
শুভদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়
সুশান্ত সিং রাজপুতের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হওয়া নাড়িয়ে দিয়েছিল গোটা দেশকে। ৩৪ বছরের সফল অভিনেতার কেন এই পরিণতি? কেন এই পরাজয়? কোন সে অন্ধকার কাটে না এত খ্যাতির আলোয়! এই প্রশ্নেই উত্তাল হয় ফিল্মজগৎ। সোশ্যাল মিডিয়ায় মুহূর্মুহূ আছড়ে পড়ে আক্ষেপের ঢেউ। কিন্তু এই সুশান্তের আত্মহত্যা (Suicide) ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে নতুন কিছুই নয়। টলিউড থেকে বলিউড, বারবারই এই অভিশপ্ত দিনগুলির সাক্ষী হয়েছে।
কখনও প্রেমে ব্যর্থতা, কখনও বহুগামী সম্পর্ক, কখনও উচ্চাকাঙ্ক্ষার নাগাল না পেয়ে দিশেহারা, কখনও বা অসীম একাকীত্ব– এই সব মিলিয়েই শেষমেশ আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন অনেক তারকাই। একের পর এক মৃত্যুর কান্নায় বারবার নরম হয়েছে সেই সব ইতিহাসের কবরের মাটি। তাই সেই ইতিহাস খুঁড়েই আজ আরও একবার ফিরে দেখা সেই সব শিল্পীদের মৃত্যু। আরও একবার খুঁজতে চাওয়া, তারকাদের আলোর পেছনে আসলে কতটা অন্ধকার জমে থাকে?
কিন্তু যাই ঘটে থাকুক না কেন, তাঁরা দিনের শেষে শিল্পীই। ব্যর্থ মানুষ নন। তাঁরা মারা গেছেন অবসাদের অসুখে। এতে কোনও সমালোচনার স্থান নেই। হয়তো তারকাদের জীবন দেখতে যত আলোকিত, আসলে অন্তরের গহিনে তাঁরাও একা হয়ে যান কখনও কখনও। কারণ তাঁদের যশ-প্রতিপত্তিকে সবাই ভালবাসে কিন্তু মানুষটাকে কেউ ভালবাসে না। তখনই হয়তো তৈরি হয় অবসাদ।
টলি পাড়ায় আত্মহত্যার (Suicide) ঘটনা
মহুয়া রায় চৌধুরী: ঝলসে গেছিলেন রুপোলি পর্দার সোনার প্রতিমা মহুয়া
নীলাঞ্জন রায়চৌধুরীর কন্যা শিপ্রা ছোট থেকেই পাবলিক ফাংশনে সোনালি রায় নামে নাচ করত। বেবি সোনালি খুবই নাম করে তখন। নীলাঞ্জন রায়চৌধুরীর কাছে মেয়ে কিছুটা টাকা জোগানের যন্ত্রেও পরিণত হয় যেন। মেয়েকে নিয়ে একসময় টালিগঞ্জের স্টুডিও পাড়ায় ঘুরতে থাকেন নীলাঞ্জন। শেষে সুচিত্রা সেনের পার্সোনাল মেক আপ ম্যান হাসান জামান খোঁজ দেন, তরুণ মজুমদার তাঁর নতুন ছবির জন্য নতুন মুখ খুঁজছেন।
স্ক্রিনটেস্টে পাশ করে ‘শ্রীমান পৃথ্বীরাজ’ ছবিতে নায়িকা হিসেবে টলিউডে শিপ্রার অভিষেক হয় মহুয়া নামে। এর পরে আর মহুয়াকে পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। উত্তম কুমারের নায়িকা হওয়া থেকে সব ছবিতেই তাঁর মুখ বড় হয়ে ওঠে। এক সময়ের শিশুশিল্পী অভিনেতা পরবর্তী কালে গায়ক তিলক চক্রবর্তীকে বিয়ে করেন মহুয়া। বাবা নীলাঞ্জন মেয়ের সংসারেই থাকতেন। মহুয়া-তিলকের ছেলে হল, তমাল নাম। মহুয়া ততদিনে খ্যাতির মধ্যগগনে। উত্তমহীন টলিউডে হিটমেশিন তখন একমাত্র মহুয়া।
