Advertisement
ফাইল চিত্র
Advertisement
শেষ আপডেট: 3 December 2024 23:49
দ্য ওয়াল ব্যুরো: বাংলা ফিল্ম ও টেলিভিশন ইন্ডাস্ট্রির সমস্যাগুলি তুলে ধরতে আজ, মঙ্গলবার কলকাতা প্রেস ক্লাবে একটি গুরুত্বপূর্ণ সাংবাদিক বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছিল ডিরেক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অফ ইস্টার্ন ইন্ডিয়ার (DAEI) তরফে। ইন্ডাস্ট্রির ক্রমবর্ধমান সংকট ও কাজের পরিবেশের অবনতির বিষয়ে আলোচনা করেন প্রেসিডেন্ট সুব্রত সেন এবং সেক্রেটারি সুদেষ্ণা রায়।
কী কী সমস্যা নিয়ে আলোচনা হয় এদিন, রইল একনজরে।
১. ট্রেড ইউনিয়ন বাধ্যবাধকতা: ট্রেড ইউনিয়নের সদস্য না হলে চলচ্চিত্রকর্মীদের কাজ করার অনুমতি নেই। এটি ভারতের সংবিধানের ধারা ২১-এর পরিপন্থী। গিল্ড সদস্য হতে চাইলেও সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ নির্ভর করে সেক্রেটারি এবং সভাপতির ইচ্ছার ওপর।
২. নতুন সদস্যপদ দেওয়া বন্ধ: ২০১৮ সাল থেকে সহকারী পরিচালকদের গিল্ড কোনও নতুন সদস্যপদ ইস্যু করেনি। এমনকি প্রশিক্ষিত ও দক্ষ কর্মীরাও এই বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন।
৩. যোগ্যতার পরীক্ষা: গিল্ডের সদস্যপদ পেতে কিছু ক্ষেত্রে পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়। ট্রেড ইউনিয়নের এমন পরীক্ষা নেওয়া আইনত বৈধ নয়।
৪. কর্মীসংখ্যা নির্ধারণ: প্রযোজক ও পরিচালকদের উপর নির্দিষ্ট সংখ্যক কর্মী নিয়োগের চাপ দেওয়া হয়, যা বাজেটের উপর অপ্রয়োজনীয় সমস্যা সৃষ্টি করে এবং কাজের স্বাধীনতায় বাধা হয়।
৫. নিয়মের নামে স্বেচ্ছাচারিতা: ইন্ডাস্ট্রির নিয়ম মৌখিকভাবে বা হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজে জানানো হয়। এটি আইনত বৈধ নয় এবং প্রযোজক-পরিচালকদের জন্য অসুবিধার কারণ হয়।
৬. বড় ইউনিটের চাপ: ছোট ইউনিটের কাজেও ৭০-৮০ জন কর্মী নিয়োগ বাধ্যতামূলক করা হয়। এর ফলে শুটিংয়ের খরচ বেড়ে যায় এবং প্রোজেক্ট আর্থিকভাবে অচল হয়ে পড়ে।
৭. শিফট টাইমিং: ভারতের অন্যান্য ইন্ডাস্ট্রিতে ১০ ঘণ্টার শিফট চালু থাকলেও, কলকাতায় ৮ ঘণ্টার শিফট বাধ্যতামূলক। ফলে সময় ও খরচের সমস্যা বেড়ে যায়।
৮. অতিরিক্ত পারিশ্রমিক: বাংলা ছাড়া যে কোন ভারতীয় ভাষায় শুট হলে গিল্ড কর্মীদের দ্বিগুণ বা তিনগুণ পারিশ্রমিক দিতে হয়। এই নিয়মের ফলে কলকাতার বাইরের কোনও প্রোডাকশন হাউস নিতান্ত বাধ্য না হলে কলকাতায় শুটিং করতে চান না। এর ফলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত টেকনিশিয়ানরাই।
৯. শিফটের সময়: শুটিং লোকেশনে পৌঁছানোর সময় থেকে শিফট ধরার নিয়ম থাকলেও, কলকাতায় এটি স্টুডিওতে রিপোর্টিং টাইম থেকে ধরা হয়। এতে খরচ বেড়ে যায়।
১০. বাইরের টেকনিশিয়ানদের বাধা: ভারতবর্ষের অন্য রাজ্য থেকে টেকনিশিয়ান আনার ক্ষেত্রে এখানে সমস্যা তৈরি হয়। কারণ স্থানীয় গিল্ডের কর্মীদের নিয়োগই বাধ্যতামূলক। এটি কাজের পরিসর সীমিত করে।
১১. বিদেশে শুটিং: বিদেশে শুটিংয়ের সময় কলকাতা থেকে ১৯ জন গিল্ড কর্মী নেওয়া বাধ্যতামূলক, যা বাজেটের উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে।
১২. লো বাজেটের সীমা: ফেডারেশনের নির্ধারিত লো বাজেটের সীমা ৩০ লক্ষ টাকা, যা বাস্তবসম্মত নয়। উচ্চ মানের ক্যামেরা ব্যবহারেও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
১৩. ওটিটি প্ল্যাটফর্মে শুটিং: ওটিটি প্রোজেক্টের ক্ষেত্রেও টেলিভিশন সিরিয়ালের মতো ১৪ ঘণ্টার শুটিং নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এতে ওটিটির খরচ বেড়ে যাচ্ছে।
১৪. যেমন ইচ্ছা ছুটি ঘোষণা: ফেডারেশন নিজেদের ইচ্ছামতো ছুটি ঘোষণা করছে, যা প্রোজেক্টের পরিকল্পনায় বিঘ্ন ঘটাচ্ছে।
১৫. জোর করে কর্মী নিয়োগ: অপ্রয়োজনীয় কর্মী নিয়োগের ফলে কাজের মান ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং পরিচালকদের পেশাদার স্বাধীনতায় বাধা সৃষ্টি করছে।
বস্তুত, গিল্ডের বা ফেডারেশনের বিরুদ্ধে এই ধরনের নানা অভিযোগ প্রায়ই উঠেছে বিচ্ছিন্ন ভাবে। অভিযোগের পাহাড় জমেছে গত কয়েক মাস ধরে। কাজ না পেয়ে পথে বসতে হয়েছে বহু শিল্পীকে। ঘটে গেছে আত্মহত্যার চেষ্টার মতো ঘটনাও।
অভিনেতা থেকে পরিচালক, মেকআপ শিল্পী থেকে টেকনিশিয়ান—সমস্ত মহল থেকেই দাবি করা হয়েছে মুখোমুখি কথা বলে, বা লিখিত ভাবে সমস্যার সমাধান করতে হবে। কিন্তু এত কিছুর পরেও সুরাহা মেলেনি পাকাপাকিভাবে।
তাই এবার ফের আসরে নেমেছেন পরিচালকরা। তাঁদের সংগঠনের তরফে সাংবাদিক বৈঠক করে আলোচনা করা হল সমস্যার পাহাড়। সমাধান মিলবে কিনা, সেদিকেই তাকিয়ে টলিউড।
Advertisement
Advertisement