শেষ আপডেট: 27th March 2025 03:14
দ্য ওয়াল ব্যুরো: একটি পোস্টার, তাতে লেখা একটা প্রশ্ন আর তার নিচে দশ ডিজিটের একটি ফোন নম্বর। রুবির মোড় থেকে হাতিবাগান, এসপ্ল্যানেড থেকে বেহালা-- মাদুর-রঙা এই পোস্টারেই হঠাৎই মুখ ঢেকেছে শহর কলকাতা। পোস্টারের প্রশ্নটি খানিক এরকম, 'অসহায় লাগছে'? তার ঠিক নিচে জনৈক মৃত্যুঞ্জয় করের নম্বর। পথচলতি মানুষ থমকে দাঁড়াচ্ছেন সেই পোস্টারের সামনে। অতি উৎসাহীর দল হোয়াটসঅ্যাপ করে পরখও করে নিচ্ছেন! শহরে নতুন মনোবিদের আবির্ভাব? নাকি অবসাদগ্রস্ত, ধ্বস্ত জীবনে হঠাৎ করেই ফাগের পরশ?
এই নিয়ে যখন চারিদিকে হইচই তখনই আমজনতার রিয়ালিটি চেক। পুরোটাই ফিকশন? বাস্তবের সঙ্গে এর কোনও মিল নেই! ডিজিটাল যুগে প্রচার মহাদায়! আর সেই ট্রেন্ডে গা ভাসিয়ে সেই সব পোস্টার আদপে পিআর স্টান্ট ছাড়া আর কি কিছুই নয়? সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ছবি 'কিলবিল সোসাইটি' মুক্তি পাচ্ছে আগামী এপ্রিলে। পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়ের নাম ছবিতে মৃত্যুঞ্জয় কর। যে নম্বরটি দেওয়া আছে তাতে 'হেল্প' চাইলে আসছে একটা লিঙ্ক। জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে আগামী ১১ এপ্রিল আসতে হবে সিনেমা হলে! জনৈক নেটিজেন সেই স্ক্রিনশটও শেয়ার করেছেন সামাজিক মাধ্যমে।
রইল
ইউনিক~ নতুন কনসেপ্ট, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই! তবে বাধ সেধেছে নেটিজেনদের একটা বড় অংশ। ডিপ্রেশনের কাব্যিক বাংলা নিম্নচাপ হলেও এ অসুখ বর্তমান যুগে যেন মহামারী। আত্মহত্যা, শারীরিক অসুস্থতা, পারসোনালিটি ডিসঅর্ডার-- এই অসুখের 'হ্যাংওভার' বড্ড গভীরে। আর তা নিয়েই 'গিমিক'? মানতে পারছেন না অনেকেই। সমাজমাধ্যমজুড়ে লম্বাচওড়া পোস্ট। কেউ বলছেন অসংবেদনশীল, আবারও কারও মতে বড়ই বেদনাদায়ক! হাতিবাগানের মোহনবাগান লেনের বাসিন্দা বছর ৩২-এর তিস্তা সেনগুপ্ত। গত পাঁচ বছর ধরে ডিপ্রেশনের পেসেন্ট ছিলেন। এখন ভাল আছেন। তাঁর প্রশ্ন, "ভাবুন তো, যদি কোনও মানুষ এত কিছু না ভেবে সত্যি ওই নম্বরে হোয়াটসঅ্যাপ করে সাহায্য চেয়ে বসে? কী উত্তর দেবেন তাঁকে পরিচালক? পারবেন তাঁর সমস্যা সত্যিকারের দূর করতে? মানুষের অসহায়তা নিয়ে এই তঞ্চকতার লাভ কী?"
প্রসঙ্গত, দ্য ওয়ালের তরফেও ওই নম্বরে মেসেজ করা হয়েছিল। তাতে অবশ্যই ১১ এপ্রিল সিনেমা হলে কিলবিল সোসাইটি দেখতে যাওয়ার আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে শেয়ার করা হয়েছে এক হেল্পলাইন নম্বরও। তাতে লেখা, 'যদি সত্যিই আপসেট হয়ে থাকেন তবে এখানে যোগাযোগ করুন।" রয়েছে মানসিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত এক অলাভজনক সংস্থার লিঙ্কও।
রইল
পরিচালক সৃজিত অবশ্য জানিয়েছেন এই পিআর স্টান্টের নেপথ্যে তাঁর ভূমিকা নেই। সমাজমাধ্যমে লিখেছেন, "সকলকে জানিয়ে রাখি, কিলবিল সোসাইটি কোনও মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি বা সৃজনশীল সিদ্ধান্তে আমার ভূমিকা নেই। এর উদ্ভাবন ও অন্যরকম চিন্তাভাবনার জন্য প্রশংসা অথবা সমাজের উপর সম্ভাব্য ক্ষতিকারক প্রভাব নিয়ে যে আলোচনা হচ্ছে তার উত্তর এসভিএফ (ছবির প্রযোজনা সংস্থা)-এর কাছেই গচ্ছিত আছে। তাই সঠিক জায়গায় প্রশ্ন করা উচিৎ। লেখক ও নির্মাতা হিসেবে শুধু এটুকুই বলতে পারি এই ছবি অ্যাঞ্জেলিনা জোলির জীবনের একটি সত্যি ঘটনা অবলম্বনে।"
যদিও এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত প্রযোজনা সংস্থার তরফে এ নিয়ে এখনও পর্যন্ত কোনও অফিসিয়াল মন্তব্য করা হয়নি। বিতর্ক জারি, আগামী দিনে কী হয় এখন সেটাই দেখার।