
দ্য ওয়াল ব্যুরো: সোহম’স এন্টারটেইনমেন্টের প্রথম প্রযোজিত ছবি ‘কলকাতার হ্যারি’ (Kolkatar Harry) ৬ মে মুক্তি পেতে চলেছে। ২৭ তম কলকাতা ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে ছোটদের ছবি ক্যাটাগরিতে এই ছবি সমালোচকদের ভূয়সী প্রশংসা পেয়েছে। আর এই ছবির মাধ্যমেই প্রযোজক হিসেবে টলিউডের পা রাখলেন বিধায়ক তথা অভিনেতা সোহম চক্রবর্তী। এছাড়াও ছবির আরেক চমক পরিচালক কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের চিফ অ্যাসিস্ট্যান্ট রাজদীপ ঘোষ। এই ছবির হাত ধরে ফিচার ফিল্মের পরিচালক হিসেবে পথ চলা শুরু করলেন তিনি। ছবি প্রচার নিয়ে যখন ব্যস্ততা চরমে সেই সময় এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারের জন্য দ্য ওয়ালের মুখোমুখি হলেন বিধায়ক ,অভিনেতা তথা প্রযোজক সোহম চক্রবর্তী। একান্ত আলাপচারিতায় চৈতালি দত্ত।
২৭ তম কলকাতা ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে ছোটদের ছবি কলকাতার হ্যারি ছবি প্রদর্শিত হল। সমালোচকদের থেকে কেমন ফিডব্যাক পেলেন?
সোহম : আমি খুবই টেনশনে ছিলাম। যখন সমালোচকেরা ছবিকে ঘিরে ইতিবাচক মন্তব্য প্রকাশ করলেন তখন যেন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম। এইরকম একটা আন্তর্জাতিক ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে যেখানে আন্তর্জাতিক ছবি জায়গা পেয়েছে সেখানে বাংলা হার্ডকোর কমার্শিয়াল হিসাবে আমার ছবি জায়গা পাওয়া এটাই আমার বড় প্রাপ্তি। প্রথম যেদিন রবীন্দ্রসদনে স্ক্রিনিং হল সেদিন ৬০% দর্শকাসন ভর্তি ছিল। আবার যখন নজরুল তীর্থতে স্ক্রিনিং হল তখন দর্শক সংখ্যা ছিল ৮০%।

শুধু তাই নয়, ছবির বেশ কিছু দৃশ্যে দর্শকাসন থেকে সিটি , হাততালি পরতে দেখে আরও বেশি ভাল লাগল। ছবির শেষে অনেকেই বলেছেন যে অনেকদিন পর বাচ্চাদের উপযোগী এরকম একটা ছবি তৈরি হয়েছে। সকলের প্রশংসায় তখন যেন প্রাণে জল এল(হাসি)। তবে হলে ছবি রিলিজ করলে কি হয় সেটাই দেখার। একজন প্রযোজক হিসেবে দায়িত্ব অনেক বাড়ল।
আপনার প্রযোজনা সংস্থা সোহম’স এন্টারটেইনমেন্টের প্রথম প্রযোজিত ছবি কলকাতার হ্যারি বাচ্চাদের কী ধরনের ম্যাজিক দেখাবে?
