শেষ আপডেট: 5th August 2023 17:39
'রকি অউর রানি কি প্রেম কাহানি' (Rocky aur Rani Ki Prem Kahani), করণ জোহরের নতুন ছবি সকলের মন ছুঁয়ে যাচ্ছে। দর্শকদের বিশেষ করে বাংলার মানুষদের কাছে এই ছবি ভাললাগার গুরুত্বপূর্ণ একটা জায়গা হচ্ছে ছবির চন্দন চ্যাটার্জী চরিত্রটি। যে ভূমিকায় অভিনয় করেছেন বাংলার অভিনেতা টোটা রায় চৌধুরী (Tota Roychowdhury)। আলিয়ার বাবার চরিত্রে দেখা গিয়েছে টোটাকে। এই চরিত্রেই মিথ ভাঙলেন টোটা। বিশেষ করে ‘ডোলা রে’ নাচে টোটার কত্থক তো এখন টক অফ দ্য টাউন। পুষ্পরাগ টোটা রায়চৌধুরীর সমসাময়িক বাংলার হিরোরা মুম্বই গিয়ে কাজ করলেও ছাপ ফেলতে পারেননি মাস দর্শকের কাছে। এখানেই ব্যতিক্রম টোটার চন্দন চ্যাটার্জী চরিত্রটি।
'রকি অউর রানি কি প্রেম কাহানি' ছবিতে করণ জোহর আপনার ভাল নাম পুষ্পরাগ রায়চৌধুরী ছবির টাইটেল কার্ডে ব্যবহার করলেন। এমনটা এই প্রথম তো?
আমি নিজেই বলেছিলাম করণ স্যারকে, পুষ্পরাগ টোটা রায়চৌধুরী নামটা ছবিতে রাখতে। আমি ভাল নামটা এবার থেকে ব্যবহার করতে চাই।
ফিল্মে আসার পরে আপনার নাম টোটা (Tota Roychowdhury) ব্যবহার করতে কে বলেছিলেন?
টোটা আমার ডাক নাম। প্রভাত রায়ের 'দুরন্ত প্রেম' ছবিতে আমার ডেবিউ। কলেজের ফার্স্ট ইয়ার থেকে সেকেন্ড ইয়ারে উঠব। প্রভাত রায়ের মতো পরিচালক ডেকে কাজ দেন, তাই করি। দিন দশেকের কাজ করে দিই। ডাক নাম ছবিতে ব্যবহার করব অমুক কুমার বলে এমন ইচ্ছেও ছিল না। প্রভাত রায় বললেন, 'টোটা নামটা বেশ ভাল লাগছে। এটাই থাক।' দুরন্ত প্রেম ছবির চরিত্রের নামটাও উনি টোটা করে দেন। ভিলেন শেডের চরিত্র।
অঞ্জন চৌধুরী 'নাচ নাগিনী নাচ রে' আর 'পূজা' ছবিতে আমাকে প্রথম হিরোর রোল দেন। পজিটিভ চরিত্র। ছোট পর্দায় প্রথম হিরোর রোল আমাকে দেন প্রভাত রায়ই। 'আন্দোলন' সিরিয়াল। ঋতুপর্ণা ছিলেন। এতদিনেও নামটা পাল্টানো হল না। টোটা নামটাই বিখ্যাত হয়ে গেল। এবার আমি ভাবলাম ভাল নামটা আবার ছবিতে ব্যবহার করি। পুষ্পরাগ নামটা শুধু মা-বাবা জানবেন আর স্কুলের বন্ধুরা জানবে, এটা তো হতে পারে না।
টোটার আসল নামটাই হারিয়ে গেছে, সেই রোম্যান্টিক নামে তাঁকে ডাকতেন কেবল সৌমিত্র
যে কোনও বাংলার অভিনেতার কাছে করণ জোহরের ছবির অফার পাওয়া স্বপ্নের মতো। আপনার কাছে কী ভাবে এসেছিল 'রকি অউর রানি কি প্রেম কাহানি' ছবির অফার?
