আজ ১৪ জুন, তাঁর জন্মদিনে ফিরে দেখা যাক প্রীতমের জীবনের কিছু অজানা গল্প, অনুপ্রেরণার অধ্যায় ও চিরসবুজ সুরের জগৎ, যা আজও আমাদের হৃদয়ে দোলা দিয়ে যায়।
প্রীতম
শেষ আপডেট: 14 June 2025 09:34
দ্য ওয়াল ব্যুরো: বলিউডের এক সমকালীন সুরকার, প্রীতম চক্রবর্তী, বা আরও সহজে প্রীতম। আজ ৪৬ বছর পার করলেন। কলকাতার জন্ম। প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়াশোনা, আর পরে ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউটে সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং শিখে যিনি তৈরি করলেন এমন সুরের এক ম্যাজিক, যা আজও শ্রোতাদের ভাসিয়ে দেয় মন্ত্রমুগ্ধতায়। আজ ১৪ জুন, তাঁর জন্মদিনে ফিরে দেখা যাক প্রীতমের জীবনের কিছু অজানা গল্প, অনুপ্রেরণার অধ্যায় ও চিরসবুজ সুরের জগৎ, যা আজও আমাদের হৃদয়ে দোলা দিয়ে যায়।
অজানা কিছু...
কলেজ জুনিয়রদের মতে, প্রীতমের শোনার তালিকায় ছিল গানের বাইরেও সঙ্গীতবিদ্যার বহুবিধ ধারা, যেমন, আফ্রিকান রিদম, হাঙ্গেরীয় ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর, এমনকি হায়েন-সান্ধ্য সুরও। FTII-তে পড়ার সময়, হাঙ্গেরীয় পরিচালক ইস্তভান গাল তাঁকে ফিল্মের পটভূমি সুর দেওয়ার অফার করেছিলেন—যদিও বাস্তবে তা পরিপূর্ণতা পায়নি।
সাফল্যের সিঁড়ি
‘ধূম’ (২০০৪) রিলিজের ঠিক পরেই তাঁর সঙ্গীত সূচি বদলে গেল — টাইটেল ট্র্যাক ‘ধূম’ ছিল দেশের চার্টবাজে একটা বড় রেজনান্স। পরবর্তী বছরগুলোতে ‘জব হ্যারি মেট সেজল’, ‘বজরঙ্গী ভাইজান’, ‘টিউবলাইট’, ‘জগা জাসুস’, ‘দঙ্গল’ ‘অ্যায় দিল হ্যায় মুশকিল’ একই ছন্দে গান দিয়ে চলেছে, যেখানে অনেকগুলো গান এখনও স্মৃতির অ্যালবামে তাজা।
বিতর্ক ও সমালোচনা
প্রথম দিকে তাঁর গানগুলোকে অভিযোগ করা হয়েছিল বিশ্ব সংগীত থেকে কপি করার, এমনকি কিছু গান সরাসরি কানাডা, কোরিয়া কিংবা ফরাসি গান থেকে “টুকে” করা বলেও গুঞ্জন উঠেছিল । তবে, প্রীতম নিজে তা স্বীকার করেন — ‘সত্যিই ভুল করেছিলাম… তবে এখন সুর নির্মাণে বেশি সতর্ক’। 'পেয়ারে পেয়ারে' গানটির সুর অনেকটা মিলে যায় তুর্কি গানের সঙ্গে। 'জারা জরা টাচ মি' গানটি ছিলো একটি কোরিয়ান গান থেকে অনুপ্রাণিত। 'বুল্লেয়া' (Ae Dil Hai Mushkil) গানটিতে গিটার রিফ নাকি আমেরিকান ব্যান্ড Papa Roach-এর গানের সঙ্গে হুবহু মিলে যায়। এমনকি 'পুঙ্গি' গানটি নিয়েও একটি ইরানি সুর চুরির অভিযোগ উঠে। প্রীতম যদিও পরবর্তীকালে কিছু গান নিজেই স্বীকার করে নেন যে, তিনি প্রভাবিত হয়েছিলেন, এবং কিছু ক্ষেত্রে তিনি 'রেফারেন্স ট্র্যাক' হিসেবে গানগুলি শুনেছেন।
রূপান্তরঃ কপি নয়, প্রস্তুত
সম্প্রতি অনেকেই মনে করেন, প্রীতম নিজস্ব সুর খুঁজে পেয়েছেন, ২০০৪–১০ এর ধারার বিপরীতে, ২০১১–২০ দশকে ৩২৬টি গানে রিলিজ করেন, যা তাকে ‘সর্বাধিক প্রোডাক্টিভ কম্পোজার’ তৈরি করেছে । এ ক্ষেত্রে তাঁর তিনটি ফিল্মফেয়ার ও এক জাতীয় পুরস্কার (২০২২, বরফি– শ্রেষ্ঠ সঙ্গীত নির্দেশনা) যেমন প্রমাণ করে তাঁর মৌলিক অবদান, তেমনই দর্শকপ্রিয় সুর নির্মাণের প্রতিভাও তুলে ধরে।
‘ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে’
একাধিক বার শোনা গেছে, প্রীতম তাঁর কিছু গানের ghost composers বা সহ-সুরকারদের যথাযথ ক্রেডিট দেননি। যদিও কোনো প্রমাণ সামনে আসেনি, গানের জগতে এটি একটি আলোচিত গুঞ্জন হিসেবে রয়ে গেছে।
সুরকার হিসেবে প্রীতম শুধুমাত্র গান তৈরি করেন না, তিনি আবেগ গড়ে তোলেন—রোম্যান্স, বেদনা, আনন্দ কিংবা আকাঙ্ক্ষা—সব অনুভবকে মেলডির ছোঁয়ায় জীবন্ত করে তোলেন। কখনও বিতর্কের মুখোমুখি হয়েছেন, কখনও সমালোচনার শিকার, কিন্তু সুরের ম্যাজিক কখনও ফিকে হয়নি। ‘তুম হি হো...’—এই গান ঠিক যেমনভাবে শ্রোতাদের হৃদয়ে গেঁথে গিয়েছে, তেমনই প্রীতমও রয়ে যাবেন বলিউডের সংগীত মানচিত্রে চিরকাল।