কিন্তু এত অর্থ প্রতিপত্তির সঙ্গেই জীবনে আসে ব্যর্থতা, হিংসা, হতাশা। সেসব থেকে মুক্তি পেতে নেশার শিকার হন মহুয়া। একের পর এক ছবি সাইন করছেন, সংসারে টাকা জোগাচ্ছেন আর মদের নেশায় নিজে যেন ফুরিয়ে যাচ্ছিলেন। অঞ্জন চৌধুরী তখন থাকতেন বেহালার অজন্তার এস এন রায় রোডে। সেই বাড়ির এক তলাতেই মহুয়ার ভাড়া বাড়ি। গুরুদক্ষিণার সাকসেস পার্টিতে অঞ্জন চৌধুরীর ফ্ল্যাট থেকে ফিরে মাঝরাতে আকণ্ঠ মদ্যপ অবস্থায় শুরু হয় পরিবারের সঙ্গে তর্কাতর্কি। তার পরে স্টোভ ফেটে থার্ড ডিগ্রি বার্ন নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় মহুয়াকে।
১৯৮৫ সালের ২২ জুলাই মহুয়া ফুল ঝরে যায় চিরতরে (Suicide)। শেষ জবানবন্দিতে মহুয়া বলেছিলেন “আমার মৃত্যুর জন্য আমিই দায়ী।” তবে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট উল্লেখ করে, মহুয়ার চোখের কোণে ছিল কালশিটে। তিলকের পায়ের গোড়ালিতেও ছিল মচকানোর চিহ্ন, যা দুর্ঘটনাগ্রস্ত স্ত্রীকে বাঁচাতে গিয়ে লেগেছে বলে জানিয়েছিলেন তিনি।
শেষমেশ কোনও রহস্যই উদঘাটিত হয়নি। কিন্তু এমন একজন প্রতিভাময়ী নায়িকার মৃত্যু দর্শক মানতে পারেনি। অনেক সংশয়, সন্দেহের সামনে কাঁটা হয়ে থেকে গিয়েছিল মহুয়ার মৃত্যুকালীন জবানবন্দি। আত্মহত্যাই কি করেছিলেন তিনি!
চন্দ্রা মুখোপাধ্যায়: নয়ের দশকে অল্প সময়ের জনপ্রিয় অভিনেত্রী
চন্দ্রা মুখোপাধ্যায় বেশিরভাগই সহনায়িকার রোল করতেন, কিন্তু ছাপ ফেলে যেতেন অভিনয়ে। তখন কলকাতা দূরদর্শনে ‘নির্লজ্জ’ ধারাবাহিকে বাড়ির মেজো বউয়ের চরিত্রে চন্দ্রা জনপ্রিয় হন। জননী, জন্মভূমি, কুঞ্জভিলা সিরিয়ালেও তিনি কাজ করেন। সুযোগ পান ফিল্মেও। চিরঞ্জিৎ পরিচালিত অভিনীত ‘সংসার সংগ্রাম’ ছবিতে চিরঞ্জিতের ছোট বোন আদুরীর ভূমিকায় চন্দ্রা অভিনয় করেন। চন্দ্রার বিপরীতে ছিলেন কুশল চক্রবর্তী। এরপর শিমুল পারুল, সুন্দরী প্রভৃতি পরপর ছবিতেই ছিলেন তিনি। স্বপ্নসন্ধানী নাট্যদলে চন্দ্রা ছিলেন নিয়মিত মুখ। সান্নিধ্য হয় সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গেও। সহশিল্পী কৌশিক সেনের সঙ্গেও সুদক্ষ অভিনয়ের পরিচয় দিয়েছিলেন তিনি।
