শেষ আপডেট: 9th July 2023 14:09
तेरे बिना ज़िन्दगी से कोई
शिकवा तो नहीं, शिकवा नहीं
शिकवा नहीं शिकवा नहीं …
'আঁধি' ছবির সেই লেজেন্ডারি গান। হিন্দি প্রেমের গানে আজও প্রথম সারিতে। গানের নায়ক-নায়িকা সঞ্জীব কুমার (Sanjeev Kumar) ও সুচিত্রা সেন (Suchitra Sen)। অনেকে মনে করেন, ইন্দিরা গান্ধীকে মাথায় রেখে রাজনীতিবিদ আরতি দেবীর চরিত্রটি সাজানো হয়েছিল। এই চরিত্র গড়তে গিয়ে বলিউডের কোনও নায়িকাকে না নিয়ে বাংলার সুচিত্রা সেনকেই প্রথম পছন্দ হয় গুলজারের। এ ছবিতে তাঁর প্রাক্তন স্বামীর ভূমিকায় অভিনয় করেন সঞ্জীব কুমার।
বম্বের যে তিন নায়কের সঙ্গে সুচিত্রার ভাল সম্পর্ক ছিল, তাঁরা হলেন দেব আনন্দ, ধর্মেন্দ্র ও সঞ্জীব কুমার। তবে কাজের বাইরে দেব সাব ও ধরমজির সঙ্গে সুচিত্রার সম্পর্ক বেশি গড়ায়নি। কিন্তু সঞ্জীব কুমার ছিলেন সুচিত্রার সত্যিকারের বন্ধু। দু'জনে একটি মাত্র ছবিতে অভিনয় করলেও সুচিত্রা যে ভরসা, বিশ্বাস উত্তমকুমারকে করেননি তা সঞ্জীব কুমারকে করেছিলেন। সঞ্জীব কুমার তথাকথিত অ্যাকশন হিরো বা বেবিফেস রোম্যান্টিক হিরো ছিলেন না। তিনি পর্দায় আসা মানেই ভাবগম্ভীর চরিত্র। যদিও একটা চাপা সেক্স অ্যাপিল তাঁর ছিল।
ভারী চেহারার জন্য মজা করে সঞ্জীবকে 'মোটু' বলে ডাকতেন সুচিত্রা সেন। সঞ্জীব কুমার কিন্তু সুচিত্রা সেনের থেকে বয়সে অনেকটাই ছোট ছিলেন। তবু দু'জনের বন্ধুত্ব ছিল তুখোড়। পর্দাতেও তাঁদের জুটি হিট। 'আঁধি'র পরেও সঞ্জীব কুমারকে নিয়ে বাংলা ছবি করতে চেয়েছিলেন সুচিত্রা। কিন্তু সঞ্জীব কুমারের অকালমৃত্যু সে আর হতে দিল না। সুচিত্রাও চলে গেলেন চির অন্তরালে।
সঞ্জীব কুমার কলকাতা এলে তিনি অবশ্যই আসতেন সুচিত্রার বালিগঞ্জ সার্কুলার রোডের বাড়িতে। তিনি আসা মানেই মজার মজার কথা। অসম্ভব রসবোধ ছিল তাঁর। আর পুরুষের হিউমারে বহু নারীর মতো সুচিত্রা সেনও মুগ্ধ হতেন। মৃত্যুর কিছুদিন আগেই একদিন সুচিত্রার বাড়ি এসেছিলেন সঞ্জীব কুমার। সেদিন এত মজার কথা বলেছিলেন তিনি যে সুচিত্রা সেন হেসে গড়িয়ে পড়েছিলেন। সুচিত্রা বুঝতেই পারেননি সঞ্জীবের শেষ হাসিমুখ দেখা এটাই। হৃদরোগে হঠাৎই সঞ্জীব কুমার প্রয়াত হন। স্থুলতা কিছুটা কারণ ছিল, আর ছিল অবসাদ। চির অকৃতদার ছিলেন তিনি। মনের ব্যর্থ প্রেম লুকিয়ে রাখতেন হাসিতে। জীবনে কয়েকজন হিরোইন তাঁর প্রেমিকা রূপে এলেও কখনও বিয়ে করেননি সঞ্জীব কুমার। সুচিত্রার সঙ্গে তাঁর ছিল বন্ধুত্বের সম্পর্ক।
মুনমুন সেন তখনও ছবির জগতে আসেননি। মায়ের বন্ধু সঞ্জীব কুমারের সঙ্গে মুনমুনের খুব মধুর সম্পর্ক ছিল। মুনমুনের বিয়ে ঠিক হল ত্রিপুরার রাজ পরিবারে, দেববর্মণ পরিবারে। জামাই ভরত দেববর্মণ। ভরত কিন্তু ছিলেন মুনমুনের পছন্দ। মুনমুন পরে মা সুচিত্রার অনুমতি পান। ভরত দেববর্মণের নিজের মাসি আবার জয়পুর রাজমাতা গায়ত্রী দেবী। গায়ত্রী দেবী মুনমুনকে আশীর্বাদ করতে এসেছিলেন সুচিত্রার বাড়ি। দুই বিশ্বসুন্দরী সুচিত্রা সেন আর গায়ত্রী দেবী মুখোমুখি বসে ভরত আর মুনমুনের বিয়ের পাকা কথা বলেছিলেন। পরে বিয়েতেও এসেছিলেন গায়ত্রী দেবী।
মুনমুনের বিয়ের অনেক আগেই মারা যান তাঁর বাবা দিবানাথ সেন। সেই জায়গা সেই পিতার দায় দায়িত্ব পূরণ করেছিলেন সঞ্জীব কুমার। সুচিত্রা মেয়ের বিয়েতে সঞ্জীবকে বিশেষ ভাবে নিমন্ত্রণ করেন। দু'জনের বন্ধুত্ব এতটাই ছিল যে এই বিয়েতে কন্যাপক্ষের হয়ে, বলতে গেলে বাবার মতোই, সব দায়িত্ব পালন করেন সঞ্জীব কুমার।
জামাই ভরত বর্মণের হাতে কন্যাসমা মুনমুনকে তুলে দেন সঞ্জীব কুমার নিজেই। মুনমুনকে বিয়েতে সম্প্রদান করেছিলেন সঞ্জীব কুমার। জামাই ভরতকে পঞ্চব্যঞ্জন সাজিয়ে খাইয়েছিলেন সুচিত্রা। আর ভরতের পাশে বসে যত্ন করে তাঁকে খাইয়েছিলেন সঞ্জীব কুমার।
প্রফেশানাল জগতের বাইরে দুই নায়ক-নায়িকার এত পারিবারিক হৃদ্যতা খুবই বিরল। তবে ভরত আর সঞ্জীব ছিলেন প্রায় বন্ধুর মতো। সঞ্জীব বলেই ডাকতেন ভরত। তাই আজও ভরত ও মুনমুনের কাছে সঞ্জীব কুমারের জন্য আলাদা একটা শ্রদ্ধার সম্পর্ক তোলা আছে।
মুনমুনের বিয়ের ছবি সৌজন্যে: ভরত দেব বর্মণ ও মুনমুন সেন
টোটার আসল নামটাই হারিয়ে গেছে, সে নামে তাঁকে ডাকতেন কেবল সৌমিত্র