শেষ আপডেট: 7th March 2025 18:17
শিরোনাম ১: অরিন্দম-শুভ্রজিতের পর ‘পুরনো’ ডিরেক্টর্স গিল্ডে ফিরলেন শিবু-নন্দিতাও
শিরোনাম ২: BIG BREAKING: ‘দৃষ্টিকোণ’ গেছে বদলে! শিবু-নন্দিতার পর ‘পুরনো গিল্ডে’ ফিরছেন কৌশিকও!
গতকাল অর্থাৎ ৬ মার্চ ‘দ্য ওয়াল-এর তরফ থেকে এই দুই শিরোনামে দুটি খবর প্রকাশ্যে আসে। এরপর থেকেই DAEI (Group 1) নামক এক হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে শুরু হয় জোর তরজা। একের পর এক ‘নামজাদা’ পরিচালক ডিরেক্টর্স অ্যাসোসিয়েশন অফ ইস্টার্ন ইন্ডিয়া' থেকে ফিরে যান পুরনো তথা ‘ইস্টার্ন ইন্ডিয়া মোশন পিকচার ডিরেক্টর্স অ্যাসোসিয়েশন’-এ। পরিচালক অরিন্দম শীলকে ‘বয়কট’ করে DAEI। তাঁর বক্তব্য তিনি বহু আগে থেকেই পুরনো গিল্ডের সদস্য। সৃজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘EIMDA-র কার্ড ল্যাপ্স হয়ে যায়’ তিনি রিনিউ করেছেন সদস্য কার্ড’। অন্য পরিচালক শুভ্রজিৎ মিত্র হলেন ‘EIMDA’-র নতুন সদস্য। পুরনো গিল্ডে যোগ দিলেন একদা ‘চর্চিত’ রাহুল মুখোপাধ্যায়। এবং গতকাল পুরনো গিল্ডে ফিরলেন শিবপ্রসাদ-নন্দিতা। এবং একেবারে শেষ খবর, পরিচালক কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ও যোগ দিতে চলেছেন পুরনো গিল্ডেই!
এই সময়ে দাঁড়িয়ে অনেকটাই ব্যাকফুটে DAEI। জোর তরজা শুরু হয়েছে DAEI (Group 1)-এ। এই গ্রপের সদস্যরা কেউ মেগা সিরিয়ালের পরিচালক আবার কেউ, সিনেমা থেকে ওটিটির কাজ করেছেন। একের পর এক প্রশ্ন ভিড় করছে গ্রুপে। কেউ পরিচালক সুদেষ্ণা রায়কে প্রশ্ন করেছেন ‘মাননীয়া সভাপতিকে জিজ্ঞেস করছি আপনারা কি চিন্তাভাবনা করছেন আমাদের জানান...এখানে অস্তিত্ব সংকট দেখা দিচ্ছে’ । একজন পরিচালক লিখেছেন, ‘সংগঠনের দায়িত্বের প্রধান চাবি যার হাতে, তিনি কিছুই জানেন না অথচ সবকিছু ঘটে যাচ্ছে।’
বারবার মেসেজে উঠে আসছে, পরিচালকদের অসহায়তা, ‘কর্মহীন অবস্থায়’ ঘরে বন্দি থাকার কথা এবং ‘বিশ্বাসঘাতকতা’। একের পর অভিযোগ জানাচ্ছেন একাধিক পরিচালক। তাঁরা ‘বিক্ষুব্ধ’। দ্য ওয়াল-এর পক্ষ থেকে ফোন করা হয়, দেবজ্যোতি ঘোষালকে। দেবজ্যোতিবাবু, দীর্ঘদিন সিরিয়াল ও সিনেমার সহপরিচালনা ও পরিচালনার কাজ করে গিয়েছেন। এখন তাঁর কাছে কাজ নেই! বললেন, ‘আমরা প্রতারিত। স্টার ডিরেক্টররা নিজেদের স্বার্থে আমাদের শুধু ব্যবহার করেছেন মাত্র। আমরা সন্দিহান। কীভাবে সমস্যার সমাধান হচ্ছে, আদৌ তা হচ্ছে কি না, তা সংগঠনের সদস্যদের জানানো হয় না।’ প্রশ্ন করা হয়, সাংবাদিক বৈঠক ডেকে যৌথভাবে বসে আপনাদের অর্থাৎ পরিচালকদের সম্মিলিত সিদ্ধান্তই DAEI কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তবু বলছেন আপনারা সন্দিহান? ‘হ্যাঁ আমরা সন্দিহান। দিনের পর দিন ধৈর্য ধরতে বলা হয়েছে আমাদের। বলা হয়, নিশ্চয়ই কিছু একটা ব্যবস্থা হবে, আমরা পদক্ষেপ নিচ্ছি। আমরা সেই কথামতো সবাই চুপ করে ছিলাম। এখন দেখছি গোটাটাই শেষের দিকে!’ সংগঠনকে এক হাত নিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘কোনও সিদ্ধান্ত, আমাদের জানিয়ে নেওয়া হয়নি। নিজেদের মধ্যে কথা বলে, আমাদের জানিয়ে দেওয়া হতো। ব্যস। এখন আমরা সর্বহারা। আমার একটাই প্রশ্ন এই সর্বহারা হওয়ার পিছনে যাঁরা দাঁড়িয়ে রয়েছেন। তাঁদের এই সংগঠনের প্রতি কি কোনও দায়িত্ব-কর্তব্যবোধ নেই?’
