয়ে গেলেন। কিন্তু মেমসাহেবদের রোল করতেন অসাধারণ। অ্যান্টনি ফিরিঙ্গীর বিদেশী প্রেমিকা হতে ললিতা ছাড়া আর কে পারত?

মাত্র চার বছর বয়সে মাতৃহারা হন ললিতা। তখন অবশ্য নাম রুণু। মেয়েকে মায়ের মমতায় ভরিয়ে দেন বাবা। ললিতার বোনেরাও ছিলেন ভীষণ সুন্দরী। বাবা আর্মিতে চাকরি করতেন তাই রুণুর ছোটবেলা কেটেছে পশ্চিমবঙ্গের বাইরে বাইরে। কখনও পাটনা, কখনও মীরাটে। এরপর চলে আসেন সবাই দক্ষিণ কলকাতার ম্যাডক্স স্কোয়ারের কাছে রিচি রোডে। তখন সব বাড়িতেই খুব সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল থাকত। রবিবার মানেই টাঙিয়ে দেওয়া হত বড় চাদর আর পর্দার সামনে রুণুরা দাদা ভাই বোন বন্ধু-বান্ধবরা মিলে অনুষ্ঠান করতেন। কখনও ‘রথের রশি’, কখনও বা ‘ডাকঘর। চার বোন, তিন ভাই। যদিও আজ আর কেউ নেই। 

স্বাধীনতার আবহ। আজাদ হিন্দ বাহিনীর আনাগোনা।এক এক দিন সেই ফৌজের অংশীদার হয়ে ঘুরে বেরিয়েছেন ললিতা। এমনকী ১৯৪৭ সালের ১৪ অগস্ট, অর্থাৎ স্বাধীনতার আগের দিন সারা রাত আজাদ হিন্দ ফৌজের সঙ্গে ঘুরেছেন কিশোরী ললিতা। কাটাকাটা সুন্দরী ছিলেন বলে ছেলেদের চোখ টানতেন। মাত্র ১৪ বছর বয়সেই পালিয়ে বিয়ে করেছিলেন দীপক বসুকে। ললিতা প্রাইভেটে স্কুল ফাইনালে প্রথম হওয়া ব্রিলিয়ান্ট ছাত্রী ছিলেন।শ্বশুরবাড়ির তাগিদে কিছুদিন পরই চলে গেলেন বিলেতে। লন্ডনে স্কুলে ভর্তি হলেন শাশুড়ির পরামর্শে। চলতে লাগল পড়াশোনা। তারই মধ্যে খুব অল্প বয়সেই দুই ছেলের মা হলেন ললিতা। সেই বিলেতের স্বামী সংসার আর সামলে উঠতে পারলেন না। বিচ্ছেদ। দীপক বসু বহুনারী সঙ্গ করা পুরুষ ছিলেন। যা ললিতার পক্ষে দিনের পর দিন সহ্য করা সম্ভব ছিল না। 

Hindi Movies Films Songs Books ... - Musing 1536: Lolita Chatterji. T30

দুই পুত্রসহ ফিরে এলেন কলকাতায়। ভর্তি হলেন লেডি ব্রেবোর্ন কলেজে। স্কলারশিপ নিয়ে পাশ করলেন। স্নাতকোত্তরে প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হলেন। পড়াশোনায় ললিতা সবসময় হতেন প্রথম। নামই হয়ে গেছিল 'ফার্স্ট গার্ল'। স্নাতকোত্তর সম্পূর্ণ না করেই বাড়ির অমতে স্কুলে পড়ানোয় যোগ দেন ললিতা। ইংরাজিতে চোস্ত ললিতা চট্টোপাধ্যায় সাউথ পয়েন্ট স্কুলের শিক্ষিকাও ছিলেন। শুধু তাই নয় সাঁতার সহ নানা আউটডোর গেমে ললিতা ছিলেন প্রথমা।সঙ্গে ছিলেন দারুন গায়িকা। নায়িকা নয়, সুচিত্রা সেনের মতো আগে গায়িকা হবার অডিশন দেন ললিতা। রেডিওতে ‘ডাকঘর’ নাটকে অভিনয়ও করেছিলেন মেয়েবেলায়। পরে রেডিওতে করেছেন গানের অনুষ্ঠান। এরমধ্যে কানন দেবীর প্রযোজনায় জীবনের প্রথম ছবি শ্রীমতী পিকচার্সের ‘অনন্যা’ করে ফেলেছেন ললিতা। তখন সাত আট বছর বয়স রুণুর।

