ফাইল চিত্র
শেষ আপডেট: 2 May 2025 19:59
দ্য ওয়াল ব্যুরো: কিংবদন্তি চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের জন্মদিনে তাঁকে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে এক আবেগঘন স্মৃতি ভাগ করলেন পরিচালক সুজয় ঘোষ। বৃহস্পতিবার সোশ্যাল মিডিয়া ‘এক্স’-এ (পূর্বতন টুইটার) তিনি শেয়ার করলেন নিজের জীবনের প্রথম প্রত্যাখ্যানপত্র—যেটি আজও তাঁর কাছে সবচেয়ে প্রিয়।
১৯৮৯ সালে বিশ্ববিদ্যালয় শেষ করে ম্যানচেস্টার থেকে সত্যজিৎ রায়কে একটি চিঠি লেখেন তরুণ সুজয়। উদ্দেশ্য ছিল একটিই—রায়ের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পাওয়া, শুধুমাত্র শেখার জন্য, বিশেষ করে আঁকার কৌশল। রায় ছিলেন তখন তাঁর গল্প ও অলংকরণের অন্যতম প্রেরণা। সেই চিঠির উত্তরও পেয়েছিলেন সুজয়—এবং সেটি এসেছিল স্বয়ং সত্যজিৎ রায়ের কাছ থেকে। টাইপ করা চিঠিতে রায় অত্যন্ত ভদ্রভাবে জানান, তিনি কোনও প্রোডাকশন কোম্পানি চালান না এবং অন্য প্রযোজকদের হয়ে পরিচালনার কাজ করেন। ফলে কাউকে চাকরি দেওয়ার অবস্থা তাঁর নেই।
৫ আগস্ট ১৯৮৯-এ সত্যজিত লেখেন, ‘আমি অন্য প্রযোজকদের হয়ে পরিচালনা করি এবং নিজেই নিজের চিত্রনাট্য লিখি। আমার একজন নিয়মিত সম্পাদক আছেন। তাই আমি দুঃখিত, আপনাকে সাহায্য করতে পারছি না।’
প্রত্যাখ্যানের সেই চিঠিটিই আজ সুজয়ের কাছে এক অমূল্য সম্পদ। তিনি লেখেন, “এটা ছিল আমার জীবনের প্রথম প্রত্যাখ্যান। তবে তা সবচেয়ে প্রিয়, সবচেয়ে লালিত ও সযত্নে রাখা চিঠি। এমন এক অচেনা ছেলেকে উত্তর দিতে গিয়ে তিনি সময় বার করেছেন—এটাই তাঁকে আমার চোখে প্রকৃত নায়ক করে তোলে।” সুজয়ের কথায়, “তিনি আজও আমার চলচ্চিত্রজীবনের অন্যতম নায়ক, এবং গল্প বলার ক্ষেত্রে একমাত্র গুরু।”
সুজয়ের পোস্টের পরে অনেকেই নিজের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেন। কলকাতা নাইট রাইডার্সের প্রাক্তন টিম ডিরেক্টর জয় ভট্টাচার্য লিখেছেন, “আমার মা-ও একবার রায়কে চিঠি লিখেছিলেন—১৯৭৭ সালে। জানতে চেয়েছিলেন কেন ‘শতরঞ্জ কে খিলাড়ি’ কলকাতায় মুক্তি পাচ্ছে না, যখন মাদ্রাসে গিয়ে ছবিটি দেখে এসেছেন। তখনও উত্তর দিয়েছিলেন রায়।”
উদ্যোক্তা সুমিত রামানি লেখেন, “ব্যস্ত মানুষরা অনেক সময়ই উত্তর দেন, যদি অনুরোধটি আন্তরিক ও নির্দিষ্ট হয়। সুজয় চাইলে তাঁর পাঠানো চিঠিটিও শেয়ার করতে পারেন, যাতে অন্যরাও শিখতে পারেন, কীভাবে সঠিকভাবে প্রশ্ন করলে উত্তর মেলে।” আরও এক নেটিজেন লেখেন, “এই প্রত্যাখ্যানপত্রটিও অসাধারণ। সংক্ষিপ্ত, স্পষ্ট, অথচ বিনীত—এটা সত্যিই এক ঐতিহাসিক দলিল।”
সত্যজিৎ রায়ের কাজে বহুবার অনুপ্রাণিত হয়েছেন সুজয় ঘোষ। রায়ের সংবেদনশীল গল্প বলার কৌশল ও মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি তাঁকে মুগ্ধ করে। তিনি রায়ের লেখা ‘অনুকূল’ গল্প অবলম্বনে একটি ছোট ছবি নির্মাণ করেন, যা সমালোচকদের প্রশংসা কুড়ায়। ‘আরণ্যক’ প্রসঙ্গে সুজয়ের মন্তব্য, “প্রতিবার যখন কোনও ছবি তৈরি করি, আমি ফিরে যাই ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’-তে। রায় শিখিয়েছেন, কীভাবে না বলেই অনেক কিছু বলে দেওয়া যায়।”