ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি ভারতের অন্যতম বৃহৎ বিনোদন মাধ্যম এবং অর্থনীতির এক শক্তিশালী স্তম্ভ। তবে এই শিল্পের সবচেয়ে বড় শত্রু হয়ে উঠেছে পাইরেসি। সিনেমা মুক্তির আগেই অনলাইনে ফাঁস হওয়া, টরেন্ট বা অবৈধ স্ট্রিমিং সাইটে ছড়িয়ে পড়া—এই সব কিছু মিলিয়ে প্রতি বছর হাজার হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে প্রযোজক ও পরিবেশকদের। শুধু অর্থনৈতিক ক্ষতিই নয়, এই বেআইনি কার্যকলাপের মাধ্যমে অপরাধচক্র, এমনকি সন্ত্রাস-যোগে অর্থসাহায্য পাওয়ার আশঙ্কাও বেড়েছে। পাইরেসি এখন আর শুধু 'চুরি' নয়, বরং জাতীয় নিরাপত্তা ও সংস্কৃতির উপর এক গভীর আঘাত।
বলিউডে ‘ডিজিটাল ডাকাতি’, সন্ত্রাসের আরেক রূপ!
শেষ আপডেট: 22 May 2025 12:35
দ্য ওয়াল: ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি ভারতের অন্যতম বৃহৎ বিনোদন মাধ্যম এবং অর্থনীতির এক শক্তিশালী স্তম্ভ। তবে এই শিল্পের সবচেয়ে বড় শত্রু হয়ে উঠেছে পাইরেসি। সিনেমা মুক্তির আগেই অনলাইনে ফাঁস হওয়া, টরেন্ট বা অবৈধ স্ট্রিমিং সাইটে ছড়িয়ে পড়া—এই সব কিছু মিলিয়ে প্রতি বছর হাজার হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে প্রযোজক ও পরিবেশকদের। শুধু অর্থনৈতিক ক্ষতিই নয়, এই বেআইনি কার্যকলাপের মাধ্যমে অপরাধচক্র, এমনকি সন্ত্রাস-যোগে অর্থসাহায্য পাওয়ার আশঙ্কাও বেড়েছে। পাইরেসি এখন আর শুধু 'চুরি' নয়, বরং জাতীয় নিরাপত্তা ও সংস্কৃতির উপর এক গভীর আঘাত।
সাম্প্রতিক সময়ে বলিউডের বড় বাজেটের ছবি ‘রেইড ২’, ‘সিকান্দর’, ‘জাট’ ও ‘দ্য ভূতনি’ রিলিজের আগেই অনলাইনে ফাঁস হয়ে যায়। ২০২৫ সালের মে মাসে এই পাইরেসির ঢেউ যেমন দর্শকদের চমকে দেয়, তেমনই সিনেমা প্রযোজনা সংস্থাগুলির মাথায় আসে বিশাল লোকসানের বোঝা।
পাইরেসি নয়, এ যেন নতুন প্রজন্মের ‘ডিজিটাল সন্ত্রাস’
মিডিয়া পার্টনারস এশিয়া-র মতে, ভারতে ৯ কোটিরও বেশি মানুষ নিয়মিত পাইরেটেড ভিডিও কনটেন্ট দেখে। এই সংখ্যা ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপিন্স, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনামের চেয়ে অনেক বেশি। বিশেষজ্ঞদের দাবি, এই ধরণের পাইরেসি কেবল চোরাই ব্যবসা নয়, বরং এর নেপথ্যে থাকতে পারে পোস্ট-প্রোডাকশন স্টুডিও, কনটেন্ট ডেলিভারি নেটওয়ার্ক কিংবা এমনকি প্রেক্ষাগৃহ পরিচালনাকারী সংস্থার ভিতরের লোকজন।
২২,৪০০ কোটি টাকার পাইরেসি!
EY ও IAMAI-র যৌথ রিপোর্ট ‘দ্য রব রিপোর্ট’ (অক্টোবর ২০২৪) জানায়, ভারতে ২০২৩ সালে পাইরেসির বাজারের আকার ছিল ২২,৪০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে শুধু সিনেমাহল থেকেই ১৩,৭০০ কোটি টাকার পাইরেটেড কনটেন্ট ছড়ানো হয়, আর OTT কনটেন্ট থেকে ৮,৭০০ কোটি টাকার রাজস্ব হারায় ইন্ডাস্ট্রি। এর ফলে দেশের জিএসটি বাবদ ৪,৩০০ কোটি টাকার রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে।
কেন এই পাইরেসি?
রিপোর্টে উঠে এসেছে, করোনা-পরবর্তী সময়ে সাবস্ক্রিপশন রেভিনিউ ১৫০% বাড়লেও, ভারতের ৫১% দর্শক আজও পাইরেটেড উৎসে ভরসা করছেন।
পাইরেটেড কনটেন্টের মূল উৎস
স্ট্রিমিং (৬৩%)
মোবাইল অ্যাপ (১৬%)
সোশ্যাল মিডিয়া ও টরেন্ট (২১%)
প্রধান কারণগুলো
একাধিক সাবস্ক্রিপশনের ঝামেলা
কাঙ্ক্ষিত কনটেন্টের অভাব
বেশি সাবস্ক্রিপশন মূল্য
কে দেখছে বেশি পাইরেটেড কনটেন্ট?
১৯-৩৪ বছর বয়সীরা সবচেয়ে বেশি (৭৬%) পাইরেটেড কনটেন্ট দেখেন। নারীরা OTT-তে বেশি আগ্রহী, পুরুষরা ক্লাসিক সিনেমার দিকে ঝোঁকেন ৪০% পাইরেটেড কনটেন্ট হিন্দি ভাষায়, এরপর ইংরেজি (৩১%) প্রতি সপ্তাহে ভারতীয় দর্শক গড়ে ৯ ঘণ্টা পাইরেটেড কনটেন্ট দেখেন, যার মধ্যে ৩৮% সময় OTT এবং ২২% সময় সিনেমার জন্য বরাদ্দ টায়ার-২ শহরে বিপুল চাহিদা। রিপোর্ট বলছে, টায়ার-২ শহরে পাইরেসির প্রকোপ টায়ার-১ শহরের তুলনায় অনেক বেশি।
সিনেমার পর্দা আর শুধু বিনোদনের রঙিন স্বপ্ন নয়, আজ তা রীতিমতো সাইবার-সন্ত্রাসের জাল। বলিউড থেকে হলিউড, সবাই শঙ্কিত—এই ‘ডিজিটাল ডাকাতি’ বন্ধ না হলে ইন্ডাস্ট্রি আর কতদিন টিকবে? তাই প্রশ্ন উঠছে — পাইরেসির বিরুদ্ধে লড়াই কি এখন শুধু আইনি যুদ্ধ নয়, বরং এক প্রকার জাতীয় নিরাপত্তার চ্যালেঞ্জ?