দ্য ওয়াল ব্যুরো: বলিউডের সাতের দশকের জনপ্রিয় নায়িকা মৌসুমী চট্টোপাধ্যায়—যাঁর হাসি আর সাবলীল অভিনয় আজও দর্শকদের মনে জায়গা করে রেখেছে। শুধুমাত্র রুপোলী পর্দাতেই নয়, ব্যক্তিগত জীবনেও ছিল তাঁর নানা রঙিন অধ্যায়। ছোট্ট বয়সেই অভিনয় জগতে পা রাখা মৌসুমী নিজের জীবনের কিছু অজানা কথা ভাগ করে নিয়েছেন এক সাক্ষাৎকারে।

মাত্র দশ বছর বয়সে বলিউড যাত্রা, ১৫-তে সাতপাকে বাঁধা

মাত্র ১০ বছর বয়সে ‘বালিকা বধূ’ ছবির মাধ্যমে অভিনয়ে হাতেখড়ি মৌসুমীর। এরপর বলিউডের বহু সুপারহিট ছবিতে অভিনয় করেন তিনি। তবে কেরিয়ারের শিখরে পৌঁছনোর আগেই মাত্র ১৫ বছর বয়সে বিয়ে করে নেন স্বপ্নের মানুষ, জয়ন্ত মুখোপাধ্যায়কে। জয়ন্ত বিখ্যাত সংগীতশিল্পী হেমন্ত কুমারের পুত্র। মৌসুমী জানান, তাঁর বিয়ের পেছনে ছিল এক আবেগঘন কারণ। তাঁর বাবার বড় বোন, যাঁকে তিনি 'বুয়া' বলে ডাকতেন, ক্যান্সারের শেষ পর্যায়ে ছিলেন এবং শেষ ইচ্ছা ছিল মৌসুমীর বিয়ে দেখা। সেই আবেগকে সম্মান জানিয়ে পরিবার সিদ্ধান্ত নেয় বিয়ের। মৌসুমী বলেন:‘ আমার বাবা তাঁর দিদির খুব কাছের ছিলেন। দিদির শেষ ইচ্ছা ছিল আমাকে বিয়ে দিতে। তাই বাবা এবং হেমন্ত কাকু মিলে ঠিক করেন বিয়ে হবে। আমি তখন পরীক্ষাও দিতে পারিনি। ঠিক তখনই একটা ফিল্মও হাতে এসে যায়। সব যেন নিজে থেকেই ঠিকঠাক হয়ে যাচ্ছিল।’

তারকা খ্যাতি যখন বুঝে উঠতে পারেননি মৌসুমী

বিয়ের কিছুদিন পরেই মৌসুমী দুই কন্যাসন্তানের মা হন—পায়েল ও মেঘা। ২০১৯ সালে তাঁর বড় মেয়ে পায়েল দুঃখজনকভাবে প্রয়াত হন। জীবনের সেই শুরুর দিনে দ্রুত সাফল্য আসলেও, মৌসুমী তখন তার প্রকৃত মর্ম বুঝতে পারেননি। স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন: ‘১৭ বছর বয়সে মা হয়েছি। নিজের একটা মার্সিডিজ ছিল। তখন সাফল্যের মানে ঠিকঠাক বুঝতাম না। বড় পর্দায় নিজের মুখ দেখলেই খুশি হতাম।’

রক্ষণশীল মনোভাব নিয়ে তিক্ত অভিজ্ঞতা

রক্ষণশীল পরিবারের মেয়ে হিসেবে বড় হওয়া মৌসুমি, ইন্ডাস্ট্রির অনেক অশোভন ব্যবহারের বিরুদ্ধে ছিলেন সবসময়। তিনি জানান, একবার তাঁর স্বামীর এক বন্ধুর স্ত্রী মৌসুমিকে কটাক্ষ করে বলেছিলেন যে তাঁর মন নাকি পরিষ্কার নয়। মৌসুমির সোজাসাপ্টা উত্তর ছিল: ‘আমি ভাবি, অহেতুক আলিঙ্গন বা চুমু খাওয়ার দরকার কী? এটা তো আমাদের সংস্কৃতিই নয়।’

একবার তো এক পুরুষ বন্ধু তাঁর কোমরে হাত রাখার চেষ্টা করতেই মৌসুমি কড়া ভাষায় বাধা দেন। স্মৃতি রোমন্থন করে বলেন:

‘প্যাক-আপের পর আমি চাই না কোনও অভিনেতা আমার কাঁধে হাত রাখুক। একবার এক বন্ধু আমার কোমরে হাত রাখার চেষ্টা করেছিল। আমি সঙ্গে সঙ্গে বলেছিলাম, ‘ডোন্ট!’ ও বলল, ‘তোমার স্বামী তো আমার স্ত্রীর কোমরে হাত রেখেছে।’ আমি বলেছিলাম, ‘ওর স্ত্রী যদি অনুমতি দেয়, দিক। আমি দিইনি।’

মহেশ ভাটের 'প্রেগন্যান্সি' মন্তব্য

আরও এক সাক্ষাৎকারে মৌসুমি জানান, এক সময় প্রখ্যাত পরিচালক মহেশ ভাট তাঁকে বলেছিলেন যে প্রেগন্যান্সি নায়িকাদের কেরিয়ার শেষ করে দেয়। মহেশ ভাটের মতে,কেরিয়ার যখন তুঙ্গে থাকে, তখন অভিনেত্রীরা প্রেগন্যান্ট হয়ে পড়েন এবং সেটা নাকি প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে। কিন্তু মৌসুমির দৃঢ় জবাব ছিল: ‘আমি বলেছিলাম, মা হওয়া আমার জীবনে রঙ এনেছে, কোনও বাধা নয়।’ সত্যিকারের তারকা যিনি, জীবনকেও নিজের মতো করে বাঁচেন—মৌসুমি চ্যাটার্জি তার এক উজ্জ্বল উদাহরণ!