সোহম: এখানে একজন পুলকার ড্রাইভার হরিনাথ পাত্র যে খুব হ্যারি পটারের ভক্ত। সে হ্যারি পটারের গল্পের বই পড়ে এবং তার ম্যাজিকে বিশ্বাসী (Kolkatar Harry)। ছোটদের মধ্যে কাল্পনিক জগৎ তৈরি করতে কখনও সে গল্প কিংবা গান বা কবিতার ছলে সেই ম্যাজিকগুলো ছোটদের দেখায়। তার থেকে উপার্জিত অর্থ সে গরিব বাচ্চাদের মধ্যে বিলিয়ে দেয়। যেহেতু সে গাড়ি চালায় তাই গাড়ির মধ্যে বাচ্চাদের আকৃষ্ট করতে অদ্ভুত একটা কল্পজগৎ সে তৈরি করে। গাড়ির নাম হল আব্বুলিশ। যাতে বাচ্চারা এই গাড়ির মধ্যে ঢুকলেই নিজেদেরকে ফিরে পায়। আর হরিনাথ তাদের বিশ্বাস জোগায় যে এরকম একটা জগৎ আছে। ফলে বাচ্চারাও রূপকথার জগতে ফিরে যায়। আর বাচ্চাগুলোকে সে ওই বাসের মধ্যে নানা রকমের গল্প বলে ম্যাজিক দেখায়।

একজন ডেবিউ প্রযোজক হিসেবে বাচ্চাদের জন্য ছবি তৈরি করা এর পেছনে কোনও দায়বদ্ধতা আপনি অনুভব করেছিলেন ? যেহেতু বাংলা ইন্ড্রাস্ট্রিতে বাচ্চাদের জন্য ছবি খুব কম তৈরি হয়।
সোহম: একদম ঠিক কথা বলেছেন। সত্যি কথা বলতে, প্রথমে কিন্তু আমি ভাবিনি যে বাচ্চাদের জন্য ছবি তৈরি করব। তবে সব সময়ই ইচ্ছে ছিল আমার প্রযোজনায় অন্য ধরনের ছবি তৈরি করার। যাতে আমার প্রযোজনা সংস্থার প্রতি দর্শকরা আস্থাশীল থাকেন। তাঁদের একটা বিশ্বাসের জায়গা আমি তৈরি করতে পারি। আমার ছবি দেখে তাঁরা কিছু একটা নিয়ে বাড়ি ফিরতে পারেন। ফলে পরের ছবি আমি যখন আবার প্রযোজনা করব তখন তাঁরা আমার ছবি দেখার জন্য উন্মুখ হয়ে থাকেন। আমি নিজে একজন শিল্পী হিসেবে ভিন্ন স্বাদের চরিত্রে অভিনয় করতে পছন্দ করি। শুধু তাই নয়, নিজে আমি অত্যন্ত বাস্তববাদী একজন মানুষ।
প্রযোজক হিসেবে দর্শকদের ছবির মাধ্যমে কিছু উপহার দেওয়া আমার ব্যক্তিগত পরিকল্পনা রয়েছে। ঠিক সেই সময়ে পরিচালক রাজদীপ ঘোষ আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। রোহিত সৌম্য নামে বাইশ বছরের দুই তরুণ তুর্কি গল্প , চিত্রনাট্য ও সংলাপ নিয়ে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তখন ওঁদের লেখা ওই গল্পের প্রতি আমি আকর্ষিত হই। তারপরই ছবিটা শুরু করি। কিন্তু কোভিডের প্রথম এবং দ্বিতীয় ঢেউয়ের জন্য অনেক বাধা বিঘ্ন এসেছে। সেই সব প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে অবশেষে শ্যুটিং আমরা শেষ করতে পেরেছি। তবে আমি সিদ্ধান্তে অনড় ছিলাম যে ছবিটা শেষ করবই এবং রিলিজও করব। আমি নিজে যখন শিশুশিল্পী হিসেবে ছবিতে অভিনয় করেছি তখন দেখেছি কোথাও ছবির কেন্দ্রবিন্দু আমি হয়ে থাকতাম। যখন এই গল্পটা আমার হাতে এল তখন আমার মনে হয়েছে এই ছবিটা দেখে বাচ্চারা নিজেদের সঙ্গে অনেক কিছু রিলেট করতে পারবে। সেই সঙ্গে অভিভাবকেরাও আবার নিজেদের ফেলে আসা শৈশবে ফিরে যাবেন । একজন শিশুশিল্পী হিসেবে আমি কেরিয়ার শুরু করি। তাই ভাবলাম আমার প্রযোজনা সংস্থার থেকে প্রথম ছোটদের ছবি দিয়ে যাত্রা শুরু করা যাক।

এক্ষেত্রে জানতে চাইব এই দায়বদ্ধতার পাশাপাশি নিজের ফেলে আসা শৈশব ফিরে পাওয়া নাকি আপনার দুই শিশুপুত্রের জন্য ছবিটা করা, কারণ কোনটা?
