শেষ আপডেট: 16th May 2024 18:46
শুভদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়
জি বাংলার জনপ্রিয় সিরিয়াল 'নিম ফুলের মধু'-র গল্পে ঘটে চলেছে একের পর এক উদ্ভট ঘটনা। দেখানো হয়েছিল পর্ণা-সৃজন সহ দত্ত বাড়ির সকলের বয়স বেড়েছে কারণ গল্প দশ বছর এগিয়ে গেছিল। পর্ণা হয়ে উঠেছে এক কন্যা সন্তান পুটির মা। কিন্তু সেসবের ধার ধারল না চ্যানেল ও চিত্রনাট্যকার। গল্প আবার দশ বছর পিছিয়ে নিয়ে গিয়ে পর্ণাকে ভর্তি করে দেওয়া হল কলেজে। অথচ কলেজ পাশ করে ইউনিভার্সিটির পড়া শেষ করে পর্ণার বিয়ে হয়েছিল সৃজনের সাথে। দুর্ঘটনায় স্মৃতিশক্তি হারিয়ে সে এখন কলেজের ছাত্রী। ২০২৪ সালকে ২০১৪ সাল ভাবছে পর্ণা। পর্ণার ভূমিকায় অভিনয় করছেন পল্লবী শর্মা।
পর্ণা দত্তবাড়ির ছাদ থেকে পড়ে গিয়েছিল একেবারে সটান নীচে। তর্ক করতে করতে পর্ণাকে ছাদ থেকে ঠেলে ফেলে দেয় বড় জা মৌমিতা। রক্তারক্তি ব্যাপার। হাসপাতালে যমে-মানুষে টানাটানি পর পর্ণা প্রাণে বাঁচলেও সে ১০ বছরের স্মৃতি হারিয়ে ফেলেছে.! আর এখন সে নিজেকে কলেজ স্টুডেন্ট ভাবছে.! ঠিক দশ বছর আগে ফিরে গেছে পর্ণা। সৃজনের সঙ্গে বিয়ের পর্ব, শ্বশুরবাড়ির লোকদের, এমনকী নিজের একমাত্র মেয়ে পুটিকেও ভুলে গেছে পর্ণা। সমাধান এখন একটাই, পর্ণার সঙ্গে দশ বছর আগের মতো ব্যবহার করে তাকে বর্তমানে ফেরাতে হবে। তাই সৃজন নতুন গল্প রচনা করে। পর্না কলেজও যাচ্ছে এবং সেই কলেজে সৃজন আবার পর্ণার সঙ্গে বন্ধুত্ব করছে ! একবার কলেজ পাশ করা মহিলা আবার কলেজে পড়ছে? প্রেম করতে গিয়ে সৃজন বিয়ের কথা বললে, পর্ণা আবার সেই যৌথ পরিবারের কথাই বলছে! তারপর সৃজন পর্ণাকে দত্তবাড়ি নিয়ে গেলে, বাড়িতে বেড়া দেখে, কৃষ্ণা, মৌমিতা ও অয়নের কথা শুনে তার কেটে যাওয়ার কথাও বলছে পর্ণা!
ওদিকে পর্ণা যখন দত্তবাড়িতে এসব বলছে, তখন দত্তবাড়ির বারন্দায় আবার সুইটি, মৌমিতা ও ঈশা একসাথে দাঁড়িয়ে কুবুদ্ধি আঁটছে!
একই প্লট আবার যেন ফিরিয়ে আনা হল সিরিয়ালে। নায়িকাকে 'মা' ইমেজ থেকে বার করতেই কিএই উদ্ভট চিত্রনাট্য রচনা?
শুধু স্মৃতিলোপ নয়, নিম ফুলের মধু সিরিয়ালের আরেক নাম দেওয়া যেতে পারে যেমন খুশি সাজো প্রতিযোগিতা। ডাকাত,চোর,খুনী,গুন্ডা সবার চোখে ধুলো দিয়ে ছদ্মবেশ নিচ্ছেন দত্তবাড়ির সকলে। পর্ণা সৃজন শুধু নয় তাঁর দেওর ননদ শ্বশুর শাশুড়ি কেউই বাদ যাচ্ছেন না বহুরূপী সাজা থেকে। বারবার ছদ্মবেশে প্লট সাজানো হচ্ছে। একবার হয়,দুবার হয় কিন্তু বারবার ছদ্মবেশ ধারণ হাসির খোরাক হয়ে দাঁড়িয়েছে। ছদ্মবেশের খেলো মেকআপে খুব সহজেই প্রকৃত ব্যক্তিকে চেনা যাচ্ছে । কোনও
সমাধান না পেলেই ছদ্মবেশ একমাত্র পথ এই সিরিয়ালের।
অথচ উত্তর কলকাতার একটি আটপৌরে একান্নবর্তী পরিবারের গল্প দিয়েই শুরু হয়েছিল নিম ফুলের মধু সিরিয়াল। পর্ণা ও সৃজনের ভূমিকায় পল্লবী শর্মা ও রুবেল দাসের জুটি মন ভরিয়েছিল দর্শকদের। বাবুর মায়ের চরিত্রে অরিজিতা মুখোপাধ্যায় বিশাল জনপ্রিয়তা পান। বাবুর বাবার চরিত্রে অর্ঘ্য মুখোপাধ্যায়ের অভিনয়ও প্রশংসা পাযয়। ধ্যাষ্টামো জেঠু থেকে জেঠিমার অভিনয়ও মন জয় করে। আর সবার উপরে লিলি চক্রবর্তীর উপস্থিতি সবার প্রিয়।
কিন্তু আজকালকার সিরিয়ালে সাধারণ গল্পে অসাধারণ চিত্রনাট্য লেখার ইচ্ছেটাই চলে গেছে পরিচালক এবং চ্যানেলের। তাই পরের পর উদ্ভট আইডিয়ার চাষ হচ্ছে। পর্ণা এখানে বাড়ির বউ বা সাংবাদিক শুধু নয়, পর্ণা যেন কৃষ্ণের নারী অবতার রূপে ছোট পর্দায় আবিভূর্তা হচ্ছেন। পরিচ্ছন্ন সুস্থ যৌথ পরিবারের গল্প যা মনের আরাম দেয় তেমন সিরিয়াল নেই। ভায়োলেন্স থেকে পরকীয়া হয়ে উঠেছে সিরিয়ালের সারবস্তু। একান্নবর্তী পরিবারের ছোট ছোট সুখ দুঃখ নিয়ে গল্প লেখার মানুষ নেই। বাড়িতেই থাকছে বড় বড় ক্রিমিনাল। দর্শকরা কোন শ্রেণীর সেটাও প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে? অশিক্ষিত নিম্ন রুচির দর্শককে টার্গেট অডিয়েন্স করেই যেন বাংলা সিরিয়ালের চিত্রনাট্য লেখা হচ্ছে! পাঁচশো পর্ব পেরিয়ে গেলেও নিম ফুলে মধু নেই, বরং নিম ফুল শুকিয়ে যাচ্ছে অবাস্তব গল্পে।আর মধু তো দূর অস্ত।