Lalita Chatterjee: উত্তম-ললিতাকে পাশাপাশি দেখে সুপ্রিয়া বললেন, 'এই তো  বর-বউ, রুনু তোর আর বরের দরকার কী!'

ললিতা চ্যাটার্জীর নিজের বৌদি ছিলেন খ্যাতনামা নায়িকা কাবেরী বসু। ললিতা ছিলেন অসম্ভব উত্তম কুমারের ফ্যান। তাই যখন কাবেরী উত্তম নায়িকা হয়ে 'রাইকমল' করছেন তখন একদিন ননদ রুণুকে নিয়ে গেলেন 'রাইকমল' র সেটে উত্তমকুমারকে দেখতে। সেই প্রথম উত্তমকুমারকে সামনাসামনি দেখলেন ললিতা। ললিতার আগুন রুপে মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে যান মহানায়ক। সরাসরি ললিতাকে তাঁর পরের ছবি 'বিভাস'এ নায়িকা হবার অফার দেন। উত্তমকুমার বলেন সেই শ্রীমতী পিকচার্সের 'অনন্যা' ছবি টেনে 'রুণু ছোটবেলায় তো অভিনয় করেছ। বড় হয়ে আবারও কর। তোমার চেহারা এত সুন্দর। এরা নতুন একটা মুখ খুঁজছে। কাউকেই পছন্দ হচ্ছে না। তুমি করলে ভাল হয়।'

Lalita Chatterjee: উত্তম-ললিতাকে পাশাপাশি দেখে সুপ্রিয়া বললেন, 'এই তো  বর-বউ, রুনু তোর আর বরের দরকার কী!'

রুনু কোনওকিছু না ভেবে উত্তমের নায়িকা হতে নিজেকে সমর্পণ করেন। উত্তমকুমার বলেছেন না করে কার সাধ্য। আর প্রথম ছবিতেই ম্যাটিনি আইডলের নায়িকা। ভীষণ উত্তেজিত হয়ে এককথায় হ্যাঁ বলে দেন ললিতা। স্ক্রিন টেস্ট,পাশ,ছবি সাইন। 'বিভাস' র নায়িকা কিন্তু বিদেশিনী ছিলেন না। গ্রাম্য আটপৌরে রোলে ভালোই করেছিলেন রুণু।  সঙ্গে ছিলেন উত্তম সহ অনুভা গুপ্ত। সফল ছবি।

বিভাস’-এর পর দ্বিতীয় ছবির সেটে কাজের ফাঁকে ডুবেছিলেন ভ্লাদিমির নোবোকভের ‘লোলিটা’-য়। কয়েক জন সাংবাদিক এসে রুণুর কাছে জানতে চান, তাঁকে কী নামে ডাকবেন! সঙ্গে সঙ্গে রুণু উত্তর দিয়েছিলেন, ললিতা! ব্যস সেই থেকে নাম হয়ে গেল ললিতা চ্যাটার্জী। এরপর আরও ছবি উত্তমের সঙ্গে' 'মোমের আলো', অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি’, ‘জয় জয়ন্তী'। সুচিত্রা সেনের সঙ্গে 'হার মানা হার'। এছাড়াও অন্য হিরোদের সঙ্গে 'সমান্তরাল','চিঠি','মেম সাহেব','মুক্তিস্নান'। তবে সব ছবিতেই সহ-অভিনেত্রী।