সোহম : (খুব হেসে) শুধু আমার দুই ছেলেকে উদ্দেশ্য করে নয়। ভারতবর্ষ তথা আমাদের সমাজে যত শিশুরা আছে তাদেরকে উৎসর্গ করে এই ছবি তৈরি করা। সেইসঙ্গে অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে ছবিতে একটি মেসেজ আছে। তা হল নিজেদের ইচ্ছে অনিচ্ছা কে বাচ্চাদের ওপর জোর করে চাপিয়ে দেওয়া নয় কারণ শিশুদের নিজস্ব একটা জগত থাকে। সেই জায়গাটা তাদের দেওয়া উচিত । আমার যেহেতু শিশুশিল্পী হিসেবে অভিনয়ের হাতেখড়ি হয়েছিল তাই আমার মনে হয়েছে শিশুদেরকে মধ্যমণি করে একটা ছবি তৈরি করলে অন্য দিক খুলে যাবে। সব চিন্তা-ভাবনা করেই এই ছবির সৃষ্টি হয়েছে।
এই ছবিতে প্রচুর বাচ্চারা অভিনয় করেছে তাদের সঙ্গে অভিনয় করতে গিয়ে কখনও কি ফেলে আসা নিজের শৈশবে ফিরে গেছেন? নাকি এই শিশুদের মধ্যে নিজের সন্তানদের খুঁজে পেয়েছেন?
সোহম : বাহ খুব সুন্দর প্রশ্ন তো। দুটোই হয়েছে ( হাসি)। বিশেষ করে আমি নিজের শৈশব ফিরে পেয়েছি। বলতে দ্বিধা নেই যে আমি ছেলেবেলায় যখন অভিনয় করতাম এবং সংলাপ বলতাম এই ছবিতে অভিনয় করতে গিয়ে তা বারে বারে মনে হয়েছে। আর ছেলেবেলায় আমাকে ছবির সেটে খুব প্যাম্পার করা হত। আমার ছবিতে ২৯ টা বাচ্চা অভিনয় করেছে। তাদেরকে যত রকম ভাবে প্যাম্পার করা যায় আমি তাই করেছি। আমি খুব নস্টালজিক হয়ে পড়েছিলাম।

শ্যুটিংয়ের অবসরে ওদের সঙ্গে গল্প করে আড্ডা মেরে খেলাধূলা করে খুব মজা করে শ্যুটিং করেছি। কাজের ব্যস্ততার ফাঁকেও আমি নিজের ছেলেদের সময় দিই। তথাপিও আমার মনে হতো ওদের মধ্যে আমার দুই ছেলে আছে।
তার মানে এই ছবিটা করতে গিয়ে কোথাও একটা আত্মিকটান আপনি অনুভব করেছিলেন। একদিকে নিজের শৈশবে ফিরে যাওয়া আবার অন্যদিকে নিজের সন্তানদের খুঁজে পাওয়া দুটো সত্তা কাজ করেছিল?
সোহম: ( খুব হাসি) একদম সত্যি কথা। খুব মজা করে আমরা ছবির শ্যুটিং করেছি। শ্যুটিং শেষে বেশ কিছুদিন আমার মন খারাপও ছিল। বাচ্চাদের সঙ্গে একেবারে মিশে গেছিলাম। আর ওই হরিনাথ চরিত্র থেকে বেরিয়ে আসতে আমার বেশ কিছুদিন সময় লেগেছিল । কলকাতার বিভিন্ন রিয়্যাল লোকেশনে আমরা শ্যুটিং করেছি। ১৫ দিনের শিডিউলের শ্যুটিং ছিল। কিন্তু ওই কোভিডের কারণে অনেক সময় তা বিঘ্ন ঘটেছে।
পুল কার ড্রাইভার হরিনাথ পাত্রকে কীভাবে ছবিতে দেখানো হয়েছে?
