বিবেক অগ্নিহোত্রীর সিনেমা মানেই বিতর্কের কেন্দ্রে উঠে আসা এক গল্প। ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’ এবং ‘দ্য ভ্যাকসিন ওয়ার’–এর পর এবার পরিচালক ফিরছেন আরেকটি আলোচিত ও সম্ভাব্য বিতর্কিত ছবি নিয়ে—‘দ্য বেঙ্গল ফাইলস’। তবে এই ছবির মুক্তি ঘিরে শুরু হয়েছে জটিলতা ও অনিশ্চয়তা।
বিবেক
শেষ আপডেট: 13 June 2025 07:17
বিবেক অগ্নিহোত্রীর সিনেমা মানেই বিতর্কের কেন্দ্রে উঠে আসা একেকটা গল্প। ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’ এবং ‘দ্য ভ্যাকসিন ওয়ার’–এর পর এবার পরিচালক ফিরছেন আরেকটি আলোচিত ও সম্ভাব্য বিতর্কিত ছবি নিয়ে—‘দ্য বেঙ্গল ফাইলস’। তবে এই ছবির মুক্তি ঘিরে শুরু হয়েছে জটিলতা ও অনিশ্চয়তা। বিশেষ করে, গতকাল অর্থাৎ ১২ জুন, ছবির টিজার মুক্তির পর থেকেই আরও স্পষ্ট হয়েছে কিছু ‘সংবেদনশীল’ বিষয়। টিজারের রয়েছে এক সংলাপ, যেখানে বলা হচ্ছে ‘বাংলা দ্বিতীয় কাশ্মীর হতে চলেছে’ দ্বিতীয়, টিজার শেষে এক লেখা—‘কাশ্মীর যদি আপনাকে কষ্ট দিয়ে থাকে, তবে বাংলা আপনাকে তাড়া করে বেড়াবে’ এবং তৃতীয়, টিজারের একটি দৃশ্য— মা দুর্গার প্রতিমা দাউ-দাউ করে জ্বলছে। ভাবাবেগে আঘাত, ধর্মীয় রাজনীতি, উস্কানিমূলক এমন অনেক অভিযোগের ভিড় বাড়ছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। তাই, বাংলায় ছবিটি আদৌ মুক্তি পাবে কিনা, তা নিয়ে উঠছে নানা প্রশ্ন।
কী নিয়ে ‘দ্য বেঙ্গল ফাইলস’?
‘দ্য বেঙ্গল ফাইলস’ ছবির পটভূমি পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক, সামাজিক ও মানবাধিকার ইস্যু। ধারণা করা হচ্ছে, ছবিতে উঠে আসতে পারে রাজ্যের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক হিংসা, জাতিগত সংঘাত বা ভোট-পরবর্তী অশান্তির মতো স্পর্শকাতর বিষয়গুলি। এই কারণেই বাংলায় ছবিটির মুক্তি নিয়ে বিতর্কের আগুন ইতিমধ্যেই উস্কে উঠেছে। তবে পরিচালক বিবেকের কথায় ‘এই ছবি ১৯৪৬ সালের অবিভক্ত বঙ্গের ঐতিহাসিক হিংসার ঘটনাগুলো তুলে ধরবে। বিশেষ করে ‘ডাইরেক্ট অ্যাকশন ডে’ ও ‘নোয়াখালি দাঙ্গা’। তুলে ধরা হবে মানবাধিকারের প্রশ্ন — জীবনের অধিকার।’ নির্মাতাদের বক্তব্য অনুসারে, ‘এটি একটি ভুলতে বসা ইতিহাসের ছবি যা বিদ্রোহী ভাবধারাতে উপস্থাপন করবে।’
মুক্তি নিয়ে কেন অনিশ্চয়তা?
টিজার মুক্তির পর ছবিটির সম্ভাব্য ‘রাজনৈতিক প্রভাব’ নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। রাজ্য সরকারের তরফে এখনও ছবিটির মুক্তি নিয়ে কোনও আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া না এলেও, অনানুষ্ঠানিকভাবে নানা মহলে আলোচনা শুরু হয়েছে। এর ফলে ছবিটি বাংলায় মুক্তি আপাতত অনিশ্চয়তার মুখে। বাংলার প্রেক্ষাপট নিয়ে তৈরি ‘দ্য বেঙ্গল ফাইলস’, শুটিংকালে কলকাতায় ‘সুরক্ষা’ সমস্যার কারণে মুম্বইয়ে শুটিং করা হয়। 'দ্য বেঙ্গল ফাইলস'-এর টিজার মুক্তির পর থেকে চাঞ্চল্য শুরু হয়ে গিয়েছে, রাজনৈতিক, প্রোপাগান্ডা ফিল্ম বলা হচ্ছে, কমেন্টে এও বলা হচ্ছে, উস্কানিমূলক এবং ধর্মীয় রাজনীতিকে কেন্দ্র করে এই ছবি হয়েছে।
বিবেক অগ্নিহোত্রীর প্রতিক্রিয়া
‘আমার কানে এখনও অবধি তেমন খবর কিছু আসেনি। সরকারপক্ষ থেকে যদি ‘দ্য বেঙ্গল ফাইলস’ কে কোনওভাবে আটকানো হয়, একজন ফিল্মমেকার হিসেবে আমি লড়াই করব।’
বিতর্ক না সচেতনতা?
বর্তমানে সিনেমা শুধু বিনোদনের মাধ্যম নয়, বরং তা হয়ে উঠেছে রাজনৈতিক মতপ্রকাশের এক শক্তিশালী প্ল্যাটফর্ম। ‘দ্য বেঙ্গল ফাইলস’ সেই ধারাকেই আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। তবে বাংলা ভাষায় ছবিটির মুক্তি যদি আটকে দেওয়া হয়, তবে তা ঘিরে আবারও মুখোমুখি হতে পারে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বনাম রাজনৈতিক সংবেদনশীলতার চিরাচরিত দ্বন্দ্ব।
অন্যদিকে একাংশের মত, অভিসন্ধি নিয়েই বাংলার ছাব্বিশের বিধানসভা ভোটের আগে এই ‘প্রোপাগান্ডা’ ফিল্মটি রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে সামনে আনতে চাইছেন পরিচালক বিবেক অগ্নিহোত্রী। গত এপ্রিল মাসে মুর্শিদাবাদে শুটিং করতে এসে বাংলাকে কাশ্মীরের সঙ্গে তুলনা করে নেটপাড়ার একাংশের বিদ্বেষের পাত্র হন পরিচালক। আর এ কারণে আরও ‘পোক্ত’ হচ্ছে পরিচালকের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ।
তাই ‘দ্য বেঙ্গল ফাইলস’ নিয়ে বিতর্কের পাশাপাশি প্রশ্ন উঠছে, এই ছবির মাধ্যমে কি সত্যিই আলো আনবে কিছু গোপন অধ্যায়? নাকি এটি শুধুই একটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রচেষ্টা? দর্শকের কাছে এই প্রশ্নের উত্তর আসবে হয়তো ছবিটি মুক্তি পেলেই। বাংলায় সে ছবি রিলিজ হবে কি না, সেই প্রশ্নটাই এখন বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আপাতত ঠিক হয়েছে ৫ই সেপ্টেম্বর দেশব্যাপী মুক্তি পাবে ছবি। কিন্তু ছবিটি আদৌ বাংলায় মুক্তি পায় কি না, তা অবশ্য সময়ই বলবে। তবে বিতর্কের আগুনে যে আরও ঘি পড়তে চলেছে, তা বলাই যায়।