বলিউডের ইতিহাসে শাহরুখ খান, সলমন ও আমির খানকে শেষ তিনজন প্রকৃত সুপারস্টার হিসেবে ধরা হয়। আজ দক্ষিণ ভারতের তারকারা প্যান-ইন্ডিয়া সুপারস্টার হয়ে উঠলেও, একসময় এমন একজন ছিলেন যিনি এক রাতেই বলিউডে তারকাখ্যাতি লাভ করেছিলেন।
কে এই সুপারস্টার?
শেষ আপডেট: 4 July 2025 08:49
দ্য ওয়াল ব্যুরো: বলিউডের ইতিহাসে শাহরুখ খান, সলমন ও আমির খানকে শেষ তিনজন প্রকৃত সুপারস্টার হিসেবে ধরা হয়। আজ দক্ষিণ ভারতের তারকারা প্যান-ইন্ডিয়া সুপারস্টার হয়ে উঠলেও, একসময় এমন একজন ছিলেন যিনি এক রাতেই বলিউডে তারকাখ্যাতি লাভ করেছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে, সেই খ্যাতি বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। মাত্র এক ছবির সাফল্যে আকাশছোঁয়া জনপ্রিয়তা, তারপর একের পর এক ব্যর্থতা—এই চক্রে তিনি পরিচিত হন বলিউডের ‘সবচেয়ে স্বল্পস্থায়ী সুপারস্টার’ নামে।
এই মানুষটির নাম কুমার গৌরব। লখনউয়ে জন্ম নেওয়া কুমার গৌরবের আসল নাম মনোজ তুলি। তিনি কিংবদন্তি অভিনেতা রাজেন্দ্র কুমারের পুত্র এবং বলিউডের বিখ্যাত বেহল পরিবারের সদস্য। পরিচালক রমেশ বেহল ও শ্যাম বেহল তাঁর কাকা এবং গীতার বেহল, রবি বেহল ও গোল্ডি বেহল তাঁর ভাইবোন।
১৯৮১ সালে ‘লাভ স্টোরি’ সিনেমার মাধ্যমে বলিউডে প্রবেশ করেন কুমার গৌরব। বিজয়েতা পণ্ডিতের সঙ্গে রোম্যান্টিক এই ছবিটি বক্স অফিসে বাম্পার হিট হয়। সিনেমার গান ‘ইয়াদ আ রাহি হ্যায়’ আজও শ্রোতাদের মনে অম্লান। হঠাৎই রাতারাতি দেশের ‘ক্রাশ’ হয়ে উঠেছিলেন তিনি।
সেই অভূতপূর্ব সাফল্যের পর সবাই চেয়েছিল, তাঁর পরবর্তী ছবি হবে আরও বড় হিট। সেই আশায় মুক্তি পেল ‘তেরি কসম’, একই সঙ্গীত পরিচালক আর.ডি. বর্মন ও গায়ক অমিত কুমারের সঙ্গে। গান দারুণ হলেও সিনেমা ফেল করল। ভক্তদের প্রত্যাশা পূরণ হল না।
একসময় কুমার গৌরবকে ঘিরে বলিউডে যে উন্মাদনা ছিল, তা আর কখনও দেখা যায়নি। বিজয়েতা পণ্ডিত এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, "রাজেশ খন্নার পর আর কারো জন্য এমন পাগলামি দেখিনি।"
সেই ব্যর্থতার ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে রাজেন্দ্র কুমার নিজের ছেলের জন্য একের পর এক ছবি প্রযোজনা করেন—‘স্টার’, ‘লাভার্স’, ‘রোমান্স’, ‘হাম হ্যায় লাজবাব’, ‘অলরাউন্ডার’। কিন্তু কোনোটাই বক্স অফিসে সাফল্য পায়নি।
১৯৮৬ সালে মহেশ ভাট পরিচালিত ‘নাম’ সিনেমায় তাঁর চরিত্র প্রশংসিত হলেও লাইমলাইট কেড়ে নেন সঞ্জয় দত্ত। এরপর ১৯৯৩ সালে রাজেন্দ্র কুমার, সঞ্জয় ও সুনীল দত্তকে নিয়ে নির্মাণ করেন ‘ফুল’। সেটাও ব্যর্থ হয়।
শেষ পর্যন্ত ২০০২ সালে ‘কাঁटे’ সিনেমার পর বলিউডকে চিরবিদায় জানান কুমার গৌরব। এখন ৬৮ বছর বয়সে তিনি পরিবার নিয়ে নিভৃতে জীবন কাটাচ্ছেন।
কিন্তু একসময় তার নাম ছড়িয়েছিলো উদারতার জন্যও। সলমান খান একবার ‘কফি উইথ করণ’–এ বলেছিলেন, স্ট্রাগলিং পিরিয়ডে যখন তাঁর পরনের মতো ভালো কাপড় ছিল না, তখন কুমার গৌরব তাঁকে নিজের নতুন জিন্স দিয়ে দিয়েছিলেন।
ব্যক্তিগত জীবনেও আলোচিত ছিলেন গৌরব। ‘লাভ স্টোরি’ সিনেমার পর বিজয়েতা পণ্ডিতের সঙ্গে প্রেমে জড়ান। কিন্তু রাজেন্দ্র কুমারের আপত্তিতে সেই সম্পর্ক ভেঙে যায়। পরে রাজ কাপুরের কন্যা রিমা কাপুরের সঙ্গে এনগেজমেন্ট হলেও তা ভেঙে যায়। পরবর্তীতে বিয়ে করেন সুনীল দত্ত ও নার্গিসের কন্যা, সঞ্জয় দত্তের বোন নম্রতা দত্তকে।
এক সাক্ষাৎকারে গৌরব বলেছিলেন, “আমার কোনো আফসোস নেই। সুপারস্টার হওয়া ছিল এক আশীর্বাদ, আর এখনকার শান্ত জীবন আমার পরম প্রাপ্তি।” একটা সময় যার জন্য বলিউডের প্রযোজকরা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতেন, যাঁকে ঘিরে মেয়েরা পাগল হয়ে যেত, আজ তিনি হারিয়ে গেছেন প্রায় বিস্মৃতির অতলে। তবু কুমার গৌরবের নাম ইতিহাসে থাকবে সেই সুপারস্টার হিসেবে, যিনি মাত্র এক রাতেই তারকা হয়েছিলেন—আর তারকার মতোই বিদায় নিয়েছিলেন।