ঋত্বিক-অনির্বাণ । গ্রাফিক্স: শুভ্র শর্ভিন
শেষ আপডেট: 4th January 2025 21:27
এক সন্ধেতে ‘দ্য ওয়াল’ এর টিম পৌঁছয় ব্লু ব্রিজ রেস্ত্রো ক্যাফে। দুই চক্রবর্তী অর্থাৎ ঋত্বিক এবং অনির্বাণের (Ritwick chakraborty-Anirban chakraborty) সাক্ষাৎকারের সময় ঠিক হয়েছে। তাঁদের নতুন ছবি ‘অপরিচিত’ আসছে। জয়দীপ মুখোপাধ্যায় পরিচালিত ছবিতে রয়েছেন ঋত্বিক-অনির্বাণ এবং ইশা সাহা। ছবি নিয়ে সাক্ষাৎকারের প্রসঙ্গ এগলেও তা বাঁক খায় সোশ্যাল মিডিয়ার ‘অপরিচিত’ মানুষজন এবং তাঁদের করা মন্তব্য, যা কখনও শালীনতার মাত্রা ছাড়িয়ে যায়, প্রশ্নটি ছিল ঋত্বিকের কাছে এতে খারাপ লাগা থাকে?
উত্তরে ঋত্বিক বলেন, ‘সোশ্যাল মিডিয়া বিষয়টি আমার কাছে টাইম পাসের মতো। এখনও অবধি তাই রয়েছে।’ অবধারিতভাবে প্রশ্ন ওঠে কেন এখনও অবধি? জবাবে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, মানে কোনদিন কী হয়? আমার থেকেও বুদ্ধিমান মানুষ ওটা ডিজাইন করেছে। তাঁরা চান, সহজেই আমাকে ওটার প্রতি আমাকে অ্যাডিক্টেড করে ফেলতে। সেই চেষ্টার কোনও ত্রুটি তাঁরা করেননি। কোনওদিন তাঁরা হয়তো জিতেও যেতে পারেন, তাই এখনও অবধি এটা আমার কাছে মামুলি টাইম পাস!’
কিছুদিন আগে একের পর এক ক্রিপ্টিক পোস্ট করেছেন ঋত্বিক চক্রবর্তী। পোস্টগুলো একের পর এক পড়লে বোঝা যায়, তাতে ‘কটাক্ষ’ করা হয়েছে দেবভক্তদের। তা নিয়ে শোরগোল কম হয়নি। পোস্টের কমেন্টে একের পর এক ধেয়ে এসেছে তীর্যক মন্তব্য। ঋত্বিকের কাছে প্রশ্ন ছিল, আপনার কথা বা করা পোস্ট মানুষ সিরিয়াসলি নিয়ে নিতে পারে, যা আপনি বুদ্ধিদীপ্ত বা বুদ্ধিমতা নিয়ে পোস্ট করছেন, তার ভাব অন্য কেউ না-ই বুঝতে পারেন। তাই নয়?
‘কোনও-কোনও সময় নিশ্চয়ই মনে হয়, সোশ্যাল মিডিয়ায় মানুষের অপব্যখ্যা করার স্বাধীনতা আছে। সেই স্বাধীনতায় কীভাবে হস্তক্ষেপ করব? তাঁর মতো করে ব্যাখ্যা করার স্বাধীনতাকে আমার কাছে কখনও মনে হয়েছে অপব্যখ্যা। আবার উল্টোদিকের মানুষের আমার ব্যাখ্যা মনে হতে পারে অপকথা। সোশ্যাল মিডিয়ায় দু’পক্ষেরই স্বাধীনতা আছে। তবে বলে দেওয়ার পর মানুষ কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেবেন, তা নিয়ে আনন্দও নেই, দুঃখ পেলে কখনও-কখনও খারাপও লাগে! দুঃখ দিয়ে দিলে খারাপ লাগে, কিন্তু যে কারণে দুঃখ দিলাম, হয়তো আমার কোনও শব্দের কারণে, উল্টে সে যে শব্দ বলে দেবে, তখন মনে হয় দুঃখ না পেলেও হয়। সে আমার থেকে কয়েক গুণ কড়া শব্দ বলছে হয়তো! তবে নিজের কৃতকর্ম নিয়ে কিছু মনে হওয়া তো থাকে, আমি কথাটা অন্যভাবেও বলতে পারতাম।’
ঋত্বিক স্বীকার করেন যে একটা খারাপলাগা মনের মধ্যে চলে। মনের অন্তরালে যে সেটা থাকে তা নিয়ে ঋত্বিক বলেন, ‘ওটা না বললেই ভাল হতো। কারণ পরের দিনই আরও অনেক বিষয় এসে যাবে, সেখানে আমি থাকব না। তারা কিন্তু থাকবে, যারা আঘাতপ্রাপ্ত বা যারা আনন্দ পেয়েছে। তাদের একাধিক সুযোগ দেওয়া হবে। আনন্দ পাওয়ার বা রেগে যাওয়ার। তখন সেটা তাকে লুফে নিতে হবে। আমি একদিনের জন্য নিজে কেন শুধু-শুধু দুঃখ পাব।’
