শেষ আপডেট: 31st August 2023 12:52
সুচিত্রা সেনের চিরবাসনা ছিল তিনি মঞ্চে নটী বিনোদিনীর ভূমিকায় আবির্ভূতা হবেন। পূর্ণেন্দু পত্রীকে চিত্রনাট্যও লিখতে অনুরোধ করেন শ্রীমতী সেন। কিন্তু সে বাসনা আর বাস্তবায়িত হয়নি। কিন্তু সেই স্বপ্নের সুযোগ পেলেন এ যুগের এক অভিনেত্রী। তাঁর নামের আগে হয়তো মহানায়িকা খেতাব নেই, গ্ল্যামার গার্লের সেই চটকও তাঁর নেই, কিন্তু আছে অপরিসীম অভিনয় ক্ষমতা, জেদ আর মঞ্চ মাত করে দেবার মোহিনীমায়া। তিনি বিনোদিনী সুদীপ্তা চক্রবর্তী (Sudipta Chakraborty)।
এখন টক অফ দ্য টাউন সেই সুদীপ্তারই অভিনীত 'বিনোদিনী অপেরা' (Binodini Opera) নাটক। মাসে একটি করে শো, প্রতিটি শো হাউসফুল। মঞ্চে সুদীপ্তা ফুটিয়ে তুলছেন সমাজের যাবতীয় ছিছিক্কারকে উপেক্ষা করে সূর্যমুখীর মতো মাথা উঁচু করে বাঁচা বিনোদিনী দাসীর সাধিকা হয়ে ওঠার এক মহাজীবনের উপাখ্যান। অ্যাকাডেমির মঞ্চে বিনোদিনী সুদীপ্তার আগমনে যেন কোজাগরীর ঝকঝকে চাঁদ উঠল। মুগ্ধনয়নে হলভরা দর্শক দেখল, বাঙালির অবসেশন নটী বিনোদিনীকে কী অসামান্য দক্ষতায় জীবন্ত করে তুললেন বিপ্লবকেতন কন্যা।
বিনোদিনীর ভূমিকায় মঞ্চে কতজনই না অভিনয় করেছেন— নান্দীকারের মঞ্জু ভট্টাচার্য, কেয়া চক্রবর্তী, যাত্রায় যাত্রালক্ষ্মী বীণা দাশগুপ্ত, দিল্লির ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামায় সীমা বিশ্বাস। চলচ্চিত্রে দীনেন গুপ্তর 'নটী বিনোদিনী' হন দেবশ্রী রায়ও। ঋতুপর্ণ ঘোষ 'আবহমান' ছবিতে বিনোদিনী সাজিয়েছিলেন অনন্যা চট্টোপাধ্যায়কে। কিন্তু এই সবগুলিই সরলরৈখিক ভাবে বিনোদিনীর গল্প বলে গেছে। এখানেই অনন্য অবন্তী চক্রবর্তীর 'বিনোদিনী অপেরা'। এ অপেরা ধর্মী নাটকে অতীতের বিনোদিনীকে বর্তমানের অঙ্গনে এনে দাঁড় করিয়েছেন নির্দেশক অবন্তী চক্রবর্তী ও গবেষক চিত্রনাট্যকার শিবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়।
নটী বিনোদিনী বাংলার রঙ্গমঞ্চের শ্রেষ্ঠা অভিনেত্রী। কিন্তু প্রবল প্রতিকূলতা, বারবার ভালবেসে প্রতারণা, নিঃসীম একাকীত্বের মধ্যে দিয়ে তিনি তিমির অভিসারিণী। শেষে তাঁর একমাত্র আলো শ্রীরামকৃষ্ণ। কিন্তু শ্রীরামকৃষ্ণের আশীর্বাদ পেয়েই কী বিনোদিনী সাধিকা হয়ে গেলেন, মঞ্চকে বিদায় জানিয়ে সরে গেলেন অন্তরালে! এই মিথ শেষ অবধি ভাঙল 'বিনোদিনী অপেরা'।
তখন বিনোদিনী অসুস্থা হলেও তিনি তো ফুরিয়ে যাননি। টলটলে যৌবনেই ছাড়তে হল মঞ্চ। তাহলে কী চক্রান্তের শিকার হলেন তিনি? অভিমান, অপমান আর অবহেলা থেকেই কী পর্দানসীন হলেন বঙ্গনটী? ১২ বছর বয়সে বিনোদের অভিনয়ে আসা আর ১২ বছর পর মঞ্চ থেকে প্রস্থান। মাত্র ২৪ বছরেই তিনি আড়ালে। কিন্তু ওই এক যুগেই তিনি হয়ে উঠলেন যুগোত্তীর্ণা অভিনেত্রী। তবু রয়ে গেল নানা রহস্য, নানা প্রশ্নচিহ্ন। সেইসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে আপনাকে দেখতেই হবে দুই নারী, অবন্তী চক্রবর্তীর পরিচালিত সুদীপ্তা চক্রবর্তী অভিনীত 'বিনোদিনী অপেরা' নাটক।
