Date : 13th May, 2025 | Call 1800 452 567 | [email protected]
প্রথা ভেঙে সাম্বা ফুটবলের দায়িত্বে বিদেশি কোচ, কী কী সুবিধা পেতে চলেছেন আনসেলত্তি?পহেলগামের ঘাতক জঙ্গিদের ছবি দিয়ে পোস্টার কাশ্মীরে, হদিশ দিতে পারলেই ২০ লক্ষ টাকা পুরস্কারPahalgam Attack: উত্তরকাণ্ড: পহলগামের ঘাতকদল কোথায়, কী হল তাদের?Gold-Silver Price: সোনার চড়া দামে মধ্যবিত্তের পকেটে টান, মঙ্গলে স্বস্তি দিল রুপোর দরCBSE Class 12th Results 2025: পাশের হার ৮৮.৩৯%, এবারেও ছেলেদের চেয়ে এগিয়ে মেয়েরাঅস্ত্র-টাকা কিছুই নেই, জনতাও সরকারের পাশে নয়, পাকিস্তানের লড়ার ক্ষমতাই নেই: দিলীপ ‘বিরাট, রোহিত পরের বিশ্বকাপে খেলবে বলে মনে হয় না’, ‘রো-কো’ জুটির ওয়ান ডে ভবিষ্যৎ নিয়ে সংশয়ে গাভাসকারপাকিস্তানের ইটের জবাব পাথরে দিতে চান বর্ধমানের প্রাক্তন সেনাকর্মীযদি বলো তবে উড়ে যেতে পারি! তুরস্কে রাশিয়া-ইউক্রেন আলোচনাতেও নাক গলাতে চান ট্রাম্পChina: যুদ্ধবিরতির পর মার্কিন প্রভুত্ববাদের বিরুদ্ধে কড়া বার্তা শি জিনপিংয়ের, একঘরে করার হুঁশিয়ারি
Kesari Chapter 2, movie review, Akshay Kumar, Madhaban

কেশরী চ্যাপ্টার ২: ইতিহাসের রক্তস্রোতে তুখোড় কামব্যাক অক্ষয়ের, জাতীয় পুরস্কার আসবে কি

Advertisement

মেঘে ঢাকা ঐতিহাসিক চরিত্র সি শঙ্করন নায়ারকে অক্ষয় কুমার ফিরিয়ে আনলেন মানুষের মনে। যেন অক্ষয়ের উপর ভর করেছে নায়ারের আত্মা।

কেশরী চ্যাপ্টার ২: ইতিহাসের রক্তস্রোতে তুখোড় কামব্যাক অক্ষয়ের, জাতীয় পুরস্কার আসবে কি

অক্ষয় কুমার , কেশরী চ্যাপ্টার ২

Advertisement

শেষ আপডেট: 18 April 2025 18:03

শুভদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়

ছবি - 'কেশরী চ্যাপ্টার ২': দ্য আনটোল্ড স্টোরি অফ জালিয়ানওয়ালাবাগ
পরিচালনা - করণ সিং ত্যাগী
চরিত্র চিত্রণে - অক্ষয় কুমার, মাধবন, অনন্যা পান্ডে

দ্য ওয়াল  রেটিং - ৯/১০

১০৬ বছর পর ইতিহাসের অন্যতম কুখ্যাত গণহত্যার কাহিনি আবার জীবন্ত হয়ে উঠল। ১৯১৯ সালের জালিয়ানওয়ালাবাগের নৃশংস হত্যালীলার রক্তাক্ত কাহিনি ফুটে উঠল রুপোলি পর্দায়। 

আজ, শুক্রবারই মুক্তি পেল করণ সিং ত্যাগী পরিচালিত অক্ষয় কুমার, মাধবন ও অনন্যা পান্ডে অভিনীত 'কেশরী চ্যাপ্টার ২': দ্য আনটোল্ড স্টোরি অফ জালিয়ানওয়ালাবাগ (Kesari Chapter 2)। বন্দুকের নলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের আগুন গর্জে উঠেছে এই কোর্টরুম ড্রামা বলিউড ছবিতে। অক্ষয় কুমার (Akshay Kumar) আর মাধবন (Madhaban), কতখানি টক্কর দিলেন দু'জন দু'জনকে? কতখানিই বা জায়গা দর্শক হৃদয়ে করে নিতে পারল এই ছবি? 

