কী বললেন কাঞ্চন?
শেষ আপডেট: 9th February 2025 21:13
শনিবার ছিল ছেলে ওশের জন্মদিন। ছেলের জন্মদিনে ফোন যায়নি তাঁর তরফে। তা নিয়ে কত আলোচনা। কারও দাবি সদ্যোজাত মেয়েকে পেয়ে ওশ অর্থাৎ তাঁর বড় সন্তান এখন বিস্মৃতির পথে। সত্যিই কি তাই? শুনল দ্য ওয়াল। নিজেকে উজাড় করলেন উত্তরপাড়ার বিধায়ক তথা অভিনেতা কাঞ্চন মল্লিক।
‘৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩। আমার জীবনের অন্যতম আনন্দের দিন। ওশ এল আমার কাছে। একটু একটু করে বড় হয়ে উঠল চোখের সামনে। আমি ভাল বাবা নাকি নই, সে কাটাছেড়ার মাঝেই ক্রমে নিজের জগৎ তৈরি হল ওর। হামাগুড়ি থেকে স্কুল-- সাক্ষী ছিলাম সবেরই। অথচ ২০২০-এর পর থেকেই বদলে গেল সব হিসেব। গতকাল আমার ছেলের জন্মদিন ছিল। দুনিয়া ভাবতেই পারে আমি ভুলে গিয়েছি। তাঁদের প্রমাণ করার দায় আমার নেই। তবে আমার প্রিয়জনরা জানে, কাল সকালেও মন্দিরে পুজো দিয়েছি ওর নামে। তাঁরা জানে, আমার বাড়ির প্রতিটা পুজোয় ঈশ্বরের কাছে কিছু চাইতে গেলে কোন দু'টো নাম প্রাধান্য পায়।
ওশের মা সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, কাল আমার তরফে কোনও ফোন যায়নি ওর কাছে। কাকে ফোন করতাম? কোথায় ফোন করতাম? আদালতে যখন আমাদের মিউচুয়াল বিচ্ছেদ হয় তখন ওশের সঙ্গে দেখা করার ইচ্ছে প্রকাশ করেছিলাম। কিন্তু আমার ভিজিটিং রাইট কেড়ে নেওয়া হয়েছে। ছেলের ফোন নেই। ওর মায়ের সঙ্গে যোগাযোগ নেই। বছর দুয়েক আগে যখন ছেলের ছোট্টবেলার কেয়ারগিভারকে ফোন করে কার্যত কাকুতিমিনতি করেছিলাম ওকে ফোনটা দেওয়ার জন্য, তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন, 'বৌদির বারণ আছে। আমি পারব না।'
জানেন ওশ আমার মতো। উপহার পেতে খুব ভালবাসে। জন্মদিনে কখনও ডোরেমন কেক, ওর পছন্দের জামা পাঠাতাম, সেই জামা-কেক সব আবার আমার কাছেই ফেরত চলতে আসত। হ্যাঁ, আমার উপহারও ওই পরিবারে নিষিদ্ধ। জামার ছবিও রাখা আছে সযত্নে। জানেন, আদালতে গিয়ে ছেলের জন্মদিনের উপহার দিতে হয়েছে আমায়। মানছি ওশের মা ও আমার সম্পর্ক আর নেই, কিন্তু ছেলেটা কী দোষ করল? উত্তর খুঁজেছি, পাইনি। মন শক্ত করেছি। নিজেকে বুঝিয়েছি, যে বাচ্চাকে জন্মদিনের উপহার দেওয়ার জন্য আদালতে আসতে হয়, যার শৈশব কোর্টচত্বরে কাটে তার থেকে দূরেই থাকি। আমার পিতৃত্ব দেখানোর জন্য ছেলেকে আমি ট্রমা দিতে চাই না।
এক সাক্ষাৎকারে দেখলাম ওশের মা বলেছেন, খাতায় কলমে ওশ আজও মল্লিক। দ্য ওয়ালের তরফে একটা কথাই বলতে চাই, ২০১৩-তে যখন ওশ জন্মাল ঠিক তখন থেকেই আমাকে বারবার বলা হয়েছে আমি বাবা হিসেবে অপারগ, অধম, ছেলের জন্মের নেপথ্যে আমার কোনও অবদান নেই। জন্মের পর থেকে নাকি কিছুই করিনি। সেইখানে দাঁড়িয়েও ওশের মা যে বলেছেন আমার ওশের নেপথ্যে কিঞ্চিৎ অবদান আছে, অন্তত টাইটেল মল্লিক হিসেবেও কিঞ্চিৎ রক্তেরও যে অবদান আছে তা মেনে নিয়েছেন, সেই কারণেই আমি ওশের মায়ের কাছে নতমস্তকে প্রণাম জানাই ও অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে কৃতজ্ঞতা জানাই।
ওহ, আর একটা কথা। ওশ একদিন বড় হবে। জানি না সেদিন ওর আর বাবার কথা মনে থাকবে কিনা। তবে ওশের দরজা ওর বাবার কাছে আজীবন খোলা। আমি কখনও চাইব না ওর মায়ের ভালবাসার অংশীদার হতে, তবে নিভৃতে ভাল চেয়ে যাব ওর। ও বড় হচ্ছে। ওর জন্য এক পৃথিবী ভালবাসা গচ্ছিত রইল হৃদয়ের কোণায়। ফোন করিনি, জানি পাব না তোকে। বাবা তোর জন্মদিন ভোলেনি ওশ। তুই যে আমার রক্ত। তুই-ই যে আমার অংশ।'
ছেলের জন্মদিনে অতীতে এই উপহারই পাঠান কাঞ্চন। নিজস্ব চিত্র