শেষ আপডেট: 28th December 2023 21:58
দ্য ওয়াল ব্যুরো: সে আজ ৩ দশক আগের কথা। নবাব-পুত্রের বয়স তখন মাত্র ২১। আর অমৃতা সিং তখন ৩৪ বছরের পূর্ণ যৌবনা। তাঁর ধারালো রূপের ছটায় ঝড় উঠত তামাম পুরুষকুলের বুকে। কিউপিডের সেই তির এসে লেগেছিল পতৌদি পরিবারের সদ্য কৈশোর পেরিয়ে আসা ছেলেটার বুকে। সেই যে প্রেমে পড়ছিলেন সইফ, কোনও কিছুর তোয়াক্কা করেননি। দুজনের বয়সের ব্যবধান ১৩ বছর, তবু লুকিয়ে অমৃতা সিংকে বিয়ে করেছিলেন সইফ আলি খান। ৩২ বছর পর করন জোহরের টক শোতে এসে অমৃতার সঙ্গে তাঁর প্রেম, বিয়ের কথা অকপটে খুলে বললেন সইফ। জানালেন, কাউকে কিচ্ছুটি না জানিয়ে বিয়ে করে অমৃতার হাত ধরে যখন বাড়ির দোরগোড়ায় এসে দাঁড়িয়েছিলেন, তখন মা শর্মিলা ঠাকুরের চোখের জল বাঁধ মানছিল না।
সম্প্রতি কফি উইথ করণের অষ্টম সিজনে আড্ডা দিতে হাজির হয়েছিলেন পতৌদি পরিবারের মা-ছেলে জুটি। হাজার হাসি ঠাট্টা, গল্প, মজার মাঝেই উঠে এসেছিল অমৃতা সঙ্গে সইফের বিয়ে এবং বিবাহ বিচ্ছেদের প্রসঙ্গ। সইফ জানিয়েছেন, বিয়ের আগে বাড়িতে কাউকে কিছু জানাননি তিনি। "আমি তখন বাড়ি থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছি। এত কিছু একসঙ্গে চলছিল যে আমার সব ঠিক করে মনেও নেই। আমার মনে হয়েছিল এটা (বিয়ে) একটা দুর্দান্ত ভাবনা, এবং আমি একটা নিরাপদ এবং নিশ্চিন্ত জীবন পাব। ওর (অমৃতা) সঙ্গে আমি সংসার করতে পারব বলেই ভেবেছিলাম," জানিয়েছেন সইফ।
প্রথম পুত্রবধূর সঙ্গে ছেলের জুটি মেনে নিতে খানিক সময় লাগলেও পরে শর্মিলা খুশিই হয়েছিলেন। তিনি জানিয়েছেন, অমৃতা এবং সইফ দুজনের স্বভাব ছিল একই রকম। ভীষণ মজাদার মানুষ দুজনেই। "ওরা কথা বললেই প্রচুর হাসি-মজা হত। লোকজনকে নকল করত, এর তার পিছনে লাগত। ওদের দুজনকে একসঙ্গে দেখতে দারুণ ভাল লাগত," জানিয়েছেন শর্মিলা। সইফ খুব ভাল অন্যের নকল করতে পারেন আর অমৃতা দুর্দান্ত গল্প বলতে পারেন, দাবি তাঁর।
তবে সইফ স্বীকার করে নিয়েছেন, আচমকা তাঁকে বিয়ে করে আসতে দেখে অত্যন্ত আঘাত পেয়েছিলেন শর্মিলা ঠাকুর। তাঁর চোখ দিয়ে শ্রাবণের ধারার মতো জল গড়িয়ে পড়তে শুরু করেছিল। ছেলেকে বলেছিলেন, "তুমি আমাকে অত্যন্ত কষ্ট দিয়েছ।" কফির আড্ডায় সইফ পুরনো দিনের কথা তুলতেই শর্মিলা বলেন, "বাবা-মা তোমাকে বড় করেছে, সব সময় তোমার সঙ্গে থেকেছে। তাঁদের সঙ্গে মনের কথা, জীবনের সমস্ত খুঁটিনাটি ভাগ করে নেওয়া ভাল।"
কালের নিয়মে বিচ্ছেদের খাঁড়া নেমে এসেছে তাঁদের জীবনে। তেরো বছর বৈবাহিক জীবন কাটানোর পর ডিভোর্স হয়ে যায় সইফ-অমৃতার। তারপর অমৃতা আর দাম্পত্য সম্পর্কে না গেলেও সইফ ফের বিয়ে করেছেন। তবে এখনও প্রাক্তন স্ত্রীর সঙ্গে খুবই ভাল সম্পর্ক তাঁর, জানিয়েছেন অভিনেতা। "আমাদের মধ্যে অনেক কিছুই বদলে যাচ্ছিল, কিন্তু কিন্তু ও সব সময়ই আমাকে সমর্থন করেছে। ও আমার দুই সন্তানের মা এবং এখনও আমার সঙ্গে ওর সম্পর্ক খুবই ভাল। আমাদের সম্পর্কটা আসলে শ্রদ্ধার। সম্পর্কে গোলমাল হলে সেটা কখনওই ভাল জিনিস নয়, বিশেষ করে বাচ্চাদের উপর তার প্রভাব পড়ে। যেটা আপনি কখনওই চাইবেন না, কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে এরকমটা হয়েই থাকে," জানিয়েছেন তিনি।
বিবাহ বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা প্রথম মা শর্মিলা ঠাকুরকেই জানিয়েছিলেন সইফ। তখন শর্মিলা বলেছিলেন, "তুমি যদি এটাই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে থাকো, তাহলে আমি তোমার পাশে আছি।" মায়ের এই সমর্থনটুকু তাঁকে ওই কঠিন সময় পেরিয়ে যেতে ভীষণ সাহায্য করেছিল বলে জানিয়েছেন সইফ আলি খান।
ছেলের বিবাহ বিচ্ছেদ মেনে নেওয়া তাঁর এবং টাইগার পতৌদির জন্য অত্যন্ত কঠিন হয়েছিল বলেই জানিয়েছেন শর্মিলা। সইফ-অমৃতার ছেলে ইব্রাহিমের বয়স তখন মাত্র তিন বছর। নাতনি সারা এবং নাতি ইব্রাহিম দাদু ঠাকুমার নয়নের মণি। চোখের সামনে পরিবারে ভাঙন ধরতে দেখা খুব একটা সহজ হয়নি কারও কাছেই, জানিয়েছেন তিনি। "আমি চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু তখন আর কিছু করার ছিল না। অমৃতার শান্ত হওয়ার জন্য অনেকটা সময়ের দরকার ছিল। ওরা একসঙ্গেই সেই সময়টুকু পেরিয়ে গিয়েছিল। এটা শুধু পরস্পর থেকে দূরে থাকার বিষয় নয়, আরও অনেক কিছু জড়িয়ে ছিল," জানিয়েছেন বর্ষীয়ান অভিনেত্রী।
"অমৃতা এবং দুই নাতি নাতনিকে হারিয়ে দ্বিগুণ বঞ্চিত হয়েছিলাম আমরা। শুধু সইফ নয়, আমাদেরও পুরো বিষয়টার সঙ্গে মানিয়ে নিতে হয়েছিল," দাবি শর্মিলার।