এক রবিবার বিখ্যাত কাস্টিং ডিরেক্টর শানু শর্মা আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। শানুজি আমার আগে বেশ কয়েকটি কাজ দেখেছেন। তখন আমি কলকাতায়। উনি মূলত যশরাজ ফিল্মসের জন্যই কাস্টিং করেন। এর বাইরে একমাত্র করণ জোহরের ছবির জন্য কাস্টিং করেন। উনি আমাকে চিত্রনাট্যের একটা অংশ পাঠিয়ে বলেন, এক্ষুনি অডিশন দাও। সঙ্গেসঙ্গে আমার মোবাইলে রেকর্ড করে পাঠিয়ে দিলাম।
শানু শর্মা দেখে বললেন, 'আমার তো বেশ ভাল লেগেছে, আমি ডিরেক্টরকে পাঠাচ্ছি।' তখন কে ডিরেক্টর, কোন হাউসের ছবি কিছুই আমি জানি না। আধ ঘণ্টার মধ্যে উনি আমায় ভিডিও কলে নিয়ে জানালেন, 'করণের ভীষণ পছন্দ হয়েছে!' আমি বললাম, 'কোন করণ?' উনি বলছেন, 'করণ জোহর?' আমি অবাক হয়ে বললাম, 'দ্য করণ জোহর?' তখন শানু শর্মা বলছেন, 'আর কজন করণ জোহরকে তুমি চেনো? করণ জোহরের ছবির জন্য তোমায় চাইছি বললে আগেই তোমার স্বতঃস্ফূর্ততা আমি পেতাম না।'
দু'সপ্তাহ পরে আমি বম্বেতে করণ জোহরের অফিসে গিয়ে দেখা করলাম। তো করণ জোহর আমায় চরিত্রটি বুঝিয়ে দিয়ে মোক্ষম প্রশ্নটি করলেন, 'তুমি কী করতে চাইবে?' আমি বললাম করণকে, 'করতে চাইব মানে! আমি তো ঈশ্বরের কাছে আজীবন এই প্রার্থনাই করেছি যে করণ জোহরের সঙ্গে যেন কাজ করার সুযোগ পাই।' আমি আরও বলি করণকে, 'যখন ঋতুপর্ণ ঘোষের 'চোখের বালি' বম্বেতে প্রিমিয়ার হয়েছিল তখন আপনি (করণ) এসেছিলেন। তখন আপনি আমার সঙ্গে কথাও বলেছিলেন, কিন্তু আপনার এখন আর মনে নেই। মনে থাকার কথাও নয়। সেদিন থেকেই আমি আপনার ব্যবহারে মুগ্ধ হয়ে যাই।'
আসলে ছবিতে বিহারীর চরিত্রে বড় বড় চুল দাড়িতে করণ আমায় পর্দায় দেখেছিলেন। তারপর যখন প্রিমিয়ারে সামনাসামনি দেখা হয়, তখন আমার ক্লিনশেভড, চুল ছোট করে ছাঁটা ছিল। তো করণ আমায় দেখে কথা বলছিলেন। আমি ওঁকে বলি, 'আমার অভিনয় কেমন লাগল ছবিতে?' উনি বললেন, 'তুমি আবার কোন রোলটা করলে?' বিহারীর চরিত্র শুনে উনি বললেন, 'ওরে বাব্বা! খুবই ভাল লেগেছে তোমার কাজ।' আমার যেটা ভাল লেগেছিল, করণ জোহর সেদিন আমার সঙ্গে সাধারণ মানুষ হিসেবেই কথা বলেন। পরে বোঝেন, আমি চোখের বালি ছবির বিহারী। করণ জোহর এবার বললেন, 'দেখো ঈশ্বর মানুষকে ঘুরেফিরে একটা বিন্দুতে এনে ঠিক পৌঁছে দেন।'
চন্দন চ্যাটার্জী চরিত্রের অফার দেওয়ার সময়ে করণ জোহর আপনাকে নাকি কিছু শর্ত দিয়েছিলেন?