সোহম :আসলে সে বাচ্চাদের ক্যাপ্টেন। যে মনেপ্রাণে হ্যারি পটারের গল্প (Kolkatar Harry) এবং ম্যাজিকে বিশ্বাস করে। বাচ্চাদেরকে গল্প বলে ম্যাজিক দেখায়। যার গাড়িটা অদ্ভুত একটা রূপকথার জগৎ। যেখানে বাচ্চারা তাদের মনের কথা বলতে পারে । কিন্তু পরবর্তী সময়ে ওই হরিনাথ পাত্র কোথাও গিয়ে কঠিন বাস্তবের সম্মুখীন হয় । তারপর গল্প কীভাবে এগিয়ে যায় তাই নিয়ে ছবির কাহিনি আবর্তিত।
এই ছবিতে সোহম এবং প্রিয়ঙ্কার অনস্ক্রিন কেমিস্ট্রি দর্শকদের কাছে কতটা উপভোগ্য হবে?
সোহম : আমাদের জুটিকে ঘিরে দর্শক পুরোটাই উপভোগ করবেন। তবে এখানে আমরা রোমান্টিক কাপল নই।আমাদের দু’জনকে খুব ভাল বন্ধু হিসাবে দেখা যাবে। এর আগেও আমি ‘প্রতিঘাত’ ছবিতে প্রিয়ঙ্কার সঙ্গে অভিনয় করেছি। এছাড়া আমার প্রথম ভেনচার অজস্র এন্টারটেইনমেন্টের ব্যানারে ‘আমার আপনজন’ ছবিতেও প্রিয়ঙ্কার সঙ্গে আমি অভিনয় করেছি। অজস্র এন্টারটেইনমেন্টের নতুন নামকরণ হয়েছে সোহম’স এন্টারটেইনমেন্ট।
পরিচালক হিসেবে রাজদীপ ঘোষকে নির্বাচিত করলেন কেন?
সোহম: উনি তো পরিচালক কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের চিফ অ্যাসিস্ট্যান্ট ছিলেন। উনি যখন আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেন তখন ওঁর মধ্যে একটা খিদে আমি লক্ষ্য করেছিলাম । সেইসঙ্গে কাজের প্রতি ডেডিকেশন, প্যাশন এবং আত্মবিশ্বাস আমাকে খুব আকর্ষণ করে। আর এক্ষেত্রে একটা কথা বলব আমি যখন একজন প্রযোজক তখন তো কাউকে প্রথম সুযোগ দিতেই হবে।

পরিচালক সত্যজিৎ রায় কিংবা কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় বলুন তাঁরাও কিন্তু একদিন নতুন ছিলেন। প্রথম তাঁদেরও কেউ সুযোগ দিয়েছিল। সেটা মনে করেই আমি রাজদীপকে সুযোগ দিয়েছি। আমার মনে হয়েছে আমিও একদিন নতুন ছিলাম। আমার মতে প্রথম কাউকে কাজে সুযোগ দেওয়া উচিত বা তাঁরও কাজ পাওয়া উচিত। আর রাজদীপ ঘোষ যখন আমার সঙ্গে কথা বলছিলেন পুরো বিষয়টা আমি ভিজুয়ালাইজ করতে পারছিলাম। ফলে আমি ওঁর সঙ্গে কাজ করতে খুব উদ্বুদ্ধ হই। ওঁর সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে আমার মনে হয়েছে আগামী দিনে রাজদীপ ঘোষ বাংলা ইন্ডাস্ট্রির প্রথম সারির একজন পরিচালক হয়ে উঠবেন।
এই ছবিতে অন্যান্য শিল্পীরা কে কে অভিনয় করেছেন ?