নাটকের শুরুতেই চমকে দিলেন পরিচালক অবন্তী চক্রবর্তী। লাল সাদা কাপড়ের মোটা দড়ির মাঝে মঞ্চাভিনয় প্রথমেই এক নতুন মাত্রা যোগ করে। বিনোদিনী যখন সদ্য অভিনয় জীবনে প্রবেশ করেছেন, তখন থেকেই এ নাটকের আখ্যান আরম্ভ। বিনোদের বালিকা জীবনের নিষিদ্ধ পল্লীর পরিচয়, তাঁর মায়ের অতীত কাহিনি বারবার এসে বিদ্ধ করে বিনোদিনীর সফলতার পথে। তবু তিনিই হয়ে ওঠেন অভিনেত্রী কুলের শিরোমণি। অসংখ্য নাটকে শত শত ভূমিকায় প্রতিটি ভূমিকায় বিনোদিনী অভিনব ভাবের সৃষ্টি করতেন।
অ্যাকাডেমির মঞ্চে উঠে এল 'সরোজিনী' নাটকে রাজপুত ললনাদের জহরব্রত করার দৃশ্য।
'জ্বলজ্বল চিতা দ্বিগুণ দ্বিগুণ
পরাণ সঁপিবে বিধবা বালা
জ্বলুক জ্বলুক চিতার আগুন
জুড়াবে এখনি প্রাণের জ্বালা।'
গাঁদা ফুলের অলঙ্কারে সেজে সুদীপ্তা ও সখীদের নিবেদন যেন মঞ্চে সত্যিকারের দাবানল জাগায়। কিংবা 'দক্ষযজ্ঞ' পালায় মহামায়া রূপে ত্রিশূল হাতে বিনোদিনীর আবির্ভাব বিলীন করে সমাজের অসুর রূপী লোলুপ নরখাদকদের।
নাট্যজীবনে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর আসন পেলেও বারবার পুরুষতান্ত্রিক সমাজে ধর্ষিত হয় বিনোদিনীর মন। বিনোদিনী তাই তাঁর জীবনে আসা প্রেমিকদের বলে, 'তোমরা বেশ আছো না? আর ভগবান ও কী সুন্দর থোক থোক টাকা দিয়ে পাঠিয়েছেন তোমাদের। আর আমি হলাম পাঁঠা.. বলির পাঁঠা..।'
বিনোদিনী ৩৩ বছর বয়সে এসে বার করেন তাঁর নিজের লেখা কাব্যগ্রন্থ। ততদিনে তিনি মঞ্চকে বিদায় জানিয়েছেন। কিন্তু শুধু অভিনেত্রী বলেই বিনোদিনীর কবিতাকে অপাঙক্তেয় করে রাখা হল। বিনোদিনীর কলমে উঠে এল তাঁর জীবন-যৌবনের অপ্রাপ্তি।
'স্মৃতি লো বিয়ের জ্বালা দিও নাকো আর,
এ সংসারে চিরদিনই কিছুই না রয়;
তবে কেন দুঃখ তুমি দাও অনিবার।
তুমি মনে হলে প্রাণে জ্বালা অতিশয়।'
বিনোদিনী চেয়েছিলেন ঘর, সংসার, স্বামী, সন্তান। আর পাঁচটা মেয়ের মতোই। কিন্তু তাঁর সবথেকে বড় প্রেম যে তাঁর স্টেজ, তাঁর নাট্যমঞ্চ! তাই বিনোদিনী শিক্ষাগুরু গিরিশ ঘোষকে প্রশ্ন করেন, 'গিরিশ বাবু আপনারও তো স্ত্রী, সন্তান, সংসার-- সব আছে। তার জন্য তো আপনাকে মঞ্চ ছাড়তে হয় না? তাহলে আমার বিয়ে হলে আমায় কেন মঞ্চ ছাড়তে হবে?' বিনোদকে তাঁর বাবুরা বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিলেও তাঁরা কেউ কোনওদিন তাঁকে স্ত্রীর মর্যাদা দেননি।
গিরিশ চন্দ্র ঘোষের ভূমিকায় সমরেশ বসুর ব্যক্তিত্ব ও অভিনয় দুরন্ত। গিরিশ ঘোষের গাম্ভীর্য অতুলনীয় ফুটিয়েছেন তিনি।