সালটা ১৯৯৯। কুঞ্জভিলার প্রযোজকের সঙ্গে শ্যুটিং ডেট ঠিক হয়। এর পরেই চন্দ্রা নিজের ঘরে গিয়ে দোর দেন। স্বামী সুশোভন মুখার্জী বাথরুমে স্নান করছিলেন, বেরিয়ে এসে দরজা ঠেলে সাড়া না পাওয়ায় ভাঙতে বাধ্য হন। ৩৪ বছরের চন্দ্রা সিলিং ফ্যান থেকে ঝুলছিলেন। তখনও একটু প্রাণ ছিল বলে শোনা যায়। কিন্তু আরজি কর হাসপাতালে নিয়ে যেতে যেতেই মারা যান তিনি। চন্দ্রার মা জামাইকেই দোষী করেন। কিন্তু সুশোভন-চন্দ্রা সুখী দাম্পত্যে ছিলেন বলেই জানতেন সকলে।
কেউই ভাবতে পারেননি অমন হাসিখুশি প্রাণবন্ত মেয়ে এমন ভাবে চলে যাবে (Suicide)। ছ’বছরের মেয়েকে ফেলে চিরঘুমে তলিয়ে যেতেও দু’বার ভাবেননি চন্দ্রা। কিন্তু কেন, সে প্রশ্ন আজও অজানা।
রুমনি চট্টোপাধ্যায়: এক আকাশের নীচের প্রথম নন্দিনী ছিলেন মাত্র কয়েক দিন
যীশু সেনগুপ্তর ডেবিউ সিরিয়াল ‘মহাপ্রভু’ তে রুমনি ছিলেন নায়িকা লক্ষ্মীপ্রিয়ার চরিত্রে, যাতে রুমনি বিশাল নাম করেন। মহাপ্রভুর পরিচালক ছিলেন দেবাংশু সেনগুপ্ত। দেবাংশু এর আগে সিরিয়াল বানান তাঁর প্রথমা স্ত্রী খেয়ালী দস্তিদারকে লিডে রেখে ‘আকাশ ছোঁয়া’। কিন্তু মহাপ্রভুর সময়ে খেয়ালীকে ডির্ভোস দিয়ে রুমনিকে বিয়ে করেন দেবাংশু। রুমনিও তাঁর প্রথম স্বামী প্রসেনজিৎ পালকে ডির্ভোস করে দেবাংশুকে বিয়ে করেন। সালটা ২০০০।
এর পরে নতুন সিরিয়াল রবি ওঝার ‘এক আকাশের নীচে’তে নায়িকা নন্দিনীর রোলে রুমনি সুযোগ পান। কিন্তু প্রথম দু’তিন দিন শট দিয়েই রুমনি গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেন দেবাংশুর প্রিন্স গুলাম হুসেন শাহ রোডের ফ্ল্যাটে। ঝুলন্ত রুমনির দেহ দরজা ভেঙে উদ্ধার করেন দেবাংশুই। রুমনির সুইসাইড নোট মেলে। লেখা ছিল, “দেবাংশু তোমায় আমি খুব ভালবাসি। তুমি তোমার মায়ের কথায় মিথ্যেই আমায় সন্দেহ করছ। আমি তোমায় কত ভালবাসি সেটা বুঝে নিও।”
এই মর্মান্তিক ঘটনা (Suicide) বড় প্রভাব ফেলে টালিগঞ্জে। আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে দেবাংশুর জেল হয় দীর্ঘদিন। ২৪ বছরের তরতাজা রুমনি তো শেষ হয়ে গেলেনই, দেবাংশুও আর ফেরেননি ফিল্ম জগতে।
রঞ্জাবতী সরকার – ‘ডান্সার্স গিল্ড’ গ্রুপের এক অপূরণীয় ক্ষতি তাঁর চলে যাওয়া।
বিখ্যাত নৃত্যশিল্পী মঞ্জুশ্রী চাকী সরকারের কন্যা ছিলেন রঞ্জাবতী। মঞ্জুশ্রীর ‘ডান্সার্স গিল্ড- এ লিড রোলে একসময় থাকতেন রঞ্জাবতী। চণ্ডালিকা নৃত্যনাট্যে ‘তোমারই মাটির কন্যা’তে রঞ্জাবতী হতেন চণ্ডাল কন্যা আর মঞ্জুশ্রী হতেন মা প্রকৃতি। সেই নাচ যাঁরা দেখেছেন তাঁরা জানবেন কী মোহময়। ডান্সার্স গিল্ডের ডান্সফর্ম নিয়ে তথ্যচিত্রও করা হয়। রবীন্দ্রসদন হাউসফুল যেত ডান্সার্স গিল্ডের পারফর্মেন্স থাকলে। রঞ্জাবতী তাঁর লেখালিখিতে বারবার স্পষ্ট করতে চেয়েছেন ধ্রুপদী নৃত্যের থেকে তাঁর নাচ কোথায় আলাদা, কিন্তু কেন তা আদ্যন্ত ভারতীয়।
