শেষ আপডেট: 16th December 2024 17:36
দ্য ওয়াল ব্যুরো: আশিতে আসিও না ছবির কথা মনে আছে? জীবনের আশি বছরে পৌঁছনোটা কতটা দুর্ভোগের হতে পারে সদানন্দের চরিত্র দিয়ে দেখিয়েছিলেন পরিচালক শ্রী জয়দ্রথ। স্ত্রী-বিয়োগের পর পরিবারের বঞ্চনা, অবহেলায় দীর্ণ ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের বেঁচে থাকাটাই যেন কঠিন হয়ে পড়েছিল। নেহাত এক অলৌকিক পুকুরের সন্ধান পেয়ে যৌবন ফিরে পেয়েছিলেন ভানু। সে ছিল ৬৭ সালের কথা। বাংলার সমাজ জীবনে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন পরিবারে সেই ছবি তখন আকছার দেখা যেত।
সদ্য আশি ছুঁয়েছেন শর্মিলা ঠাকুর (Sharmila Tagore)। তাঁর বয়স না বলে দিলে শুধু আপাত দর্শনে কেউ মানবে সে কথা! শর্মিলাও বললেন, আজকের ৮০ মানে সেদিনের ৬০। এ সপ্তাহেই শর্মিলার নতুন ছবি মুক্তি পাচ্ছে। ছবির নাম ‘আউট হাউস’। তার আগে সংবাদমাধ্যমে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে শর্মিলা বলেছেন, “আমি খুবই সাধারণ ক্রিম মাখি, কিছু ফ্যান্সি নয়। নিজেকে মজা করে মনে করাই, যে একদিন সব কিছু ধসে পড়বে, যেমন ডোরিয়ান গ্রে-র গল্পে হয়েছিল।"
শর্মিলার জীবনে ফিট থাকার মন্ত্র খুবই সহজ। নিয়মিত যোগব্যায়াম করেন। হাঁটতে ভালবাসেন। তবে হাঁটার জন্য সুষ্ঠু ব্যবস্থা না থাকলে একটু অস্বস্তি হয়। তাঁর কথায়, "আমি নিয়মিত যোগাসন করি। হাঁটতে যাই। এখন তো আর পায়ে হাঁটার পথই নেই, তাই পার্কে যেতেই হয়। সেটার জন্য একটু ডিসিপ্লিন থাকা দরকার।"
শুধু শারীরিক ফিটনেস নয়, মানসিক সচেতনতাও তাঁর কাছে সমান গুরুত্বপূর্ণ। শর্মিলা বলেন, "ক্রসওয়ার্ড, ব্রেন টিজার খেলতে খুব ভালোবাসি। বাগান করা, বই পড়া, বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটানো—এসব আমার দিন কাটানোর সঙ্গী। পিকো আইয়ারের 'দ্য হাফ নোন লাইফ' বইটি এখন পড়ছি।"
ভারতে ক্রমবর্ধমান প্রবীণ জনগোষ্ঠীর প্রসঙ্গে শর্মিলা বললেন, "বয়স বাড়লে নতুন কিছু শেখার প্রতি একটা মানসিক বাধা কাজ করে। কিন্তু একবার সেই বাধা কাটিয়ে উঠতে পারলে মুক্তির স্বাদ পাওয়া যায়। আমি নিজে অনলাইন শপিং শিখেছি, আর এতে প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারছি। কেন শেখা বন্ধ করব?"
পুনের এক শান্ত, সুন্দর পরিবেশে আউটহাউস ছবির শুটিং করেছেন শর্মিলা। ছবির গল্পে যেমন একাকীত্বের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার কথা বলা হয়েছে, তেমনই রয়েছে পারিবারিক সম্পর্কের টানাপড়েন। "আমার চরিত্র আদিমা একাই থাকেন, নিজের জীবনটা সুন্দরভাবে সামলান। তাঁর কুকুর পাবলোকে ঘিরে ঘটনার সূত্রপাত হলেও, ছবির মূল বিষয়বস্তু হল বন্ধুত্ব আর সম্পর্কের নতুন রূপ।"
পুণেতে থাকার সময়ে প্রতিদিন সকালে পাখির ডাকে ঘুম ভাঙত তাঁর। "আমার লন্ডনে থাকা বন্ধুর বাড়িতে থাকতাম। শুটিংয়ের পরে সন্ধ্যায় বাড়ির পরিচারক অত্যন্ত যত্ন নিয়ে খাবার পরিবেশন করতেন। পুণেতে এত তরুণ-তরুণীকে স্কুটার চালাতে দেখে খুব ভাল লাগত। তাঁদের প্রাণশক্তি আমাকে দারুণভাবে অনুপ্রাণিত করত।"
ছবিতে আদিমার মেয়ে (সোনালি কুলকার্নি) তাঁর সন্তানকে বড় করার চ্যালেঞ্জ নিয়ে ব্যস্ত। শর্মিলা বললেন, "আগে যৌথ পরিবারে সকলেই একে অপরের খেয়াল রাখত। কিন্তু এখন সেই ধারণা বদলেছে। তবে সন্তানদের প্রতি কোনও দায়বদ্ধতা চাপিয়ে দেওয়া ঠিক নয়। তারা যখনই আমাদের সঙ্গে সময় কাটাতে আসবে, তখন তাদের ভালভাবে স্বাগত জানানো উচিত। অভিযোগ করলে সম্পর্কের মাধুর্য হারিয়ে যায়।"
বয়সের চিহ্নকে সহজভাবে মেনে নিয়ে জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত উপভোগ করার যে পাঠ শর্মিলা ঠাকুর শেখাচ্ছেন, তা আধুনিক প্রজন্মের জন্যও অনুপ্রেরণার। বয়স কেবলই সংখ্যা—এটাই যেন বারবার প্রমাণ করছেন তিনি।