
অটো ড্রাইভার থেকে কমেডি বাদশা! রাজুর আসল নাম কী, কীভাবে তাঁর উত্থান
দ্য ওয়াল ব্যুরো: নব্বইয়ের দশকে দূরদর্শনের পর্দায় এমন কিছু সিরিয়াল শুরু হয়েছিল, যা মধ্য ও নিম্নবিত্ত মানুষের সারাদিনের পরিশ্রমের শেষে অমল আনন্দ দিত। তবে সেই অর্থে কোনও কমেডি শো তখনও শুরু হয়নি। ২০০৫ সালে ভারত প্রথম কোনও স্ট্যান্ড আপ কমেডি শো দেখল টিভির পর্দায়। তার নাম ছিল গ্রেট ইন্ডিয়া লাফ্টার চ্যালেঞ্জ। যে শো মণিমুক্তোর মতো তুলে এনেছিল এক ঝাঁক তরুণ স্ট্যান্ড আপ কমেডিয়ানকে। তাঁদের অন্যতম ছিলেন গজোধর ভাইয়া ওরফে রাজু শ্রীবাস্তব (Raju Srivastava)।

রাজু (Raju Srivastava) অবশ্য সেই চ্যালেঞ্জ জিততে পারেননি। কিন্তু তার পরেও গত ১৭ বছর ধরে এক টানা ধারাবাহিক ভাবে গোটা ভারতবাসীর মনোরঞ্জন করেছেন। বুধবার সকালে নয়াদিল্লির এইমস হাসপাতালে অকাল মৃত্যু হয়েছে রাজুর। তাঁর মৃত্যুতে শোকাহত দেশবাসী। কিন্তু রাজু তো শোক চাননি। চেয়েছিলেন নির্মল আনন্দ দিতে। তাঁর সেই যাত্রা পথ একবার ফিরে দেখা যাক।
রাজু শ্রীবাস্তব প্রয়াত, বয়স হয়েছিল ৫৮ বছর

রাজুর (Raju Srivastava) জন্ম উত্তরপ্রদেশের কানপুরে। ১৯৬৩ সালের ক্রিসমাসের দিন অর্থাৎ ২৫ ডিসেম্বর। রাজুর আসল নাম সত্য প্রকাশ শ্রীবাস্তব। তাঁর বাবা রমেশ চন্দ্র শ্রীবাস্তব ছিলেন জনপ্রিয় কবি। কানপুরের লোকজন তাঁকে বলাই কাকা বলে ডাকতেন। বাবার কিছু গুণ পেয়েছিলেন ছোট্ট রাজুও। ছোট থেকেই ছন্দ মিলিয়ে কবিতা বলতেন। হাসির কথা বলে জমিয়ে রাখতেন স্কুলের ক্লাসঘর, বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা। ক্লাস এইট নাইনে পরার সময় থেকেই অন্যদের গলাও দিব্বি নকল করতে পারতেন রাজু। সেই সঙ্গে ক্রিকেট কমেন্ট্রি করতে পারতেন।
ট্রেডমিলে বেশিক্ষণ দৌড়, ঘণ্টার পর ঘণ্টা জিমে, চটজলদি ওজন ঝরাতে গিয়েই কি হার্ট অ্যাটাক হচ্ছে?

রাজুর এই প্রতিভা নজর এড়ায়নি স্কুলের শিক্ষকদেরও। স্কুলের প্রিন্সিপাল তাঁকে উৎসাহ দিতেন মিমিক্রি করার। এক সাক্ষাৎকারে রাজু জানিয়েছিলেন, পাড়ায় বা মহল্লায় কোনও ক্রিকেট টুর্নামেন্ট হলে তাঁর ডাক পড়ত। কমেন্ট্রি করতে বলা হত তাঁকে। তবে রাজু ক্রিকেটের শট বা বোলিংয়ের কায়দা নিয়ে বিশেষ কথা বলতেন না। যে হেতু এলাকার সবাইকে মোটামুটি চিনতেন, তাই কমেন্ট্রির সময়ে তাদের পরিচয় দিয়ে মজার কথা বলতেন। আর তাতেই জমে যেত ক্রিকেট ম্যাচ। সবাই মজাও পেত।

