অনির্বাণ-পরম-সুদেষ্ণা এবং স্বরূপ
শেষ আপডেট: 2 May 2025 20:39
পয়লা মে শ্রমিক দিবসে ছিল এক মেগা মিটিং। স্থান টেকনিশিয়ান স্টুডিও। টালিগঞ্জের কলাকুশলীদের সংগঠন ‘ফেডারেশন অফ সিনে টেকনিশিয়ান ওয়ার্কার্স অফ ইস্টার্ন ইন্ডিয়া’র অন্তর্ভুক্ত সমস্ত গিল্ড এবং সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন সাধারণ সভায়। উদ্দেশ্য—সিনেকর্মীদের ন্যায্য দাবি, তাঁদের কাজের অধিকার, রুটি-রুজির স্বার্থে, শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষার্থে, মজুরিবৃদ্ধির দাবি, তাঁদের কাজ করার পরিস্থিতি আরও উন্নত করতে ছিল এই আলোচনা। সাধারণ সভায় একে একে বক্তব্য রাখলেন, FCTWEI-র কার্যকরী সভাপতি জয় চন্দ্র চন্দ, যুগ্ম সচিব সুজিত কুমার হাজরা এবং শেষে মাইক্রোফোন হাতে নেন ফেডারেশন সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাস। শেষ করে এই বলে, ‘অশুভ শক্তির বিরুদ্ধো সোচ্চার হতে হবে, এক জোট থাকতে হবে’।
ঠিক কারা এই ‘অশুভ শক্তি’? দ্য ওয়াল-এর ক্যামেরার সামনে স্বরূপ বলেন, ‘যারা কলাকুশলীদের সংগঠন ফেডারেশনকে ভাঙতে চাইছে!’
প্রসঙ্গত, ১লা মের ঠিক আগের রাত অর্থাৎ ৩০ এপ্রিল, সাড়ে ১৫ মিনিটের একটি ভিডিও আপলোড করেন পরিচালক DAEI গিল্ড সম্পাদক-পরিচালক সুদেষ্ণা রায়। তাতে দেখা যায় অনির্বাণ ভট্টাচার্য, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, ইন্দ্রনীল রায়চৌধুরি, বিদুলা ভট্টাচার্য, কিংশুক দে, এবং সুদেষ্ণা রায়কে। ফেডারেশনের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ উঠে আসে সেই ভিডিওতে। কেউ বলেন, ‘টেকনিশিয়ানরা হুমকির’ মধ্যে পড়ছেন। ফেডারেশনের ‘গা জোয়ারি’তে ক্ষতিতে পড়ছেন টেকনিশিয়ানরা। টেকনিশিয়ানদের কাজ করার থেকে ‘আটকানো’ হচ্ছে। কিন্তু এ সবের পরেও তাঁরা অর্থাৎ ডিরেক্টর্স অ্যাস্যোসিয়েশন অফ ইস্টার্ন ইন্ডিয়া চেয়েছিল, আলোচনায় বসতে, কিন্তু ফেডারেশন সে আলোচনায় বসতে চায়নি।
সাধারণ আলোচনাসভায় এই ভিডিওর উল্লেখ বারবার করেন স্বরূপ বিশ্বাস। বলেন, ‘এই সুপরিকল্পিত ভিডিও তৈরি করতে যে অর্থ ওঁরা খরচ করেছেন, তা না করে সেই অর্থ টেকনিশিয়ানদের দিতে পারতেন!’ সাধারণ সভা শেষে টেকনিশিয়ান স্টুডিওয়, ফেডারেশনের কার্যকরী সমিতির মিটিংও হয়। ২৮টি গিল্ডের প্রায় ৪৭২ নির্বাচিত সদস্যরা মিটিংয়ে যোগ দেন। আলোচনা চলে বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টে অবধি। কী আলোচনা হয় সেই সভায়?
সূত্রের খবর, ‘সমস্ত নির্বাচিত সদস্যরা সর্বসম্মতভাবে ফেডারেশনের কার্যনির্বাহী কমিটি তথা সভাপতিকে অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্বাধীনতা এবং ক্ষমতা দিয়েছেন।’ এখানেই শেষ নয়, ‘টেকনিশিয়ানদের সমর্থনে ফেডারেশন সভাপতি ভবিষ্যতে যা সিদ্ধান্ত নেবেন, তার প্রতি সম্পূর্ণ আস্থা এবং সম্মতি জানিয়েছেন। যাঁরা ফেডারেশনের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র, অভিষন্ধিমূলক কাজ করছে, তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করার সম্পূর্ণ স্বাধীনতাও রয়েছে, সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাসের।’
প্রশ্ন উঠছে, বারবার নাম না করে যে ‘অশুভ শক্তি’র কথা সামনে আসছে, তাঁরা পরিচালক-প্রযোজক। যাঁরা ফেডারশনের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে মামলা করেছেন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন অনির্বাণ ভট্টাচার্য, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, ইন্দ্রনীল রায়চৌধুরি, বিদুলা ভট্টাচার্য, সুদেষ্ণা রায়দের মতো পরিচালকরা।
‘কঠোর সিদ্ধান্ত’ ঠিক কী প্রশ্ন করা হলে সূত্র জানায় ‘সদস্যদের বড় স্ক্রিনে ওই ভিডিওটি দেখানো হয়েছে, এবং হাইকোর্টের মামলায় কার কী বক্তব্য ছিল, তাও দেখানো হয়। এই মামলার বাইরেও যাঁরা, তাঁদের সমর্থন করছেন, তাঁদের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এবং তা বেশ উত্তপ্ত পর্যায়ে পৌঁছয়। আলোচনায় একটাই কথা বারবার উঠে এসেছে তাঁদের প্রতি ‘আজীবন অসহযোগিতা!’
গোটা বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার ফোন করা হয় FCTWEI সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাসকে। তিনি ফোন তোলেননি। প্রশ্ন উঠছে, ‘Non cooperation’ কালচার টলিপাড়ায় নতুন নয়। প্রযোজক রাহুল মুখোপাধ্যায়ের ক্ষেত্রে এমনটাই ঘটেছিল। পরে অবশ্য পরিচালকের সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘ক্ষমা’ চাওয়ার পর, তা মিটমাট হয়ে যায়। তারপর সৃজিত রায়ের শুটিংয়েও হয় অসহযোগিতা। সেক্ষেত্রেও আসে সেই ‘ক্ষমা চাওয়া’ এবং তারপর সব মিটে যায়। এবং সম্প্রতি কিংশুক দে এবং সুদেষ্ণা রায়ের ক্ষেত্রেও ঘটেছে ‘অসহযোগিতা’।
কিন্তু এই ‘আজীবন অসহযোগিতা’র সিদ্ধান্ত যদি কার্যকরী হয়, তা হলে এই প্রথম টলিপাড়ার একাধিক পরিচালকরা একসঙ্গে কলাকুশলীদের ‘Non cooperation’-এর মুখে পড়তে চলেছেন! তবে, কিছু প্রশ্ন উঠছে। FCTWEI সভাপতি ‘আজীবন অসহযোগিতা’র সিদ্ধান্ত কি নিতে পারেন? তা কি আদৌ ন্যায্য? যুক্তিযুক্ত? ঠিক? টলিপাড়ায় কি এখন শুধু পাওয়ার গেম চলছে? প্রশ্ন উঠছে একাধিক, অপেক্ষা শুধু উত্তরের।
কিন্তু এই ‘আজীবন অসহযোগিতা’র সিদ্ধান্ত যদি কার্যকরী হয়, তা হলে এই প্রথম টলিপাড়ার একাধিক পরিচালকরা একসঙ্গে কলাকুশলীদের ‘Non cooperation’-এর মুখে পড়তে চলেছেন! তবে, কিছু প্রশ্ন উঠছে। FCTWEI সভাপতি ‘আজীবন অসহযোগিতা’র সিদ্ধান্ত কি নিতে পারেন? তা কি আদৌ ন্যায্য? যুক্তিযুক্ত? ঠিক? টলিপাড়ায় কি এখন শুধু পাওয়ার গেম চলছে? প্রশ্ন উঠছে একাধিক, অপেক্ষা শুধু উত্তরের।