বিনোদিনীর প্রেম, মিলন, পূর্বরাগ অসাধারণ আঙ্গিকে মঞ্চে তুলে ধরেছেন সুদীপ্তা। বিনোদিনীর জীবনে বারবার এসেছে পুরুষ, বারবার এসেছে প্রেম। সেইসব প্রণয় পাশের কী অনবদ্য উপস্থাপনা করেছেন সুদীপ্তা প্রতিটি অভিনেতার সঙ্গে। কখনও চিকের আড়ালে, কখনও প্রকাশ্যেই। সুদীপ্তা সাহসী, কিন্তু নেই কোনও অশোভন ইশারা, অভব্য শরীরী ভাষা। যেমন কুমার বাহাদুরের সঙ্গে বিনোদিনীর মিলন মঞ্চে রচনা করেছে এক অপূর্ব প্রণয়কাব্য। কিন্তু সে মিলন ক্ষণিকের নামমাত্র। কুমার বাহাদুর চরিত্রে অনবদ্য পদ্মনাভ দাশগুপ্ত। যখন কুমার দেশের বাড়ি ঘুরতে যাচ্ছে বলে বিয়ে করে বসে অন্য নারীকে, সে খবর পেয়ে বিনোদিনী সুদীপ্তার আর্তনাদ দর্শকের বুকে এসে লাগে। বুকভরা হাহাকার নিয়ে যখন কাঁদতে কাঁদতে সুদীপ্তা বিয়ের মুকুট ছিঁড়ে ফেলেন, তখন সে যন্ত্রণা যেন বড় বাস্তব। ঘুমন্ত বিনোদিনী আর প্রমোদমত্ত কুমার বাহাদুরের সংলাপে ওথেলো-ডেসডিমোনাকে মিলিয়ে দেওয়া চরম উপস্থাপনা।
'গগনে বাদল, নয়নে বাদল, জীবনে বাদল ছাইয়া;
এসো হে আমার বাদলের বঁধু, চাতকিনী আছে চাহিয়া।
কাঁদিছে রজনী তোমার লাগিয়া, সজনী তোমার জাগিয়া।
কোন অভিমানে হে নিঠুর নাথ, এখনও আমারে ত্যাগিয়া?
এ জীবন-ভার হয়েছে অবহ, সঁপিব তোমার হাতে।'
বিনোদিনীর জীবনে আরও পুরুষ এসেছে, গুর্মুখ রায়। গুর্মুখের চরিত্রে সুজন নীল মুখোপাধ্যায়ের অভিনয় এ নাটকের সম্পদ। হিন্দি মিশ্রিত বাংলা উচ্চারণে কী দাপট দেখালেন মঞ্চে। এই গুর্মুখ ভালবাসার থেকেও ব্যবসাকে বেশি ভালবাসে। বিনোদিনী গুর্মুখের কাছে আসতে চাননি। আসতে বাধ্য হন তাঁর গুরু গিরিশ ঘোষ ও তাঁর নাট্যশালার অগ্রজদের কথায়। বিনোদিনীকে তাঁরা স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন এটুকু ত্যাগ করলে নিজেরাই নিজেদের নাটক মঞ্চস্থ করতে পারবেন তাঁরা। জনমদুখিনী বিনোদ আশায় বুক বেঁধে গুর্মুখের হাতে নিজেকে সঁপে দেয়। বিনোদিনী-গুর্মুখের নিশিবাসরে মশারির সদৃশ আড়ালে সুজন নীল যেমন পেলব, কোমল প্রেমিক, তেমনই সুদীপ্তাও রতিস্নাত প্রেয়সী।
তবু বিনোদিনীর স্বপ্নপূরণ হয়নি। না পেয়েছে সে গুর্মুখের সহধর্মিনীর সম্মান না তাঁর নামে হয়েছে 'বিনোদিনী থিয়েটার'। নিদেনপক্ষে বি থিয়েটারও হয়নি। গিরিশ ঘোষ, রসরাজ অমৃতলাল বসু-- যাঁরা বিনোদকে তাঁর নিজের নামে থিয়েটার হওয়ার স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন, তাঁরা বললেন বিনোদিনী তো একজন তারকা অভিনেত্রী। তাই স্টার থিয়েটার নাম হওয়ার মানেই আসল স্টার বিনোদিনী। তবু যে তারকাকে দেখতে বাবুবিবিরা থিয়েটারে আসবেন, সেই তারকার নামে থিয়েটার হবে না। সমাজ নাকি মানবে না কোন বারবণিতা পাড়ায় বেড়ে ওঠা নটীর নামে থিয়েটার হলে। জীবনে ৯০টির বেশি নাটকে ১০০-র বেশি চরিত্র করেও নাট্যজগতের সেরা অভিনেত্রীর নামে থিয়েটারের নাম দেওয়া যায় না!
