শেষ আপডেট: 26th November 2022 06:16
প্রসেনজিৎ নাম কারও ভালবাসার,কারও কাছে ক্ষোভ, প্রসেনজিৎ-ঋতুপর্ণার বিয়ে হলে কি টিকবে?
শুভদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়
ছবি - “প্রসেনজিৎ ওয়েডস ঋতুপর্ণা”
পরিচালক - সম্রাট শর্মা
প্রযোজনা - প্রসেনজিৎ,সিদ্ধার্থ কুমার তিওয়ারি,রাহুল কুমার তিওয়ারি,গায়েত্রী গিল

উত্তম-সুচিত্রার বিয়ে হলে কি টিকত? যে প্রশ্ন তাঁদের সময় ছিল ভীষণ ভাবেই চর্চায়। জুটির স্রষ্টা তাঁরাই। এরপর যে জুটির নাম অবশ্যম্ভাবী ভাবে আসে তাঁরা হলেন প্রসেনজিৎ-ঋতুপর্ণা (Prosenjit weds Rituparna)। গ্রামের দর্শকের কাছে পোসেনজিত আর ঋতুপর্ণা। তবে শুধু গ্রামে নয় শহর কলকাতার অলিগলিতে খুঁজলে পাওয়া যাবে প্রসেনজিৎ আর ঋতুপর্ণার ফ্যান।
অনেকদিন থেকেই প্রচারে ছিল “প্রসেনজিৎ ওয়েডস ঋতুপর্ণা” ছবিটি। যে ছবির জন্য অনেকদিন পর জুটি বেঁধে সাড়ম্বরে ছবির প্রচার করেছিলেন স্বয়ং প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় ও ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। কিন্তু ছবির বিষয়টা আসলে কী? তাহলে কি আবার ফিরল বড় পর্দায় এই সুপারহিট জুটি?

“প্রসেনজিৎ ওয়েডস ঋতুপর্ণা” ছবিটি আদতে এক ফ্যানগার্লের গল্প। তবে একেবারে শুধুই ফ্যানগার্লের গল্প নয়। প্রসেনজিৎ নামের যেমন কেউ ফ্যান তেমন কারো কাছে প্রসেনজিৎ নামটাই জীবনে অভিশাপের মতো হয়ে ওঠে।
তবে ছবিতে বারবার অভিনয় করেছেন স্বয়ং ইন্ডাস্ট্রি, প্রসেনজিৎ চট্যোপাধ্যায়।

ঋতুপর্ণার চরিত্রে অভিনয় করেছেন ঈপ্সিতা যে আদতে একজন প্রসেনজিতের পাগল ফ্যান। তাঁর নাম প্রসেনজিতের নায়িকার নামেই। তাঁর বাবা মা আর ঠাকুমাও প্রসেনজিৎ-ঋতুপর্ণার ছবি দেখতে খুব ভালবাসেন। তাই তাঁরা মেয়ের নাম রেখেছেন ঋতুপর্ণা। আবার মেয়ে ঋতুপর্ণাও অসম্ভব ফ্যান এই জুটির। বাড়িতে সারাদিন এই জুটির ছবিই সে দেখে টিভিতে। দেখতে দেখতে সে প্রসেনজিৎকেই নিজের মনের মানুষ করে ফেলেছে। মেয়েটির শয়নে স্বপনে জাগরণে একমাত্র স্বপ্নের পুরুষ প্রসেনজিৎ ওরফে বুম্বা।

বুম্বা তাঁর কাছে বুম্বাদা নয়, নায়ককে সে তাঁর হৃদয় আসনে বসিয়েছে। শুধুই বুম্বা আর ঋতুপর্ণা। প্রসেনজিতের বয়স,বহুবিবাহ,সন্তান কোনকিছুই তার থেকে ফ্যাক্টর নয়। সে নিজের মনের মতো একটা জগত নিজে নিজেই গড়ে নিয়েছে। একপেশে প্রেম যাকে বলে আর কী। কিন্তু তাঁর ভাবনার জগত আর বাস্তবের জগতে বিস্তর তফাত। সাধারণ মেয়েটিকে এই দিবাস্বপ্নের জগত থেকে উদ্ধার করবে কে? প্রসেনজিৎ ই কী তাকে উদ্ধার করবে? ছবির ক্লাইমেক্স এখানেই।