করণের শর্ত ছিল, প্রথমত এই চরিত্রটা যিনি করবেন তাঁর নাচ এবং সঙ্গীত সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকতে হবে। দ্বিতীয়ত, তাঁকে কত্থক জানতে হবে ও শিখতে হবে। আর তৃতীয় ব্যাপার হচ্ছে, রণবীর সিংয়ের সঙ্গে নাচার সময়ে দু'জনকেই যেন সমান আকর্ষণীয় লাগে। আমি এক চয়েসেই ওঁদের পছন্দ হয়ে যাই।
কত্থক নৃত্যশিল্পীর রোল করা অভিনেতার উদাহরণ বিরল। আপনার মনে হয়নি, নিজের ইমেজে নেগেটিভ প্রভাব পড়তে পারে?
আমার একবারের জন্যও মনে হয়নি। অন্য কোনও পরিচালক বললে হয়তো আমি সেই নিয়ে একটু সন্দিহান থাকতাম। এবারে ছিলাম না, তার কারণ নামটা করণ জোহর। আমার দৃঢ় বিশ্বাস ছিল, তিনি কমেডির মোড়কে ছেলেদের নাচ মিমিক্রি করে পর্দায় বিক্রি করবেন না। আমার বিশ্বাস ঠিক ছিল। চন্দন চ্যাটার্জী চরিত্রটা মিথ ভাঙল।
কলকাতায় কত্থকের নামকরা নৃত্যশিল্পী পারমিতা মৈত্রের কাছে আমি কত্থকের প্রাথমিক তালিম নিই। তারপর এই ছবির কোরিওগ্রাফি করেন মুম্বইয়ের বিখ্যাত বৈভবী মার্চেন্ট। ওঁর তত্ত্বাবধানে নৃত্যশিল্পী নিকিতা বানাওয়ালিকরের কাছ থেকে কত্থকের স্টেপগুলো তুলি। বৈভবী মার্চেন্ট মাধুরী দীক্ষিতের সঙ্গেও কাজ করেছেন। তো আমার নাচগুলো সব 'দেবদাস'-এর মাধুরীজির নাচগুলোই ছিল। একটা কথাই বলব, আমরা সকলে এই ছবিতে শ্রদ্ধা-সহকারে কত্থক নিয়ে কাজ করেছি।
রণবীর সিংয়ের সঙ্গে কাজ করে কেমন লাগল? আপনাদের একসঙ্গে 'ডোলা রে ডোলা' নাচ রীতিমতো ভাইরাল!
রণবীর ভীষণ পরিষ্কার মনের ছেলে। সবসময় এনার্জি নিয়ে কাজ করে। মনটা ভীষণ ভাল। রণবীর বাইরে খুব খোলামেলা, হাসিখুশি দেখতে হলেও কাজের প্রতি ভীষণ সিরিয়াস। মেথড অ্যাক্টর।
ছবিতে জয়া বচ্চন আপনার নাচ নিয়ে হাসাহাসি করছেন দেখানো হয়, কিন্তু বাস্তবে জয়াজির সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা কেমন?
জয়াজিকে কঠোর কঠিন মনে হয়, কিন্তু উনি সবচেয়ে হাসিখুশি মানুষ। সুইচ অন সুইচ অফ গোছের আর্টিস্ট। এই হাসছেন কিন্তু যেই ক্যামেরার সামনে যাচ্ছেন তখন অন্য রাশভারী চেহারা। ওঁর সঙ্গে কাজ করে মনে হল যদি উনি আরও ক'টা ছবি করতেন, কত ভাল হত। কত কিছু আমরা পেলাম না ওঁর কাছে। প্রথমদিন জয়াজি আসতেই আমি আর চূর্ণী (গঙ্গোপাধ্যায়) ওঁকে পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করলাম। জয়াজি ঝরঝরে বাংলায় কথা বললেন। তারপর জয়াজি ইউনিটের সবাইকে বললেন আমাদের দেখিয়ে, 'এরা কিন্তু বাংলার খুব নামকরা শিল্পী, এদের ছোটখাটো ভেবো না।' অদ্ভুত একটা মাতৃত্বসুলভ ভাবে আপন করে নিলেন। বললেন, আমরা দু'জন ওঁর বাপের বাড়ির জায়গার লোক।
সঙ্গে আবার আর এক লিভিং লেজেন্ড ধর্মেন্দ্রও?
