
শুভদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়
বাংলাদেশের সূর্য, জাতির পিতা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে উৎসর্গ করে ‘মৈত্রী’ নামে একটি নতুন রাগ সৃষ্টি করেছেন বিশ্ববরেণ্য শিল্পী পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তী। বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস আর একাত্তর সাল এক ঐতিহাসিক অধ্যায়। এ বছর বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস পঞ্চাশ বছরে পা দিল।
রাগ ‘মৈত্রী’ সৃষ্টির ভাবনা
পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তী ‘দ্য ওয়াল’কে এদিন বলেন, “আমি একটি নতুন রাগ তৈরি করেছি, যার নাম ‘মৈত্রী’। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর অনুরোধে এই নতুন রাগ ‘মৈত্রী’ আমি কম্পোজ করেছি। বাংলাদেশের জন্যই করা। এই ‘মৈত্রী’ শব্দের ইংরেজি অর্থ হচ্ছে ফ্রেন্ডশিপ। যা দুই দেশের বন্ধুত্বের বার্তা দেবে।”
পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তী আরও জানান, এই রাগের উপর তিনটি গান তিনি বাংলাদেশের মঞ্চে গাইবেন আগামী ২৬ মার্চ। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত থাকবেন। ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে আরও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করতেই এই রাগ সৃষ্টি করা হয়েছে।
তাঁর কথায়, “এ রাগ ঈশ্বরের সৃষ্টি। আমি তাঁর দাসানুদাস। কিন্তু এই রাগ কখনও ভারতীয় সঙ্গীতে আগে প্রয়োগ হয়নি। এই প্রথম গাইব আমি বাংলাদেশের পঞ্চাশতম স্বাধীনতা দিবসে, যার প্রয়োগ হবে সঙ্গীত ইতিহাসে প্রথম। রাগ আভোগী ও সংগীতজ্ঞ বাবা আলাউদ্দিন খাঁর রাগ হেমন্তের সংমিশ্রণে ‘মৈত্রী’ নতুন রাগ সৃষ্টি করেছি। বাবা আলাউদ্দিন খাঁও বাংলাদেশের লোক ছিলেন।”
তিন ভাষায় রাগ ‘মৈত্রী’
বাংলাদেশের ৫০তম স্বাধীনতা দিবস ও বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ নিয়ে রচিত সংস্কৃত, হিন্দি ও বাংলা ভাষায় তিনটি নতুন গান পরিবেশন করা হবে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠান ‘মুজিব চিরন্তন’–এর শেষ দিনেই এই রাগ শুনবে বাংলাদেশ।
এর মধ্যে সংস্কৃত গানটি রচনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, পৃথিবী বিখ্যাত দার্শনিক শ্রী ডঃ অরিন্দম চক্রবর্তী, হিন্দি গানটি রচনা করেছেন শ্রীমতী সুস্মিতা বসু মজুমদার ও হিন্দি অধ্যাপক শ্রী রবি বর্মণ।
বাংলা গানটি রচনা করেছেন অজয় চক্রবর্তীর শিষ্য সুগায়ক শ্রী অনল চ্যাটার্জী। তিন গানেরই সংগীতায়োজন করেছেন পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তী।
অজয় চক্রবর্তীর শিকড় আদতে বাংলাদেশে
সংগীত গুরু অজয় চক্রবর্তীর পৈতৃক বাড়ি বাংলাদেশের ময়মনসিংহ জেলায়। দেশভাগের পর তাঁর বাবা অজিত কুমার চক্রবর্তী থিতু হন কলকাতায়। পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তীর জন্মও কলকাতায়। তাঁর বাবা মা দুজনেই বাংলাদেশের মানুষ ছিলেন। পরে চলে আসেন কলকাতায়। বাড়িতে ছিল সাঙ্গীতিক পরিবেশ। রাগ-রাগিণীর আবহেই শিশু অজয়ের ছেলেবেলা কেটেছে।
বাবা অজিত কুমার চক্রবর্তী ছিলেন অজয় চক্রবর্তীর প্রথম সঙ্গীতগুরু। এরপর পান্নালাল সামন্ত ও কানাইদাস বৈরাগীর কাছে সংগীতের তালিম নেন তিনি। পরবর্তীকালে পদ্মভূষণপ্রাপ্ত পণ্ডিত জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষের কাছে দীক্ষিত হন। ইন্দোর, দিল্লি, জয়পুর, আগ্রা, গোয়ালিয়র-সহ দক্ষিণী সংগীতেও তাঁর অসাধারণ পাণ্ডিত্য রয়েছে।
২০১১ সালে পদ্মশ্রী সম্মানে সম্মানিত করা হয় পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তীকে। রাজ্য, দেশের গণ্ডি পেরিয়ে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের ঘরানাকে বিদেশের মাটিতেও এক অসাধারণ উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছেন এই প্রবাদপ্রতিম শিল্পী।
সুবর্ণ জয়ন্তী স্বাধীনতা দিবসে দুই দেশে ‘মৈত্রী’
বাংলাদেশের ৫০তম স্বাধীনতা দিবসে জাতীয় প্যারেড স্কোয়ারে বঙ্গবন্ধুর শততমজন্মবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে রাগটি পরিবেশন করবেন অজয় চক্রবর্তী।
তিনি আরও জানালেন, তাঁর বাংলাদেশ সফরের বিষয়ে। বললেন, “আমি বাংলাদেশ যাব আগামীকাল। ২৬ তারিখে এই অনুষ্ঠান আছে। ২৭ তারিখে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আমার যোগাযোগ হওয়ার কথা আছে। ২৮ তারিখে আমার ওখানে বক্তৃতা আছে এবং ২৯ তারিখে কলকাতা চলে আসব। মৈত্রী রাগের বাংলা গানটা লিখেছেন আমারই ছাত্র, পুত্রসম অনল চট্টোপাধ্যায়। সে খুব ভাল গায়কও। ওর আমার সঙ্গে বাংলাদেশে পারফর্ম করার কথা ছিল বাংলাদেশে। ওর কোভিড হয়েছে। আমাদের গুরুশিষ্যের একসঙ্গে ‘মৈত্রী’ রাগ গাইবার কথা ছিল। হল না।”
প্রবাদপ্রতিম ক্লাসিক্যাল শিল্পী ভারতবাসীদের শুভেচ্ছা নিয়ে বাংলাদেশের মানুষদের কাছে এই ‘মৈত্রী’ রাগ পরিবেশন করবেন দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর সামনে। ভারতীয় সঙ্গীতে প্রথম এক ঐতিহাসিক মাহেন্দ্রক্ষণ হতে চলেছে এটি। বঙ্গবন্ধুকে উৎসর্গকৃত ‘মৈত্রী’ রাগ শোনার জন্য অপেক্ষা করে আছেন বাংলাদেশের নাগরিকরাও।