শেষ আপডেট: 21st April 2022 16:17
দ্য ওয়াল ব্যুরো: মননে তৈরি হয়ে রয়েছে অন্য ফ্রেম। সেই ফ্রেম যদি ভেঙে যায়? (Srikanto)
যদি দেখা যায়, যে চরিত্রের বুকের কাছে সুতোর কল্কা কাজ করা পাঞ্জাবি আর কাঁধের একপাশে শাল থাকত সেই চরিত্র আদুল গায়ে একটা শর্টস পরে গাঢ় নীল সমুদ্রের জলে নৌকো বাইছেন? অথবা যে চরিত্র মানে চোখে ভাসত জরির কাজ করা চওড়া পাড়ের শাড়ি, ভারী গয়না, কপাল বেয়ে নেমে আসা টিকলি—তাকে যদি দেখা যায় সুইম স্যুট পরে কোমর জলে দাঁড়িয়ে রয়েছে লাস্য চাউনি নিয়ে?
১০৫ বছর আগে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ‘শ্রীকান্ত’ (Srikanto) লিখেছিলেন। তার চার দশক পর বাংলায় যখন সেই উপন্যাসের ভিত্তিতে সিনেমা তৈরি হল, তখন উত্তম কুমার আর সুচিত্রা সেনের কস্টিউম ছিল এমনই। শতাব্দী পেরিয়ে সেই শ্রীকান্ত এবার ওয়েব সিরিজ হয়ে আসছে। আনছে ওটিটি প্ল্যাটফর্ম (OTT) হইচই। কিন্তু সেখানে সব চেনা ফ্রেম চুরমার হয়ে গিয়েছে।
রাজলক্ষ্মীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন সোহিনী সরকার (Sohini Sarakar)। দ্য ওয়াল-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সোহিনী জানিয়েছেন, ছক ভাঙা হয়েছে। ভাঙতে চেয়েই ভাঙা হয়েছে। এই ওয়েব সিরিজে শ্রীকান্তর চরিত্রে অভিনয় করেছেন ঋষভ বসু।
সোহিনী স্পষ্ট করেই জানিয়েছেন, উপন্যাসের মৌলিক বিষয় এক রেখেই ২০২২-এর মতো করে সবটা সাজানো হয়েছে। স্ক্রিপ্ট, কস্টিউম, লোকেশন—সব।
সিনেমা দেখার ব্যাপারে মানুষের যে মনোভাব বদলে গিয়েছে সেই প্রসঙ্গও ব্যাখ্যা করেছেন সোহিনী। তাঁর কথায়, “আগে মানুষ যেটা হতে পারবে না, সেটাকেই সিনেমায় দেখতে চাইত। আর এখন ব্যাপারটা বদলে গিয়েছে। এখন মানুষ চায়, চরিত্রের সঙ্গে নিজেকে রিলেট করতে।”
সিনেমা বা সাহিত্য সমালোচকরা প্রায়ই বলেন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ফর্ম বদলায়। প্রয়াত সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে গোর্কি সদনে পরিচালক গৌতম ঘোষ প্রায় এক দশক আগে একটি সেমিনারে বলেছিলেন, ১৯৫০ সালে কবিতার প্লট ছিল দেশ ভাগ। এখন সেটা বদলে গিয়েছে ফ্ল্যাট ভাগে। সাহিত্য, সিনেমা যদি সময়ের দলিল হয় তাহলে এই বদল স্বাভাবিক। ওই সেমিনারেই সৌমিত্রবাবু চলচ্চিত্রের ভাষা নিয়ে বলতে গিয়ে বলেছিলেন, “একজন সেদিন ফোন করে আমায় বলল, আমি ওমুক জায়গায় আধঘণ্টার মধ্যে ঢুকে যাব। কোনও জায়গায় পৌঁছনো এখন ঢুকে যাওয়া হয়ে গিয়েছে। এই বিবর্তনকে অস্বীকার করা মানে সামগ্রিকভাবে শিল্পকে সময়ের থেকে পিছিয়ে দেওয়া। যা সাংস্কৃতিক দর্শনের পরিপন্থী।”
এই ওয়েব সিরিজে অভয়ার চরিত্রে অভিনয় করেছেন মধুমিতা সরকার। এখানেও ছক ভেঙেছেন পরিচালক সানি ঘোষ রায়। অভয়ার নাম ছোট করে বলা হচ্ছে ‘অ্যাভি।’ যেমন এই সময়ে সন্দীপ নামের কেউ বন্ধু মহলে স্যান্ডি হয়ে যান ঠিক সেভাবেই নামের ক্ষেত্রেও সময়ের ধারা ধরতে চেয়েছেন পরিচালক।
এমনিতে যে কোনও ছক ভাঙা নিয়েই পক্ষে-বিপক্ষে দুটো মত থাকে। অঞ্জন দত্ত নির্মিত বং কানেকশন ছবিতে রবীন্দ্রসঙ্গীত ‘পাগলা হাওয়ার বাদল দিনে’ যখন আংশিক র্যাপ করে গাইলেন নচিকেতা সেই সময়েও সমালোচনা কম হয়নি। সোহিনী মানছেন, এই ‘শ্রীকান্ত’র ক্ষেত্রেও প্রশংসা, সমালোচনা দুই থাকতে পারে। সেটা থাকাটাই সমীচীন। কিন্তু তিনি বলেছেন, যাঁরা সমালোচনা করবেন তাঁরা যেন বিশ্লেষণ করেন কেন তাঁরা সেটা বলছেন। তাহলে ছবি যাঁরা বানাচ্ছেন তাঁরাও বুঝবেন দর্শকের দৃষ্টিভঙ্গি।
এখন দেখার ছক ভাঙা শ্রীকান্ত, রাজলক্ষ্মীরা কতটা হইচই ফেলেন!
আদিবাসীদের অপমানের অভিযোগ! রাখি সাওয়ান্তের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের হল