বাবাকে খোলাচিঠি স্বস্তিকার
শেষ আপডেট: 13th January 2025 16:30
দ্য ওয়াল ব্যুরো: সালটা ছিল ২০২০। রাত বাড়তেই খবর আসে অভিনেতা সন্তু মুখোপাধ্যায় আর নেই। ব্রেকিং, শিরোনাম, সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট নিয়ে যখন 'ফার্স্ট' হওয়ার চেষ্টা সকলের, ঠিক তখনই একা হয়ে যান অভিনেত্রী স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়।
চিরকালের জন্য বাবাকে হারান তিনি। 'ভেবলী' নামে ডাকার লোক কমে যায় আরও এক। আজ অর্থাৎ সোমবার সন্তু মুখোপাধ্যায়ের জন্মদিন। আর সেই উপলক্ষেই তাঁকে নিয়ে হৃদয় নিংড়ে এক খোলাচিঠি লিখলেন স্বস্তিকা।
যা লিখেছেন স্বস্তিকা,
"শুভ জন্মদিন বাবা। কোথায় আছো সে তো জানিনা, কে আলমারি থেকে নতুন জামা বের করে জোর করে পরিয়ে দেবে তাও জানি না। আশা করি কেউ নিশ্চয়ই আছে, আমার মতো করে তোমায় আগলে রেখেছে। প্রতি বছরের মতো, এবারেও নতুন ফতুয়া-লুঙ্গি পোরো। খাদির দোকানে গেলে, গেরুয়া রং এর কোনও কাপড় দেখলেই মনে হয় তোমার জন্য একটা পাঞ্জাবি বানাতে দিই, তার পর মুহূর্তেই মনে পড়ে তুমি তো নেই। আজ সন্ধে নামলে দু পাত্তর ব্যালেন্টাইন খেও। কত ভালবাসতে। পৃথিবীর এত জায়গায় যাই, যত ভালো স্কচই কিনে আনি না কেন সেই ব্যালেন্টাইনটাই সেরা। তোমার আর মায়ের না থাকাতে বাড়িতে খাওয়া দাওয়া, লোকজন এর আসা যাওয়া, আনন্দ উৎসব প্রায় উঠে গেছে বললেই চলে। ঠিক ওই গান টার মতন - এত আনন্দ আয়োজন সবই বৃথা তোমায় ছাড়া। ১৩ ই জানুয়ারি- এই দিনটা আমার কাছে আজীবন “আমার বাবার জন্মদিন” হয়েই রয়ে যাবে। অবশ্য শুধু একটা দিন কেন? বাকি বছরের অজস্র দিনগুলো ও তোমাদের দু'জনের দিন হয়েই রয়ে গেছে। জন্মদিন, বেড়াতে যাওয়ার দিন, অসুখ করার দিন, হাসপাতালে যাওয়ার দিন, সেখান থেকে ফেরার দিন, না ফেরার দিন এইসব।
জীবনটাই দুটো লাইনে বিভক্ত -
তখনও মা ছিল, তখন আর মা ছিল না।
তখনও বাবা ছিল, তখন বাবা ছিল না।"
একবুক কষ্ট জমে স্বস্তিকার। রাত অবধি আড্ডা, ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা ম্যাচে শিশুর মতো চিৎকার, দু'পেগ হুইস্কি-- এই সব আর হয় না। অভিনেত্রী লিখছেন, "আর কটা দিন থেকে গেলে পারতে বাবা - না হয় অনেক রাত অব্দি জমিয়ে আড্ডা মারতে মারতে, লোকজন এর গুষ্টি উদ্ধার করতে করতে দু পেগ হুইস্কি খাওয়ার জন্যই রয়ে যেতে। না হয়, ব্রাজিল - আর্জেন্টিনার ম্যাচ দেখে চিৎকার করার জন্য রয়ে যেতে। না হয়, দরবেশ, ক্ষীরকদম্ব, মনোহরা, সীতাভোগ দের জন্য রয়ে যেতে। ভাত রুটির শেষ পাতে রোজ একটু মিষ্টি খাওয়ার পাট ও চুকে গেছে। বাড়িতে আর মিষ্টি কেনা হয় না। তোমায় আর একবার দেখার জন্য সব করতে পারি বাবা। তুমি তো ঈশ্বরের কাছে আছো, তুমি ওঁকে বোলো, এই জন্মে হোক বা পরের জন্মে, বা দু'জন্মের সন্ধিক্ষণে আমাদের দেখা টা যেন হয়। কত কথা জমে আছে বাবা। এক পাহাড়। আজ তোমার ফেভারিট ব্রুট পারফিউম টা মেখেছি, তোমার জন্মদিনে তোমার গায়ের গন্ধ থাকুক গায়ে। রোজ ঘুমোতে গেলে ভাবি, চোখ খুললেই হঠাৎ যদি তোমায় দেখতে পাই, জড়িয়ে ধরে বসে থাকবো, অনেকক্ষণ। বেশি কিছু চাই না, এইটুকুই। কখনও এলে ভেবলি বলে ডেকো বাবা, ঠিক বুঝে নেব তুমি ডেকেছ। ভাল থেকো - তোমার পথে ঝলমলে আলো থাক, ইউডি কোলনের গন্ধ থাক, অনেকটা যত্ন আর ভালোবাসা থাক। আমার কাছে অপেক্ষা থাক, আমার সারাক্ষণের সঙ্গী।" অনুভূতি ভাগ করেছেন স্বস্তিকা। তবে এই অনুভূতি স্বস্তিকার একার নয়। তাঁর কমেন্ট বক্সে হাজারও পিতৃহারার আর্তনাদ। না ছুঁতে পারার যন্ত্রণা। সব কষ্টই যেন মিলেমিশে এক হয়ে গিয়েছে এই পোস্টে।