Latest News

সন্ধ্যা পদ্মশ্রী, সুমন কল্যাণপুর-বাণী জয়রাম পদ্মভূষণ! বাংলার গায়িকা বলেই কী ছোট পুরস্কার

শুভদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়

সম্প্রতি প্রজাতন্ত্র দিবসে ঘোষণা হল দেশের পদ্ম পুরস্কারের তালিকা। এ বছর সঙ্গীত জগত থেকে দুই অতীত দিনের গায়িকা সুমন কল্যাণপুর এবং বাণী জয়রাম পদ্মভূষণ পুরস্কার পেলেন। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে অন্য জায়গায়। গত বছর ঠিক একই সময়ে এই দুই গায়িকার থেকেও বয়স্ক এবং অভিজ্ঞ গায়িকা গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় (Sandhya Mukherjee) পদ্মশ্রী পুরস্কার (Padmashri Award) পেয়েছিলেন। তবে প্রশ্ন উঠেছিল, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের মতো গায়িকা কী কেবল পদ্মশ্রী পুরস্কারের যোগ্য। সেই প্রশ্নই এবার ফের ঘুরে এল, সুমন-বাণীর পদ্মভূষণ প্রাপ্তিতে।

গত বছরে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় পদ্মশ্রী পুরস্কার পাওয়ার পরেও তা গ্রহণ করেননি, সরাসরি প্রত্যাখান করেছিলেন। সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় যেন শেষ জীবনে এসে এই অসম্মানটা নিতে পারেননি। শান্ত ও চাপা স্বভাবের সন্ধ্যা চলেও গেলেন ঠিক তারপরই। তার কিছুদিন পরেও চর্চায় রয়ে যায়, এতদিন ধরে, এত যুগ ধরে সঙ্গীত সাধনা করে শুধুমাত্র একটা পদ্মশ্রী সম্মান তাঁকে ছুড়ে দেওয়া হল!

অথচ এ বছর পদ্মভূষণ পেলেন সুমন কল্যাণপুর ও বাণী জয়রাম। তাঁরা কি সন্ধ্যার চেয়ে বেশি বড় শিল্পী, তাই সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের বেলা পদ্মশ্রী?

কোন শিল্পী বড় আর কোন শিল্পী ছোট, সে তর্ক আপেক্ষিক। কিন্তু সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের গানের যা ব্যাপ্তি, তা পদ্মবিভূষণ বা দাদা সাহেব ফালকে পুরস্কারের যোগ্য বলেই মনে করেন বিশিষ্ট সঙ্গীতজ্ঞরা। তবে কি আঞ্চলিক বাংলার গায়িকা বলেই সন্ধ্যাকে এই বঞ্চনা?

Image - সন্ধ্যা পদ্মশ্রী, সুমন কল্যাণপুর-বাণী জয়রাম পদ্মভূষণ! বাংলার গায়িকা বলেই কী ছোট পুরস্কার

অথচ সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় শুধুমাত্র বাংলা গানের শিল্পী নন। শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের সকল ঘরানা তিনি আয়ত্ত করেছেন। সেই সঙ্গে বিভিন্ন প্রদেশের ও ভাষার গানে তিনি প্লে ব্যাক করেছেন। এ কথা অনস্বীকার্য, যে বাংলা গানে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের যা জায়গা, তার ধারেকাছে নেই সুমন কল্যাণপুর বা বাণী জয়রাম।

আবার সুমন বা বাণীরা এই বছর পদ্মভূষণ পেলেও, আরও এক সমসাময়িক গায়িকা আরতি মুখোপাধ্যায় সমস্ত সরকারি পুরস্কার থেকে ব্রাত্যই রয়ে গেছেন আজও। কিন্তু হিটের নিরিখে সন্ধ্যা এবং আরতি ‘দুজনেই অনেক বেশি নম্বরে এগিয়ে।

সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়কে যখন পদ্মশ্রী দেওয়া হয়, তখন তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। সেই সময় ‘দ্য ওয়াল’কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সন্ধ্যা কন্যা সৌমি সেনগুপ্ত জানিয়েছিলেন, ‘মা নিজে বেশি কিছু বলেন না। উনি অপমানিত বোধ করেছেন বলেই নিজে কেন্দ্রীয় সরকারকে জানিয়ে দিয়েছেন, নেবেন না পদ্মশ্রী। একজন বর্ষীয়ান শিল্পীকে কি বলা যায়, আপনাকে পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে, আপনি নেবেন কিনা? যেন বাজারে আলু-পটল কিনতে আসার মতো ব্যাপার।

অনেক তরুণ শিল্পী তাঁদের পাঁচ-ছ বছরের কর্মকান্ডের জন্য ‘পদ্মশ্রী’ পাচ্ছেন বা পেয়েছেন। তাই নিয়ে কিছু বলার নেই। নবীন প্রতিভারা পুরস্কার পাবেন এটা তো খুব স্বাভাবিক। কিন্তু যিনি ৭৮ বছর ধরে সঙ্গীত জগতে নিজের প্রতিভার জোরে চিরভাস্বর, তাঁকে নব্বই বছর বয়সে এসে একটা ‘পদ্মশ্রী’ অফার করা হচ্ছে। এটা মায়ের কাছে অপমানেরই সমান।
তাঁর নব্বই বছর বয়সে তাঁর দিকে একটা ‘পদ্মশ্রী’ ছুড়ে দেওয়ার ধৃষ্টতা যাঁদের হয়েছে, তাঁরা এই শ্রদ্ধেয় শিল্পীকে চরম অপমান করেছেন। কোনও প্রথাগত সম্মানের জন্য তিনি কোনও দিন লালায়িত নন। কিন্তু আজীবন যিনি নিরলস ভাবে সঙ্গীতচর্চা করে এলেন এই অপমান তাঁর প্রাপ্য ছিল না। গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় পদ্মশ্রী প্রত্যাখ্যান করেছেন, অসীম শ্রদ্ধা ও ভালবাসার সঙ্গে তাঁর এই দৃঢ়চেতা সিদ্ধান্তকে কুর্নিশ জানাই।’

এই ঘটনায় ক্ষোভ জানিয়েছিলেন আরতি মুখোপাধ্যায় থেকে শুরু করে আরও অনেক শিল্পীই। সেই ক্ষোভ যেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুর এক বছর পরেও আবার প্রশ্ন তুলল। সন্ধ্যার থেকে কি বাণী জয়রাম বা সুমন কল্যাণপুর বড় শিল্পী? তাই তাঁরা পদ্মভূষণ?

অনেকেই মনে করছেন, একের পর এক এই ঘটনায় কোথাও যেন এটাই প্রমাণিত হচ্ছে, যে বাংলা যেন একঘরে। যদিও সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের পরিধি শুধু বাংলায় নয়, হিন্দি, অসমিয়া, গুজরাটি, পাঞ্জাবি, এমনকি জম্মু-কাশ্মীরের ডোগরি ভাষাতেও গান গেয়েছেন তিনি। গেয়েছেন আফগানিস্তানের পশতু ভাষার গানও।

তার পরেও এই বঞ্চনা, এ যেন শুধু সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের অপমান নয় সারা বাংলার অপমান, বাংলা গানের অপমান।

লতার দাপটে কোণঠাসা ছিলেন সুমন, বাণী! আক্ষেপ মেটাতে পারল কি শেষ জীবনের পদ্ম-স্বীকৃতি

You might also like