১৯৯৯ সালে ৩৬ বছর বয়সে বম্বেতে আত্মহত্যা (Suicide) করেন রঞ্জাবতী। কারণ এখনও রহস্যাবৃত। স্বামীর সঙ্গে বনিবনার অভাব শোনা গেছিল, প্রমাণ মেলেনি। মঞ্জুশ্রীও আক্রান্ত হয়েছিলেন ক্যানসারে, তাই ডান্সার্স গিল্ডের দায়িত্বভারও একা রঞ্জাবতীর উপর পড়ে গেছিল। এই সব মিলিয়েই কি অবসাদ, নাকি ছিল অন্য কোনও কারণ। প্রমাণ মেলেনি। মেয়ের মৃত্যুর এক বছরের মাথায় কলকাতায় মারা যান মা মঞ্জুশ্রীও।
পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়: আইকনিক গীতিকার আত্মহত্যাকেই বেছে নেন বাঁচার পথ হিসেবে।
হাওড়া শালকিয়ার বাসিন্দা পুলক বন্দ্যোপাধ্যায় যেন একা হয়ে গেছিলেন জীবনের জলসাঘরে। কাছের মানুষরা বলেন, শেষ দিকে পুলকের বেঁচে থাকার ইচ্ছেটাই ক্রমশ ফুরিয়ে আসছিল। কোনও কিছুতেই যেন আর মন বসছিল না তাঁর! কোনও গানই যেন আর স্বর্ণযুগের গান হয়ে উঠছিল না।
৭ সেপ্টেম্বর, ১৯৯৯। মাঝগঙ্গায় নৌকা থেকে জলে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেন পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়। মান্না দে-পুলক বন্দ্যোপাধ্যায় জুটির কত গান যে আজও আইকনিক। মান্না দেও মানতে পারেননি হাসিমুখের পুলকের এই পরিণতি।
পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়ের শিল্পী জীবনের হতাশা ফুটে উঠেছিল যেন তাঁর কলমের গানে,
‘যখন এমন হয়,
জীবনটা মনে হয় ব্যর্থ আবর্জনা
ভাবি গঙ্গায় ঝাঁপ দি,
রেলের লাইনে মাথা রাখি,
কে যেন হঠাৎ বলে,
” আয় কোলে আয়,
আমি তো আছি, ভুললি তা কি,
—মা গো,
সেকি তুমি,
সেকি তুমি ৷ …’
কেয়া চক্রবর্তী: অধ্যাপিকা ও নাট্যাভিনেত্রী রূপে কেয়ার মৃত্যুও তুমুল আলোচিত
কেয়া চক্রবর্তী স্কটিশ চার্চ কলেজে ইংরেজি পড়াতেন। অজিতেশ-রুদ্রপ্রসাদের নান্দীকারের জনপ্রিয় অভিনেত্রী কেয়া। নাটকের জন্য অধ্যাপনার চাকরিও ছেড়ে দেন। নান্দীকার ছিল তাঁর সাধনপীঠ। ১৯৭৭ সালে ১২ মার্চ সাঁকরাইলে গঙ্গার ওপর ‘জীবন যে রকম’ চলচ্চিত্রের বহিদৃর্শ্য গ্রহণের সময় অভিনয় করতে গিয়ে জলে ডুবে তাঁর মৃত্যু ঘটে। আত্মহত্যা, না জলে ঝাঁপ, না কেউ ঠেলে ফেলে দেয়, তা আজও প্রমাণিত নয়। কিন্তু কেয়ার মৃত্যু (Suicide) এখনও রহস্য।
চিন্ময় রায়: কমেডিয়ানের ট্র্যাজিক পরিণতি
