শেষ আপডেট: 6th June 2023 08:42
দ্য ওয়াল ব্যুরো: ঠিক ৩৯ বছর পর শত্রু ছবির প্রতিবাদী পুলিশ অফিসার শুভঙ্কর সান্যালের স্মৃতি উস্কে আবার পর্দায় ফিরছেন রঞ্জিত মল্লিক (Ranjit Mallik)। তবে এবারে তিনি একজন সত্যবাদী নিষ্ঠাবান আইনজীবী । ছবির নাম অপরাজেয় (Aporajeyo)। স্বনামধন্য পরিচালক তরুণ মজুমদারের সুযোগ্য ছাত্র নেহাল দত্তের পরিচালনায় এই ছবি ৯ জুন মুক্তি পাবে। তার আগে পরিচালক নেহাল দত্ত দ্য ওয়ালকে এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকার দিলেন। একান্ত আলাপচারিতায় চৈতালি দত্ত।
শুভঙ্কর সান্যালকে পর্দায় ফিরিয়ে আনার চিন্তাভাবনা কেন মাথায় এল?
আমি চার বছর আগে যখন এই ছবি করার পরিকল্পনা করি তখন রঞ্জিত আঙ্কেল ছবি না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আমি বরাবর ওঁনাকে 'আঙ্কেল' বলে সম্বোধন করি। প্রায় চার দশক আগে শত্রু ছবিতে উনি ছিলেন একজন সৎ, দাপুটে পুলিশ অফিসার। এই গল্পে যখন দেখি যে জোরালো প্রতিবাদের জায়গা আছে তখনই আমার রঞ্জিত আঙ্কেলের কথা প্রথম মনে পড়ে। রঞ্জিত আঙ্কেল ছবি ছেড়ে দেওয়ার আগে পর্যন্ত যা ছবি উনি করেছেন তা কমেডি কিংবা আদর্শ দাদা নচেৎ বেশিরভাগই প্রতিবাদী চরিত্র।
বরাবর উনি পর্দায় সততার প্রতীক হিসেবে ধরা দিয়েছেন। আমার জীবনে দেখা এমন অনেক পুলিশ অফিসার আছেন যাঁরা অবসরের পর আইন চর্চা করেন। ধরে নিই ১৯৮৪ তে শত্রু ছবি করার সময শুভঙ্কর সান্যালের বয়স ছিল ৩৭-৩৮। সেই সময় উনি পুলিশের কাজ ছেড়ে দেন। আর যেহেতু তিনি আইনি পাস করা একজন প্রতিবাদী স্বভাবের মানুষ তাই আইনের মাধ্যমে এখন প্রতিবাদ করেন। সেই জায়গার থেকেই আবার শুভঙ্কর সান্যালকে পর্দায় ফিরিয়ে আনা। সত্যি বলতে পর্দায় শুভঙ্কর সান্যাল কে ফিরিয়ে আনতে আমি বদ্ধপরিকর ছিলাম। এই সময় দাঁড়িয়ে সমাজে শুভঙ্কর সান্যালের মতো প্রতিবাদী মানুষের খুব প্রয়োজন।
এই চরিত্রের জন্য কীভাবে আপনি রঞ্জিতবাবুকে রাজি করালেন?
পরিচালক তরুণ মজুমদারের 'চাঁদের বাড়ি' ছবির শ্যুটিংয়ের সময় রঞ্জিত আঙ্কেল আমাকে কাজের ব্যাপারে ভীষণ উজ্জীবিত করতেন। তখন আমি তনু জ্যেঠুর প্রধান সহকারী পরিচালক ছিলাম। শ্যুটিংয়ের অবসরে আমাদের মধ্যে প্রচুর আড্ডা হত। তখন ওঁনাকে আমি একবার বলেছিলাম,' ভবিষ্যতে আমার পরিচালনায় তোমার উপযোগী চরিত্র হলে তুমি অভিনয় করবে তো?'
তখন উনি আমায় বলেছিলেন,' অবশ্যই করব। তোমার সঙ্গে অভিনয় করলে আমার ভাল লাগবে।' যখন এই ছবির গল্পটা আমি শুনি তখনই আমি চিত্রনাট্যকার সৌনাভ বসু কে বলি যে এই চরিত্র রঞ্জিত আঙ্কেল ছাড়া হবে না। এই ছবির গল্প শ্যাম দাগার।কিন্তু ছবির কাহিনিবিন্যাস, চিত্রনাট্য ও সংলাপ লিখেছেন সৌনাভ বসু। এরপর আমি ফোন করে রঞ্জিত আঙ্কেলের বাড়ি গেলে উনি বলেন,' আমি ছবি করা ছেড়ে দিয়েছি।'
কিন্তু ওঁনাকে তখন আমি গল্পটা শোনার অনুরোধ করি।এরপর উনি গল্প শোনেন। শুভঙ্কর সান্যাল চরিত্রের নামের প্রতি ওঁনার অদ্ভুত একটা ভালবাসা রয়েছে। তখন গল্প শুনে উনি বলেন,' আমি গল্পটা আরেকদিন শুনব'। এরপর ওঁনার পরামর্শে চিত্রনাট্যের উন্নয়ন করা হয়। মোট ছয় বার চিত্রনাট্য বদলানো হয়। তারপর ফাইনাল হয়।
শত্রু ছবিতে পুলিশ অফিসার হিসেবে পর্দায় যে দাপট শুভঙ্কর সান্যাল দেখিয়েছেন সেই স্মৃতি এই ছবির মাধ্যমে দর্শক কতটা ফিরে পাবেন?