বিনোদকে সত্যি সত্যি ভালবাসা অর্পন করেছিলেন যে পুরুষ, তিনি হলেন রাঙাবাবু। এই চরিত্রে অভিনেতা বিশ্বজিৎ দাসের কাব্যিক অভিনয় চমৎকার। বিনোদ-রাঙাবাবুর আখ্যানও পরিণতি পায়নি। গিরিশ ঘোষের পর বিনোদিনীর যদি কেউ ভাল চেয়ে থাকেন তিনি রসরাজ অমৃতলাল বসু, যিনি বিনোদকে কখনও শরীরী ভাবে কাছে পেতে চাননি। বিনোদিনীর জীবনে এই পুরুষটি বড় বন্ধু। একসময় যখন অমৃতলাল গিরিশ ঘোষের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে নতুন দল করতে চান, তখন বিনোদিনীই অমৃতলালের চোখ খুলে দেন। অমৃতলাল বসুর চরিত্রে তথাগত চৌধুরীর অভিনয় যেন অমৃতধারা। পদ্মনাভ দাশগুপ্ত, সুজন নীল মুখোপাধ্যায়েরদের তুলনায় তথাগত অনেক জুনিয়র, কিন্তু এতটুকু ম্লান হয়নি তাঁর অভিনয়। গানে-অভিনয়ে সুদীপ্তা চক্রবর্তীর যোগ্য সঙ্গত করেছেন তথাগত।
মঞ্চে বিনোদিনীর মায়ের চরিত্রে সর্বাণী ভট্টাচার্য স্বল্প উপস্থিতিতে চোখা চোখা সংলাপে ঝড় তোলেন। বিনোদিনীর সমসাময়িক অভিনেত্রী এককড়ির চরিত্রে বিদিশা চক্রবর্তী, তারাসুন্দরীর ভূমিকায় দোয়েল রায়নন্দী, কনকের চরিত্রে ইন্দুদীপা, ক্ষেত্রর রোলে শ্বেতা বাগচী মুখোপাধ্যায়ের অভিনয় নজরকাড়া। 'বিনোদিনী অপেরা' শ্রেষ্ঠ প্রয়াস হতে পারার কারণ প্রতিটি চরিত্রের নিখুঁত চয়ন। কারও চরিত্র বিন্যাস এতটুকু দুর্বল লাগেনি। অবন্তীর মুন্সিয়ানা এখানেই।
'পুতুল নাচের পুতুল হয়ে
নেচেই শুধু গেলি …
মনকে শুধা নাচার ফলে
জীবনে কী পেলি
যখন ছিড়বে সুতো, বুঝবি যে তুই
আগুন নেভা ছাই…'
ছিন্নমূল সংসার, খিদে, অভাবের তাগিদেই বিনোদিনীর অভিনয়ে নামা। তখন তো আসা বলা হত না। অভিনয় করা মানে সমাজের নীচে স্থান। অথচ সেই নটীকে দেখতেই জনপ্লাবন বয়ে যায়। বিনোদিনী এক লড়াইয়ের মুখ, তবু নারীবাদী তকমা পরতে হয়নি। অপমান, হতাশা, দুঃখ, লাঞ্ছনা অতিক্রম করে এক অসামান্য প্রতিভার জীবন ছাড়িয়ে মহাজীবনে প্রবেশ করা। সুদীপ্তাকে মঞ্চে দেখে মনে হচ্ছিল এ তো শুধু বিনোদিনীর গল্প নয়, যুগে যুগে সমাজের শোষিত নারীদের কাহিনি। বিনোদিনীর পর তিনকড়ি, কাননবালা, সুচিত্রা, সাবিত্রী, সুপ্রিয়া, মাধবী হয়ে মিস শেফালির তো একই কাহিনি। সমাজের কাছে অগ্নিপরীক্ষা দিয়ে তাঁরা সত্যিকারের সীতা, প্রকৃত অর্থেই দেবী।