স্বপ্নের মতো। আমার একটা ঘটনা মনে পড়ছে, একদিন একদিকে রণবীর আর আলিয়ার শট নেওয়া হচ্ছে, আমরা বাকি কাস্টরা আর একদিকে বসে আছি। তখন দেখছি জয়া বচ্চন, ধর্মেন্দ্র সাব আর শাবানা আজমি জি 'শোলে' ছবি নিয়ে পুরনো গল্প করছেন। শোলের কাস্টের কারা বেঁচে আছেন, ইত্যাদি। দু'জন কুশীলব এবং আর একজন চিত্রনাট্যকারের ঘরণী। আমার কাছে ভারতের শ্রেষ্ঠ ছবি 'শোলে'। যেন মনে হল চোখের সামনে ম্যাজিক ঘটছে।
শাবানা আজমি তো এই ছবিতে আপনার মায়ের রোলে?
শাবানাজি ভীষণ মমতাময়ী। এই হিন্দি ছবিতে শাবানাজি বাংলায় রবীন্দ্রসঙ্গীত গেয়েছেন। একদিন মনে আছে, আমরা সেদিন উত্তরপ্রদেশের একটা রিসর্টে ছিলাম শ্যুটের কারণে। সন্ধের দিকে হঠাৎ দেখি সুইমিং পুল থেকে বাংলা রবীন্দ্রনাথের গান ভেসে আসছে। আমি কফি হাতে ফেলুদার মতো তদন্ত করতে গেলাম। গিয়ে দেখি উনি ভিডিও কলে কলকাতার এক বান্ধবীর সঙ্গে কথা বলছেন এবং নিজে গান গেয়ে জিজ্ঞেস করছেন ঠিক বাংলা উচ্চারণে গানটা গাইতে পারছেন কিনা।
তখন বুঝলাম, এঁদের এই বয়সে এসেও খিদে, ডেডিকেশন কতখানি। এই হচ্ছে জাতশিল্পী। বম্বের শিল্পীদের ঝকঝকে জীবনযাত্রাটা আমাদের প্রলুব্ধ করে ঠিকই, কিন্তু তার পেছনে যে কত পরিশ্রম কত ভালবাসা থাকে!
আজ আপনার নাচ সোশ্যাল মিডিয়াতে ভাইরাল কিন্তু একসময় আপনার কাছে ছবির অফার আসত না। বলা ভাল, আসতে দেওয়া হত না?
এগুলো তো আমাদের হাতে নেই। একটা কথা বলব, বাংলা ইন্ডাস্ট্রি তো আমায় সুযোগ দিয়েছে। হ্যাঁ মাঝখানে আমার কাছে ভাল কাজ কম এসেছে। কারও দায় নেই কিন্তু আমায় নিয়ে কাজ করার। আমাকে নেওয়ার কারণটা বাংলা ইন্ডাস্ট্রির অনেক পরিচালকের কাছে যুক্তিযুক্ত মনে হয়নি। তাঁরা নেননি। আমি কী বলতে পারি! যখন বিহারী করতে গেলাম সবাই বলেছিল পারব না। এখন তাঁরাই প্রশংসা করেন।
আপনার অভিনয় ক্ষমতা, নাচের পারদর্শিতা আর জিমচর্চিত চেহারা, হিরো হওয়ার মতো মুখ-- সবই ছিল। কিন্তু আপনাকে নায়কের রোলে ব্যবহার করল না বাংলা ছবি। নিজেকে একনায়কতন্ত্রের শিকার মনে হয়?