সন্তান, সন্তান, সন্তান, সন্তান, সন্তান’—রাজ চক্রবর্তীর একটি সংলাপ হয়ে উঠেছে একটা গোটা ছবির প্রমোশন। অনেকে মনে করছেন, ওটা পাবলিসিটি স্টান্ট আবার অনেকে ভাবছেন ঔদ্ধত্য। ‘সন্তান’ ছবিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় মিঠুন চক্রবর্তীর সঙ্গে অভিনয় করেছেন ঋত্বিকও। তবে তাঁকে ‘সন্তান, সন্তান, সন্তান, সন্তান’ বলে শোনা যায়নি। ঋত্বিক বললেন, ‘ওটা তো রাজের (Raj chakraborty) তৈরি করা...এখন মানুষ বলছে। এর থেকে বড় আলাদা করে বলার প্রয়োজনই নেই। প্রোমশনের কারণে ও এত কিছু পারছিল না, তাই একবারে অনেকবার বলে দিল ছবির নাম। এর থেকে ভাল আর কী হতে পারে!’
ঠিক যেমন, রাজ ‘প্রমোশন’ কিংবা ‘পাবলিসিটি স্টান্ট’-এর খাতিরে যা বললেন, ঠিক একই পথে হাঁটলেন ‘সন্তান’ ঋত্বিক? সেই সূত্রেই কি বলা যেতে পারে, এ যাবৎকালে যা ঋত্বিক চক্রবর্তী পোস্ট করেছে, তা আদপে পাবলিসিটি স্টান্ট? প্রশ্ন শুনে, ঋত্বিক খোলসা করেন, ‘পাবলিসিটি স্টান্ট না, আমার সেভাবে মনে হচ্ছে না। সবগুলই তাৎক্ষণিক এক প্রতিক্রিয়া, অবশ্যই আমার খানিক মনে হওয়া। এটা তাৎক্ষণিক টিপ্পনি। স্টেটমেন্ট বড় শব্দ। এটা টিপ্পনি ছিল।’
ঋত্বিক চক্রবর্তীর (Ritwick chakraborty) ঠিক পাশের চেয়ারে বসেছিলেন অনির্বাণ চক্রবর্তী। তিনি আবার দেব প্রযোজিত এবং অভিনীত ছবি ‘খাদান’-এর অংশ। প্রশ্ন ঘুরে যায় অনির্বাণের কাছে, ‘এই যে দেবের সঙ্গে যুক্ত এক ডায়ালগ, নিয়ে ঋত্বিকের পোস্ট (শিরায় শিরায় রক্ত মাথায় কিন্তু গত্ত), সেটা নিয়ে খারাপলাগা, বা মাথা গরম হয়নি কখনও? বলেননি কিছু ঋত্বিককে? ‘না ও এটা কোথাও তো বলেনি, বললেও আমি ওকে জিজ্ঞেস করতাম না, কেন তুমি এটা বলেছো বা কিছু? উল্টোটাও তা-ই আমি যদি ‘সন্তান’ বা অন্য কোনও ছবি নিয়ে এটা বলতাম, ও আমাকে ব্যক্তিভাবে কিছুই জিজ্ঞেস করতো না। আমার ওটা এক্তিয়ারের বাইরে। বললেন অনির্বাণ চক্রবর্তী।
সাক্ষাৎকারের শেষে দুই অভিনেতাই ঠিক করলেন, তাঁরা দুজনেই একে অপরের অভিনীত ছবিই দেখবেন, অনির্বাণ দেখবেন, ‘সন্তান’। এবং ঋত্বিক দেখবেন ‘খাদান’।
প্রসঙ্গত, ‘অপরিচিত’ (oporichito) ছবিটি সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার। সাংঘাতিক দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে ফেরার পর স্মৃতি মুছে যায় এক জনৈকর। অচেনা হয়ে ওঠে তাঁর নিজের স্ত্রী। এক রহস্যময় নারীর হঠাৎ করেই তাঁর জীবনে আসে, এবং দানা বাঁধে রহস্য। এমনই এক ছবির অংশ ঋত্বিক-অনির্বাণ এবং ইশা। আগামী ১০ই জানুয়ারি জয়দীপ মুখোপাধ্যায় পরিচালিত ‘অপরিচিত’ সিনেমাহলে মুক্তি পেতে চলেছে ।