ডিরেক্টর্স অ্যাসোসিয়েশন অফ ইর্স্টার্ন ইন্ডিয়া
শেষ আপডেট: 6th February 2025 16:42
দ্য ওয়াল ব্যুরো: ‘আজকে আমাদেরকে অত্যন্ত অদরকারী মনে হচ্ছে, যাঁরা আমার পাশে বসে আছেন, সম্ভবত তাঁদের কোনও অবদান নেই!’ পরিচালক গিল্ডের সাড়ে তিন ঘন্টা আলোচনার পর, সাংবাদিক বৈঠকে বসে বললেন অনির্বাণ ভট্টাচার্য। পাশে তখন ইন্দ্রনীল রায়চৌধুরি, সুব্রত সেন, সুদেষ্ণা রায়, শ্রীজিত-জয়দীপরা (The Directors Association of Eastern India)। মাঝে মাঝে গলা ধরে আসে অনির্বাণের। প্রায় এক সপ্তাহর ওপর চলছে টলিউডে শুটিং নিয়ে অস্থিরতা। জানা গিয়েছিল, পরিচালক কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের কিছু কথায় রুষ্ট হয়েছিল টেকনিশিয়ানদের একাংশ। একটি লাইভ ভিডিওতে পরিচালক জানান, সব ঠিক হয়ে গিয়েছে টেকনিশিয়ানদের (federation of cine technicians & workers of eastern) সঙ্গে কথা বলে গোটাটাই মিটমাট হয়ে গিয়েছে। শুটিং শুরুও হবে, কিন্তু তা হয়নি। ফেডারেশনের সভাপতি বলেন, ‘আলোচনা চলছে’। তবে সে আলোচনার ফলস্বরূপ যা হল, জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত পরিচালক কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের ছবিটি হচ্ছে না। ঠিক কী অদৃশ্য কারণে তাঁর বড় বাজেটের ছবি ‘জংলা’ বন্ধ হল, তা জানা যায়নি। অন্যদিকে ছবির প্রযোজক প্রদীপ কুমার নন্দীও হাত তুলে নিয়েছেন ‘জংলা’ থেকে, সূত্রের খবর বাধ্য করা হয়েছে!
এবার আসা যাক পরিচালক জয়দীপ মুখোপাধ্যায়ের প্রসঙ্গে। অচিন্ত্য আইচ সিজন-২-এর শুটিং শুরু করার ছিল গত ২৭ জানুয়ারি। ২৩ তারিখ ইমেল মারফত পরিচালককে জানানো হয়, শুটিংকেন্দ্রিক কিছু অসঙ্গতি রয়েছে। পরিচালকের দাবি ক্রমাগত ইমেল, এবং আলোচনায় বসার জন্য আবেদন করা হয়। কিন্তু কোনও উত্তর আসেনি । ৩০ তারিখ ফেডারেশনের তরফ থেকে মেল আসে, ৩ ফেব্রুয়ারি সন্ধে ৭টায়, মিটিংয়ের সময়। মিটিংয়ে উপস্থিত ছিলেন প্রোডাকশন সংস্থার কিছুজন। অভিযোগ প্রায় আজ ঘন্টা বসিয়ে রাখা হয়, তাঁদের। বলা হয় ফেডারেশনের তরফ থেকে লোজন আসবেন কিন্তু তাঁরা আসেননি। বলা হয় ৪ তারিখ ১টার সময় ফোন করতে, ৪ তারিখ ফোন করার পরেও কোনও সিদ্ধান্ত জানানো হয়নি, তারপর থেকে তাঁরা ফোন করা হয়, কিন্তু জবাব পাননি। গতকাল ৫ তারিখ দুপুর তিনটে নাগাদ ফেডারেশনের পক্ষ থেকে ফোন করে জানানো হয়, সন্ধে ৭টার সময় মিটিং করতে আগ্রহী। মিটিংয়ে তাঁরা শুটিংকেন্দ্রিক কোনও অসঙ্গতির কথা বলেননি, অভিযোগ জিজ্ঞেস করেছেন টেকনিশিয়ানদের পারিশ্রমিক যাঁরা দিচ্ছে, তারা কি সেখানে উপস্থিত রয়েছে? যারা কথা বলতে গিয়েছিলেন তারা প্রযোজনা সংস্থার তরফ থেকেই গিয়েছেন! এমন প্রশ্নের অর্থ বুঝতে পারেননি পরিচালক জয়দীপ মুখোপাধ্যায়।
তৃতীয় এবং সর্বশেষ যিনি এই সংঘাতের কোপে পড়েছেন তিনি, পরিচালক শ্রীজিত রায়। তাঁর নতুন মেগা সিরিয়ালের শুটিং শুরু হতে চলেছে। শুটিং সেট তৈরির কাজ চলছিল দাশানি স্টুডিয়োয় ৪নং ফ্লোরে, কিন্তু সেই কাজ অসমাপ্ত রেখেই, টেকনিশিয়ানরা জানায়, তারা কাজটি করবে না। কারণ হিসেবে যা জানতে পারেন পরিচালক, তা অনেকটাই কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের ঘটনার সঙ্গে মিলে যায়। পরিচালক শ্রীজিতের বক্তব্যে আঘাত পেয়েছেন তারা, সে কারণেই তাদের এই সিদ্ধান্ত। বারবার পরিচালক জানতে চায়, তিনি কী বলেছেন, এবং যা বলেছেন, তাঁর প্রমাণস্বরূপ কিছু থাকলে তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনায় বসতে, অভিযোগ বিপরীত তরফ থেকে কোনও সদুত্তর পাননি, পরিচালক।
এই তিনটি পৃথক ঘটনাই অনভিপ্রেত। পরিচালক রাহুল মুখোপাধ্যায়ের এক শুটিং থেকে শুরু হয় পরিচালক এবং ফেডারেশনের এই সংঘাত। তারপর জল গড়িয়েছে বহুদূর। মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে এসেছিল খানিক স্বস্তি। তিনি বলেছিলেন, ‘শুটিং বন্ধ করা যাবে না’। কিন্তু তারপর এই তিনটে ঘটনাই বারবার প্রমাণ করে দিচ্ছে, মাননীয়ার নির্দেশ কার্যকরী হয়নি। ফলত, ৫ তারিখ রাতে ডিরেক্টর্স অ্যাসোসিয়েশন অফ ইর্স্টার্ন ইন্ডিয়ার সাড়ে তিন ঘন্টার অভ্যন্তরীন আলোচনা। উপস্থিত ছিলেন রাজ চক্রবর্তী থেকে সুদেষ্ণা রায়, সুব্রত সেন, পরমব্রত, অনির্বাণ ছাড়াও অনেকে। সাংবাদিক বৈঠকে জানানো হয়, ২৪ ঘন্টার পর পরবর্তী পদক্ষেপ জানানো হবে। এই ২৪ ঘন্টা কাটবে শুধু অপেক্ষায়। ফেডারেশনের তরফ থেকে সদুত্তরের। শুধু তাই নয়, স্টেকহোল্ডার, অর্থাৎ প্রযোজক, চ্যানেল কর্তৃপক্ষ কিংবা প্রযোজনা সংস্থা, তাঁদের অবস্থান ঠিক কী, সে বিষয়ে জানতে চাইছে ডিরেক্টর্স অ্যাসোসিয়েশন। তবে এই অপেক্ষার উত্তর যদি না মেলে, তাহলে কি কর্মবিরতির পথেই হাঁটবেন পরিচালক গিল্ড? এই প্রশ্নের উত্তর অধরা থাকল আজ অর্থাৎ ৬ ফেব্রুরায়ি সন্ধে ৭টা অবধি।