এখন আর ভেবে কী হবে! কেন হয়নি সেই উত্তর খোঁজা এখন আমার কাছে সময় নষ্টের সামিল। আমার কোনও গাফিলতি হয়েছে কিনা সেটা খুঁজব। আমার দিক থেকে ডেডিকেশনের অভাব ছিল না। কেন জুটি হয়নি? কেন হিরোর রোল বেশি পাইনি-- এই বয়সে এসে আর সময় ব্যয় করতে ইচ্ছে করে না। কিন্তু যখনই সুযোগ পেয়েছি, আমার একশো ভাগ দিয়েছি এবং মানুষ প্রশংসা করেছে।
২০ বছর আগে 'চোখের বালি' দেখে যেমন প্রশংসা করেছে মানুষ। এখনও 'রকি অউর রানি' দেখে উচ্ছ্বসিত দর্শক। কিছুদিন আগে টেলিভিশন করে ভীষণ জনপ্রিয়তা পাই। ফেলুদা করেও মানুষ আমায় ভালবাসা দিয়েছেন। আর্ট বা কমার্শিয়াল-- দু'দিকেই কাজের সুযোগ আমি ধারাবাহিক ভাবে পেয়েছি। এখন কম-বেশি সেটা আমার হাতে নেই। কে কী করেছে, আমি তার মধ্যে যাব না। আমি এখনও দাঁড়িয়ে আছি সেটাই সত্য।
আজ সোশ্যাল মিডিয়ায় আপনার কত্থক নাচ নিয়ে দর্শক উচ্ছ্বসিত। কিন্তু এটা বলিউড বলেই কি মানুষের এত প্রশংসা? আপনার হার্ডকোর কমার্শিয়াল ছবির নাচ নিয়ে এরাই আবার মিম ট্রোলের আসর বসিয়েছিল, ফেলুদা অঞ্জন চৌধুরীর ছবিতে নাচছে।
মিম, ট্রোল এগুলো তো খামচা মেরে ছবি থেকে তুলে বানানো হয়। ছবির বিষয়বস্তু দেখে না। আর আগে তো তখন মানুষের হাতে হাতে মোবাইল ছিল না। অঞ্জন চৌধুরী, প্রভাত রায়-সহ বাংলা বেশ কিছু ছবিতে নাচে স্টান্ট করেছিলাম। কিন্তু তখন প্রচার পাইনি। তখন তো কাগজে সিনেমার পাতা একটুখানি থাকত। আমি এখানে অনেক মঞ্চেও ডান্স পারফর্ম করেছি, দর্শকরা ভাল বলেছেন। সমস্যাটা হচ্ছে মানুষ সামগ্রিক ভাবে কিছু দেখে না। কাদের জন্য ছবিটা বানানো, সেটা তো বুঝতে হবে। মাসদের নিয়ে ক্লাসদের পরিহাস করার স্বভাব আজকের নয়। এই দ্বিচারিতা বাঙালি করেই।
যখন টেলিভিশনে কাজ করতাম ২০০০ সাল নাগাদ, তখন এক ভদ্রলোক বললেন দেখা হলে, 'আপনাকে কোথায় যেন দেখেছি!' তখন ওঁর স্ত্রী বলছেন, 'আরে তুমি তো ওঁকে সিরিয়ালে রোজ দেখো।' তখন ওই ভদ্রলোক কোন গর্তে ঢুকবেন বুঝতে পারছেন না। আমি তখন হাহাহা করে হাসছি। বয়সটাও কম ছিল। সব কাজ তো সবার জন্য নয়। সুউচ্চ রুচি যাঁদের, তাঁরা দেখবেন না। তবে আমি বরাবরই যখন 'চোখের বালি' করেছি তখন 'রাম লক্ষ্মণ' করছি। যখন 'অংশুমানের ছবি' করছি তার সঙ্গে স্বপন সাহার 'গোলমাল' করছি। এর মধ্যে অন্যায়েরই বা কী আছে, বিদ্রুপেরই বা কী আছে?