কমেডিয়ান মানেই তো সে লোককে হাসায়! কমেডিয়ানদের দুঃখ দেখেও যেন অভ্যাসবশত লোকে হাসে। হাসিই তাঁদের জীবন। এই হাস্যমুখ চিন্ময় রায়ই শেষ জীবনে হয়ে পড়েছিলেন একা। স্ত্রী জুঁই বন্দ্যোপাধ্যায়ের মৃত্যু বড় শোক হয়ে আসে ওঁর জীবনে। মদ্যপান, অবসাদের ওষুধে চিন্ময় ডুবে থাকতেন শেষ দিকে। তবু টেনিদার নতুন সিজন ছবি পরিচালনা করলেন শেষবেলায়। কিন্তু কাজ কমে আসছিল। একদিন রাত্রে গলফগ্রিনে নিজের ফ্ল্যাটের নীচে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায় অভিনেতা চিন্ময় রায়কে।
ছেলের দাবি, তাঁর বাবা ছাদে হাঁটতে গিয়েছিলেন। সেখান থেকেই অসাবধানতাবশত পড়ে যান। কিন্তু পুলিশের ধন্দ, তিনি কি আত্মহত্যা করতে গিয়েছিলেন? কারণ বহুতলের ছাদ থেকে উঁচু পাঁচিল টপকে পড়ে যাওয়ার তত্ত্ব মানা যাচ্ছিল না ঠিক। কিন্তু পড়ে গিয়েও মৃত্যু হয়নি তাঁর। তবে শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন। এক বছর দীর্ঘ রোগভোগ করেন শেষে মারা যান চিন্ময় রায়।
কিন্তু সেদিনের সেই ঝাঁপের (Suicide) কারণ কী ছিল, সে রহস্য সামনে আসেনি কখনও।
দিশা গঙ্গোপাধ্যায়: বউ কথা কউ সিরিয়ালে নিখিল ওরফে ঋজুর বন্ধু হয়ে পর্দায় আসা।
দিশার আত্মপ্রকাশ টলিউডের সিরিয়ালে। মানালি দের পাশাপাশি দিশার অভিনয় সবার চোখে পড়ত বৌ কথা কও সিরিয়ালে। বেহালা পর্ণশ্রীর ফ্ল্যাটে একাই থাকতেন দিশা। দিশা শেষ ভাল অভিনয় করে গেছেন ‘ধারাস্নান’ ছবিতে। অনেকে বলেন, ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তকেও অভিনয়ে টক্কর দিয়েছিলেন দিশা। পরিবার থেকে দিশার বিয়ে ঠিক করা হয় অভিনেতা ভিভানের সঙ্গে বিয়ের। কিন্তু শোনা যায়, দিশা সমকামী ছিলেন। ভালবাসতেন অন্য এক উঠতি অভিনেত্রী। সমকামী সম্পর্ক আজও এ সমাজ মেনে নেয় না। মেনে নেয়নি দিশার বাবা-মাও। তারই বলি হতে হল মেয়েকে।
বলিউডে আত্মহত্যা (Suicide)
গুরু দত্ত: মাত্র ৩৯ বছরে মারা যান অভিনেতা
১৯৫৩ সালে গুরুর সঙ্গে নেপথ্য গায়িকা গীতা দত্তের বিয়ে হয়। সুখের হয়নি দাম্পত্য। গুরু কাজের ব্যাপারে চরম নিষ্ঠাবান হলেও ব্যক্তিগত জীবনে শৃঙ্খলার অভাব ছিল। অত্যধিক ধূমপান এবং মদ্যপান করতেন। অভিনেত্রী ওয়াইদা রহমানের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক গীতা-গুরুর সম্পর্কে ভাঙন ধরায়। গীতা ছেলেমেয়েদের নিয়ে আলাদা থাকতে শুরু করেন পেডার রোডের ফ্ল্যাটে। একাই থাকতেন গুরু।
