মমতা শঙ্কর
শেষ আপডেট: 21st December 2024 19:19
কিশোর শিবরাম চক্রবর্তীর প্রথম কবিতা 'চুম্বন'। যেখানে তিনি লিখেছেন,
'জানি জানি, সবাই সবে, ছাড়বে
চলার পথে কে কার চুমু কাড়বে।'
কিন্তু মুক্তারামবাবু স্ট্রিটের তক্তারামে বসে শিবরাম কি এটা ভেবেছিলেন যে একদিন এই চুমুর বাড়বাড়ন্তই শহরের অন্যতম চর্চার বিষয় হয়ে উঠবে?
কালীঘাট মেট্রো স্টেশনে তরুণ-তরুণীর চুমু খাওয়ার ভিডিও প্রকাশ্যে আসার পর কেউ কেউ পক্ষে কথা বলছেন কেউ বিপক্ষে। কেউ বলছেন 'চুমু পায়। ঠিক যেমন বৃষ্টি পড়লে খিচুড়ি পায়। স্নানের সময় গান পায়। আদরের পরে সিগারেট পায়। পড়তে বসলে ঘুম পায়। তেমনই, চুমু পেলে চুমু খাব, যখন যেখানে ইচ্ছে, কার কী?'
অনেকেই আবার উল্টো সুরে বলছেন, 'কলকাতা কি সত্যিই লন্ডন হয়ে গেল?' উত্তর পেতে দ্য ওয়ালের তরফে যোগাযোগ করা হয়েছিল অভিনেত্রী মমতা শঙ্করের সঙ্গে। তাঁরও প্রশ্ন 'এটা কি বিদেশ নাকি? এসব আমাদের কালচার নয়। এক এক দেশের এক এক রকম সংস্কৃতি রয়েছে। আমাদের সংস্কৃতিকে আমাদের ধরে রাখা উচিত।'
স্পষ্ট জানালেন, 'যা হয়েছে আমি তার ঘোর বিরোধী। কারণ আমার মনে হয় সব কিছুর একটা স্থান-কাল-পাত্র আছে। যাদের অন্য কোনও জায়গা নেই তাদের জন্য লেক আছে, পার্ক আছে। সেখানে কেউ কিছু তো বলছে। সেখানে যাক। কিন্তু একটা জনবহুল জায়গার মধ্যে এই ধরনের খোলাখুলি চুম্বন আমাদের দেশের সভ্যতা নয়।'
আমি এসবের বিরুদ্ধে সব কিছুর স্থান-কাল-পাত্র আছে #mamatashankar #viralmetroincident #TheWallNews pic.twitter.com/XngVWTEfQ2
— The Wall (@TheWallTweets) December 21, 2024
শহর, রাজ্য তথা দেশে যে হারে ধর্ষণের ঘটনা বেড়েই চলেছে সে নিয়েও চিন্তিত মমতা। জানালেন, 'অনেক তো বিকৃত মানসিকতার লোক আছে। এসব দেখে তারা কোনও ইনোসেন্ট মেয়েকে রেপ করতে পারে। এমন ঘটনা যদি ছড়ায় তাহলে যে কত যৌনতায় আসক্ত, বিকৃত মস্তিষ্ককে উস্কানি দেওয়া হচ্ছে সেটা কেউ বুঝতেই পারছে না। এরাই হয়তো এরপর ধর্ষণ শুরু করবে। আমরা মেয়েরা নিজেদের ঠিক রাখব না? ছেলেরা সজাগ হব না? যাতে এই অপরাধগুলো আর না বাড়ে?'
অভিনেত্রীর কথায়, 'এখানে আমরা অনেকেই বলাবলি করছি যে যেভাবে ভাল থাকে থাকতে দেওয়া হোক। এটা কী ধরনের ভাল থাকা আমি সত্যি বুঝতে পারছি না। যাঁরা রূপান্তরকামী বা অন্য কিছু, আমি তো তাঁদের নিয়ে কথা বলছি না। কিন্তু এই জিনিসটা নরম্যাল নয়। স্বাভাবিক নয়। সে কী প্রমাণ করতে চাইল? তার সঙ্গীকে বেশি ভালবাসে?'
মমতা শঙ্কর মনে করেন কেউ স্বাধীন বলেই যা খুশি করতে পারে তা নয়। অন্যের স্বধীনতার দিকটাও খেয়াল রাখা দরকার যে সে কীভাবে দেখছে। বলেন, 'স্বাধীনতার কথা বললে তো আমিও বলতে পারি যে যেটা তোমরা করছ সেটা আমায় অস্বস্তিতে ফেলছে। তোমাদের এই কাণ্ড দেখতে ইচ্ছে করছে না। দৃষ্টিকটূ। আমি যদি তাকে গিয়ে একটা চড় মারি সে কি সেটা নেবে? এটাও তো আমার স্বাধীনতা। তুমি অনেক মানুষের সর্বনাশ করছ। ছোটদের সর্বনাশ করছ।'
অভিনেত্রীর কথায়, আমি এই আধুনিকতাতে কোনও সাহস দেখি না। শুধু বুঝি চিপ পাবলিসিটি। যারা এই ঘটনার সঙ্গে সহমত পোষণ করেন আমার মনে হয় তাঁরাও ওই একই।'
প্রসঙ্গত, চলতি বছরে 'ল্যাম্পপোস্টের নীচে দাঁড়ানো', 'বুকে শাড়ির আঁচল'-- এসব নিয়ে তাঁর রক্ষণশীল মন্তব্য তোলপাড় ফেলে দিয়েছিল। ঘটনা হল এক সাক্ষাৎকারে মমতা শঙ্কর একটি মন্তব্য করেছিলেন। বলেছিলেন নতুন 'আজকাল শাড়ি পরব, কিন্তু আঁচল ঠিক থাকবে না, ঠিক বুঝতে পারি না। আগে যাঁদের আমরা রাস্তার মেয়ে বলতাম, যাঁরা ল্যাম্পপোস্টের নীচে দাঁড়িয়ে থাকেন, তাঁরা ওই ভাবে দাঁড়াতেন।'
তিনি আরও বলেছিলেন, 'গ্রামে মহিলাদের কাজ করতে গিয়ে হয়তো আঁচল সরে যেত। তাতে কোনও দোষ ছিল না। আর ওঁরা (যৌন কর্মী) তো পেশার তাগিদে পুরুষদের আকর্ষণ করার জন্য ও ভাবে শাড়ি পরে থাকেন।' অভিনেত্রীর এই বক্তব্য ঘিরেই বিতর্ক শুরু হয়। প্রবল ট্রোল হতে হয় তাঁকে।
এর পরে শহরের চুমু-বিতর্কে ফের নিজের সংরক্ষণশীল ভূমিকাই বজায় রাখলেন তিনি। জোরগলায় জানিয়ে দিলেন নিজের অবস্থান। খোলাখুলি চুম্বনকে এতটুকু প্রশ্রয় দিতে রাজি নন তিনি।