এর মধ্যে চলে এসছেন দেশপ্রিয় পার্কের সাহেবি ভাড়া বাড়িতে। ছয়ের দশকে বাংলা ছবিতে কাজ শুরু করার পর মাঝে দুই ছেলেকে নিয়ে চলে গিয়েছিলেন মুম্বই,বলিউডে পা রাখেন ললিতা। রাজেশ খান্না, মুমতাজ, তনুজা, অঞ্জু মহেন্দ্র, ফিরোজ খান,প্রাণ সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে ললিতার। 'ভিক্টোরিয়া নং জিরো থ্রি', 'তুম হাসিন ম্যায় জাওয়ান', 'তালাস', 'রাত আন্ধেরি থি', 'পুষ্পাঞ্জলি' অনেক গুলি বলিউড ছবি করেছেন এবং লিপ দিয়েছেন অনেক বলি গানে। ফিরোজ খানের নায়িকা হওয়াতে ললিতাকে বম্বেতে বি গ্রেড নায়িকা বলা হত। বলিউডে দশ বছর কাটিয়ে কলকাতা ফিরে এলেও বাংলা ছবিতে উল্লেখযোগ্য রোল পাচ্ছিলেন না। তাই চলে গেলেন যাত্রা করতে এবং সেখানে পেলেন বিশাল নায়িকার সম্মান। কমল মিত্রর পর ললিতা চট্টোপাধ্যায় দ্বিতীয় চলচ্চিত্রের মানুষ যিনি যাত্রায় আসেন। 

Lolita Chatterjee - IMDb

এমন এমন সব পালা করেছেন যা যাত্রা ইতিহাসের উল্লেখযোগ্য। ভারতমাতা ইন্দিরা গাঁধী থেকে ওফেলিয়ার মতো চরিত্র। অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়, অমর ঘোষ এদের অবদান অসীম ললিতার যাত্রাজীবনে। 'তিন পয়সার পালা', 'ভারতজননী ইন্দিরা', 'ভগিণী নিবেদিতা', 'হ্যামলেট', 'বহ্নিশিখা' যাত্রা করে ললিতা জীবনের সেরা স্বপ্নের দিন পান।

ললিতার সাংসারিক জীবন বৈচিত্র্যময়। বহুবার সংসার করেছেন। তিন তিন বার সংসার জীবন। তিন জন পুরুষ। কিন্তু বলে না অতি বড় সুন্দরী না পায় বর, অতি বড় ঘরণীর না জোটে ঘর। প্রথম স্বামী দীপক বসুর সঙ্গে সেপারেশনের পর যাত্রার নায়ক পাহাড়ি ভট্টাচার্যর সঙ্গে পরিণয় সূত্রে দ্বিতীয় বার আবদ্ধ হন ললিতা। দুই সন্তান সহ ললিতা আবার বিয়ে করেন পাহাড়িকে। ললিতা পাহাড়ির বিয়েতে সাক্ষী দেন স্বয়ং উত্তমকুমার। সঙ্গে ছিলেন সুপ্রিয়া দেবী। উত্তম কুমার ললিতার বিয়েতে সাক্ষী দেওয়ার আগে ধুতি পাঞ্জাবি পরে বসেছিলেন ললিতার পাশে। সুপ্রিয়া দুষ্টুমি করে বলেছিলেন 'আর বর আসার কী দরকার এই তো দু'জনকে খুব ভাল জোড়ে মানিয়েছে।'
যদিও ললিতার এই বিয়েও টেকেনি। পাহাড়ি ভট্টাচার্য একটা সময় পর ললিতার রোজগারেই খেতেন। এমনকি তিনি দিনেদুপুরে মদ্যপানে ব্যস্ত থাকতেন। সংসারী মানুষ তিনি একদমই ছিলেন না। পাহাড়ি ভট্টাচার্য সদ্য ত্রিশ পেরনো তখন ললিতা চল্লিশ- পয়তাল্লিশ পেরিয়েছেন। পাহাড়ি ভট্টাচার্য্য র সঙ্গে ভাঙ্গল মিলন। কিন্তু দুই স্বামী ও তাঁদের পরিবারের সঙ্গে ললিতার যোগাযোগ ছিল।

