শেষ আপডেট: 6th February 2025 17:04
বাংলায় লগ্নি টানতে যখন একদিকে বাণিজ্য সম্মেলন চলছে, চলচ্চিত্র শিল্পে বিনিয়োগ টানার কথা হচ্ছে, ঠিক সেই সময়ে ফের টলিপাড়ায় মেঘ জমেছে। নতুন করে অচলাবস্থার অন্ধকার ঘনাতে শুরু করেছে, সিনেমা-সিরিয়ালের শ্যুটিং পর্বে। শুধু তাই নয়, আরও একবার প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে কোনও একজনের ‘দাদাগিরি’ নিয়ে।
সার্বিক এই পরিস্থিতিতে পরিচালকদের একাংশ ইতিমধ্যে মুখ খুলেছেন। এবার অভিনেতা পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়ও মৌলিক প্রশ্ন তুললেন। ‘দ্য ওয়াল’-এর প্রশ্নের জবাবে পরমব্রত বলেন, ‘আমরা এখনও অবধি জানিই না, ঠিক কী কারণে অসহযোগিতা করা হচ্ছে? মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী বারবারই বলেছেন, কাজ বন্ধ করা যাবে না। কোনওরকম কাজ বন্ধ করা যাবে না। উনি ধর্মঘটের বিরুদ্ধে, অচলাস্থার বিরুদ্ধে। তার পরেও এসব হচ্ছে।’
পরমব্রত অবশ্য শুরুতে স্পষ্ট করে দেন, এ নিয়ে তাঁর একার কথা বলার এক্তিয়ার সীমিত। কারণ, যা সিদ্ধান্ত হবে তা সমষ্টিগত ভাবেই নেওয়া হবে। তাঁর কথায়, ‘এরপর ঠিক কী হবে তা সাংগঠনিকভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আমি একা সিদ্ধান্ত নেওয়ার বা বলার কেউ নই। বৃহস্পতিবার সন্ধে পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে।’
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁদের জুলাই বৈঠকের কথাও স্মরণ করিয়ে দেন পরমব্রত। তিনি বলেন, ‘জুলাই মাসের শেষে উনি এই কথাই বলেছিলেন যে, কারও কাজ বন্ধ করা যাবে না। কাউকে ব্ল্যাকলিস্ট বা নিষিদ্ধ বলে ঘোষণা করা যাবে না, সাসপেন্ড করা যাবে না। তা সত্ত্বেও এই অসহযোগিতার মাধ্যমে কাজ বন্ধটা কেন হচ্ছে তার কোনও সদুত্তর আমাদের কাছে নেই। আমার আশা করব সদুত্তর পাব। সেই সঙ্গে এটাও সত্যি কথা, অন্য ইন্ডাস্ট্রির যাঁরা স্টেকহোল্ডার, বিশেষ করে আমাদের মতো পরিচালকদের যখন কেউ এমপ্লয় করে, অ্যাপয়েন্ট করে, কখনও সেটা ওটিটি প্ল্যাটফর্ম, কিংবা প্রযোজক, টেলিভিশনের ক্ষেত্রে, ব্রডকাস্ট বা চ্যানেল, তাঁদের পজিশন ঠিক কী এ বিষয়ে?এই পরিস্থিতিটার সম্বন্ধে, এটা জানার অপেক্ষা করব, এরপর আমরা আলোচনা করে, সিদ্ধান্ত নেব।’
শুধু একটি সিরিয়ালের শ্যুটিং নয়, কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় পরিচালিত একটি ছবিও বিরোধের মুখে পড়ে চৌমাথায় দাঁড়িয়ে রাস্তা খুঁজছে। সম্প্রতি তিনি একটি ভিডিও বার্তায় দাবি করেছিলেন, আলোর সন্ধান পেয়েছেন। মোটামুটি সব মিটমাট হয়ে গিয়েছে। কিন্তু তার পরেই টলিপাড়ার প্রভাবশালী নেতা তথা ফেডারেশনের সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাসের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ‘আলোচনা চলছে’। সেই আলোচনার ফল কী হবে তিনি জানেন না। কারণ, স্বরূপের কথায়, ‘আমি জ্যোতিষী নই, তাই ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারছি না, ঠিক কবে থেকে শুটিং হতে পারে!’
অবশ্য ঘরোয়া আলোচনায় অনেকেই দাবি করছেন, জ্যোতিষী না হলেও, ছবির শ্যুটিং হবে কি হবে না তার ভাগ্য নিয়ন্ত্রক এখন তিনিই। কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের ছবি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে পরম বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে, কৌশিকদা নিজে এ ব্যাপারে বিশদে আমাদের কিছু বলতে চাননি। তাই বিরাট কিছু বলতে পারব না। আমরা এটুকুই জানতাম, কৌশিকদার ছবির প্রযোজককে বলা হয়েছে, যে আপনার ছবির পরিচালকের সঙ্গে কাজ করতে আমরা অনিচ্ছুক। তারপর কৌশিকদা ওঁদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়েছিলেন, তারপর উনি ফেসবুক ভিডিও করেন।’
পরমব্রত আরও বলেন, ‘আমার বক্তব্য হচ্ছে, এতে ক্ষতিটা কার হচ্ছে? কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের ছবিটা বড় একটি ছবি ছিল। ৩২ দিনের শ্যুট ছিল। ছবিটা হলে কৌশিকদার তো একার লাভ হতো না। পুরো ইউনিটের লাভ হত। বড় ছবি, প্রচুর অ্যাকশন ছিল এবং প্রচুর লোক কাজ করার সুযোগ পেতেন। তাঁরা সেই ৩২ দিনের রুজিরুটি হারালেন। যাঁরা হারালেন, তাঁরা তো ফেডারেশনের অন্তর্ভুক্ত কোনও না কোনও গিল্ডের মেম্বার।’ তাঁদের জীবিকায় এভাবে আঘাত লাগার দায় কার, সেই প্রশ্নও তুলেছেন পরমব্রত।