শেষ আপডেট: 16th June 2023 11:37
মিঠুন চক্রবর্তী (Mithun Chakraborty) অভিনীত এই বিখ্যাত হিন্দি ছবি কোনও সিনেমাহলে মুক্তি পায়নি। অথচ এই ছবিতে অভিনয় করেই মিঠুন জাতীয় পুরস্কার (National Award) পান। এমন তারকাখচিত ছবিও ইতিহাসে খুব কমই হয়েছে। তবু এই ছবির কোনও হল রিলিজ হয়নি সে সময়। নয়ের দশকে সর্বাধিক আলোচিত ছবির মধ্যে ছিল এটি। কারণ শ্রীরামকৃষ্ণর (Sriramkrishna) চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন ডিস্কো ডান্সার হিরো মিঠুন চক্রবর্তী। এই ছবি নিয়ে তীব্র সমালোচনা পার করে শ্রেষ্ঠ সহ-অভিনেতার জাতীয় পুরস্কার জিতে নেন মিঠুন। ২৫ বছর পার করেছে এই ঐতিহাসিক ছবি, 'স্বামী বিবেকানন্দ'।
১৯৯৮ সালের ১৫ অগস্ট। দেশজুড়ে দূরদর্শনে প্রথম প্রিমিয়ার হয় 'স্বামী বিবেকানন্দ' ছবির। সে বছর ছিল ভারতবর্ষের ৫০ তম স্বাধীনতা দিবস উদযাপন বছর। এই ছবি দিয়ে দূরদর্শন বড় চমক দেয় দেশবাসীকে।
বহু আগেই এই ছবির শ্যুটিং শেষ হয়ে গেছিল। কিন্তু তীব্র সমালোচনার পাহাড় করে ছবিটির আর প্রেক্ষাগৃহে শুভমুক্তি ঘটেনি। ছবির দৈর্ঘ্য ছিল চার ঘণ্টা। শেষমেষ ১৯৯৮ সালের স্বাধীনতা দিবসের দিন দুপুরে দূরদর্শনে মুক্তি পেল, 'স্বামী বিবেকানন্দ'। বহু প্রতীক্ষিত ছবিটি সারা দেশের দর্শক দেখতে পেল। তবে সেই প্রথম আর সেই শেষ, আর কখনও টেলিভিশন এর পর্দায় ভেসে ওঠেনি এই ছবি। আজকাল অবশ্য ইউটিউবে যখন খুশি দেখা যায় ছবিটি।
দক্ষিণী পরিচালক জি ভি আইয়ার 'স্বামী বিবেকানন্দ' ছবিটি পরিচালনা করেন। শিশুকাল থেকে স্বামীজির সমগ্র জীবন ও কর্মকাণ্ড দেখানো হয়েছিল এই সিনেমায়। বিলে থেকে নরেন হয়ে বিবেকানন্দ হওয়ার প্রতিটি সময়ের দলিল যেন এই ছবি। স্বামীজির ভূমিকায় অভিনয় করে সাড়া ফেলে দেন সর্বদমন বন্দ্যোপাধ্যায়। অবিকল স্বামীজির মতোই ছিল তাঁর মুখশ্রী এবং দেবতাসুলভ সুদর্শন চেহারা।
দক্ষিণেশ্বরের মন্দিরে নরেনের সঙ্গে দেখা হয় শ্রীরামকৃষ্ণর। ঠিক এভাবেই রামকৃষ্ণ রূপে মিঠুনের প্রবেশ এই ছবিতে। এক অব্রাহ্মণ ছেলেকে দীক্ষা দিয়ে বিবেকানন্দ বানাচ্ছেন শ্রীরামকৃষ্ণ। নরেনই যেন শৌর্যবীর্যে পরমহংসর আদর্শ শিষ্য। সারদা মায়ের ভূমিকায় ছিলেন বাংলার সুপারহিট নায়িকা দেবশ্রী রায়। দক্ষিণা কালী