‘জয়সলমীর জমজমাট’ সিরিজের কেন্দ্রে রয়েছে এক সাধারণ বাঙালি পরিবার, যারা বেড়াতে গিয়ে জড়িয়ে পড়ে এক মাদক পাচার চক্রের মারাত্মক জালে। শুরু হয় এক শ্বাসরুদ্ধকর অভিযান, যেখানে ভালোবাসা, বিশ্বাস ও বেঁচে ফেরার লড়াই একসঙ্গে ধরা দেয় পর্দায়। এই সিরিজে ‘সোনার কেল্লা’-র প্রতি রেফারেন্স, স্থানের ব্যবহার, এমনকি টাইপফেস ও কালার গ্রেডিং পর্যন্ত ভাবনাচিন্তা করে বেছে নেওয়া হয়েছে, যেন প্রত্যেক দর্শকের মনে ফিরে আসে সেই সোনালী স্মৃতি।
‘জয়সলমীর জমজমাট’
শেষ আপডেট: 13 May 2025 13:32
দ্য ওয়াল ব্যুরো: ‘সোনার কেল্লা’ শুধুমাত্র একটি বাংলা সিনেমা নয় — এটি এক আবেগ, এক শৈশবের স্মৃতি, এক চিরন্তন অনুরণন। সেই ঐতিহাসিক চলচ্চিত্রের ৫০ বছর পূর্তিতে, পরিচালক অর্ণব ‘রিঙ্গো’ ব্যানার্জী এবং প্রযোজক ওহেন্দ্রিলা ব্যানার্জী তাঁদের নতুন ওয়েব সিরিজ ‘জয়সলমীর জমজমাট’-এর মাধ্যমে জানালেন এক অভিনব শ্রদ্ধাঞ্জলি।
সেই পথেই ফিরে চলা...
ঠিক যেখান থেকে ফেলুদা, তোপসে আর মুকুল পাড়ি দিয়েছিল রাজস্থানের পথে, ঠিক সেই রুক্ষ থার মরুভূমি, জয়সলমীরের সোনালি দুর্গ, কুলধরার রহস্যময় ভূতুড়ে শহর আর সীমান্তবর্তী অঞ্চল — সমস্ত কিছুতেই আবার ফিরলেন ‘জয়সলমীর জমজমাট’-এর দল। পরিচালকের কথায়, ‘শৈশব থেকে যদি কোনও একটি বই, একটি গল্প, একটি চরিত্র, একটি স্থান বা একটি অভিযান আমাকে ভীষণভাবে প্রভাবিত করে থাকে, তবে তা হল সত্যজিৎ রায়ের ‘সোনার কেল্লা’। যখন জানতে পারলাম ২০২৫-এ এই ছবির ৫০ বছর পূর্ণ হবে, তখনই বুঝেছিলাম যে, আমাদের তরফ থেকে একটি শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করতেই হবে — আর সেখান থেকেই জন্ম নিল ‘জয়সলমীর জমজমাট’।
সিরিজের শুটিং হয়েছে কখনও থার মরুভূমির রুক্ষ প্রান্তরে, কুলধরার ভূতুড়ে ধ্বংসাবশেষে, জয়সলমীরের সোনালী দুর্গে এবং ভারত-পাক সীমান্তের সীমাবদ্ধ অঞ্চলে। শুধু তাই নয় এমন কিছু জায়গাতে শুট হয়েছে যেখানে পঞ্চাশ বছর আগে সত্যজিৎ রায় নিজে শ্যুট করেছিলেন, এবং রিঙ্গোর কথায় ‘আশ্চর্যের বিষয়, সবকিছু এখনও সেই আগের মতোই রয়ে গেছে। মুকুলের বাড়ি এখনও দাঁড়িয়ে আছে, যেমনটা ছিল। যোধপুরের মেহরানগড় দুর্গে গিয়ে যেন স্মৃতির ঝাঁপি খুলে গেল — আমরা ঠিক সেই জায়গাতেই শুট করলাম যেখান থেকে ডঃ হাজরাকে ধাক্কা দেওয়া হয়েছিল, আর যেখান থেকে তিনি পড়েছিলেন। আর অবশ্যই, আকাশ থেকে দেখা সেই কেল্লার আইকনিক শট — যেন স্বপ্ন পূরণ।’