ছবির প্রচার দেখে যদিও কেউ ভেবে থাকেন এই ছবি ফ্যান গার্লের গল্প তাহলে ঠিকই ধরেছেন। যে ফ্যান গার্লের চরিত্র অভিনয় করেছেন অভিনেত্রী ঈপ্সিতা মুখোপাধ্যায়। কিন্তু যা ধরতে পারেননি ছবির আরেকটি চরিত্রের কথা। যে ছেলেটির নাম প্রসেনজিৎ আর ডাক নাম বুম্বা। যার কাছে ছোট থেকেই এই নামটা অভিশাপের মতো কাজ করেছে। সারা স্কুলের বন্ধুদের কাছে এই নামটাই তাঁর টিটকিরি খাবার কারণ হয়ে উঠেছে। প্রসেনজিতের সংলাপ তুলে কেউ কিশোরটিকে বলে "মা আমি চুরি করিনি … চোরের মায়ের বড় গলা","আরে পসেনজিৎ এসছে হিরো না জিরো'। প্রসেনজিৎ নামটার মধ্যেই তার লুকিয়ে বিতৃষ্ণা। এই ছেলেটির মনে প্রসেনজিতের উপর ক্ষোভ কে মেটাবে?এই ছেলেটির চরিত্র করছেন ঋষভ বসু।

এদিকে মধ্যবিত্ত বাড়ির মেয়ের বিয়ে দিয়ে তার ঘাড় থেকে প্রসেনজিতের ভূত নামাতে চায় বাবা মা। আদুরে মেয়েটি খেতে ভালবাসে তাই মোটা হবার জন্য আর ফিল্মি হিরোকে স্বামী ভাবার জন্য তার বিয়ের সব সম্বন্ধ ক্যান্সেল হয়ে যায়। কিন্তু ঠাকুমা নাতনির বিয়ে দেখেই মরতে চান এই পণ করেন। নাতনিও শর্ত দেয় সে এমন ছেলেকেই বিয়ে করবে যার ভাল নাম প্রসেনজিৎ আর ডাক নাম বুম্বা। মেয়েটি ভেবেছিল এমন বিরল পাত্র খুঁজে পাওয়া যাবেনা। কিন্তু সেই ছেলেটি যার প্রসেনজিতের নামে ক্ষোভ সেই এই বিয়েতে রাজি হয়। কারণ এর পেছনেও লুকিয়ে আর একটি গুপ্ত কারণ।