সোহম : অরিন্দম গঙ্গোপাধ্যায়, রাজ চক্রবর্তী, লাবনী সরকার, দীপঙ্কর দে , সুদেষ্ণা রায়, অভিজিত গুহ, প্রেমেন্দু বিকাশ চাকি প্রমুখ। কাহিনী চিত্রনাট্য ও সংলাপ রোহিত সৌম্য। ছবির সুরারোপ করেছেন জিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। সিনেমাটোগ্রাফার গোপী ভগৎ।
এই ছবিতে একটি বিশেষ চরিত্রে তো প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় অভিনয় করেছেন ।
সোহম: (মুচকি হেসে) হ্যাঁ। উনি খুবই গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছেন। তবে চরিত্রটা সম্পর্কে এই মুহূর্তে আমি কিছুই বলব না। কারণ ছবি দেখার মজাটাই চলে যাবে। এটা বরং সারপ্রাইজ থাক। আমি বুম্বা মামুর কাছে আন্তরিকভাবে খুবই কৃতজ্ঞ। আমার কথায় ছবিতে অল্পসময়ের উপস্থিতির একটি চরিত্রে অভিনয় করতে রাজি হয়েছেন।
এই ছবি কটা হলে মুক্তি পাবে?
সোহম : আপাতত ৩০ টা হলে ছবিটি মুক্তি পাবে।
কলকাতার হ্যারি কি পরবর্তী সময়ে ওটিটি প্ল্যাটফর্মে দেখা যেতে পারে?
সোহম: এখনও এই ব্যাপারে কোনও সিদ্ধান্ত নিইনি। তবে পরবর্তী সময়ে ও টি টি প্ল্যাটফর্মে আসতেই পারে, অসুবিধার তো কিছু নেই। তবে এখন সিনেমা হলের ওপর মনোযোগ দিচ্ছি। আর ছবির প্রচারের জন্য বিভিন্ন জায়গায় আমি দৌড়ে বেড়াচ্ছি (হাসি)।
মাস্টার বিট্টু থেকে প্রযোজক সোহমের জার্নিটা কেমন ছিল?
সোহম : পথটা যে খুব মসৃণ ছিল তা কিন্তু একেবারেই নয়। প্রচুর চড়াই-উতড়াই, বাধাবিঘ্ন এসেছে। সেগুলোকে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অতিক্রম করে তবেই আজ আমি এই জায়গায় পৌঁছাতে পেরেছি। অনেকে আমাকে হেও করেছে। আমি সেগুলোকে জেদ,চ্যালেঞ্জ এবং জীবনের শিক্ষা হিসেবে নিয়েছিলাম বলেই আজ আপনার সামনে বসে সাক্ষাৎকার দিচ্ছি।
আমার মনে হয় সেই সময় মানুষের কটু মন্তব্য কিংবা আমাকে ছোট করা এই ব্যাপারগুলোর সম্মুখীন যদি না হতাম তবে আজকে এই মর্মটা হয়তো আমি বুঝতে পারতাম না। কিছু অর্জন করার আগে যে স্ট্রাগল করতে হয় সেটা নিজের মধ্যে আবদ্ধ থাকে। কিন্তু কিছু অর্জন করে ফেললে তখন আমাকে নিয়ে যে আরও দশ জন মানুষ ভাবছেন সেই স্ট্রাগল আবার আরেক ধরনের হয়। ফলে সেই সাফল্যকে ধরে রাখা আরও অনেক বেশি কঠিন।
অভিনয়, রাজনীতি নাকি প্রযোজনা কোনটা বেশি চ্যালেঞ্জিং ?
