দ্য ওয়াল ব্যুরো: দিন কয়েক আগেই বলিউডের গায়িকা নেহা কক্কর গাঁটছড়া বেঁধেছেন রোহনপ্রীত সিংয়ের সঙ্গে। তাঁদের জীবনের নতুন অধ্যায় একসঙ্গে শুরু হয়েছে সদ্য। প্রেম, বিয়ের খবর আগে থেকে পুরোপুরি লুকিয়ে রেখেছিলেন নেহা। বিয়ের ঠিক আগে গায়ে হলুদ, মেহেন্দির অনুষ্ঠানের ছবি পোস্ট করেই চমকে দেন নেহা।
তার পর থেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় বলিউডের প্রথম সারির অভিনেত্রীদের মতোই নেহার ফ্যান ফলোয়ারের সংখ্যাও দিনকেদিন বাড়ছে। কিন্তু তারা কি শুধুই প্রশংসা করছে? নেহার গুণের প্রতি মুগ্ধতা প্রকাশ করছে? একেবারেই না। আর পাঁচ জন তারকার মতোই অকারণ নিন্দা থেকে কুৎসিত মন্তব্যের ঝড় পোয়াতে হচ্ছে নেহাকেও।

দিন কয়েক ধরে সোশ্যাল মিডিয়ায় নেহাকে রীতিমতো ট্রোলড হতে হচ্ছে তাঁর বিয়ের পোশাকের জন্য। তিনি অনুষ্কা, প্রিয়াঙ্কা, আর দীপিকা পাড়ুকোনের পোশাক নকল করে বিয়েতে পরেছিলেন, এই নিয়েই তুমুল হাসাহাসি করা হচ্ছে তাকে নিয়ে। অনেকেই বলছেন, কারও বিয়ের পোশাক ভাল লাগলে, তাঁর থেকে উদ্বুদ্ধ হয়ে কেউ তেমন ভাবে সাজতেই পারেন, এতে তো কোনও অন্যায় নেই! কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ায় তো এখন সামান্য ছুতোয় কাউকে ট্রোল করাটাই যেন নতুন ট্রেন্ড।
শুধু পোশাক নয়, নেটিজেনদের একটা বড় অংশের আক্রমণাত্মক মনোভাবের কারণ নেহা ও রোহনপ্রীতের বয়সের ফারাকও। ২৫ বছরের রোহনপ্রীতের থেকে ৭ বছরের বড় নেহা কক্কর। আর বয়সে ছোট ছেলেকে বিয়ে করার 'অপরাধে' নেহার ছবির নীচে নানা কুৎসিত মন্তব্যে ভরে গেছে। অনেকেরই দাবি, বিয়ের জন্য এমন বয়সের ফারাক নাকি মোটেও 'ঠিক' ন! যদিও বলাই বাহুল্য, বয়স দেখে নয়, বিশ্বাস, ভরসা আর ভালবাসাকে গুরুত্ব দিয়েই একসঙ্গে জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু করেছেন নেহা ও রোহন।

তবে নেহা এই প্রথম নন। প্রেম, ভালবাসা, বিয়ে-- এইসব ক্ষেত্রে বয়স যে আদৌ বাধা নয়, এটা বারবার প্রমাণ করেছেন বলিউডের বেশ কিছু তারকারা। কখনও বা বয়সে ছোট কোন ছেলের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়েছেন নায়িকা কখনও বা বিয়ের পিঁড়িতেও বসেছেন এমন যুগল। আগে যখন ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ছিল না, তখনও বয়সে ছোট কাউকে বিয়ে করলে মেয়েদের নিন্দামন্দ করা হত। আর সেটা এখনও হয়।

সঞ্জয় দত্তের থেকে এক বছরের বড় ছিলেন নার্গিস। সেই সময় নার্গিস ছিলেন একদম প্রথম সারির অভিনেত্রী। 'মাদার ইন্ডিয়া' ছবির শুটিং চলাকালীন তাঁদের প্রেম শুরু হয়। আর তার পরেই তাঁদের বিয়ে। তখন যদিও সোশ্যাল মিডিয়া ছিল না, তবু সেই সময়ও তাদের বিয়ে ঘিরে তোলপাড় হয়েছিল।

তার পরে অমৃতা সিং তাঁর চেয়ে বয়সে ছোট সইফ আলি খানকে বিয়ে করেছিলেন। তাঁদের দুজনের মধ্যে ১২ বছরের বয়সের পার্থক্য থাকলেও বিয়েতে সেটা বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি।

আরও এক তারকা দম্পতি ঐশ্বর্য রাই বচ্চন আর অভিষেক বচ্চন। ঐশ্বর্য অভিষেকের থেকে দু'বছরের বড়। সেই নিয়েও কম তুলকালাম হয়নি বলিউডে। ঐশ্বর্যর মাঙ্গলিক দোষ থাকায় বিয়ের নানা নিয়মও পালন করতে হয়েছিল তাঁকে। এ বিয়ে টিকবে না বলেই অনেকে রীতিমতো রায় দিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু আজ তো ছোট্ট আরাধ্যাকে নিয়ে 'হ্যাপি ফ্যামিলি'র মুখ হয়ে উঠেছেন তাঁরা।

সম্প্রতি এমন উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন আরও অনেকে। প্রিয়াঙ্কা চোপড়া তাঁর থেকে ১০ বছরের ছোট নিক জোনসকে বিয়ে করেছেন। বিপাশা বসুর থেকে করণ সিং গোভর ৪ বছরের ছোট, আবার কুণাল খেমু ৫ বছরের বড় সোহা আলি খানকে বিয়ে করেছিলেন। ভালবাসা আর একসঙ্গে থাকতে পারার শর্তে রাজি হয়েই বিয়ে করেছিলেন তারা। বয়সটাকে গুরুত্ব দেননি।

শুধু বলিসেলেবরা নয়। ক্রিকেট দুনিয়ায় সচিন তেন্ডুলকর থেকে শিখর ধাওয়ান-- অনেকেই বয়সে বড় মহিলাকে বিয়ে করেছেন। কিন্তু ট্রোল, টিটকিরি, নিন্দামন্দ পিছু ছাড়েনি তাঁদেরও।

বস্তুত, যুগ বদলালেও, আজও মানসিকতার কোনও পরিবর্তনই ঘটেনি অনেকের। আধুনিক যুগেও মননের দিক থেকে পিছিয়ে আছেন বহু মানুষ। সমাজের এই দৃষ্টিভঙ্গি আর কবে বদলাবে, তা সময়ই বলতে পারবে।