অন্যদিকে প্রযোজক ওহেলিকা বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, ‘শৈশবের অবিচ্ছেদ্য অংশ ‘সোনার কেল্লা’। সেই সিনেমার ৫০ বছর পূর্তিতে আমরা নিয়ে এসেছি ‘জয়সলমীর জমজমাট’ — এক নতুন, কিন্তু আবেগে ভরা সিনেম্যাটিক যাত্রা, যা পুরনো স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানায় এবং একসঙ্গে নতুন রোমাঞ্চে টেনে নিয়ে যায়। আমরা শুট করেছি সেই হোটেলে, যেখানে রায় মহাশয় ছিলেন। সেই অভিজ্ঞতা ছিল প্রায় অতিপ্রাকৃত। কেল্লার ওপরের ড্রোন শট যেন এক ব্যক্তিগত স্বপ্নপূরণ। ‘জয়সলমীর জমজমাট’ কেবল একটি ওয়েব সিরিজ নয়, এটি আমাদের পক্ষ থেকে একটি আন্তরিক শ্রদ্ধাঞ্জলি — যা পুরনোকে সম্মান জানিয়ে নতুন গল্প বলে।
গল্প জমজমাট
‘জয়সলমীর জমজমাট’ সিরিজের কেন্দ্রে রয়েছে এক সাধারণ বাঙালি পরিবার, যারা বেড়াতে গিয়ে জড়িয়ে পড়ে এক মাদক পাচার চক্রের মারাত্মক জালে। শুরু হয় এক শ্বাসরুদ্ধকর অভিযান, যেখানে ভালোবাসা, বিশ্বাস ও বেঁচে ফেরার লড়াই একসঙ্গে ধরা দেয় পর্দায়। এই সিরিজে ‘সোনার কেল্লা’-র প্রতি রেফারেন্স, স্থানের ব্যবহার, এমনকি টাইপফেস ও কালার গ্রেডিং পর্যন্ত ভাবনাচিন্তা করে বেছে নেওয়া হয়েছে, যেন প্রত্যেক দর্শকের মনে ফিরে আসে সেই সোনালী স্মৃতি।
জমজমাটি কাস্টিং
জমজমাটি কাস্টিং
সব্যসাচী চৌধুরী
অভিনেতা হিসেবে বহু প্রজেক্টে কাজ করলেও ‘জয়সলমীর জমজমাট’ ছিল একেবারে আলাদা ও দারুণ অভিজ্ঞতা। আমার চরিত্রের এক অংশ আমার মতো, আরেকটা একেবারে ভিন্ন — যা এই ভূমিকাকে আরও চ্যালেঞ্জিং করে তোলে, বিশেষ করে কঠিন আবহাওয়া ও ভৌগোলিক পরিস্থিতিতে। তরুণ, উদ্যমী সহ-অভিনেতারা ও গোটা ইউনিটের প্রাণবন্ততা পুরো শুটজুড়ে উৎসাহ জুগিয়েছে। আজও মনে পড়ে, ‘সোনার কেল্লা’র ছাদে সূর্যাস্তের সেই যাদুকর মুহূর্ত। একসময় বাইকে করে ঘোরা প্রিয় ছুটির গন্তব্যেই তিন বছর পর ১৬ দিনের শ্যুটিং — সত্যিই স্মরণীয়। রাত ৩টের শ্যুট, ঠান্ডা আবহাওয়া, সব মিলিয়ে অভিজ্ঞতাটি মনের মধ্যে গেঁথে থাকবে। ফেলুদা ভক্ত হন বা না হন, জয়সলমীরের ‘সোনার কেল্লা’ একবার ঘুরে দেখার মতোই। ‘জয়সলমীর জমজমাট’ একটি রহস্যে মোড়া পারিবারিক সিরিজ, যা আপনাকে টেনে নিয়ে যাবে রাজস্থানের হৃদয়ে।
