শেষ আপডেট: 14th April 2025 16:39
'হায় বাঙালি হায়
তুই আর বাঙালি নাই,
তোর চলন বলন কথার ধরন
নিজের মত নাই,
ও তুই আর বাঙালি নাই...'
বাঙালি আর বাংলা নববর্ষ বললেই আমাদের মনে পড়ে এই গান। সবার প্রিয় অভিনেতা-গায়ক খরাজ মুখোপাধ্যায়ের কণ্ঠের এই গানটির কথা ও সুরও তাঁর নিজেরই। 'দ্য ওয়াল' নববর্ষ আড্ডায় খরাজ জানালেন, এই ১৪৩২ নববর্ষে কী করছেন তিনি।
খরাজ মুখোপাধ্যায়ের কথায় 'পয়লা বৈশাখের দু’দিন আগে নীল ষষ্ঠীর দিন আমার ছেলের জন্মদিন। কিন্তু আমার ছেলে ওঁর জন্মদিনের আগেই কলকাতা ছাড়তে বাধ্য হয়। সংগীত জগতে আছে আমার ছেলে। প্রীতম চক্রবর্তীর ইউনিটে কাজ করে। ছেলে ১০টা ছবি করেছে। কিন্তু অভিনয়ের থেকেও মিউজিক ওকে টানে বেশি। ছেলে বলল জন্মদিনে থাকতে পারবে না, মুম্বই যেতেই হবে। নববর্ষের দিন ছেলে কলকাতা ফিরবে। ওই দিনই কেক কাটবে পরিবারের সঙ্গে।'
খরাজ মানেই পাকা রাঁধুনি। তাঁর হাতের রান্না সুবিখ্যাত। এই নববর্ষে কী রাঁধছেন খরাজ? খরাজের কথায়, 'ছেলে ঘরে ফিরছে তাই ছেলের পছন্দের পদই রাঁধব। আমার ছেলে বাঙালি পদ খেতে ভালবাসে। তাই পাঁঠার মাংসের ঝোল আমি নিজে হাতে কাল সকালে রান্না করব। এটাই মেন ডিশ। সঙ্গে রাখব ছেলের পছন্দের লাল শাক ভাজা আর আমের চাটনি। বাড়িতে রান্না করে খেতেই আমরা সবাই ভালবাসি।'
খরাজ তাঁর গানে বলেছিলেন ' হায় বাঙালি হায়, তুই আর বাঙালি নাই।' এখনও ১৪৩২ সালে নববর্ষে কি সেই কথাই বলছেন তিনি?
খরাজের কথায় 'হ্যাঁ সেই কথাতেই আটকে আছি, বরং আরও বেশি করে আছি। যেমন ধরুন, নতুন বছরে বাংলা ক্যালেন্ডার! তাঁর কোনও গুরুত্ব আছে নতুন প্রজন্মের কাছে? বাংলা মাস পরপর কী কী আছে, এই সময়ের ছেলেমেয়েদের জিজ্ঞেস করুন, বলতেই পারবে না। সংক্রান্তি কাকে বলে, কখন হয়, এই বাংলা শব্দটাই এরা শোনেনি। বাংলা ক্যালেন্ডারের মর্ম এদের কাছে তো অনেক বড় কথা!
'হায় বাঙালি হায়,তুই আর বাঙালি নাই' গানটা হিট হবার পর আমাকে প্রতি বছর নববর্ষে বাঙালিদের নিয়ে গান লিখতে হত। একবার লিখলাম, ‘মাছ খাব না, আঁশ ছোঁব না, বাংলা বলব না, আর আমি বাঙালি হব না, আর জনমে আর আমি বাঙালি হব না। এমন পোড়া দেশের কবি, নজরুল-রবি ইঁদুর মারার ওষুধেতে তোদেরই ছবি।'
নচিদার (নচিকেতা চক্রবর্তী) আমার লেখা এই গানের লাইনটা খুব পছন্দ হয়েছিল। তাছাড়া রবীন্দ্রনাথ ক্যাটারার, নজরুল বিড়ি... বাঙালির এখন এই তো অবস্থা। আমরা এমন সম্মান করছি বাংলার মনীষীদের, যা বলার মতো নয়। হিন্দি, ইংরেজি, বাংলা, গুজরাতি সব মিলে বাংলা ভাষা ঘেঁটে ঘ হয়ে গেছে। এসব কথা বললে, লোকে বলবে ব্যাকডেটেড গো। বুড়ো হয়ে গেছে। আমাদের যাদের দাঁত পড়ে গেছে, চুল পেকে গেছে, তারাই নববর্ষের ঐতিহ্য নিয়ে পড়ে আছি।
হোয়াটসঅ্যাপে আজকালকার ছেলেমেয়েরারা যে ভাবে মেসেজ লেখে, সেখানে কোনও ঠিকঠাক ভাষা কি আছে? বাংলা ভাষা ছেড়েই দিলাম।'
শুধু তাই নয়, বাঙালি দর্শকের কাছে, পাঠকের কাছেও বাংলা বই, বাংলা ছায়াছবি, বাংলা গানের কদর কমছে বলেই মনে করছেন খরাজ!
অভিনেতার কথায়, 'আমি কোনও জলসায় গিয়ে হামেশাই দেখি সব বয়স্ক দর্শক। নবীন প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের খুঁজে পাওয়া যাবে না। কোনও কম বয়সি দর্শক নেই। বেশিরভাগ বাংলা ছবির দর্শকও তাই। বাংলা সংস্কৃতি আর ছোঁয় না নতুন প্রজন্মকে। তাই তারা বাংলা ভাষার কদর করতেই শেখেনি। বাংলা নববর্ষের গুরুত্ব আমাদের সময়ের লোকেদের পরে যে কতখানি থাকবে, তা নিয়ে সন্দেহ আছে!'