গুরুর মৃত্যুর আগের দিন তিনি গিয়েছিলেন গীতার কাছে, কারণ তিনি তাঁর দুই ছেলের সঙ্গে ছুটি কাটাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু গীতা ছেলেদের পাঠাতে চাননি। কারণ গীতার কেরিয়ারে কাজ কমে যায় গুরু-ওয়াদিহার কারণে। ১৯৬৪ সালের ১০ অক্টোবর। সেই রাতেই গুরু দত্ত নিজের বেডরুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেন৷ তিনবার আত্মহত্যার (Suicide) চেষ্টা করে সফল হন তিনি। পাওয়া যায় স্লিপিং পিলস।
গুরুকে মৃত অবস্থায় সেখানে পাওয়া যায়। গীতার জীবনও ভাল ছিল না। মদ্যপানে আসক্ত হয়ে সিরোসিস অফ লিভার হয় তাঁর। কিছু বছর পরে মারা যান।
পরভিন ববি: সত্তর-আশির দশকে ডিস্কো কুইন পারভিন ববি
তাঁর নামটা আজও যেন ‘রাত বাকি বাত বাকি’র মতোই আবেদনময়। ২০০৫ সালে পরভিনকে পাওয়া গেছিল বন্ধ ফ্ল্যাট থেকে পচাগলা অবস্থায়, সুইসাইড করার বেশ কয়েক দিন পর। ফ্ল্যাটের সামনে নিউজপেপার দুধের প্যাকেট জমতে দেখে পড়শিরা দরজা ভেঙে পরভিনকে উদ্ধার করেন।
পরভিন ববি ও মহেশ ভাটের প্রেমকাহিনি একসময় বহুল আলোচিত। এই সময় মহেশ বিবাহিত ছিলেন, সন্তান ছিল। তবু পরভিন তাঁর প্রেমে পাগল হন। কবির বেদী-পরভিনের প্রেম তার আগেই পরভিনকে অবসাদগ্রস্ত করে তুলেছিল। পরভিনের ভরসা ছিল মহেশ। পরভিন মানসিক ভাবেও অসুস্থ ছিলেন। ব্যাঙ্গালোরে পরভিনকে সুস্থ করার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যেতেন মহেশ। কিন্তু একটা সময়ে ববির মনোচিকিৎসক মহেশকে দূরে থাকার পরামর্শ দিলেন। আগের স্ত্রী লরেনের কাছে ফিরে এলেন মহেশ। এ সময়েই মহেশ লিখলেন আর্থ। ছবিটি নির্মিত হয় তাঁর নিজের জীবনের গল্প নিয়ে।
এর পরেই একরাতে ফের ববির কাছে এলেন মহেশ। ববি বলেন, তাঁকে বেছে নিতে হবে এবার জীবনসঙ্গী রূপে। মহেশ বেরিয়ে আসেন। পরভিন নগ্ন হয়ে রাস্তায় মহেশের পেছন পেছন ছুটলেন। আর মিল হল না। এর পরেই ২০০৫-এ পরভিনের দেহ উদ্ধার (Suicide) হল। শেষকৃত্য করার কেউ ছিল না। মহেশের কাছে খবর যেতে ভালবাসার মানুষের মুখে আগুন মহেশই দিলেন। ইতি টানল পারভিন-মহেশের প্রেম।
সিল্ক স্মিতা: পর্নস্টারের নগ্ন পা, খোলা বক্ষবিভাজিকা, আর্দ্র ওষ্ঠ ভরা পোস্টার
স্মিতা যেন বহু পুরুষের চোখের কামনার উৎস হয়ে উঠেছিলেন। কিন্তু শরীরি এই নারীদের মনের খবর ক’জন রাখে? তিনি যেন শরীরি বিভঙ্গে ঢেকেছিলেন অভাবের জ্বালা। শ্বশুরবাড়িতে স্বামী ও অন্যান্যদের অকথ্য অত্যাচার সহ্য করতে পারেননি | চেন্নাই এসে বিউটিশিয়ান থেকে হয়ে গেলেন ‘পর্নস্টার’।
শেষমেশ স্মিতা বেছে নেন আত্মহত্যা (Suicide)। ২৩ শে সেপ্টেম্বর, ১৯৯৬ শাড়ি দিয়ে পাখা থেকে নিজেকে ঝুলিয়ে আত্মহত্যা করেন স্মিতা। তাঁর শরীরে প্রচুর পরিমাণে অ্যালকোহল পাওয়া গিয়েছিল। ছবি প্রযোজনা করতে গিয়ে তিনি ঋণের জালে ফেঁসেছিলেন বলে জানা যায়। তাঁর জীবনী নিয়েই বিদ্যা বালান অভিনীত ‘ডার্টি পিকচার’ ছবিটি হিট করেছিল।
