শেষ আপডেট: 1st October 2024 08:35
দ্য ওয়াল ব্যুরো: কদিন আগেই এক চলচ্চিত্র সমালোচক বলছিলেন, মিঠুন চক্রবর্তী তো শুধু অভিনেতা নন, একটা যুগ, অধ্যায়! প্রায় অর্ধ শতাব্দী আগে মৃণাল সেনের পরিচালনায় ‘মৃগয়া’ দিয়ে যাঁর পথ চলা শুরু, সেই ছেলেটিই কিনা অচিরে বলিউডে ‘ডান্স আইকন’ হয়ে উঠলেন। মৃগয়া আর ডিস্কো ডান্সারের মিঠুনকে পাশাপাশি রাখলে বোঝায় যায়, তাঁর প্রতিভার ব্যপ্তি কতটা!
মিঠুনকে ভারতীয় চলচ্চিত্রের সর্বোচ্চ সম্মান দাদা সাহেব ফালকে পুরস্কার দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে সরকার। তার পর থেকেই তাঁকে নিয়ে পুরনো কত কথা উঠে আসতে শুরু করেছে। তাঁর নাচ, তাঁর প্রেম, তাঁর জীবনদর্শন। সোশাল মিডিয়ায় ভেসে উঠেছে ৮৭ সালে দেওয়া তাঁর এক ভিডিও সাক্ষাৎকার।
সেই সাক্ষাৎকারের পাঁচ বছর আগেই মুক্তি পেয়েছিল ‘ডিস্কো ডান্সার’। সে ছবিকে তখন শুধু হিট বললে ভুল হবে, সুপার ডুপার হিট। ‘আই আম এ ডিস্কো ডান্সার’ গানের জন্য বিজয় বেনেডিক্টকে তদ্দিনে আবিষ্কার করে ফেলেছেন সুরকার বাপ্পি লাহিড়ী। মিঠুনের নাচ ও অভিনয়ে বক্স অফিস প্রায় চুরমার করে দেওয়া সাফল্য পায় ডিস্কো ডান্সার।
পাঁচ বছর পর কানাডার ভ্যানকুভের শহরে বসে এই সাক্ষাৎকার যখন মিঠুন দিচ্ছেন, সে বছরই মুক্তি পেয়েছিল ‘ডান্স ডান্স’ ও ‘পরিবার’। দুটোই হিট। মিঠুনকে জিজ্ঞেস করা হয়, আপনি এত ভাল নাচেন। আপনার নাচের অনুপ্রেরণা কে? জন ট্রাভোল্টা?
ট্রাভোল্টা হলেন মার্কিন অভিনেতা। ৭৭ সালে মুক্তি পেয়েছিল তাঁর অভিনীত ছবি ‘স্যাটারডে নাইট ফিভার’। সেই ছবিতে ট্রাভোল্টার ডিস্কো নাচ সাড়া ফেলে দিয়েছিল গোটা দুনিয়ায়। মিঠুন ট্রাভোল্টার তুলনায় বয়সে বড়। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মিঠুন বলেছিলেন, ট্রাভোল্টা নন, আমার অনুপ্রেরণা হলেন এলভিস প্রেসলি।
এলভিসকে বলা হত, ‘কিং অফ রক অ্যান্ড রোল’। সাক্ষাৎকারে মিঠুন বলেন, “কলকাতায় থেকেই আমি এলভিস প্রেসলির সব ছবি দেখেছি। ছোটবেলা থেকে দেখেছি আর অনুপ্রাণিত হয়েছি। তবে নাচের স্টাইলটা আমার নিজস্ব”। মিঠুনের লম্বা পায়ে শরীর বেঁকিয়ে সেই নাচ তাঁরই ইউএসপি বইকি।
সাংবাদিক প্রশ্ন করেছিলেন, কলকাতায় থেকে এলভিসের ছবি দেখার গান শোনার সুযোগ ছিল? মিঠুন বলেন, হ্যাঁ ছিল। এলভিসই আমাকে অনুপ্রাণিত করেন।
তাঁকে দাদা সাহেব ফালকে পুরস্কার দেওয়া হবে শুনে সোমবার মিঠুন বলেন, ‘হাসব না কাঁদব জানি না, আমি কলকাতার অন্ধ গলি থেকে উঠে আসা একটা ছেলে। সবই কপাল!’
অবাক করা বিষয় হল, প্রায় চল্লিশ বছর আগে দেওয়া সাক্ষাৎকারের সঙ্গে মিঠুনের আজকের কথার কোনও ফারাক নেই। তাঁর যে কস্মিনকালে কোনও ভড়ং ছিল না, সবটাই সোজাসাপ্টা তা যেন জলের মতই স্বচ্ছ।
৮৭ সালের ওই সাক্ষাৎকারে মিঠুনকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, অনেকে বলে আপনি অমিতাভ বচ্চনের তুলনায় অনেক বড় শিল্পী, অনেক জনপ্রিয়, এ ব্যাপারে আপনি কী বলবেন? উত্তরে মিঠুন বলেছিলেন, “এ নিয়ে আমি কী বলব, মানুষই বলবে।” তা শুনে সাংবাদিক বলেছিলেন, আপনি খুবই বিনয়ী। মিঠুনে জবাব ছিল, “আমি বড় বড় কথা বলিনা।”
সাক্ষাৎকারের এর পরই অংশ শোনার মতো। সাংবাদিক প্রশ্ন করেছিলেন,“আপনার এখনকার সব ছবি যে এত হিট হচ্ছে, এর পিছনে কারণ কী? মিঠুন বলেছিলেন, “নসীব”, মানে ভাগ্য।
তাঁকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ছবির কাহিনী, অভিনয় এগুলো হিট হওয়ার জন্য কোনও কারণ নয়? মিঠুন ততোধিক নির্লিপ্ত ভাবে বলেছিলেন, “নসীব চলতা হ্যায়। কপাল জোরেই কাহিনী ভাল নয়, অভিনয়ের দক্ষতাও ভাগ্যগুণে!”
মিঠুনকে জিজ্ঞেস করা হয়, কতদিন এভাবে ভাগ্যের ভরসায় চলবেন? উত্তরে সেই সময়কার মেগাস্টার বলেন, “যতদিন ভাগ্য সঙ্গ দেবে।” আর কতদিন ভাগ্য সঙ্গে থাকবে? মিঠুন হেসে বলেছিলেন, “সে তো উপরওয়ালাই জানেন।”
আটের দশকের মাঝামাঝি সময় থেকেই বলিউডে মিঠুন-শ্রীদেবীর প্রেম নিয়ে গসিপ ছিল। সাক্ষাৎকারে সে প্রশ্নও করা হয়। মিঠুন তার জবাব এড়িয়ে যান। তবে তাঁর যে অনেক বান্ধবী ছিল তা অস্বীকার করেননি। বলেন, আমি আসলে ম্যারেড ব্যাচেলর। সবটাই সবাই সেটা জানে! এ নিয়ে আর কিছু বলব না।
পুরো সাক্ষাৎকারটি শুনুন