কেমন আছে রায়বাড়ি?
শেষ আপডেট: 4 May 2025 21:02
১/১ বিশপ লেফ্রোয় রোড। রাস্তার মোড়েই দু'হাত তুলে দাঁড়িয়ে রয়েছে বিশালাকার এক হলদে রঙের বাড়ি। দু'দিন আগেই সেই বাড়ি জুড়ে হইহই। সকাল সাতটা থেকে জন সমাগম। মহারাজার জন্মদিন বলে কথা! দ্য ওয়ালও পৌঁছে গিয়েছিল সেই বাড়ির অন্দরে। ঘরোয়া পোশাক সেই সকাল থেকেই চেয়ারে ঠায় বসে সন্দীপ রায়।
সত্যজিৎ রায় নেই তবু 'বাবুদা'কে খানিক ছুঁয়ে দেখার আর্জি নিয়ে লাইনের পর লাইন। রায়বাড়িরও ক্লান্তি নেই। কোন এক অলৌকিক ক্ষমতায় একটানা বসে থাকতেও ক্লান্তি নেই এতটুকু। সন্দীপ-জায়া ললিতা রায়ের পোশাকে আভিজাত্যের উগ্র প্রদর্শন নেই। বরং স্নেহময়ী মায়ের মতো আটপৌড়ে শাড়িতে তরমুজের রস বানিয়ে যাচ্ছিলেন সকাল থেকেই। আগন্তুকদের হাতে তুলে দিচ্ছিলেন সিঙারা-মিষ্টি।
গোটা বাড়িটার আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে স্মৃতির পাহাড়। তিন তলার সিঁড়ি বেশ খাঁড়া। তাতে বিছোনো কার্পেট। উঠতে কষ্ট হলেও উপায় আছে। ছোট্ট একটা লিফটের সামনেও ভিড়ের সংখ্যা কম ছিল না। নানা অদেখা ছবি বারবার মনে করিয়ে দিচ্ছিল এই বাড়িতেই জন্ম নিয়েছিল বাংলা সাহিত্যের কালজয়ী সব চরিত্র।
সন্দীপ রায় ব্যস্ত মানুষ, তবু তারই মাঝে কথা বললেন দ্য ওয়ালের সঙ্গেও। রায়বাড়ি আজও একইরকম। পরিবর্তন বা তথাকথিত আধুনিকীকরণের চিন্তা মাথায় আসে না? বললেন, "পরিবর্তনের কথা মাথায় আসেনি। আমাদের পুরনো বাড়ির প্রতি দুর্বলতা রয়েছে। এখন যদিও লাইটিং হয়েছে। খুব সুন্দর লাগছে। ভয় ছিল, লাইটিংটা কীরকম হবে। সেটাও তো ভারী সুন্দর হয়েছে। আমরা বেশ খুশি।"
হলদে বাড়ির উপর সাদা লাইট। ঠিক যেন রাজপ্রাসাদ। বাড়ির দেওয়াল জুড়ে পরিচালকের নানা কাজের গ্রাফিতি। হঠাৎই ফুলের তোড়া নিয়ে আগমন স্থানীয় কাউন্সিলারের। প্রেরক ফিরহাদ হাকিম। ওদিকে সত্যজিতের ছবির সামনে দাঁড়িয়ে কেউ কাঁদছিলেন অঝোরে কেউ বা আবার গান ধরলেন, 'মহারাজা তোমারে সেলাম'। ভিড় জমিয়েছিলেন কলেজ পড়ুয়ারাও। সেলফির ভিড়ে ছুঁয়ে দেখছিলেন শিকড়, সাক্ষী থাকছিলেন জীবন্ত দলিলের। কিচ্ছু বদলায়নি রায়বাড়ির, ইজিচেয়ারে আজও যেন টের পাওয়া যায় তাঁর উপস্থিতি, নস্টালজিয়া যেন আঁকড়ে রয়েছে গোটা বাড়িটিকেই।