শেষ আপডেট: 3rd October 2024 15:36
'অভয়া'শক্তি বলপ্রদায়িনী তুমি জাগো...
বর্তমান সময়ে সবার মনে একটাই প্রশ্ন, নারী কতটা নিরাপদ এ শহরে? অভয়ার জন্য বিচার চেয়ে রাত দখলের প্রতিবাদ মিছিলে গর্জে উঠেছে শহর সহ গোটা বাংলা, গোটা পৃথিবী। উৎসবের উন্মাদনায় যে প্রতিবাদের আগুন নেভে না, দেবীপক্ষের সূচনাতেও মায়েদের চোখের জল থামে না। এমনই দমবন্ধ সময়ের মধ্যে দিয়ে চলছি আমরা। এরই মাঝে এসে পড়ছে দুর্গাপুজোর বাতাবরণ। মন খারাপের মাঝেই ধ্বনিত হচ্ছে মায়ের আগমন বার্তা। মা দুর্গাও এক নারী। তাঁর আগমন মানে শুধু উৎসব আনন্দ নয়, দশভুজা নারীশক্তির প্রতীক। সমাজের অশুভ নাশ করে শুভশক্তির জয়গান। সেই বার্তাটি দিল বেহালার নৃত্যপ্রতিষ্ঠান 'নৃত্যরিদম'। মূল কান্ডারী নৃত্যরিদম' এর প্রাণপ্রতিমা মেহেন্দি চক্রবর্তী। ভরতনাট্যম তালিমপ্রাপ্ত নৃত্যশিল্পী মেহেন্দি। তাঁর ছাত্রছাত্রী সহ আরো কিছু সাংস্কৃতিক দল বেহালা শরৎ সদন মঞ্চে সম্প্রতি মঞ্চস্থ করল 'যা দেবী সর্বভূতেষু'। পুজোর আগেই মেহেন্দি ছড়িয়ে দিলেন পুজোর আগমনী সুর। তবে শুধু উৎসব নয় নিবেদনে ছিল প্রতিবাদের ভাষা,যা সবথেকে বেশি এদিনের নিবেদনকে বরণীয় করে তুলল।
বিজ্ঞাপনী পোস্টারে 'যা দেবী সর্বভূতেষু' মন্ত্রে দেবী শব্দে খাঁড়ার ব্যবহার সমগ্র অনুষ্ঠানের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য তুলে ধরেছিল। সূচনায় সূত্রসঙ্গীতে দীপশিখা চক্রবর্তী অনুষ্ঠানকে অনেকখানি উচ্চতায় তুলে দিলেন। শ্বেতশুভ্র শাড়িতে দীপশিখার চণ্ডীস্তব মনকে পরিশুদ্ধ করে মহালয়ার বার্তা এনে দিল প্রথমেই। এরপর ছিল নৃত্য রিদমের বিশেষ নিবেদন 'নৃত্যরূপেন সংস্থিতা'। সবথেকে মন কাড়ল অভিনব কোরিওগ্রাফি ও পোশাক পরিকল্পনা। মেহেন্দি চক্রবর্তীর কোরিওগ্রাফিতে নৃত্যশিল্পীরা সিনেম্যাটিক বাতাবরণ তৈরি করলেন মঞ্চে। প্রথমার্ধ্বের নিবেদনে অনবদ্য নৃত্যে ফুটে উঠল একে একে গণেশ বন্দনা থেকে লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক, দুর্গা বন্দনা। এল মহালয়ার মহিষাসুরমর্দিনীর গানের বাতাবরণ। ছোটদের নৃত্যনিবেদনে এসে গেল পুজোর গন্ধ।
'সংস্কার ভারতী দক্ষিণবঙ্গ', বেহালা চর্চা কেন্দ্রের মহিলারা গানেগানে করলেন দেবী আবাহন।
দ্বিতীয় ভাগের নিবেদনে দেবীর আবাহন থেকে রূপ নিল প্রতিবাদের আহ্বান। সুজয়প্রসাদ চট্টোপাধ্যায়ের 'এস পি সি ক্রাফট' বাচিক নারীদল নানা আবৃত্তির কোলাজের মাধ্যমে করলেন কবিতা আলেখ্য 'সাধারণী নমস্তুতে'। সংকলন ও পরিচালনা শ্রবণা শীল। বাচিকনারী দিগন্তিকা, মৌমিতা,জয়িতা,শর্মিষ্ঠা,সুপর্ণা,সহেলী,সোমালি শর্বরীদের কালো শাড়িতে ছিল প্রতিবাদী কন্ঠ।
এরপর আবার মেহেন্দি চক্রবর্তীর 'নৃত্য রিদম' এর উপস্থাপন 'জয়তু ভার্গবী অঙ্গনা'। প্রতি চুয়ান্ন মিনিটে আজও ঘটছে ধর্ষণের ঘটনা। লোপামুদ্রা মিত্রের 'নিভন্ত এই চুল্লিতে মা একটু আগুন দে' গানে প্রতিবাদী নাচ ঝলসে উঠল মঞ্চে, সঙ্গে দৃশ্যকল্পে আগুনের লেলিহান শিখা। 'গুল্যাব গ্যাঙ' এর 'গুলাবি' গানে মঞ্চে তলোয়ার হাতে লাঠিখেলায় আবির্ভূতা হলেন ঝাঁসী রানি লক্ষ্মীবাঈরা। কখনও বা মেয়ের অপর নাম 'মার্দানি' বুঝিয়ে দিল প্রতিবাদী নাচে নৃত্যরিদম। নজরুলসঙ্গীত 'জাগো নারী জাগো বহ্নিশিখা' গানেও যেন গর্জে উঠল চিরন্তনী সাহসিকতা।