নাফিসা জোসেফ: মিস ইন্ডিয়া নাসিফা আদতে রক্তসূত্রে ছিলেন ঠাকুরবাড়ির মেয়ে।
ঠাকুরবাড়ির নতুন বৌঠান কাদম্বরী দেবীর মতো সুইসাইডকেই বেছে নিয়েছিলেন নাফিসা। ১৯৯৭ সালে মিস ইন্ডিয়া হয়েছিলেন তিনি। সে বছর মিস ইউনিভার্স প্রতিযোগিতায় চূড়ান্ত পর্বেও পৌঁছেছিলেন নাফিসা। ছোট্ট কৌতুক ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন সুভাষ ঘাইয়ের ‘তাল’ ছবিতে। তার পরে নাফিসার আলাপ হয় গৌতম খান্দুজার সঙ্গে। নাইট ক্লাবে আলাপ থেকে ক্রমে প্রেম। ২০০৪ সালে বিয়ে। বিয়ের কয়েক সপ্তাহ পরেই মুম্বইয়ের ফ্ল্যাট থেকে নাফিসার ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়।
দিব্যা ভারতী: অল্প সময়ে নায়িকা রূপে চরম সাফল্য আর তারপর রহস্য মৃত্যু।
মাত্র তিন বছর অভিনয়ের সুযোগ পেয়েছিলেন দিব্যা। সাত সমুন্দর পার করেছিল বিদ্যার জীবন যৌবন। ঋষি কাপুর, সলমন খান, শাহরুখ খান তাঁর নায়ক। ১৯৯২তে প্রযোজক সাজিদ নাদিয়াদওয়ালার ফ্ল্যাটেই গোপনে বিয়ে সারেন দিব্যা। কিন্তু ইন্ডাস্ট্রির অন্দরে অনেকেই জানতেন না তাঁদের বিয়ের খবর। বিয়ের পর প্রথম বিবাহবার্ষিকীও একসঙ্গে কাটাতে পারেননি তাঁরা। মুম্বইয়ে তাঁর বাড়ির পাঁচতলা খোলা ব্যালকনি থেকে পড়ে যান তিনি। ১৯৯৩ সালের ৫ এপ্রিল মাত্র ১৯ বছর বয়সে মারা যান দিব্যা। পড়ে যান না আত্মহত্যা? উত্তর অজানা।
শ্রীদেবী: বলিউড ডিভা, প্রথম বলিউড সুপারস্টার নায়িকা
সুন্দর তারিফ শুনে শুনে নিজের শরীরে জরার স্পর্শ চাননি শ্রীদেবী। তাই বারবার নিজের মুখে ও শরীরে প্লাসিক সার্জারি ও হরমোন ট্রিটমেন্ট করিয়ে যৌবন ধরে রাখতে চেয়েছিলেন চাঁদনি। দুবাইয়ের হোটেলে আত্মীয়ের বিয়েতে গিয়েছিলেন শ্রীদেবী। সেখানেই বাথটবে স্নান করতে গিয়ে জলে ডুবে মারা যান তিনি। শরীরে মদ্যপানের চিহ্ন ছিল। কিন্তু বাথটবে এই মৃত্যু স্বাভাবিক বলে মেনে নিতে পারেননি কেউ। খুন না আত্মহত্যা (Suicide), না দুর্ঘটনা– সে প্রশ্নের জবাবও মেলেনি।
যত মৃত্যু, তত প্রশ্ন, তত আলোচনা। আর ততই বোধহয় বাড়ে অন্ধকার। কিন্তু স্থায়ী হয় না কোনও কিছুই। কালের নিয়মে, ফিল্মি জৌলুসে সব হারিয়ে যায়। আবারও আসে নতুন মুখ, কেউ হারিয়ে যায়, কেউ থেকে যায়। যন্ত্রণা, একাকীত্ব, লড়াই সহ্য করে কেউ পেরে যায় জীবনকে উদযাপন করতে, কেউ হয়তো কোনও মুহূর্তে ব্যর্থ হয়। অবসাদের কোলে ফুরিয়ে যায় জীবন। অকালে নিভে যায় তারকার আলো।