
শুভদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়
‘ডাকছে আকাশ, ডাকছে বাতাস
ডাকছে মাঠের সবুজ ঘাস,
ও ছেলেরা খেলা ফেলে
শুধুই কেন পড়তে যাস।’
কয়েক বছর আগে লোপামুদ্রা মিত্র এ গান গেয়েছিলেন স্কুল ব্যাগের ভারে বিপর্যস্ত স্কুল পড়ুয়াদের জন্য। বর্তমানে এই আইকনিক গান আরও বেশি করে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে, যখন শিশু, কিশোর-কিশোরীরা করোনা আবহে ঘরবন্দি। দেড় বছর যাবত স্কুল কলেজ বন্ধ। নেই ছোটদের মাঠে নেমে দল বেঁধে খেলা, নেই পরস্পরের স্পর্শ, নেই মুখোমুখি আনন্দ বিনিময়। লকডাউন আর করোনা আবহে অনলাইনেই চলছে স্কুলের পড়া সঙ্গে চলছে শরীরচর্চার ক্লাসও। কিন্তু নেই খোলা আকাশের নীচে খেলার মাঠ বা রোজ বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হওয়া। এই পরিস্থিতির নতুন নামকরণও হয়েছে, ‘নিউ-নর্মাল’। কতদিন এই অন্তহীন ‘নিউ-নর্মাল’ চলবে তা কেউ জানে না। ছোটদের মানসিক বিকাশই যেন অনেকখানি বদলে যাচ্ছে।
নিয়মিত অনলাইন ক্লাসের ফলে ছোটরা কিন্তু অনেক বেশি টেকনোলজিক্যাল বিদ্যায় পারদর্শী হয়ে উঠছে। ইন্টারনেটের খুঁটিনাটি তারা অনেক বেশি জানছে বড়দের থেকেও। অনেক কম বয়সেই টেক-স্যাভি হয়ে উঠছে তারা। অনলাইন নাটক. প্রতিযোগিতা বা গল্প বলার ক্লাসে যুক্ত হয়ে অন্য ভাবেও নিজেদের বিকাশ ঘটাচ্ছে। এটা তো ভাল দিক বটেই, তবে নেই কোনও পারস্পরিক আদান-প্রদান, নেই মুক্ত অক্সিজেনে খেলাধুলো, নেই বন্ধুদের সঙ্গে আজ আড়ি কাল ভাব।
পড়ুয়াদের এই বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে একটি তথ্যচিত্র ভেবে ফেলেছেন সুজয়প্রসাদ চট্টোপাধ্যায়। একদিকে প্যানডেমিক যেমন শিক্ষাব্যবস্থাকে ধরাশায়ী করে দিয়েছে তেমন নতুন আঙ্গিকে আমাদের ভাবতেও শিখিয়েছে। তাই সুজয়প্রসাদের তথ্যচিত্রের নাম ‘ফ্রম দ্য প্লে গ্রাউন্ড টু কম্পিউটার’। তথ্যচিত্রটি পরিচালনা করেছেন শ্রীমতী পার্বতী ভট্টাচার্য। চিত্রনাট্য লিখেছেন অতনু বর্মন, মনোরিমা মজুমদার।
পার্বতী ভট্টাচার্য একজন শিক্ষাবিদ, নৃত্যশিল্পী এবং সুজয়প্রসাদের এসপিক্র্যাফ্ট উদ্যোগের একজন বিশিষ্ট সদস্যা। তথ্যচিত্রের পরিচালিকা পার্বতী ‘দ্য ওয়াল’কে জানালেন, “আমি যেহেতু নিজেও একজন শিক্ষিকা তাই ‘ফ্রম দ্য প্লে গ্রাউন্ড টু কম্পিউটার’ ছবির বিষয়টা ভীষণ ভাবে প্রাসঙ্গিক মনে হল। বহু আলোচনা সভা হয়েছে শিশুমনের বিকাশ ও নিউ-নর্মাল পরিবেশে পড়াশোনা নিয়ে। কিন্তু মনোবিদ, শিক্ষক থেকে পড়ুয়াদের সবার কথা একসঙ্গে একত্রিত ভাবে আনা হয়নি কোনও তথ্যচিত্রে।
সুজয়প্রসাদ চট্টোপাধ্যায়ের ভাবনায় এই ছবিটাই আমার প্রথম ডেবিউ ছবি। লকডাউনের পর আনলক পরিষেবা যখন শুরু হয় তখন সব খুললেও স্কুলগুলো খোলে না। অনলাইন ক্লাস হলেও একটা বাচ্চার বড় হয়ে ওঠার জন্য যে সামাজিকীকরণ দরকার, সেটার অভাব হচ্ছে। ক্লাসরুম টিচিংয়ের পরিপূরক কখনই অনলাইন টিচিং নয়। আবার বাচ্চারা টেক-স্যাভি হচ্ছে, সেটাও একটা ভাল দিক।
শুধু শিশুরাই নয়, টিনেজার থেকে কলেজ পড়ুয়াদের সমস্যাও থাকছে ছবিতে। আবার এমন বিশাল সংখ্যক বাচ্চা আছে, যারা দেড় বছর ধরে অনলাইন পড়াশোনার পরিষেবাও পায় না। তাদের পক্ষে ক্লাস ফাইভ থেকে একেবারে ক্লাস সেভেনের চাপ নেওয়া কঠিন ব্যাপার। তথ্যচিত্রে সব দিকই আমরা রাখছি। কিছু পড়ুয়া ছেলেমেয়েও তাদের মনের কথা জানিয়েছে এই তথ্যচিত্রে। আগামী ১৫ জুলাই সুজয়প্রসাদের উদ্যোগে তথ্যচিত্রটির প্রিমিয়ার হবে ফেসবুকে।”
এই তথ্যচিত্রের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন সঙ্গীতশিল্পী লোপামুদ্রা মিত্র, নীপবিথি ঘোষ দাশগুপ্তার মতো সঙ্গীতশিল্পীরা। আবার মনোবিদ ডঃ নীলাঞ্জনা সান্যাল, দিল্লির নামকরা শিক্ষাবিদ শ্রীমতী রেখা কৃষ্ণনণের মতো ব্যক্তিত্বরাও আছেন।
‘ডাকছে আকাশ, ডাকছে বাতাস’ আইকনিক গান নতুন যুগে দাঁড়িয়ে নতুন ভাবে গেয়েছেন লোপামুদ্রা মিত্র, এই তথ্যচিত্রের জন্য, যা এই তথ্যচিত্রের বড় আকর্ষণও বটে। ‘ফ্রম দ্য প্লে গ্রাউন্ড টু কম্পিউটার’, এই তথ্যচিত্রটি শুভ-বার্তা পৌঁছে দেবে সমাজে, এমনই বলছেন ছবিনির্মাতারা।