জোজো-কিংশুকের লাভস্টোরি
শেষ আপডেট: 24th February 2025 14:39
কথায় বলে চল্লিশে চালশে, আর পঞ্চাশে? পানসে? ফিকে জীবন, পছন্দের রঙ ধূসর, রোম্যান্স যেন পর্ণমোচী! শত্তুরের মুখে ছাই দিয়ে পঞ্চাশ বছরের মিস, থুড়ি, মিসেস জোজো পার করেছেন বিবাহিত জীবনের ৩১টা বছর। তাঁর রোম্যান্স যেন দুরন্ত এক্সপ্রেস। সেই ট্রেনে করেই জোজোর 'বিঞ্জ' গন্তব্য গরুমারা। সেখানেই যে থাকেন তাঁর দীর্ঘদিনের ভালবাসার মানুষটি। নাম কিংশুক মুখোপাধ্যায়, ইন্ডাস্ট্রি যাকে বাবলু নামেই চেনে।
স্বামী সেই সুদূর উত্তরবঙ্গে। এদিকে জোজো থাকেন কলকাতা! তা নিয়ে ফিসফাসানি কম নয়। 'বিয়েটা আছে তো?' কান পেতে থাকে নিন্দকের দল! একচোট হাসেন কিংশুক-জোজো। আর এই 'আলাদা' থাকার কারণ অনুসন্ধানে খোদ জোজোর সঙ্গেই যোগাযোগ করে বসে দ্য ওয়াল।
জোজোর বয়ানে...
ডিসেম্বরে জন্মদিন। আর জানুয়ারিতে বিয়ে। সেই বিয়ের ৩১ বছর পূর্ণ হতেই ফেসবুকে কিংশুককে নিয়ে এক পোস্ট করি। ও মা! পর দিন উঠেই দেখি কত সব বাহারি শিরোনাম। 'বিয়ে করেও আলাদা থাকেন কেন', 'তবে কি বিচ্ছেদ গোপনেই'। এক চোট হেসেছিলাম। কারণ, না জানাতেই পারতাম। তবে ভক্তদের বঞ্চিত করতেও যে মন চায় না।
আমি আর কিংশুক সেই ছোট্টবেলার সঙ্গী। আমি গান গাইতাম। এমনই এক সময় আমার গ্রুপে কিংশুক যোগ দিল। কি-বোর্ড বাজাত। সেখান থেকেই আমাদের প্রেমে পড়া। জীবনে হিসেবে মেনে কিছু করিনি। সেরকম এই হিসেব না মানার গল্প হল আমাদের বিয়ে। শো-য়ে গিয়েছি। হঠাৎ করেই ঠিক করি বিয়ে করব! বাবাকে চিঠি লিখি। বাবা খুব একটা খুশি হননি। আমি সটান কিংশুকের বাড়ি গিয়ে ওর মাকে বলে দিই ইচ্ছের কথা! ওনার তো মাথায় হাত! বিয়ের মতো এত বড় জিনিস, সময় তো লাগবেই। কিন্তু আমি যে, ওঠ জোজো , তোর বিয়ে! এক সপ্তাহের মধ্যেই প্রণামীর সব শাড়ি নিজেই আয়োজন করে ফেললাম। মাসি শাশুড়ির বাড়িতেই হয়ে গেল আমাদের বিয়েটা।
মা আসেননি। রেগে ছিলেন। বাবারও একই গল্প। আমরা যদি বিয়ে করে তখন বেজায় খুশি। বেশ কিছু বছর পর আমাদের পরিবার বাড়ল। এল আমাদের ছোট্ট সোনা বাজো, আমাদের মেয়ে। এক শীতের সকালে মেয়েকে নিয়ে আমরা গিয়েছিল চিড়িয়াখানায়। অত পশুপাখি দেখে মেয়ের কী আনন্দ। বলতে থাকে, এমন একটা জায়গায় থাকতে চায় যেখানে হাত বাড়ালেই প্রকৃতি, পাখির ডাক আর রকমারি পশুর সমাগম।
ছেলে ও মেয়ের সঙ্গে জোজো
মেয়ের ইচ্ছে পূর্ণ করতে কিংশুকের মাথায় খেলে যায় এক অভাবনীয় আইডিয়া। একটা ফার্মহাউজ করলে কেমন হয়! কোথায়? উত্তরবঙ্গে।জায়গা ঠিক হয় গরুমারা। কেনা হয় জমি হয়। তৈরি হয় রিসোর্ট। জোজো-কিংশুকের স্বপ্ন, বাজোর ইচ্ছে উড়াল দেয় এক নতুন পথে।
কলকাতা থেকে গরুমারা বারবার যাতায়াত করা সম্ভব হচ্ছিল না কিছুতেই। তাহলে দেখা সাক্ষাৎ? ঠিক হয়, মেয়ের ছুটিতে, মায়ের ছুটিতে তাঁরা দৌড়ে যাবে বাবার কাছে। ছুঁয়ে দেখবে প্রকৃতি। পশুর দেখাও মিলবে অহরহ। শাশুড়ি থাকেন মাইসোর। সময় পেলে তিনিও চলে আসেন। প্রশ্ন উঠতেই পারে, কিংশুক আসে না কেন? বিশ্বাস করুন, হতাশ হবেন শুনলে, এর মধ্যে কোনও বাড়তি গসিপ নেই। গরুমারার সবুজের স্বাদ পেয়েছে যে তাঁর কি এই ইট, কাঠ পাথরের জঞ্জাল ভাল লাগে? এভাবেই ৩১ টা বছর কেটে গেল আমাদের। চুপিচুপি জানিয়ে রাখি, চিলাপাতাতেও নতুন রিসর্ট-এর কাজ শুরু হয়েছে আমাদের। গসিপ করতে চাইলে সেখানেও আসতে পারেন কিন্তু। আমি-কিংশুক অপেক্ষা করব। এর বেশি আর কিচ্ছু বলার নেই। কে বলেছে লং ডিস্টেন্স শুধু প্রেমের সম্পর্কেই হয়? আমাদেরটা ধরে নিন 'লং ডিসটেন্স ম্যারেজ'।