শেষ আপডেট: 17th April 2023 16:11
দ্য ওয়াল ব্যুরো: থিয়েটারে (Theater) রাষ্ট্রশক্তির আধিপত্যবাদ তুলে ধরা কোনও নতুন বিষয় নয়। যুগে যুগে, কালে কালে তা হয়ে এসেছে। পাল্টা আক্রমণের মুখেও পড়তে হয়েছে নাটক, নাট্যদলকে। উৎপল দত্ত ব্যারিকেড করেছিলেন উত্তাল সময়ে। তা নিয়ে কত ঘটনার ঘনঘটা ছিল সেসব ইতিহাস। সফদর হাশমি ‘হাল্লা বোল’-এ চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছিলেন দিল্লির দিকে। গাজিয়াবাদে পথনাটিকার সময়ে জননাট্য সঙ্ঘের সফদরের খুন হয়ে যাওয়াও ভারতীয় থিয়েটারে এক মাইলফলক হয়ে রয়েছে। কিন্তু চার দশক আগে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে লেখা নাটককে ভারতীয় মোড়ক দেওয়া সাম্প্রতিক সময়ে বিরল। সেটাই করতে চলেছে কলকাতার (Kolkata) নাট্যদল ‘ইচ্ছেমতো।’
ওপার বাংলার কিংবদন্তী নাট্যকার সেলিম আল দীন। তাঁর লেখা ‘কিত্তনখোলা’কে (Kittonkhola) ভারতীয় প্রেক্ষাপটে রূপ দিয়েছেন নাট্য পরিচালক সৌরভ পালোধী। তার চেয়েও বড় কথা হল, গোটা নাটকটাই মিউজিক্যাল।
দ্য ওয়াল-কে সৌরভ বলেন, ‘প্রেম, ধর্ম, ভেদাভেদ আর রাষ্ট্রের আধিপত্যবাদ—মূল এই চারটি জিনিসকে ধরার চেষ্টা হয়েছে। নাটকের টেক্সটকে অবিকৃত রেখেই গান তৈরি হয়েছে ভারতের বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে।’ আগামী ১০ মে ‘কিত্তনখোলা’র প্রিমিয়ার হবে। তার আগে সৌরভ স্পষ্টই জানালেন, ‘রাষ্ট্রের প্রতিনিধি হিসেবে যে চরিত্র এখানে রয়েছে, সেই ইদু কন্ডাক্টরকে হনুমানের মুখোশ পরানো হয়েছে।’ কেন হনুমান? সৌরভের জবাব, ‘ওই যে বললাম, ভারতের এই সময়ের রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে বোঝাতে!’
রাজনীতি মাখা থিয়েটারে বিতর্ক নতুন কিছু নয়। একটা সময়ে ব্রাত্য বসুর ‘উইঙ্কেল টুইঙ্কেল’, অর্পিতা ঘোষের ‘পশুখামার’ বাংলায় তোলপাড় ফেলে দিয়েছিল। অনেকের মতে, এই হনুমানের মুখোশে রাষ্ট্রকে দেখানোও হয়তো বাংলা নাটকে নয়া বিতর্কের জন্ম দিতে চলেছে।
ইদানীং সৌরভের নাটকের সঙ্গে দেবদীপ মুখোপাধ্যায়ের মিউজিক—কার্যত সমার্থক হয়ে গিয়েছে। ‘ক্যাপ্টেন হুররা’, ‘ঘুম নেই’, ‘ম্যাডি’—একাধিক নাটকে এই জুটির সঙ্গে আলাপ হয়ে গিয়েছে বাংলা নাটকের দর্শকদের। ‘কিত্তনখোলা’তেও গান লেখা, পরিচালনার কাজ করেছেন দেবদীপ। দ্য ওয়াল-কে দেবদীপ বলেন, ‘প্রথমে ভেবেছিলাম, একটা বা দু’টো গান ফিরে ফিরে আসবে। কিন্তু গল্প যেভাবে এগিয়েছে তাতে পরিকল্পনা বদল করতে হয়। বাংলা ভাষাতেই দেশের নানান প্রান্তের সুরকে ব্যবহার করা হয়েছে। কখনও রাজস্থানী ফোক, কখনও সাঁওতাল পরগনার সুর।’ দেবদীপ বোঝাতে চেয়েছেন, এক ভাষার আগ্রাসন যখন চোখ রাঙাচ্ছে, বহুত্ববাদ যখন বিপন্ন তখন বাংলা ভাষাতেই আঞ্চলিক সংস্কৃতিকে তুলে ধরতে চেয়েছেন তিনি। দেবদীপ আত্মবিশ্বাসের সঙ্গেই আগাম দর্শকদের জন্য একটা নির্মম কথাও শুনিয়ে দিয়েছেন। তা হল, ‘এই নাটকে মানুষ গান শোনার পর বাড়ি ফিরে গিয়ে ইউটিউবে সার্চ করবেন। কিন্তু পাবেন না।’
এই নাটকেই অভিনয় করছেন অনুজয় চট্টোপাধ্যায়। চাঁপদানির জুটমিল মহল্লায় বড় হওয়া অনুজয় এই সময়ের বলিষ্ঠ থিয়েটার অভিনেতাও বটে। তিনিও বলেন, ‘প্রেম আর রাজনীতিটাকে যেভাবে পরিচালক সৌরভ তুলে ধরেছেন তা অনবদ্য।’
অভিনেতা শঙ্কর দেবনাথ করছেন ইদু কন্ডাক্টরের চরিত্র। যিনি রাষ্ট্রের প্রতিনিধি হিসাবে থাকছেন ‘কিত্তনখোলা’র মঞ্চে। সেই তিনিও জানিয়েছেন, ‘এই নাটকটা হচ্ছে নাটকের প্রয়োজনে। এটা কোনও প্রোজেক্ট নয়। এটা সময়ের চাহিদা অনুযায়ী একটা নাটক। তাই সৌরভ আমায় যখনই সেলিম আল দীনের এই নাটকের কথা বলেন, আমি রাজি হয়ে যাই।’
সন্দেহ নেই গত কয়েক বছরে সারা দেশেই মুক্ত চিন্তা, সিনেমা-থিয়েটারের উপর ক্ষমতার লালচোখ নিয়ে বিতর্ক তুঙ্গে উঠেছে। সেই প্রেক্ষাপটে এই নাটক সাহসী বলেই মনে করছেন অনেকে। সেই প্রেক্ষাপটে কোথাও কি কোনও ভয়, দুর্ভাবনা কাজ করে? শঙ্করের জবাব, ‘ভয় করলে তো নাটকটাই করতাম না!’
তরুণীর গালে আঁকা জাতীয় পতাকা, তাই স্বর্ণমন্দিরে ঢুকতেই দেওয়া হল না! দেখুন ভিডিও