পোশাক নির্বাচন নিয়ে চিরকাল সাহসী ছিলেন ললিতা। মধ্যবিত্ত বাঙালি সমাজে ডিভা সুপ্রিয়া ও ললিতা দুই বান্ধবী ছিলেন তৎকালীন দুই সাহসিকতার প্রতীক। ললিতার কথায় 'আমার স্বামী আমাকে বলেছেন, পোশাক বদল না করলে পার্টিতে নিয়ে যাবেন না। আমিও জেদ ধরে থাকতাম। যে পোশাক পরেছি, তাতেই যাব। তবে অনেক ধরনের ওয়েস্টার্ন আউটফিট পরলেও আমার সবচেয়ে পছন্দ চিরকাল শাড়ি। কেন, বেণুও (সুপ্রিয়া দেবী) কি কম রিভিলিং পোশাক পরত? আমাদের নিয়ে সে সময় চর্চা হত।’'

এর মধ্যে বড় হয়ে গেছেন ললিতার সন্তানরা। ললিতা যেন টলিউডের জিনাত আমন। পাহাড়ির পর যে সঙ্গী ললিতার জীবনে এলেন তাঁর সঙ্গে বিয়ে করেননি। দীর্ঘদিনের সঙ্গী অভিজিৎ মিত্র, যাঁর সঙ্গে লিভ ইন করতেন ললিতা। সেই তৃতীয় পুরুষ যখন চল্লিশে পড়েছেন তখন তিনি একষট্টি বছরের ললিতার সঙ্গে লিভ ইন করেন। ইনি শেষ দিন অবধি ছিলেন ললিতার সঙ্গে। তিনি দেখভাল করতেন নায়িকার। উনত্রিশ বছরের তফাত ভাল থাকায় বাধা হয়নি। প্রথম দুই স্বামীর থেকে তৃতীয় সঙ্গী ললিতার জীবনে শ্রেষ্ঠ বন্ধু ছিলেন। সারকারিনাতে থিয়েটার করতে গিয়ে তাঁদের আলাপ। তিনিও নিজের ভাঙা সংসার থেকে ললিতার সঙ্গে ঘর বাঁধেন। ইতিমধ্যে টলি বলির অনেক হিরো ললিতার সঙ্গে থেকে সুযোগ নিতে চেষ্টা করেছিল। অভিজিৎ মিত্র বললেন 'ললিতার জীবনে অনেক নায়ক সুযোগ নিয়েছেন। বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায় যেমন বড় নাম। তবে তাঁদের থেকে ভাল রোগের সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা, সম্পত্তি হাতাবার চেষ্টা ললিতার চরিত্রে ছিল না।' 

সমাজকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে নিজের শর্তে নিজের ইচ্ছেতে বেঁচেছেন কলকাতার এই মেমসাহেব। বহু বিবাহে অপর্ণা সেন, প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় বা শ্রাবন্তীর নাম এলে, ললিতার নাম সবার আগে বসবে। 

 জীবনে এসছে নানা ঘাত প্রতিঘাত। ভুলতে পারেননি বৌদি কাবেরী বসু, দাদা, ভাইপো দের অকালমৃত্যু।  বড় ছেলের হঠাৎ মৃত্যু, বাইপাস অপারেশন করাতে গিয়ে। সে তখন মাত্র বিয়াল্লিশ। ললিতা ভেবেছিলেন নিজেকে শেষ করে দেবেন। সামলে ওঠেন কাজে ব্যস্ত থেকে। ছোট ছেলে থাকেন গল্ফগ্রিনে। তাঁর ভরা সংসার। তবু সারা জীবন স্বাধীন ভাবে বেঁচেছেন ললিতা, তাই নিজের সংসারেই শেষ দিন অবধি থাকেন।

শেষ জীবনে কাজ কমে গেছিল তাঁর । আবার টাকার জন্য যা হোক রোলে আজকালকার দেব জিৎ নায়ক সর্বস্ব ছবিতে মুখ দেখাননি। গৌতম ঘোষের 'শূন্য অঙ্ক' তে বহু যুগ পর সৌমিত্র চ্যাটার্জ্জীর বিপরীতে কাজ করেছেন। পাশাপাশি করেছেন শিবপ্রসাদ-নন্দিতার 'ইচ্ছে' , অরিন্দম শীলের 'আসছে আবার শবর' কিংবা আদিত্য বিক্রম সেনগুপ্তর 'জোনাকি' ছবির মুখ্য চরিত্র। 'জোনাকি' ললিতার জীবনে একটি সেরা ছবি যাতে ললিতার যুবক বয়ফ্রেন্ডের রোল করেছেন জিম সার্ভ। 