সোহম: এই তিনটের তিন রকমের দিক রয়েছে। প্রতিটা ক্ষেত্রই খুব গুরুত্বপূর্ণ। তবে সব থেকে যদি চ্যালেঞ্জিং মনে করা হয় তবে সেটা হল রাজনীতির দরবার। সেখানে প্রচুর মানুষের আমার প্রতি অনেক প্রত্যাশা আশা ভরসা এবং কমিটমেন্ট রয়েছে যা রিয়্যাল। আমার মনে হয় সেটা অনেক বেশি বড় চ্যালেঞ্জ। আমি আশা করি যে সেটা সার্থকতার সঙ্গেই বজায় রাখতে পারব । আর অভিনয়ের ক্ষেত্রে বলব আমি প্রথম ছবি যখন করেছি তখন থেকে আজ এত ছবি করার পরও আমি সব সময় মনে করি আজও আমি নতুন। আর আমি যেদিন মনে করব আমি বিরাট বড় অভিনেতা আমার অভিনয় দেখতে মানুষ পছন্দ করেন সেদিন সব শেষ। এক্ষেত্রেও নিজেকে ধরে রাখার চ্যালেঞ্জ তো আছেই। আবার প্রযোজক হিসেবে যখন এলাম সেখানেও একটা চ্যালেঞ্জ তো বটেই। অনেক দায়িত্ব। প্রতিটা ক্ষেত্রে কিন্তু চ্যালেঞ্জ আছে।
মাস্টার বিট্টুর বৈতরণী পেরিয়ে আপনার উত্তরণ ঘটেছে অভিনেতা প্রযোজক সোহম চক্রবর্তী হিসাবে। আর সাধারণ মানুষের কাছে নায়ক নায়িকারা রূপকথার মতো। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে যখন তৃণমূল স্তরের মানুষের সঙ্গে জন্য কাজ করেন সেই উপলব্ধি কেমন?
সোহম : খুবই ভাল লাগে। এই কাজের প্রতি আমি ডেডিকেটেড এবং কমিটেড। সেখানে কোনও স্টারডম কিংবা অভিনয় সত্তা কাজ করে না। যে মানুষগুলো আমাকে জিতিয়েছেন তাঁদের অনেক আশা ভরসার জায়গা আমি । তাঁদের প্রতি আমার দায় বদ্ধতা রয়েছে। সেখানে অভিনেতা সত্তাটাকে ভুলে গিয়ে তাঁদের ঘরে ঢুকে তাঁদের সঙ্গে থেকে এবং তাঁদের পাশে দাঁড়িয়ে আমার কাজটা করতে হয়। আমার পক্ষে যতটা সম্ভব সবসময় তাঁদের পাশে দাঁড়িয়ে কাজ করার চেষ্টা করে যাচ্ছি।
সোহম’স এন্টারটেনমেন্ট বছরে কটা ছবি করবে?
সোহম: একেবারে নিজের সংস্থা থেকে আমি ভেবেছি বছরে দুটো করে ছবি করব। পাশাপাশি যদি অন্য কোনও প্রযোজনা সংস্থা আমার প্রযোজনা সংস্থার সঙ্গে মিলে যৌথভাবে কাজ করতে চায় সেটাও আমরা করতে পারি। সেক্ষেত্রেও আমার কোনও অসুবিধা নেই।
আপনার প্রযোজনা সংস্থা অন্য ধারার নাকি মেনস্ট্রিম ছবি তৈরি করবে ?
সোহম: বাংলা চলচ্চিত্রে এখন একটা অন্য ঘরানা চলছে। সেই ঘরানা অনুযায়ী আমাকে ছবি তৈরি করতে হবে। আবার যদি দেখি পাহাড় কিংবা ঝর্নায় গিয়ে নাচতে হচ্ছে সেই ট্রেন্ড ফিরে এসেছে, তখন সেরকম ধরনের ছবি তৈরি করব। আমি প্রোডাক্ট বিক্রি করতে এসেছি। আমি নিজেও একজন প্রোডাক্ট। যে কোনও পরিস্থিতিতে একজন প্রযোজক হিসেবে আমাকে কাজ করতে হবে। আমাদের দায়িত্ব হল একটা সুন্দর জিনিস তৈরি করে সাজিয়ে গুছিয়ে দর্শকদের উপহার দেওয়া।