ছোটবেলায় ইতিহাসের পাঠ্যবইতে জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকান্ডের শিহরন জাগানো ঘটনার কথা সকলেই প্রায় পড়েছি। সেই কাহিনিকেই পর্দায় জীবন্ত করে তুললেন প্রযোজক করন জহর এবং পরিচালক করণ সিং ত্যাগী। ছবির শুরুই হচ্ছে এই হত্যালীলার রক্তঝরা দৃশ্য দিয়ে। সে ভয়ঙ্কর দৃশ্য দেখে প্রতিটি দর্শকদের হৃদয় কেঁপে উঠবে। 

পাঞ্জাবের বৈশাখী উৎসবের দিন অমৃতসরের মানুষ রাওলাট আইনর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে জালিয়ানওয়ালাবাগে একত্রিত হয়েছিলেন। ঘোষণা করা হয়েছিল, তাঁদেরই এক জননেতা ভাষণ দেবেন। কিন্তু সেই মিথ্যে ঘোষণার ফাঁদ পেতেছিলেন ইংরেজ সেনানায়ক ব্রিগেডিয়ার ডায়ার। হাজার হাজার লোককে জড়ো করে বন্দুকের নলের সামনে দাঁড় করানোই তাঁর উদ্দেশ্য ছিল। কত মানুষের মাথা জড়ো হয়েছে, তা জানতে তিনি প্লেন উড়িয়ে দেখেও নেন। 

এরপর ডায়ার হাজির হয়ে গুলি চালিয়ে ঝাঁঝরা করে দেন অমৃতসরের কয়েক হাজার আবালবৃদ্ধবনিতাকে। সেই ভয়াবহ ইতিহাসের রক্তে যেন ভেসে গেল বড় পর্দা। এই ভয়াবহতাই 'কেশরী চ্যাপ্টার ২' ছবিটিকে কঠোর ভাবে প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য করে তুলেছে। ছবির শুরুতেই ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে দর্শকের মন ঘৃণায় ভরে উঠবে। আর সেই ঘৃণা থেকেই অমৃতসরের জনতার মতোই দর্শককে উদ্ধার করতে হাজির হন সি শঙ্করন নায়ারের নামভূমিকায় অভিনয় করা অক্ষয় কুমার। ব্রিটিশদের মধ্যে থেকেই যিনি ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে দাঁড়ান মামলা লড়তে। ইতিহাসের পাতার এমন দীর্ঘ কোর্টরুম ড্রামা বিশাল ব্যাপ্তি নিয়ে রচিত হল পর্দায়। এ ছবি কিন্তু শুভবুদ্ধিসম্পন্ন দর্শকদের মন ভরাবে, দেশপ্রেমের জোয়ারে ভাসাবে। 

মেঘে ঢাকা ঐতিহাসিক চরিত্র সি শঙ্করন নায়ারকে অক্ষয় কুমার ফিরিয়ে আনলেন মানুষের মনে। যেন অক্ষয়ের উপর ভর করেছে নায়ারের আত্মা। অক্ষয়ের পর্দায় প্রবেশ চমকে দেয় দর্শকদের। একদিকে ওকালতি, অন্যদিকে কথাকলি নৃত্যশিল্পী হিসেবে মাত করেছেন অক্ষয়। অনেকেই ভেবেছিলেন, এমন বোল্ড চরিত্রে অক্ষয় কুমারকে কতটা মানাবে। ছবি দেখে মনে হল, অক্ষয়ের অভিনয় জাতীয় পুরস্কারের দাবিদার। সারা ছবি জুড়ে তাঁকেই মুগ্ধ হয়ে দেখতে হয়। বিরোধীপক্ষ তাঁর মুখে কালি মাখিয়ে দিলেও এমন শ্বেতশুভ্র চরিত্র দেখে প্রতিটি দর্শক উঠে দাঁড়িয়ে সম্মান জানান। ছবির শেষে ডায়ারকে পরাজিত করার পর অক্ষয় কুমারের দীর্ঘ সংলাপ এ ছবির ম্যাজিক কার্ড। জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নাইট উপাধি ত্যাগ করেন। 
শঙ্করন নায়ার নাইট উপাধি গ্রহন করলেও তাঁর মনের ভিতরে কেমন প্রতিবাদের আগুন ছিল তাও দেখা গেল পর্দায়। 

অভিনেতা সাইমন পেসলি ডে জেনারেল ডায়ারের চরিত্রে কাঁপিয়ে দিয়েছেন। '৪২' ছবিতে বিকাশ রায়কে দেখে যেমন দর্শকরা পর্দায় জুতো ছুড়েছিলেন, এ-ও তেমনই এই চরিত্র। তিনি রুমের দরজার বাইরে বোর্ড ঝুলিয়ে রাখেন, 'কুকুর ও ভারতীয়দের প্রবেশ নিষিদ্ধ'।

তবে এই প্রথম হয়তো, ডায়ারের জন্যও মানুষের ক্ষণিক সহানুভূতি জন্মাবে। কীভাবে একজন মানুষ এত বড় খলনায়ক হয়ে ওঠেন? ছোটবেলায় রোগা বলে ডায়ারকে খ্যাপাত স্কুলের হিন্দুস্তানী সহপাঠীরা। আবার ডায়ারের বাবা ছিলেন তীব্র ভারতবিদ্বেষী। ছোটবেলায় যে বিদ্বেষ ডায়ার পেয়েছিল এবং দেখেছিল, সেটাই তাঁকে ইতিহাসের খলনায়ক করে তোলে। 