'রকি অউর রানি'র চন্দন চ্যাটার্জীর মতো অনেক ছেলে নাচতে ভালবাসলেও পরিবার, সমাজ সেটা হতে দেয় না। আপনাকে দিয়ে যেন করণ জোহর সেই প্রান্তিক মানুষগুলোর মনের কথা বলেছেন, তাই না?
এই ধরণের মানুষজনের সঙ্গে আমার কেরিয়ারের প্রথম থেকে ওঠাবসা। কেউ হয়তো ক্লাসিক্যাল ডান্সার, মেয়েদের পোশাক ডিজাইনার বা মেক আপ আর্টিস্ট। তাঁদের ছোট থেকেই অনেক সমালোচনা শুনতে হয়েছে। সমালোচনাটা অত্যাচারের জায়গায় চলে গেছে। আমি অবশ্য ওয়েস্টার্ন ডান্স করতাম। সেখানে টোন টিটিকরি কম হয়। কিন্তু পুরুষরা শাস্ত্রীয় নৃত্য নাচলেই তখন সমালোচনার মাত্রা তীব্র হয়ে ওঠে। সেই বেদনাটাকে মনে নিয়েও যে কত মানুষ নাম করেছেন সেটাই আসল পৌরুষ। পৌরুষ কিন্তু লোকের পেছনে লাগা নয়, লোককে ছোট করা, হেয় করা নয়। পৌরুষ হচ্ছে এসব সমালোচনা অত্যাচার সহ্য করার পরেও তাঁর পথটা অবিচল থাকে, সেটাকে সত্যিকারের পৌরুষ বলে। এটা সবার বোঝা উচিত। আমি সত্যিই খুব কৃতজ্ঞ।
করণ স্যারকে বলছিলাম, যে আমাদের এই ছবিটা যদি মানুষকে ভুল শুধরোতে সাহায্য করে, কাউকে সমালোচনা করার আগে তাঁর শিল্পের প্রতি ভালবাসাটাকে সম্মান দিতে শেখায়, তাহলে আমরা অনেক এগিয়ে যাব। এই আমি আবার ফেলুদা করেছি, বিহারী করেছি, পুলিশ অফিসারের রোল করেছি। আমি যখন অভিনয় জগতে এসেছিলাম, এটাই ব্রত নিয়ে এসেছিলাম, একই জীবনে বহু মানুষের চরিত্র ধারণ করব।
আপনার থেকে অনেক জুনিয়ররা মহানায়ক পুরস্কার পাচ্ছেন। আক্ষেপ হয়?
পুরস্কার যাঁরা বিতরণ করবেন, তাঁরা সেকথা ভাববেন। এটা নিয়ে সমালোচনা কেন করা হচ্ছে? যারা পুরস্কার পেয়েছেন তাঁরাও কিন্তু সফল অভিনেতা অভিনেত্রী। বাঙালি বাঙালিকে নিয়ে অযথা লাগাতার পরিহাস করা ঠিক নয়।
আপনার নতুন কাজ কী আসছে?
বাংলাতে আগামী সপ্তাহে ১১ অগস্ট আসছে হইচই-তে, 'নিখোঁজ' সিরিজ। অয়ন চক্রবর্তীর পরিচালনা।
সিরিয়ালে ফিরতে চান?
সিরিয়ালের দর্শকরা আমার ভীষণ প্রিয়। এখনও দেখছি শ্রীময়ীর রোহিতদার কথা ফিরে আসছে। সমস্যা হচ্ছে, সময় নেই। বাইরে থেকে কাজের এত চাপ আসছে। অন্য ভাষাতে কাজ করলেও আমি বাংলাতেই কাজ করব। বাঙালি দর্শকরাই আমাকে তৈরি করেছেন।
'তোমাদের ঋতুপর্ণ তো আমায় ঠকিয়েছে!' আক্ষেপের সুরে বলেছিলেন গীতা দে