মেঘলা দাশগুপ্ত
‘জয়সলমীর জমজমাট’-এর অংশ হওয়া এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা। রাজস্থানে এটাই ছিল আমার প্রথম সফর, আর সেটা সম্ভব হয়েছে আমার কাজের সৌজন্যে — যা আরও বিশেষ করে তোলে। চরিত্রটি একেবারে নতুন ধরনের, এবং এর প্রস্তুতিও ছিল আলাদা। এমন কিছু করতে হয়েছে যা আগে কখনও করিনি — দর্শকেরা সেটা সিরিজে দেখলেই বুঝবেন। রিঙ্গো দারুণ পরিচালক — আস্থা, গাইডেন্স, আর পুরো মোবাইল ফোনে শুট করার আইডিয়া আমাকে দারুণভাবে অনুপ্রাণিত করেছে। শুটিং-এর সময় ‘সোনার কেল্লা’র ভেতরে হাঁটা যেন সত্যজিৎ রায়ের ‘সোনার কেল্লা’র শৈশবস্মৃতিকে জীবন্ত করে তুলেছিল। স্থানীয় মানুষের শ্রদ্ধা, ভালোবাসা আর রায়ের প্রভাব সবটাই ছিল আবেগঘন। এই প্রজেক্টে আমি শুধু একজন চরিত্রে অভিনয় করিনি, বরং পেয়েছি নতুন বন্ধুত্ব, দুর্দান্ত অভিজ্ঞতা ও সৃজনশীল সন্তুষ্টি। আশা করি, দর্শকেরা ‘জয়সলমীর জমজমাট’ দেখে একই রোমাঞ্চ অনুভব করবেন, যেমনটা আমরা তৈরি করার সময় অনুভব করেছি।
দেবতনু
আমি সবসময় চেষ্টা করি দর্শকদের চমকে দিতে, নতুন কিছু উপহার দিতে — এই চরিত্রটিও তার ব্যতিক্রম নয়। এই প্রজেক্টে শুটিং অভিজ্ঞতা ছিল দারুণ! সহ-অভিনেতারা সবাই দুর্দান্ত, আর পুরো টিম মিলে এক অসাধারণ জাদু তৈরি হয়েছে। আমার প্রিয় মুহূর্তগুলোর একটি ছিল বাইক চেজ সিকোয়েন্স ছোটবেলায় ‘সোনার কেল্লা’ দেখে বড় হয়েছি, তাই সেই সোনালি দুর্গে শুট করার অভিজ্ঞতা সত্যিই জীবনের সেরা মুহূর্তগুলোর একটি। সত্যজিৎ রায়কে এউ সিরিজের মাধ্যমে অনেক সূক্ষ্ম ট্রিবিউট রয়েছে ‘জয়সলমীর জমজমাট’ নিঃসন্দেহে একটি ব্যতিক্রমধর্মী অভিজ্ঞতা — এবং আমি বিশ্বাস করি, এই যাত্রা দর্শকদেরও ঠিক ততটাই ছুঁয়ে যাবে, যতটা এটা ছুঁয়েছে আমাকে।
এবং ফেলুদা
যাঁরা ফেলুদার ভক্ত, তাঁদের জন্য তো বটেই — এমনকি যাঁরা শুধুমাত্র এক রোমাঞ্চকর অ্যাডভেঞ্চার দেখতে চান, তাঁদের কাছেও ‘জয়সলমীর জমজমাট’ হতে চলেছে এক অভূতপূর্ব ভিজ্যুয়াল ও আবেগঘন অভিজ্ঞতা। এই সিরিজ শুধুমাত্র একটি থ্রিলার নয় — এটি এক ঐতিহ্যের প্রতি হৃদয়স্পর্শী সম্মান। স্মৃতি, সাহস, অভিযান আর সোনার আলোতে মোড়া এক চলচ্চিত্রিক ট্রিবিউট — যা মেলে ধরেছে ফেলুদার যাত্রাপথে এক নতুন অধ্যায়।