পরিচালকদের কথায় বারবার উঠে আসছে একটাই শব্দ ‘নীতিহীনতা’। দেবাশিস দিঘলের কর্মজীবন বিশ বছরেরও বেশি। একাধিক সিরিয়ালের পরিচালনা করেছেন তিনি। দেবাশিস বললেন, ‘আমি পুরনো গিল্ডের সদস্য ছিলাম। বিভিন্ন সমস্যার কারণে সেই গিল্ড ছেড়ে DAEI-তে যোগ দিয়েছিলাম। প্রথমদিকে ফেডারেশন সভাপতির সঙ্গে আমাদের কিছু সমস্যার জন্ম হয়, পরে বুঝতে পারি, ওই সমস্যা মিটে যেত, কিন্তু তা জিইয়ে রাখা হয়েছে। আমাদের ক্রমাগত ভুল বোঝানো হয়েছে। ফেডারেশন আমাদের সঙ্গে সব সমস্যা শুনতে চেয়েছে, মেটাতে চেয়েছে। স্বরূপবাবু বলেছিলেন, আমরা এক টেবিলে বসে ঝগড়া করব, সমাধান আসবে, তারপর চা খেতে যাব। কিন্তু তা হয়নি’
দেবাশিসবাবু স্বীকার করেন, যে তাঁর DAEI-র সম্পাদক এবং সভাপতির প্রতি আস্থা নেই। তিনি বলেন, ‘আমাদের ব্যবহার করা হয়েছে। আমাদের ইউনিট কার্ড নেই। মেডিক্লেম নেই। এই প্রশ্ন আমি একাধিকবার করেছি। কোনও জবাব আসেনি।’ ক্ষুব্ধ পরিচালক এও বলেন, আগামী শনিও রবিবার ফেডারেশন সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাসের নেতৃত্বে বিনামূল্যে স্বাস্থ্য শিবির আয়োজন করা হয়েছে, তিনি সেখানে উপস্থিত থেকে নিজের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাবেন।
‘দ্য ওয়াল’-এর পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয়, DAEI সদস্য পরিচালক প্রীতম সরকারের সঙ্গেও। তিনিও আংশিক সহমত প্রকাশ করেন, দেবজ্যোতি-দেবাশিসের বক্তব্যের সঙ্গে। বলেন, ‘DAEI-দের বৈঠকে যে সমস্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তা শুধুমাত্র জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে আমরা সেই সিদ্ধান্ত নিইনি। আমরা সিদ্ধান্তের অঙ্গ ছিলাম না। জানানো হয়েছে। সংগঠনের কোনওদিন SOP (স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসেস) ছিল না। একটা কথা বুঝতে হবে, আমরা কাজ করতে এসেছি। আন্দোলন করতে নয়’
DAEI-এর সদস্য প্রীতম, অনেক ক্ষেত্রেই ফেডারেশনের আইনকানুনকে সমর্থন করেন তিনি, বললেন, ‘একটা ডিরেক্টর গিল্ডের কাজ সুস্থ পরিবেশ প্রদান করা, তা করতে পারেনি DAEI। বারবার বলা হয়েছে, ফেডারেশনের দাদাগিরির জন্য কাজ কমে গিয়েছে। এটা কি পুরোপুরি সত্যি? বাংলায় সিঙ্গল স্ক্রিন কমে গিয়েছে, ডিস্ট্রিবিউশন বিষয়ক একাধিক সমস্যা রয়েছে। সেখানে শুধুমাত্র একজনকে টার্গেট করা হচ্ছে, স্বরূপ বিশ্বাস। ভাবটা এমন তিনি সরে গেলেই কাজ শুরু হয়ে যাবে, এবং প্রযোজকরা লাভবান হবে!’
DAEI (Group 1)-এ হোয়াটস অ্যাপ মেসেজের পরিচালকদের বক্তব্য এবং ‘বিক্ষুব্ধ’ পরিচালকদের ‘দ্য ওয়াল’কে দেওয়া বিবৃতি প্রসঙ্গে ফোনে ধরা হয় DAEI সদস্য ও পরিচালক ইন্দ্রনীল রায়চৌধুরীকে। গোটা ঘটনা জানানো হয় তাঁকে। জানতে চাওয়া হয় তাঁর প্রতিক্রিয়া ঠিক কী? তিনি বলেন, ‘আমার গোটা বিষয় নিয়ে কোনও বক্তব্য নেই।’
টলিউড ইন্ডাস্ট্রির ‘নামকরা’ পরিচালকরা ধীরে-ধীরে এ কূল ছেড়ে গিয়েছেন ও কূলে। কানাঘুষোয় এও শোনা যাচ্ছে, ‘তালিকায় আছে আরও নাম’। এভাবেই যদি ভিড় কমতে থাকে DAEI, প্রশ্ন উঠছে নতুন গিল্ডের অস্তিত্ব থাকবে কি? ইতিমধ্যেই সংকটের ছায়া পড়েছে DAEI (Group 1) হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপেও।