শেষ আপডেট: 9th January 2025 17:59
'না, ওকে নিয়ে আমি কিছু বলব না, কিচ্ছু বলতে চাই না আমি, ও যে নেই এটাই তো আমি মানি না' — এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে চললেন শাস্ত্রীয় সঙ্গীত জগতের মায়েস্ত্রো পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তী। গলা ধরে এল তাঁর।
এরপর নিজেকে খানিক সামলে বললেন, 'ছেলেটাকে তো আজ থেকে চিনতাম না। সেই কবে থেকে...ও যে অসুস্থ সেটাই তো আমি (থেমে গিয়ে)...ওকে নিয়ে জিজ্ঞাসা করবেন না প্লিজ। আমি বলতে চাই না।'--কথাগুলো যাকে নিয়ে বললেন এক বছর আগেই তাঁকে হারিয়েছে সঙ্গীত জগৎ। যার আচমকা প্রয়াণে দিশেহারা হয়ে পড়েছিলেন সতীর্থরা। তিনি রশিদ খান, পণ্ডিত ভীমসেন যোশী যাকে নিয়ে বলেছিলেন, 'ওর কণ্ঠ ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের ভবিষ্যৎ।'
২০২৪, ৯ জানুয়ারি। আচমকাই খবর আসে উস্তাদ রশিদ খান আর নেই। ছুটে যান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একাধিক সংবাদমাধ্যমের তরফে পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তীর সঙ্গে সে সময় যোগাযোগ করা হলে তিনি আকাশ থেকে পড়েন, বলেন, "গতকাল রাতেও তো পরিবার থেকে জানিয়েছে রশিদ দুবাইয়ে রয়েছেন। ভাল আছেন। গান গাইছেন। এখন টিভি খুলে দেখছি তিনি প্রয়াত। এটা কী!"
চোখের জল বাঁধ মানেনি অনেকেরই। ব্যাপারটা মেনে নিতেই সময় লেগেছিল সকলের। অভিযোগ উঠেছিল পরিবারের দিকেও। 'ঠিকমতো চিকিৎসা হয়নি তাঁর, পরিবার চিকিৎসা করায়নি'--- বলতে শোনা গিয়েছিল অনেককেই।
বছর ঘুরেছে--কেটেছে সময়। বিংশ শতকেই শোকের আয়ুর সময়ক্ষণ এক বছর বেঁধে দিয়েছিলেন নাজিমূল হিকমত। একবিংশ শতকে তা হয়তো আরও খানিক কম। তবু রশিদ স্মৃতিতে আজও আচ্ছন্ন সঙ্গীতজগৎ। কেউ অভিমানী, কেউ আজও খুঁজে চলেন তাঁকে। অজয় চক্রবর্তী মানতে চান না রশিদের না থাকা, নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক সঙ্গীত পরিচালক উগরে দেন পরিবারের প্রতি ক্ষোভ, কান্না জড়িয়ে থাকে তেজেন্দ্রনারায়ণের গলায়। এ সবের মধ্যেই গভীর সত্য-- রশিদ নেই। আর ফিরবেন না তিনি। কোনও এক পড়ন্ত বেলায়, অথবা লাইভ কনসার্টে আর শোনা যাবে না, 'আঙ্গনা ফুল খিলেঙ্গে'। 'সজনা'র অপেক্ষায় আর থাকবেন না কেউ।