
শুভদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়
আজ থেকে শুরু হচ্ছে লীনা গঙ্গোপাধ্যায়ের (Leena Ganguly) নতুন বাংলা সিরিয়াল ‘বালিঝড়’। এই সিরিয়ালে অভিনয় করেছেন তৃণা সাহা, ইন্দ্রাশিস রায় এবং কৌশিক রায়। আর এই সিরিয়ালের হাত ধরেই কাজে ফিরছেন অভিনেত্রী মাধবী মুখোপাধ্যায় (Madhabi Mukherjee)। ৫ বছর পরে মেনস্ট্রিম অভিনয়ে ফিরছেন তিনি (Comeback to Mega Serial)। এছাড়াও এই ধারাবাহিকে রয়েছেন সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়, ময়না মুখোপাধ্যায়, শঙ্কর চক্রবর্তী, দুলাল লাহিড়ী, ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, ভরত কল, অম্বরীশ ভট্টাচার্য, তথাগত মুখোপাধ্যায়-সহ আরও অনেকে। ভরত কলের মায়ের চরিত্রে রয়েছেন মাধবী। এর আগে লীনার ‘চোখের তারা তুই’ ও ‘সন্ন্যাসী রাজা’ সিরিয়ালেও একসঙ্গে কাজ করেছিলেন সাবিত্রী আর মাধবী।

৫ বছর পর কেন লীনা গঙ্গোপাধ্যায়ের কাজে ফেরার কথা মনে হল মাধবীর?
মাধবী মুখোপাধ্যায় ‘দ্য ওয়াল’-কে বললেন, ‘লীনাদের সঙ্গে কাজ করা খুব সুবিধের। কারণ ওঁরা জানেন, আমি এই বয়সে কতটুকু করতে পারব আর পারব না। করোনার সময় থেকে তো এত বছর ঘরেই বসে ছিলাম। চিরকাল কাজ করে এসেছি, তাই আর বসে থাকতে পারি না। সেই ছোট্টবেলা থেকে সংসারের সব দায় দায়িত্ব সামলেছি। নিজের বিয়ের পরে দায়িত্ব আরও বাড়ল। মনে হতো, দু’হাতে সবসময় দু’টো ব্যাগ বইছি। কিছু না করলেও কাজ করার তাগিদটা ছিলই। তবে আমার বড় মেয়ে বারণ করেছিল, মা, অনেক কাজ করেছো, এই কোভিডের সময়ে তোমায় কাজ করতে হবে না বাইরে বেরিয়ে। তাই করিনি। এতদিন পর যখন মনে হল এবার আবার অভিনয়ে ফেরা যায়। তখন লীনা এসে বলল, তাহলে আমার সিরিয়ালেই করো।

আমার এক নম্বর লোক হচ্ছেন লীনা গাঙ্গুলি। লীনা গাঙ্গুলিকে আমার ভাল লাগে। লীনা আমার প্রিয় মানুষ। একজন মহিলা কত রকমের গল্প সৃষ্টি করছেন মেগা সিরিয়ালে। ওঁর অনেকগুলো সিরিয়াল একসঙ্গে চলছে। প্রতিদিন লীনাকে নতুন নতুন গল্প ভেবে লিখতে হয়। দর্শককে টেলিভিশনের সামনে বসিয়ে রাখার ক্ষমতা রাখে লীনা। যেন একটা চমক লাগানোর মতো ক্ষমতা আছে ওঁর। এত চিত্রনাট্য লেখার মাঝেও, মহিলা কমিশনের কাজের ব্যস্ততার মাঝেও লীনার মুখে সবসময় হাসি লেগে আছে। লীনার হাসিমুখ আমার বড় প্রিয়। তাই আমি আর সাবিত্রী দু’জনেই লীনাকে খুব ভরসা করি। আবার লীনা একটু একটু রান্না করেও আমাকে খাওয়ায়। হয়তো বলল, আমার বাড়ি এসো মাধবীদি, তোমায় এইটে রান্না করে খাওয়াব। এই যে একটা স্পোর্টিং স্পিরিট, এইটা ক’জন মানুষের থাকে? এখন তো নাম করলেই সবাই ভীষণ অহংকারী। কিন্তু লীনা একদম অহংকার প্রদর্শন করার মানুষই নন।

ওঁর এই সিরিয়ালে চরিত্র যেটা করছি বনেদি বাড়ির মা। বাড়ির সবার বড়। বেশ ভাল চরিত্র। ভালই লাগছে করতে। লীনার সিরিয়াল বলেই করলাম।’
লীনা গঙ্গোপাধ্যায়ের নাম এলেই এক শ্রেণির দর্শকরা বলতে থাকেন লীনা মানেই পরকীয়ার কারখানা। একই বাড়িতে নায়কের দুই বউয়ের সহাবস্থান। এসবই যেন লীনার কলমের ইউএসপি। মাধবীকে যখন জিজ্ঞেস করা হল, ‘শ্রীময়ী’ আর জুন আন্টির ঝগড়া আপনি দেখতেন? মাধবী বললেন, শ্রীময়ী সিরিয়াল কেন, কোন সিরিয়ালই তিনি দেখেন না। বরং নিউজ শোনা বা রাজনৈতিক আড্ডা শোনা বেশি পছন্দ তাঁর। তাই লীনার সিরিয়ালে কী গল্প চলছে সেই নিয়ে তিনি ওয়াকিবহাল নন। বরং লীনার লেখা আর লীনা মানুষটা মাধবীর প্রিয়।

সত্যজিতের শেষ বিদায়ে চড়া মেকআপ করে গেছিলেন মাধবী, বয়ে যায় সমালোচনার ঝড়
তবে লীনার সিরিয়ালে পরকীয়ার আধিক্য দেখানো নিয়ে মাধবী মুখোপাধ্যায় বললেন, ‘সবই তো হচ্ছে জীবনে। বাস্তব থেকেই সব নেওয়া হয় সিরিয়ালের গল্প। শুধু পর্দা টাঙিয়ে রেখে ত্রিকোণ প্রেম, পরকীয়া আড়াল করা হয়। যা ঘটছে সমাজে আজকাল, লীনা তাই লিখছে এবং দেখাচ্ছে।
এগুলো নির্ভর করে চ্যানেলের মালিকদের উপরেও। তাঁরা যা চাইবেন, সেটাই তো করতে হবে। তাই দেখানো হয়, বেনারসী শাড়ি পরে শুতে যাচ্ছে। করতে হয় তাই করছে। লীনাকে বলা হচ্ছে, ওভাবেই লিখতে। লীনার দোষ নয়। এটা তো একটা ব্যবসাও। দর্শক নিচ্ছে বলেই হচ্ছে। সামাজিক দায়িত্ব ভেবে বিপ্লব করতে কোনও চ্যানেলই টেলিভিশনে আসে না। ব্যবসা করতেই আসে। আমি মানুষ লীনাকে পছন্দ করি, তাই ওঁর কাজ করছি।’

মাধবী কি সিনেমাতেও কামব্যাক করতে চান? চারুলতা জানালেন, ‘মাঝে ছোট ছবি ‘প্রবাহ’ করলাম। এই একটা কাজই করেছি। চিত্রনাট্য পছন্দ হলে কেন ছায়াছবিতে অভিনয় করব না?’