শেষ আপডেট: 8th April 2025 19:42
বাঙালি সমাজে পরচর্চার কেন্দ্রবিন্দু তিনি বহুদিন ধরেই। সমাজ তাঁকে থার্ড ওম্যান বলেছে। অথচ এভাবে তাঁকে তৃতীয় নারী বলার কোনও জায়গাই নেই, ছিল না কখনও। কিন্তু আমাদের সমাজের অলিখিত নিয়ম, কোনও বৈবাহিক সম্পর্কে নারী প্রবেশ করা মানেই সমাজের চোখে সব দোষের ভাগী সেই 'দুসরি অউরত' বা তৃতীয় নারীটি। বাঙালির পরচর্চার তেমনই এক নারী চরিত্র সুপ্রিয়া দেবী (Supriya Debi)।
বহু আলোচিত উত্তমকুমারের (Uttam Kumar) সঙ্গিনী ছিলেন সুপ্রিয়া। যদিও সুপ্রিয়াকে দ্বিতীয় স্ত্রীর মর্যাদা দিয়েছিলেন উত্তম। বড় গিন্নি গৌরী দেবীর সঙ্গে ডির্ভোস হয়নি কখনও উত্তমকুমারের। তবে সুপ্রিয়া দেবীর প্রথম স্বামীর খোঁজ ক’জন রেখেছেন?
সুপ্রিয়ার প্রথম বরের নাম ছিল বিশ্বনাথ চৌধুরী। দিল্লিতে ইংরাজি দৈনিকে কাজ করতেন তিনি। সিনেমার দুনিয়ার থেকে তিনি দূরের মানুষ ছিলেন। কিন্তু সুপ্রিয়ার স্বপ্ন ছিল সিনেমার নায়িকা হওয়ার।
বিয়ের আগে অবশ্য, 'বসু পরিবার' ছবিতে উত্তমকুমারের বোনের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন সুপ্রিয়া। বিয়ের পর শাশুড়ি, বর, মেয়ের দায়িত্ব তাঁর কাঁধে এসে পড়ে। তবু স্টুডিওপাড়ায় ঘোরা বন্ধ করেননি সুপ্রিয়া। শেষমেশ সুযোগ এল 'আম্রপালী' ছবিতে অভিনয় করার।
'আম্রপালী' দিয়েই ছড়িয়ে যায় সুপ্রিয়া চৌধুরীর নাম। তারপরেই তাঁর বাড়ি এসে হাজির হন স্বপ্নের নায়ক উত্তমকুমার। পরপর তিনটি ছবিতে উত্তম সুপ্রিয়াকে চুক্তিবদ্ধ করান। হাতে চাঁদ পান সুপ্রিয়া। এক লহমায় হয়ে যান প্রথম সারির নায়িকা। সুচিত্রা, সাবিত্রীর জায়গা নিতে চলে আসেন সুপ্রিয়া।
উত্তমকুমারের সংস্পর্শে এসে প্রথম স্বামীর সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয় সুপ্রিয়ার। অশান্তি চরমে পৌঁছলে তিনি সুপ্রিয়া আর মেয়েকে ছেড়ে দিল্লি চলে যান।
শুরু হয় উত্তম-সুপ্রিয়ার যৌথ সংসার। মেয়ে সোমার দায়িত্ব কিন্তু বিশ্বনাথ চৌধুরী কখনও নেননি। তবে একটা সময় পর, সুপ্রিয়া প্রথম বরকে বলেছিলেন ‘তুমি আর কতদিন একা থাকবে? আবার বিয়ে করো।’
একথা মুখে বলতে কিন্তু মনে এতটুকু দুঃখ রাখেননি সুপ্রিয়া। চাননি স্বামীর থেকে কোন খোরপোশও। প্রথম স্বামীর ঘর ধুয়েমুছে সুপ্রিয়া সাজিয়ে দিয়েছিলেন বরের দ্বিতীয় বউয়ের জন্য।
এখানেই সুপ্রিয়া দেবী সময়ের থেকে অনেকটাই এগিয়ে থাকা এক মহিলা ছিলেন। তাই নিজে দাঁড়িয়ে থেকে প্রথম স্বামী বিশ্বনাথ চৌধুরীর দ্বিতীয় বিয়ে দেন। ততদিনে চৌধুরী পদবী নিজের নামের থেকে ঝেড়ে ফেলেছেন সুপ্রিয়া। উত্তমকুমারের পদবী চট্টোপাধ্যায়, সেটাই লিখতেন সুপ্রিয়া। যদিও আইনত স্ত্রীর সম্মান সুপ্রিয়া পাননি কখনও।
আশ্চর্য ব্যাপার, উত্তমকুমার মারা যাবার পর বিশ্বনাথ চৌধুরী দ্বিতীয় বউকে নিয়ে সুপ্রিয়ার সংসারে এসেছিলেন, থেকেওছিলেন। এমন উদারতা আজও ভাবতে পারে না সাধারণ মানুষ।