বয়স বাড়লেও শুভঙ্কর সান্যালের প্রতিবাদী স্বভাব মজ্জাগত যা ছবির পরতে পরতে রয়েছে। ছবির প্রথম পর্যায়ে দেখা যাবে যে স্কুল শিক্ষকের জন্য তিনি লড়াই করছিলেন একদিন সেই স্কুল শিক্ষকই ম্যানিপুলেট হয়ে যান। তখন শুভঙ্কর সান্যাল আইনি পেশা ছেড়ে দেন। কিন্তু মিসেস রক্ষিত কে অন্যায় ভাবে তাঁর দুই মেয়ে ঠকিয়ে যখন বৃদ্ধাশ্রমে পাঠায় পুনরায় শুভঙ্কর সান্যাল আবার গর্জে ওঠেন।
গল্পটা যদি সংক্ষেপে একটু বলেন-
অনেক কষ্টে বড় করা সন্তানদের দূরে চলে যাওয়া, বাবা মার বার্ধক্যে একাকীত্ব পাশাপাশি সমাজে নানারকম ঘটে যাওয়া অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর গল্প বলে এই ছবি।
রঞ্জিত মল্লিকের মতো বর্ষিয়ান একজন অভিনেতার সঙ্গে কাজ করে পরিচালক হিসেবে আপনি কতটা সমৃদ্ধ হলেন?
ইতিপূর্বে আমার আটটি ছবি মুক্তি পেয়েছে। কিন্তু আমি রঞ্জিত আঙ্কেলের সঙ্গে কাজ করে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি। কারণ উনি একজন লিভিং লেজেন্ড তথা সর্বপরি একজন ভাল মানুষ। রঞ্জিত আঙ্কেল যদি এই ছবিটা করতে রাজি না হতেন তবে অপরাজেয় ছবিটা আমি তৈরি করতে পারতাম না। সেজন্য আমি ওঁনার কাছে বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ।। শুধু তাই নয় আমার পরের ছবিতেও উনি অভিনয় করছেন।
এই বয়সেও কাজের প্রতি এত নিষ্ঠা, অধ্যাবসায় যা শিক্ষণীয়। এই ছবি করার পরে ওঁনার জামাই প্রযোজক রানেদা আমাকে ফোন করে বলেছেন, ' বাবা তোর কাজের খুব প্রশংসা করেছেন।' এটাই আমার বড় পাওনা।
সৌমিত্র কুন্ডুর সুরে' যদি পারিস এখানে আয়' গানটি এখন অনেকের মুখে শোনা যাচ্ছে। ছবিতে গানের ভূমিকা কতটা গুরুত্বপূর্ণ?
ছবিতে মাত্র দুটি গান আছে। দুটোই সিচুয়েশনাল গান,কারোর লিপে নেই। গান গেয়েছেন রূপঙ্কর বাগচী, অন্বেষা দত্তগুপ্ত । 'অপরাজেয়' গানের কথা আমার লেখা, অপরটি স্মরণজিৎ লিখেছেন। এইটুকু বলতে পারি সুরকার সৌমিত্রদা নিঃসন্দেহে খুব ভাল কাজ করেছেন, এতটা আমি আশা করিনি।
ছবিতে কারা কারা অভিনয় করেছেন?
রঞ্জিত মল্লিক, সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়, লাবনী সরকার, ফাল্গুনী চট্টোপাধ্যায়, সুমিত গঙ্গোপাধ্যায়, স্বর্গীয় মৃণাল মুখোপাধ্যায়, তৃষাণী চট্টোপাধ্যায়, সায়ন বন্দ্যোপাধ্যায়, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য,অরিন প্রমুখ। ক্যামেরার দায়িত্বে রয়েছেন ঈশ্বর বারিক। সম্পাদনা মলয় লাহা। প্রযোজনা দিব্যা ফিল্মস।
সহ প্রযোজনা মোজোটেল এন্টারটেইনমেন্টস।
শ্যাম দাগা ,সুমনা কাঞ্জিলাল দ্বারা নিবেদিত এই ছবি।