ঈপ্সিতা আর ঋষভ দুজনেই ভীষণ ভাল অভিনয় করেছেন এই ছবিতে। দুজনের মনের যেমন অমিল চেহারাতেও অমিল। ঈপ্সিতা গোলগাল ঢলঢল আর ঋষভ একদম স্লিম অ্যান্ড স্মার্ট। ঈপ্সিতা ঋতুপর্ণা মেয়েটি প্রসেনজিৎ নাম বলেই এই ছেলেটিকে বিয়ে করে কিন্তু তারপর ও কী তার কাছে স্টার প্রসেনজিৎ মনের মানুষ থেকে যায়? মেয়েটি কি পারবে নির্মম সত্যিই মুখোমুখি দাঁড়াতে? এই প্রশ্ন ঘিরেই ছবির গল্প। প্রসেনজিৎ স্ক্রিনে অনেকবার এসেছেন তাঁর মতো তারকার পাশেও ঋষভ নিজের ক্যারিশমা বজায় রেখেছেন। বলাই যায় এ ছেলে ফুরিয়ে যাবে না। 'ভটভটি' ছবিতে ঋষভের অভিনয় দুরন্ত আবার 'অপরাজিত'তে রবি শঙ্কর সেজে ঋষভ মন ভরান। এবার বানিজ্যিক ছবিতেও ঋষভ নিরাশ করলেননা। ঈপ্সিতা কে এতদিন ছোট পর্দায় দেখলেও বড় পর্দায় বেশ লাগল।
মন ভাল করা ছবি দেখতে এই ছবি দেখা যেতেই পারে। নাইন্টিজ বাংলা ছবির ঘরানার থেকে এখনকার ঘরানার দারুণ মিশ্রণ করেছেন পরিচালক সম্রাট শর্মা। সারা ছবি জুড়ে নাইন্টিজ বাংলা ছবির ক্লিপিংস আর গান। সাথে বুম্বা-ঋতু জুটি।
ছবির বাকি চরিত্রভিনেতারা মানসী সিনহা,অভিজিত গুহ,রেশমী সেন যথাযথ অভিনয় করেছেন। এক এক জায়গায় মানসী-অভিজিতের মজার দাম্পত্য দৃশ্য বেশ জমিয়ে দিয়েছে।
ছবিতে গানের ব্যবহার বেশ ভাল। যে গানটি ছবির শীর্ষসঙ্গীত '“প্রসেনজিৎ ওয়েডস ঋতুপর্ণা” সেটি তো বড় পর্দায় যেন নাইন্টিজ ম্যাজিক ফিরে এসছে। তবে দেবদীপ মুখোপাধ্যায় কিছু জায়গায় বেশি লাউড। কানে আরাম দেয় শুনতে শোভন গাঙ্গুলির কন্ঠে 'ভালবাসি না বলে বোঝাই' গানটি। এই গানটিই ছবি সেরা। দুর্নিবার 'দুরত্ব' গানটি যথাযোগ্য গেয়েছেন। 'উরু উরু' গানে রেট্রো লুকে ঈপ্সিতা-ঋষভের কোরিওগ্রাফি মন ভরায়।
দেবদীপ – রনজয় – শোভন ভাল কাজ করেছেন।
ছবির খামতি কিছু অংশে লাউড অভিনয়। এছাড়াও ছবির নাম যেখানে “প্রসেনজিৎ ওয়েডস ঋতুপর্ণা” সেখানে ছবিতে ঋতুপর্ণার উপস্থিতি বড় কম। প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় স্বমহিমায় ছবিতে আছেন। তাঁকে দেখতেও দেবতার মতো সুন্দর লেগেছে। মনে করিয়েছে শাহরুখ খানের 'ফ্যান' বা ঋতুপর্ণ ঘোষের 'তিতলি' ছবির কথা। তবু প্রসেনজিতের মতো সুপারস্টার তারকা যে ছবির মুখ ও প্রযোজক সেই ছবি আরেকটু নিখুঁত করে পরিচালক বানাতে পারতেন।
“প্রসেনজিৎ ওয়েডস ঋতুপর্ণা” ছবির নামটা দুভাবে ব্যবহার হল ছবিতে। সাধারণ দর্শক এ ছবির পোস্টারে প্রসেনজিতের ছবি দেখেই সিনেমাহলে ভিড় জমাবেন। সাথে ঋতুপর্ণার উপস্থিতি। আবার এটাও ঠিক ছবির আসল নায়ক-নায়িকা তারকা প্রসেনজিৎ-ঋতুপর্ণা নন। প্রসেনজিৎ নামের ছেলে ঋষভ আর ঋতুপর্ণা নামের মেয়ে ঈপ্সিতার বিয়ের গল্প। দুই দিক দিয়েই ছবিটি দর্শকদের মন জয় করবে।
প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় এ ছবিতে যেমন সুপারস্টার হয়ে আবির্ভূত হয়েছেন তেমন নিজের চরিত্রের অন্ধকার দিক গুলো খোলা খাতার মতো তুলে ধরেছেন। তাঁর তিন বার বিয়ে টেকেনি সেটা ছবিতে তিনি কোথাও লুকোননি। যেটা ছবির মোড় ঘুরিয়ে দেয়। এমন ভাবে নিজেকে পর্দায় মেলে ধরার জন্য প্রসেনজিৎ কে কুর্ণিশ।
প্রসেনজিৎ-ঋতুপর্ণা জুটি যাদের পছন্দ তাঁদের এ ছবি দেখতেই হবে। অনেকেই শিক্ষাও পাবেন তারকারাও মানুষ।