বলিউডের প্রায় সমস্ত পুরুষ অভিনেতার গলাই নকল করতে পারতেন রাজু। তবে তাঁর এলেম ছিল অমিতাভ বচ্চনের কন্ঠ নকল করায়। এমনকি কলেজে পরার সময়ে তাঁর এক বান্ধবীকে শশী কাপুরের গলা নকল করে প্রপোজ করেছিলেন রাজু। সেই শুনে নাকি মেয়েটি প্রেম ভালবাসার কথা ছেড়ে তাঁর মিমিক্রিতেই মুগ্ধ হয়ে যান।

তার পর রাজুকে বলেন, প্লিজ অন্যদের গলাও নকল করে শোনাও। এর পর নাকি শত্রুঘ্ন সিনহা, ধর্মেন্দ্রর গলা নকল করে রাজু তাঁকে বলেছিলেন, আই লাভ ইউ। কিন্তু মেয়েটি তাঁর এই মিমিক্রিতেই মুগ্ধ হয়ে যান। প্রেম নিবেদনে নয়।।

তবে সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে ওঠা রাজুর জীবনে সহজ ছিল না। জি নিউজে একবার এক সাক্ষাৎকারে রাজু জানিয়েছিলেন, ফিল্মে কাজ পাওয়ার আগে মুম্বইতে অটো চালিয়েছেন রাজু (Raju Srivastava)। আর সে সবের ফাঁকে সময় পেলে মাত্র ৫০ টাকার বিনিময়ে স্ট্যান্ড আপ কমেডি শো করতেন।

এ সব করতে করতেই ফিল্মে ছোট খাটো রোলে কাজ করার সুযোগ পেয়ে যান রাজু শ্রীবাস্তব। ১৯৮৯ সালে ম্যায়নে পেয়ার কিয়া ছবিতে অভিনয় করেন তিনি। পরে বাজিগর, আমদানি আঠানি খরচা রূপাইয়া ও তেজাব ছবিতে অভিনয় করেছেন রাজু।

তবে স্ট্যান্ড কমেডিতেই আরও ধার দিতে শুরু করেন রাজু। তার শো-ও করতেন ঘুরে ঘুরে। ইন্দিরা গান্ধী, রাজীব গান্ধী, অটল বিহারী বাজপেয়ী, লালু প্রসাদ, মুলায়ম সিং যাদব এমনকি নরেন্দ্র মোদীর গলাও নকল করতেন রাজু শ্রীবাস্তব। তাতে দর্শকরা বেশ মজা পেতেন।

রাজুর কথায়, “কমেডি করা সবথেকে কঠিন। কাউকে হাসানো, নির্মল আনন্দ দেওয়ার মতো কঠিন কাজ নেই। কিন্তু কেউ যদি সাফল্যের সঙ্গে কমেডি করতে পারে, তা হলে অনায়াসে অন্য রোলেও অভিনয় করতে পারে। আমি অন্তত তাই বুঝেছি। এখনও সেটাই মাথায় রাখি।”
তবে গোটা ভারতে রাজুকে (Raju Srivastava) চিনিয়ে দিয়েছিলেন গজোধর ভাইয়াই। গ্রেট ইন্ডিয়া লাফটার চ্যালেঞ্জে সেই নাম ধারণ করেই কমেডি শোনাতেন রাজু শ্রীবাস্তব। পরে বিগ বস, কমেডি কা মহা মুকাবলা, নাচ বালিয়ে সিজন ৬-এও অংশ নিয়েছিলেন তিনি। উত্তরপ্রদেশ সরকার তাঁকে ফিল্ম ডেভেলপমেন্ট কাউন্সিলের চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ করেছিল। তা ছাড়া স্বচ্ছ ভারত অভিযানের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাস্যাডরও হয়েছিলেন তিনি।