সেই দেবী সুদীপ্তা চক্রবর্তীর থেকেও চোখ ফেরানো যায় না। যখন বিনোদিনীর মুখে শোনা যায় সুনীল গাঙ্গুলির কবিতার লাইন, 'তেত্রিশ বছর কাটল, কেউ কথা রাখেনি', চমকে উঠতেই হয়।
বিনোদিনী নাটক থেকে অপেরা হয়ে উঠতে পেরেছে শুভদীপ গুহর সঙ্গীত পরিচালনা ও রাজশ্রী ঘোষের গানে। পোশাক পরিকল্পনার কারিগর শুচিস্মিতা দাশগুপ্ত অনবদ্য। আলোতে সুদীপ সান্যাল, শিল্প নির্দেশনায় সঞ্চয়ন ঘোষ ও কোরিওগ্রাফার রক্তিম গোস্বামীর অবদান উল্লেখযোগ্য। রূপসজ্জায় সঞ্জয় পাল এবং কেশসজ্জায় হেমা মুন্সী অতুলনীয়।
তবে 'বিনোদিনী অপেরা' শুধু জীবনীতেই আটকে নেই, বহতা সময়ের কথা আছে। যে দৃশ্যে বলা হয়, বছর কাটছে বিনোদিনী মঞ্চে নেই, সেই দৃশ্য গায়ে কাঁটা দেয়। চৈতন্যলীলার বিনোদিনীর আত্মা থেকে বেরিয়ে সুদীপ্তা দর্শকদের প্রশ্ন করেন, কেন বিনোদিনীর শেষ ইচ্ছে 'বিনোদিনী মঞ্চ' কেউ করল না? কেন স্টার থিয়েটারে আর থিয়েটার হয় না, সিনেমাহল হয়ে গেল? কেন স্টার থিয়েটারের পাশে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আজ বিনোদিনীর বাড়ি? আজকের পুরুষরাও তাঁর স্মৃতিফলকে পানের পিক ফেলে বিনোদিনীর আত্মাকে ধর্ষণ করতে ভোলেন না। মঞ্চেই চোখ ফেটে জল বেরিয়ে আসে সুদীপ্তার।
নাটকের দৈর্ঘ্য আড়াই ঘন্টার কাছাকাছি যা সর্বস্তরের দর্শকদের একটু হলেও চঞ্চল করতে পারে। মঞ্চে শ্রীরামকৃষ্ণকে না আনা কিছু দর্শককে হতাশ করতে পারে। অবন্তী চক্রবর্তী অন্ধকারে রামকৃষ্ণ কণ্ঠ শুনিয়ে কিছুটা রহস্য ধরে রাখলেন, হয়তো দর্শকের তুলনার হাত থেকে রেহাই পেতেই।
সুদীপ্তা অভিনয় করেছেন বেশ কিছু বাংলা ছবি ও প্রচুর সিরিয়ালে। জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন ঋতুপর্ণ ঘোষের 'বাড়িওয়ালি' ছবিতে মালতী চরিত্রের জন্য। কিন্তু সেই পরিচারিকা মালতীর থেকে সুদীপ্তাকে বেরোতে দেয়নি টলিউড। অবন্তী চক্রবর্তীর 'বিনোদিনী অপেরা' সুদীপ্তাকে সেসবের অনেক ঊর্ধ্বে পৌঁছে দিয়েছে। হাউসফুল বোর্ড আর দর্শকের করতালিতে সুদীপ্তা চক্রবর্তী আজ বিনোদিনী দাসী নন বিনোদিনী সম্রাজ্ঞী।
আরও পড়ুন: অভিমানের ৫০, কিশোর-রুমার বিয়ের সত্যি ঘটনা নিয়ে গল্প, তবে প্রথম পছন্দ ছিলেন না অমিতাভ