
‘হেসে বললেন, যাই তাহলে?’ শাঁওলি মিত্রর প্রয়াণের মুহূর্তে সঙ্গে ছিলেন অর্পিতা
অর্পিতা ঘোষ
আমি ২২ বছর শাঁওলিদির সঙ্গে রয়েছি। ২০০০ সালে এসেছি এখানে, এখন ২০২২ সাল হয়ে গেল। গুরুগৃহেই বাস আমার। আমি ওঁর কাছেই থাকতাম। উনি আমার কাছে মা। আমার মা চলে গেছেন গত বছর জুন মাসে। আরেক মা চলে গেলেন গতকাল।
আমি আজ অবধি যা শিখেছি, তা ওঁর কাছেই। হাতে ধরে উনি আমায় কাজ শিখিয়েছেন। শুধু থিয়েটার নয়, জীবনদর্শনও ওঁর কাছেই শেখা। জীবনে কোন পথে চলব, তাও দেখিয়ে দিয়েছেন উনিই। শেষ দিন পর্যন্ত উনি এই কাজ করেছেন।
মানুষ হিসেবে উনি একইসঙ্গে এত কোমল ও এত দৃঢ় ছিলেন, যে তা আমি নিজের চোখে দেখেছি। যখন সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম আন্দোলন হচ্ছে, তখন উনি যেমন প্রতিবাদের ঝড় তুলতেন মঞ্চে, তেমনই বাড়ি ফিরে কান্নায় ভেঙে পড়তেন বঞ্চনার কথা, অত্যাচারের বলতে গিয়ে।
শেষদিন পর্যন্ত এই ঋজুতা বজায় ছিল ওঁর। এই যে ইচ্ছাপত্র, তা ২০২০ সালে লিখেছিলেন উনি। খুব অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। তখন আমায় বললেন, “আমি ইচ্ছাপত্র লিখে যাই একটা, নইলে সবাই তোকে দোষ দেবে।”গতকাল সকালেই আমি রিহার্সালে বেরোচ্ছিলাম। আমায় বললেন, ‘তুই বেরিয়ে যাবি?’ বললাম বটে, ‘যাব’, কিন্তু দেখলাম ওঁর শরীরটা খারাপ হচ্ছে। আমি রিহার্সাল ক্যানসেল করলাম ফোন করে। তখন হঠাৎ আমায় বললেন, ‘আমার হাতে সময় আর বেশি নেই।’
সেটা যে সত্যিই হতে চলেছে, তার আঁচ পাচ্ছিলাম। বুঝতে পারছিলাম। শরীর ক্রমশ খারাপ হচ্ছিল ওঁর। আমি মাথার কাছেই দাঁড়িয়ে ছিলাম। একদম শেষে আমার দিকে তাকিয়ে, হেসে বললেন, ‘যাই তাহলে?’ এই বলে আস্তে করে চোখটা বুজলেন, শ্বাস বুজে এল ধীরে ধীরে। আধঘণ্টার মধ্যে চলে গেলেন।
২০১৯ সালে তিনবার নিউমোনিয়া হয়েছিল ওঁর। তার পরে হার্ট ব্লক হয়ে গেছিল। উনি পেসমেকার বসাতে চাননি কিছুতেই। বলেছিলেন, বাড়িতেই শান্তিতে মরতে চাই। এই ভাবেই চলে গেলেন উনি।