সিরিয়াল কিছু করেছেন। উত্তম নায়িকাদের এক করে বিষ্ণু পালচৌধুরীর মেগা 'শান্তিনিকেতন' কিংবা 'প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য'। তারা বাংলায় 'বেণুদির রান্নাঘর' ভরে উঠত বেণু রুণুর আড্ডায় কতবার। শেষ সিরিয়াল 'কি করে তোকে বলব'।

Victoria No. 203 actor Lalita Chatterjee dead at 81 | Bollywood - Hindustan  Times

ললিতা যে সমাজের বেড়াজাল ভেঙেছেন বারংবার তার পরিচয় শেষ জীবনেও দিয়েছেন। এক সমকামী লেসবিয়ান মহিলার মুখ্য চরিত্রে 'স্পর্শ, দ্য টাচ’ ছবিতে অভিনয় করেছিলেন। মাসি-বোনঝির সমকামী সম্পর্কের জটিল মনস্তত্বে ঘুরে বেড়ায় এই ছবির কাহিনি। মাসির চরিত্রে অভিনয় করেছেন ললিতা চ্যাটার্জ্জী। ললিতার যুবতীবেলা করেছেন মানালি দে।মাফিনও রয়েছেন। নবাগত পরিচালক সায়ন্তন মুখার্জ্জী এমন সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। আর তাঁকে সাহস জুগিয়েছেন প্রান্তবেলাতেও  ললিতা।

নিজের সম্বন্ধে আত্মমূল্যায়ণ করে ললিতা বলেছেন "যখন নায়িকা হতে এলাম সে সময় ইংরেজি বলা, বোল্ড পোশাক পরা মানেই ছিল খলনায়িকার রোল। সেটাই হয়ে গেলাম। ভুলভাল চরিত্র নিয়ে ফেলতাম।অনেক ছবির অফার উত্তমকুমার নিয়ে আসতেন তা ফেলতে পারিনি। অথচ সব সাইড রোল। বলিউডেও তখন এক ব্যাপার। সতী সাবিত্রী নায়িকারই চল ছিল। এখন মনে হয় পড়াশোনার জগতে থাকলেই ভাল হত। ঋতুপর্ণ ঘোষ থেকে সৃজিত মুখোপাধ্যায় কেউ ডাকেননি ডাকেন না। কাজ কম পাই তাই নিজের পছন্দের স্পোকেন ইংলিশের টিউশনি করে পেট চালাই। যে বাড়িওয়ালার ছেলেকে কোলেপিঠে করে মানুষ করেছিলাম সে এই বাড়ি থেকে আমায় উচ্ছেদ করতে চায়।' বলতে বলতে চোখ জলে ভেসে যেত ললিতার।

81 साल की उम्र में विक्टोरिया नंबर 203 की एक्ट्रेस का निधन - victoria no  203 actor lalita chatterjee dead at 81 tmov - AajTak

২০১৮ সালের ৯ মে গভীর রাতে বাথরুমে পড়ে যান। সেরিব্রাল অ্যাটাক। মেডিকাতে দেওয়া হলেও শেষরক্ষা হয়নি। কলকাতার মেম বহু বঞ্চনায় প্রস্থান নিলেন ইহজগৎ থেকে।

হতে চেয়েছিলেন জগতখ্যাত গায়িকা। মনে করতেন সেই যোগ্যতা তাঁর আছে। নিজের গানের রেকর্ডও বার করেন কিছু। কিন্তু পরিচিত হলেন নায়িকা রূপে। পরের জন্মে জন্মাতে চেয়েছিলেন বিখ্যাত গায়িকা রূপে, তাই যেন তিনি হন। আগামী জন্মে স্বনামধন্যা গায়িকা হয়েই জন্মান রুণু ললিতা। প্রণাম।


ভিডিও স্টোরি