মাধবন ধূসর চরিত্রে অভিনয় করেছেন। মাধবনের মিষ্টি হাসি এখানে নিষ্ঠুর হাসিতে রূপান্তরিত হয়েছে। ভিলেনের ভূমিকায় তাঁর অভিনয় অক্ষয়ের সঙ্গে সেয়ানে সেয়ানে টক্কর দিয়েছে। ছবির শেষে এই ইংরেজ ঘনিষ্ঠ চরিত্রটিও পাপ ধুয়ে ফেলতে চায়। 

ছবির আর এক তুরুপের তাস, অনন্যা পান্ডে। দিলরিত কৌর (অনন্যা পান্ডে), একজন নবীন আইনজীবী, জালিয়ানওয়ালাবাগের ন্যায়বিচারের জন্য লড়তে অক্ষয় কুমারের সহকারী রূপে অনন্যার অভিনয় যথেষ্ট বলিষ্ঠ। তাঁর অপাপবিদ্ধ রূপ চরিত্রটিকে আরও পূর্ণতা দিল। 

বাঙালি অভিনেতা সোহন বন্দ্যোপাধ্যায় আইনজীবি ও দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাসের চরিত্রে বিশেষ ভাবে মনে দাগ কাটলেন। ছোট্ট উপস্থিতি হলেও বাঙালি অভিনেতার সঙ্গে অক্ষয় কুমারের ওয়ান টু ওয়ান দুরন্ত অভিনয় মন ভরায়। বিশেষত সংলাপ উচ্চারণ অসাধারণ। 

তবে এই ছবি অজস্র অভিনেতার সম্মিলিত প্রয়াস। জালিয়ানওয়ালাবাগের ভিড়ে মিশে থাকা জনতার ভূমিকায় প্রতিটি মানুষের অভিনয়ও যেন বাস্তব। এক পাঞ্জাবী কিশোর চরিত্রের অভিনেতা সকলের মন জিতে নেয়, যার মৃত্যু দর্শকদের চোখ ভেজায়, রাগে গর্জে উঠতে জারিত করে।

শুধুমাত্র বিনোদনের জন্য 'কেশরী চ্যাপ্টার ২' বানাননি পরিচালক করণ সিং ত্যাগী। হার্ডকোর বিনোদন ছবির নির্মাতা করণ জোহর এমন একটি কোর্টরুম ড্রামা করে অনেক প্রশংসা পেলেন। ছবিটিকে সার্থক করে তুলতে এতটুকু কসুর করেননি প্রযোজক। 

ছবির আরও দুটি গুরুত্বপূর্ণ দিক, ছবির সেট অর্থাৎ শিল্প নির্দেশনা। জালিয়ানওয়ালাবাগের সেই ঐতিহাসিক ইটের পাঁচিল থেকে কোর্টরুমের আভিজাত্য তুলে ধরা আর্ট ডিরেক্টর কৃষ্ণআনন্দ শর্মাও জাতীয় পুরস্কারে যোগ্য দাবিদার। দ্বিতীয় বিষয়, ছবির আবহ সঙ্গীতে শাশ্বত সচদেব কোর্টরুম ড্রামার কাঠিন্যকে নাটকীয় করে তুলেছেন। যে কারণে এমন ছবি দেখতে দর্শক বিরক্তিবোধ করেন না। পিরিয়ড ছবির পোশাক পরিকল্পনায় শীতল শর্মা অনবদ্য। সিনেমাটোগ্রাফার দেবজিৎ রায়ও বিশেষ ভাবে নজর কাড়লেন। 

তবে এমন পিরিয়ড ছবির গবেষণা আরও বেশি হতে পারত। যেমন ওই সময়ের চরিত্ররা এই সময়ের কিছু শব্দ ব্যবহার করেন সংলাপে, যা শ্রুতিকটু। ছবির শেষের দিকে যা আরও প্রকট লাগে শুনতে। কিছু শব্দে আভিজাত্য হারায় ছবির। 

কিন্তু দেশপ্রেমকে যেভাবে অক্ষয় কুমার পর্দায় তুলে আনলেন তা তাঁর রাজকীয় কামব্যাক। পাঞ্জাবের বৈশাখী উৎসবে ১০৬ বছর আগে যে রক্তনদীর ধারা বয়েছিল, তা চাক্ষুষ করতে, নির্মম ইতিহাসতে নতুন ভাবে জানতে, দেখতেই হবে 'কেশরী চ্যাপ্টার ২'।

Advertisement

Advertisement


ভিডিও স্টোরি