তাঁর আত্মজীবনী ‘অ্যান অর্ডিনারি লাইফ’ An Ordinary Life প্রকাশ্যে আসার পর, তাঁর প্রেমজীবনের বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর দিক সামনে আসে।
নওয়াজউদ্দিন
শেষ আপডেট: 19 May 2025 13:46
দ্য ওয়াল ব্যুরো: নওয়াজউদ্দিন আজ ৫১ বছরে পা দিলেন। তাঁর দুর্দান্ত অভিনয়ের জন্য দর্শক থেকে সমালোচকদের মন জয় করেছেন বহুবার। কিন্তু ক্যামেরার সামনে যতটা সাবলীল তিনি, ব্যক্তিগত জীবনে ততটাই গোপনীয়। পেশাগত প্রচার আর ইভেন্ট ছাড়া তাঁর ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে খবরে খুব একটা আসেন না তিনি। তাঁর আত্মজীবনী ‘অ্যান অর্ডিনারি লাইফ’ An Ordinary Life প্রকাশ্যে আসার পর, তাঁর প্রেমজীবনের বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর দিক সামনে আসে।
প্রেমে ভাঙন, জীবনে বিষাদ: এনএসডি-র সুনীতা
নওয়াজের জীবনের প্রথম প্রেম এসেছিল সুনীতার হাত ধরে, যিনি এনএসডি-র (ন্যাশনাল স্কুল অফ ড্রামা) গ্র্যাজুয়েট ছিলেন। এক নাটকে অভিনয়ের সময় তাঁদের পরিচয়। সম্পর্ক গভীর হলেও, হঠাৎ করেই সুনীতা তার জীবনে ব্রেক টেনে দেন।
নওয়াজ লেখেন—‘আমার জীবনে সেই প্রথম প্রেম, এক দীর্ঘ খরার পরে যেন বৃষ্টি। সুনীতা আমার ঘরে এসে আমাদের নাম দেয়ালে লিখে যেতেন ছোট ছোট অক্ষরে। কিন্তু এক ছুটির পর সে হঠাৎ করেই যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়।’
এতে মানসিকভাবে এতটাই ভেঙে পড়েন নওয়াজ, যে একদিন আত্মহত্যার কথাও ভাবেন—‘মীরা রোড স্টেশনে দাঁড়িয়ে ট্রেনের দিকে তাকিয়ে ভাবছিলাম, লাফ দেব? জীবনটা শেষ করব? কিন্তু আমার ভেতরের এক আওয়াজ বলল—এটা তোমার পথ নয়। সে দিনই স্থির করলাম, আর কখনও আবেগে ভাসব না।’
জ্যুইশ প্রেমিকা সুজান — নিউ ইয়র্ক থেকে মুম্বই
এরপর তার জীবনে আসে সুজান নামের এক ইহুদি মেয়ে। নিউ জার্সির বাসিন্দা। নিউ ইয়র্কে তাঁদের দেখা এবং পরে সুজান মুম্বই এসে তাঁর সঙ্গে থাকা শুরু করেন। ‘আমরা ভালো সময় কাটিয়েছিলাম। ‘মিস লাভলি’ ছবির শুটিং চলাকালীন ও প্রায় সব সময় আমার সঙ্গে থাকত। কিন্তু একদিন ওর ভিসা শেষ হয়ে যাওয়ায় ফিরে যেতে হয়। তারপর মাসের পর মাস আর ওর দেখা মেলেনি।’
নিউ ইয়র্কে ওয়েট্রেসের সঙ্গে ওয়ান নাইট স্ট্যান্ড
২০০৬-২০১০ সালের সময়টা নওয়াজের জন্য ছিল রোমাঞ্চকর। তখন তার কাজ ধীরে ধীরে স্বীকৃতি পেতে শুরু করেছে। নিউ ইয়র্কে এক ক্যাফেতে এক সুন্দরী ওয়েট্রেসের সঙ্গে দেখা হয়, যিনি ‘লাঞ্চবক্স’ দেখে নওয়াজকে চিনে ফেলেন। ‘আমরা কথা বলতে শুরু করলাম... এরপর যা ঘটেছে তা নিউ ইয়র্কেই রয়ে গেল।’
সহঅভিনেত্রী নীহারিকার সঙ্গে এক গভীর সম্পর্ক
নওয়াজের আত্মজীবনীর সবচেয়ে বিতর্কিত অংশ সম্ভবত ‘মিস লাভলি’র সহ-অভিনেত্রী নিহারিকা সিংয়ের সঙ্গে সম্পর্ক। শুটিংয়ের সময় তাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়। তিনি লেখেন ‘একদিন মাটন রান্না করে ওঁকে আমার বাড়িতে ডাকি। ও খুব প্রশংসা করে। তারপর আমাকে ওর বাড়িতে ডাকে, যেখানে শত-শত মোমবাতি জ্বলছিল। আমি ওঁকে কোলে তুলে সরাসরি বেডরুমে নিয়ে যাই... আমরা গভীর প্রেমে জড়িয়ে পড়ি। সেই সম্পর্ক চলে দেড় বছর।’ তবে সমস্যা বাঁধে সুজানের সঙ্গে চলতে থাকা ইমেইল যোগাযোগ নিয়ে। ‘নীহারিকা আমার অ্যাকাউন্ট থেকে সুজানকে ইমেইল পাঠাতে থাকে আমার নামে। শেষে সুজান বুঝতে পারে যে আমি লেখিনি। একসময় আমি বাধ্য হই সমস্ত যোগাযোগ বন্ধ করতে।’
এই সম্পর্কও টেকে না নীহারিকা বুঝতে পারেন, নওয়াজ নিজের সুবিধার জন্য সম্পর্ক রাখতেন। ‘আমি ছিলাম এক স্বার্থপর লোক, যার একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল সম্পর্কের শারীরিক দিকটা… এটা অনেক মেয়েই আমার সম্পর্কে বলেছে।’ একসময় নীহারিকা তাঁকে দরজা থেকে ফিরিয়ে দেন। এরপর দু’মাস পরে, তার জীবনে আরেক নারী প্রবেশ করেন—যিনি পরে তাঁর স্ত্রী হন।
নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকির ব্যক্তিগত জীবন সিনেমার মতোই নাটকীয়। তাঁর প্রেমের অধ্যায়গুলো যেমন রোমান্টিক, তেমনই বিতর্কে মোড়া। তিনি নিজেই স্বীকার করেছেন তার আত্মকেন্দ্রিকতা এবং ভুল সিদ্ধান্তের কথা। তবুও, এই সমস্ত গল্প তাকে আরও মানবিক করে তোলে—ভুল করে শেখা, ভাঙা মন নিয়ে গড়া ক্যারিয়ারই তো জীবনের আসল রূপ!