হয়ে পর্দায় ভক্তিরসের ঝড় তোলেন হেমা মালিনী। নরেনের বাবা প্রদীপ কুমার ও মা তনুজা। নর্তকীর ভূমিকায় জয়া প্রদা থেকে মীনাক্ষী শেষাদ্রিরা অভিনয় করেন। ছবিতে দুর্দান্ত সঙ্গীত পরিচালনা করেছিলেন সলিল চৌধুরী। গান গেয়েছিলেন আশা ভোঁসলে, যেশুদাস, অনুপ জালোটা, কবিতা কৃষ্ণমূর্তি, অন্তরা চৌধুরী।
দক্ষিণী পরিচালকের ছবি হলেও ছবির বেশিরভাগ কলাকুশলীই ছিলেন বাঙালি। তবে সর্বাধিক যা চর্চায় ছিল মিঠুন চক্রবর্তীর রামকৃষ্ণ হওয়া। প্রথমে মিঠুনকে তীব্র কটাক্ষর সম্মুখীন হতে হলেও তিনি অভিনয়ে যেন একশো ভাগ শ্রীরামকৃষ্ণকে ধারণ করেন নিজ শরীরে। সারা শ্যুটিং পর্ব হবিষ্যি করে খেয়েছিলেন মিঠুন। শেষমেষ তিনি জিতে নেন শ্রেষ্ঠ সহ-অভিনেতার জাতীয় পুরস্কার। কারণ 'স্বামী বিবেকানন্দ' ছবির হিরো ছিলেন সর্বদমন বন্দ্যোপাধ্যায়। মিঠুন রামকৃষ্ণ রূপে সহ-অভিনেতা। তাই পুরস্কারও পান শ্রেষ্ঠ সহ-অভিনেতার জাতীয় পুরস্কার। মিঠুনকে রামকৃষ্ণর জন্য জাতীয় পুরস্কারে নির্বাচন করেন জুরি বোর্ডে থাকা শ্রদ্ধেয় পরিচালক হৃষিকেশ মুখোপাধ্যায়।
এটি ছিল মিঠুনের তৃতীয় বারের জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্তি। জীবনের প্রথম ছবিতে সেরা অভিনেতা হিসেবে জাতীয় পুরস্কার জিতে নিয়েছিলেন মিঠুন। ছবির নাম মৃগয়া (১৯৭৬)। আরও দু'বার জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন অভিনেতা, তাহাদের কথা (১৯৯২) এবং স্বামী বিবেকানন্দ (১৯৯৮)। প্রথম দু'বার লিড রোলে, পরে শেষবার পেলেন সহ-অভিনেতার রোলে জাতীয় পুরস্কার।
যদিও 'স্বামী বিবেকানন্দ' ছবির রিভিউতে লেখা হয়েছিল, এই ছবির চিত্রনাট্য যেন কোনও টেক্সট বই। পরের পর ঘটনা ঘটে চললেও তাতে সিনেম্যাটিক উপাদান কম। আবার অভিনেতাদের অভিনয় নিয়েও প্রশ্ন উঠেছিল। তবে মিঠুনের অভিনয় দেখার পর সকলে একবাক্যে স্বীকার করেছিলেন তাঁর সহজাত অভিনয় ক্ষমতা। তবে মিঠুন-সহ ছবির নায়ক বিবেকানন্দ সর্বদমন বন্দ্যোপাধ্যায় সবার মনে জায়গা করেন। সর্বদমন পরে শ্রীকৃষ্ণ রূপেও রামানন্দ সাগরের সিরিয়ালে ভীষণ জনপ্রিয় হন। আধ্যাত্মিক জগতেই তিনি জীবন নিয়োজিত করেন বাস্তবেও।
শ্রীদেবী-মিঠুনের দুরন্ত প্রেমের নৌকো ধাক্কা খেয়েছিল যোগিতা বালির আত্মহত্যার চেষ্টায়